ইলিয়াস কাঞ্চনকে জায়েদ- ‘এইসব নোংরামি বন্ধ করেন’
সোমবার সকালে চিত্রনায়িকা শিমু হত্যাকাণ্ডে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের সন্দেহের তীর ওঠে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। স্যোসাল মিডিয়ায় গুঞ্জন, আসন্ন শিল্পী সমিতি নির্বাচনের ঠিক দশদিন আগে এমন রহস্যময় হত্যাকাণ্ডে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদের সংশ্লিষ্টতার কথা।
হাওয়ায় সেই গুঞ্জন বাড়তে না দিয়ে এ বিষয়ে মুখ খুলতে মধ্যরাতেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন জায়েদ খান। সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন শিমুর ভাই শহিদুল ইসলাম খোকনকে। জানান, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে খোকন দাবি করেন, শিমুকে হত্যার পেছনে দায়ি তার স্বামী। জায়েদ খানকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে জায়েদ খান জানান, হত্যাকাণ্ডের খবর জানার পর থেকে শিমুর বড়ভাইকে তিনিই সহযোগিতা করেছেন আইনি আশ্রয় নিতে।
তিনি বলেন, “শিমুর হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমি। আমি র্যাবকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা ইতোমধ্যে আসামিকে ধরে ফেলেছে। গতকাল বিকেলে আমি যখন শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত তখন শিমুর ভাই আমাকে পাশে ডেকে নিয়ে বললেন, জায়েদ ভাই, কাল থেকে শিমুকে খুঁজে পাচ্ছি না। কলাবাগান থানায় জিডি করেছি। আপনার সহযোগিতা চাই। আমি তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আমার ভাই নাজমুলকে বিষয়টি জানাই। শিমুর ফোন নম্বর দিয়ে তার সর্বশেষ লোকেশনটা কোথায় তা জানতে বলি। এরপরেই নাজমুল জানান, কেরানীগঞ্জে শিমুর ডেডবডি পাওয়া গেছে।”
নির্বাচনকে ঘিরে তার নামে এ ধরণের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানোয় বিরোধী শিবিরকে দায়ি করেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, “ঘটনার পর পর আমাকে জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে। বলা হচ্ছে, ১২দিন আগে শিমুর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে। অথচ গত দুই বছর ধরে আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নাই।”
“একদল লোক আছে যারা সুন্দর একটি নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে চাচ্ছে। এরা সবখানে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে! একটা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার বিচার চাইবে কী, সেটা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আমাকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে। আমি চাই, প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করা হোক।”-যোগ করেন জায়েদ খান।
তিনি জানান, কয়েকজন নামধারী শিল্পী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। তাদের বিরুদ্ধে তিনি শিগগিরই আইনি আশ্রয় নিবেন।
এদিকে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ২০১৭ সালে জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক হয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর ১৮৪জন শিল্পীর সদস্য পদ হারানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও বঞ্চনার কথা বলে আসছিলেন শিল্পীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন চিত্রনায়িকা শিমুও। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর জায়েদ খানের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে চিত্রনায়িকা শিমুর একটি পুরনো সাক্ষাতকারও স্যোসাল মিডিয়ায় নতুন করে ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার রাতে, এফডিসিতে সদস্যপদ হারানো শিল্পীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে চিত্রনায়ক রিয়াজ আবেগাক্রান্ত হয়ে কেঁদে ফেলেন। বিষয়টিকে ‘মেকি কান্না’ বলে অভিহিত করে, বিরোধী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ইলিয়াস কাঞ্চনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকে বলবো, আপনারা সম্মানিত মানুষ, ভালোবাসার মানুষ এইসব নোংরামি বন্ধ করেন। রিয়াজ ভাই অভিনয় করে মেকি কান্না করছে। উনিই এদেরকে সহযোগি সদস্য করেছিলেন।”
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে নায়িকা শিমুকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত বন্ধু ফরহাদকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর দায় স্বীকার করে নোবেল। সোমবার সকালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের নীচ থেকে শিমুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়।
১৯৯৮ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় তার অভিষেক হয়। একে একে অভিনয় করেছেন ৫০টিরও বেশি নাটকে। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও দর্শকরা তাকে পর্দায় পেয়েছে। ২৩টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন বলে জানা গেছে।