এ বছর আইপিএল’র নিলামে সকলের নজর কেড়েছিলেন আরিয়ান খান ও সুহানা খান। এই নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রতিনিধিত্ব করছে শাহরুখ খানের এই দুই সন্তান।
এবার মাঠে উপস্থিত থেকে দলকে উৎসাহ দিতে দেখা গেলো আরিয়ান খানকে। যদিও বা আইপিএল চলাকালীন তাকে প্রায় সময়ই মাঝে মধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে এসে দলকে উৎসাহ দিতে দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
তবে শুক্রবার (১ এপ্রিল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলা দেখতে মাঠে হাজির হলেন শাহরুখ খানে তিন সন্তানই। আরিয়ান, সুহানা এবং আবরাম। তাদের সঙ্গে ছিলেন অনন্যা পাণ্ডেও।
ম্যাচের পরেই তাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
তবে অনুরাগীদের সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে আবরামের ছবি। মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাকে দেখা গিয়েছে আঙুল জোড়া করে কেকেআর-এর জন্য প্রার্থনা করতে। সুহানা সেই ছবির সঙ্গে লিখেছেন, ‘মনে হয় প্রার্থনা কাজে লেগেছে।’
ক’দিন ধরেই শোবিজের সবচেয়ে ইস্যু হলো ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পী সংঘ আর সংস্কারকামী শিল্পীদের মুখোমুখি অবস্থান। দ্বিতীয় পক্ষ ক্রমাগত দাবি করে আসছিলো অভিনয়শিল্পী সংঘকে ঢেলে সাজানোর। কিন্তু বর্তমান কমিটির কাছ থেকে তারা কোন সহযোগীতা না পেয়ে কমিটিকে ‘বাতিল’ বলে ঘোষণা করে।
এরপরই অভিনয়শিল্পী সংঘের একটি পদক্ষেপ দেখা গেছে আজ। অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাহী কমিটিতে থাকা অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছে সংঘ।
এ খবর প্রকাশের পর নেটিজেন থেকে শুরু করে মিডিয়াপাড়ায় অনেকেই বলাবলি করছে, সংস্কারকামী শিল্পীদের চাপে পড়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। নয়তো নিজ উদ্যোগ থাকলে এতোদিন কেন তারা কোন সিদ্ধান্ত নিলো না?
ঘটনা পরিষ্কার করার স্বার্থে বলা দরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান করেছিলেন সাজু খাদেম ও ঊর্মিলা। বিশেষ করে আওয়ামীপন্থী তারকাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’-এর সদস্য এই দুজন। সাজু খাদেম ছিলেন ওই গ্রুপের অন্যতম একজন অ্যাডমিন।
সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা যেটি করেছি, তা হলো ইসি কমিটির যে দুজন মেম্বার ওই গ্রুপটিতে ছিল- সাজু খাদেম ও ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর। এর মধ্যে ওই গ্রুপে অ্যাডমিন হিসেবে ছিল সাজু খাদেম, আর বেশকিছু স্ক্রিনশট শেয়ার করেছে ঊর্মিলা। যে কারণে তাদের আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’
এ ছাড়া স্ক্রিনশট ভাইরালে আলোচিত অরুণা বিশ্বাস, শামীমা তুষ্টি, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, যে দুই তারকা কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলেন তাদের পক্ষ থেকে কোনো ফিরতি চিঠি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে নাসিম জানান এখনও কোনো উত্তর দেননি তারা।
উল্লেখ্য, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, নায়ক রিয়াজ আহমেদ, অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। আর এতে যুক্ত ছিলেন শোবিজের অনেক তারকা। এই তালিকায় আছেন জায়েদ খান, সুজাতা, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, তানভীন সুইটি, জ্যোতিকা জ্যোতি, সোহানা সাবা, ঊর্মিলা, হৃদি হক, আশনা হাবিব ভাবনা, সাইমন সাদিক, আজিজুল হাকিম, ফজলুর রহমান বাবু, চন্দন রেজা, শুভ্র দেব, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকে।
নিজের বান্দ্রার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বলিউড ডিভা মালাইকা অরোরার বাবা অনিল অরোরার মৃতদেহ। গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে মালাইকা অরোরার বাবার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। নিজের বাড়ির ছয়তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি, এমনটাই অনুমান করছে পুলিশ।
স্বাভাবিকভাবেই বাবার আত্মহত্যায় বিপর্যস্ত মালাইকা অরোরা। খবর পেয়েই ছুটে আসেন পুণে থেকে। গাড়ি থেকে নেমেই ভেঙে পড়েন কান্নায়। তাকে সান্তনা দিতে সব কাজ ফেলে ছুটে আসেন তার ঘনিষ্ট বন্ধু বলিউড সুপারস্টার কারিনা কাপুর খান। এছাড়া এসেছিলেন মালাইকার সদ্য ব্রেকআপ হওয়া প্রেমিক অভিনেতা অর্জুন কাপুর, তার সাবেক স্বামী আরবাজ খান, শ্বশুর সেলিম খান ও দেবর সোহেল খান।
নিজেকে একটু শান্ত করেই মালাইকা জানান আত্মঘাতী হওয়ার আগে বাবা শেষ কী কথা বলে গেছেন তাকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে মালাইকা ও তার অমৃতাকে ফোন করেছিলেন তাদের বাবা।
দুজনকেই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ‘আর পারছি না, আমি ক্লান্ত’। জানা গেছে, পুলিশকে নাকি এমন কথাই জানিয়েছেন মালাইকা ও তার বোন অমৃতা।
এদিকে মালাইকার মা বলেছেন, ‘ডিভোর্স হয়ে গেলেও, বলা চলে আমরা একসঙ্গেই থাকতাম। প্রত্যেক দিনের মতোই সকাল বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। অনেকক্ষণ ধরে আওয়াজ না পেয়ে বারান্দায় যাই। তারপর বারান্দা থেকে উঁকি মেরে দেখি, নিচে পড়ে রয়েছেন উনি। হাঁটু ব্যথা ছাড়া আর কোনো রোগ ছিল না তার।’
জানা গেছে, বহুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন মালাইকার বাবা। মালাইকার বয়স যখন ১১ এবং তার বোন অভিনেত্রী অমৃতা অরোরার বয়স যখন ৬, ঠিক সেই সময়ই মালাইকার মায়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় অনিল অরোরার। মা জোসির কাছেই বড় হন মালাইকা ও অমৃতা। তবে বাবার সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিলো তার।
হাওর এলাকা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, তার সমৃদ্ধ ফোক কালচারের জন্যও সমাদৃত।
ঐতিহ্যগতভাবেই লোকসঙ্গীতের সাম্রাজ্য হিসেবে বিখ্যাত হাওর জনপদের ভাটি অঞ্চল। মরমী সাধক হাসন রাজা, ধামাইল গানের জনক রাধারমণ দত্ত, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, কাটা বিচ্ছেদি গানের জন্যখ্যাত উকিল মুন্সী কিংবা দুরবিন শাহের আবির্ভাব হয়েছে এই জল ও জোছনার ছোট্ট জনপদে। বাউল সঙ্গীতের এই মুকুটহীন সম্রাটদের গানকে যারা কন্ঠে ধারণ করেন আর অন্তরে লালন করে চলেছেন, এমন লোকসঙ্গীত শিল্পীদের সম্মিলনেই এই আয়োজন।
তাই হাওর পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগাতে ফোক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌ-পর্যটন উদ্যোক্তারা। ‘মাটির গন্ধে ভাটির গান’ এই স্লোগান নিয়ে সপ্তাহব্যাপী এই ফোক ফেস্ট চলবে আগামী ১৩ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে ফোক ফেস্ট ২০২৪’ নামের এই আয়োজনে থাকছে স্থানীয় লোকসঙ্গীত শিল্পীর পাশাপাশি নৌ পর্যটনকর্মীদের মাঝে থাকা লোকসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা। অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকবে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘আপনঘর’, সোনার বাংলা সার্কাস ব্যান্ড-এর প্রবর রিপন, সোহাগ শ্রাবণ ও ‘দোতং পাহাড়’ গানখ্যাত সোহান আলীর পরিবেশনা।
মাঝ হাওরে জলবেষ্টিত মঞ্চে আয়োজিত অভিনব এই উৎসবটি নৌকায় থেকেই উপভোগের সুযোগ মিলবে। উৎসব চলাকালীন সময়ে কেবল নিবন্ধিত হাউজবোটগুলোতে থাকা পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত থাকছে আয়োজনটি।
মূলত হাওর পর্যটনের ২ দিন ১ রাতের প্যাকেজগুলোর সাথে মিল রেখেই ১৩ তারিখ সন্ধ্যা থেকে থেকে শুরু করে ১৪ তারিখ রাতের প্রথম প্রহর, ১৫ তারিখ সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ১৬ তারিখের প্রথম প্রহর ও ১৭ তারিখ সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ১৮ তারিখ রাতের প্রথম প্রহর পর্যন্ত তিনটি আলাদা পর্বে উদযাপিত হবে এ বছরের আয়োজন। ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে ফোকফেস্ট-২০২৪’ আয়োজকদের মধ্যে রয়েছে ‘জলের গান’, ‘তরী ময়ূরাক্ষী’ এবং ‘ফ্লোটিং হাউজ অফ টাঙ্গুয়া’। এছাড়াও এই আয়োজনে হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে থাকছে ‘মহাজনের নাও’, ‘ডোঙ্গা’, ‘জলপদ্ম’, ‘ফ্যান্টাসি অফ টাঙ্গুয়া’সহ বেশকিছু হাউজবোট।
আয়োজন সম্পর্কে ‘মহাজনের নাও’-এর মাসুক উর রহমান বলেন, ‘১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের প্রয়াণ দিবস ও ১৭ সেপ্টেম্বর ভরা পূর্ণিমাকে সামনে রেখে লোকসংগীত, হাওর আর জ্যোছনা উদযাপনের মিশেলে পর্যটকদের এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিতেই এই আয়োজন। প্রথমবারের মতো হতে চলা এই উৎসব নিয়মিতভাবেই আয়োজন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌন্দর্য পিপাষু বাঙ্গালির প্রাণের অনুষঙ্গ আমাদের লোকগানের অফুরান ভান্ডার। এই মনের খোরাকের দুইটি অনুষঙ্গকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতেই এই আয়োজন। এতে যেমন ভাটিবাংলার লোকগানের শুদ্ধ চর্চার প্রসার ঘটবে, তেমনি সাংস্কৃতিক পর্যটনের এক নতুন দুয়ার খুলে যাবে হাওরকেন্দ্রিক নৌপর্যটনে, এমন লক্ষ্যেই এই আয়োজন করা।’
দর্শনীয় স্থান ও গানের পাশাপাশি থাকবে মুখরোচক খাবার আর আকর্ষণীয় বিলাসবহুল হাউজবোটে করে নৌবিহার। অনুষ্ঠানের মূল পর্ব আয়োজন হবে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাটের একটি ভাসমান রিজোর্ট ‘মেঘদূত’-এ। এই আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন নিচের ফেইসবুক পেজে-
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নীরব থাকায় জনরোষের মুখে পড়েছেন দেশের শীর্ষ ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি। তার বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন গুঞ্জন চাউর হয়েছে। তাকে বয়কটের ডাক দিতেও দেখা গেছে নেটিজেনদের অনেককে। মাসখানেক ধরে রোস্টিং ও ট্রল হতে দেখে বিভিন্ন অভিযোগে চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলেছেন আফ্রিদি।
তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাট্যাসে নিজেকে পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি করেছেন। এমনকি আন্দোলন চলাকালে ডিবি হারুনের সঙ্গে তার কি কি হয়েছিলো সবটাই তুলে ধরেছেন। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সেই স্ট্যাটাসটি আফ্রিদির অফিশিয়াল পেজে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া তৌহিদ আফ্রিদির সেই পোস্ট মুছে ফেলায় নেটিজেনদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন প্রশ্ন। এখন তাহলে কিসের ভয়ে তিনি পোস্ট ডিলিট করলেন? নাকি তার কথাগুলো শুধুমাত্র নিজের ইমেজ ঠিক করার একটা বাহানা ছিলো? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। আবার কেউ মনে করছেন, তার সাফাই গাওয়া নেটিজেনদের মনে একটুও জায়গা করে নিতে পারেনি বলে ইগো থেকে পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছেন আফ্রিদি।
যাই হোক ওই পোস্টে আফ্রিদি লিখেছিলেন, ‘আসলে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে আমি কখনোই কিছু বলতে চাইনি। কারণ, আমি কিছু বলতে গেলে সেখানে আরো অনেকের নাম যুক্ত হবে। তাই আমি কাউকে দোষ না দিয়ে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। যতদূর জানি বোবার নাকি কোনো শত্রু থাকে না। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে শত্রু বেড়েই চলছে, সাথে বেড়েই চলছে আমাকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট গল্পের সংখ্যা।’
আন্দোলনের সময় তিনি দুবাইতে ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমি দুবাইতে ছিলাম। দেশের পরিস্থিতি তখন খুব খারাপ পর্যায়ে। আর তখনই আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করি যে আমি দেশে আসছি এবং কোটা আন্দোলনকারী ভাইদের পাশে দাঁড়াবো। এই পোস্ট করার পরও আমি তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। আমি যখন শহীদ আবু সাঈদ ভাইয়ের ছবি আমার সকল আইডিতে পোস্ট করি, কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার থেকে জিয়াউল আহসান কল দিয়ে বলে ‘তোমাকে একটা জিনিস জানাতে চাই তুমি যে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্টগুলো দিয়েছো এগুলো এক্ষুণি তোমাকে সরাতে করতে হবে। তোমার সাথে কে কে যুক্ত এগুলাতে?’ এটা শোনার পর আমি সাথে সাথে ফোন কেটে দিই। কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ডিবি হারুন কলে বলে, ‘এই তুমি কার কল কাটছো? তুমি জানো? তুমি, তোমার বাবা, তোমাদের টেলিভিশন, সব শেষ করে দিবে। এখনি উনাকে কল ব্যাক করো, যা বলে শুনো।’ আমি ভয়ে পোস্ট ডিলিট করে দিই। আমার এখনো মনে আছে আমি সেদিন ভয়ে আমার পরিচিত কারোরই ফোন ধরিনি। কিন্তু ডিবি হারুন আমাকে ফোন দিয়েই যাচ্ছিলো।’’
ডিবি হারুন আফ্রিদিকে ভয় দেখিয়েছিল বলে দাবি করে বলেন, ‘পর দিন আবার ডিবি হারুন আমাকে ফোন দেয়। বলে তোমার নামে ওয়ারেন্ট বের হইছে, দেশে আসলেই কিন্তু তুমি এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তার হবা। তখন আমি বলি, চাচা আমি তো পোস্ট ডিলেট করে দিছি। আমি আরো বলি চাচা পোস্ট তো আমি করি নাই। আমার এডমিন করছে। যদিও পোস্টটা আমি করেছিলাম কিন্তু তখন ভয়ে আমি তাকে এই মিথ্যাটা বলি। এটা শোনার পর উনি আমাকে বলে ‘তোমার ওইসব অ্যাডমিন সরাও।’ এরপর উনি আমাকে একটা একাউন্টের লিঙ্ক দিয়ে বলে ‘ওরে একসেস দাও’। ডিবি হারুন আমাকে আরো বলে, আফ্রিদি দেশে আইসাই তুমি আগে আমার সাথে দেখা করবা, তোমার নামে কিন্তু জঙ্গি মামলা হইছে।’’
আতঙ্কিত ছিলেন জানিয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘‘এরপর আমি আমার বাবার সাথে সব শেয়ার করি। তখন বাবা আমাকে বলে যে ‘তুমি দেশে আসো। ফেসবুকে পোস্ট করা লাগবে না, তুমি রাস্তায় নামো, তাহলে তো সমস্যা নাই। ঠিক এরপর দিন থেকেই পুরো বাংলাদেশ শাটডাউন থাকে। যে কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকে। যখন শাটডাউন শেষ হয় আমি বাংলাদেশে আসি। বাংলাদেশ আসার পর আমি আর ডিবি হারুনের সাথে যোগাযোগ করিনি। কিন্তু পরের দিনই আমাকে আবার NTMC থেকে কল দিয়ে ডাকা হয়। তারপর ওইখানে আমি যাই। গিয়ে দেখি ওরা হলিউড মুভির কেইস বোর্ডের মতো করে আমি সহ আরো কয়েকজন ইনফ্লুয়েন্সারদের ছবি টানিয়ে রেখেছে। আমার এখনো মনে আছে, ওদের কাজ দেখে আমি আতঙ্কে একই জায়গায় ৩০ মিনিটের বেশী সময় ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা আমাকে বুঝিয়ে দিলো, কথার বাইরে গেলে সব শেষ আমার।’’
আফ্রিদি বলেন, ‘‘পরে একটা এজেন্সি আমাকে জরুরি তলব করে। আমি এরপর সেখানে যাই। যাওয়ার একটাই কারণ, এর আগেও আমরা সব ইনফ্লুয়েন্সাররা ওদের সাথে কাজ করেছিলাম। এজেন্সি আমাকে বলে ‘শুনো আফ্রিদি তুমি কার পক্ষে থাকবা বা বিপক্ষে থাকবা সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তোমাকে ডাকার প্রধান কারণ হলো এই আন্দোলনে আমাদের দেশের যে ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে, যেমন ধরো মেট্রোরেল, সরকারি ভবনে ভাংচুর ও আগুন এসব তো আর ছাত্রদের কাজ না। এগুলো তো সাধারণ মানুষেরই টাকাই বানানো। আর সরকার যদি ভুল করে সেটা নিয়ে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কাজ করা যাবেনা। আর যারা যারা মারা গিয়েছে তাদের সুষ্ঠু বিচার চাইতে হবে।’’
এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নাকি বলেন, ‘‘আমাদের মোটিভ হচ্ছে দেশের এই অবস্থায় সোশাল অ্যাওয়ার্নেস তৈরি করা। সো তুমি এবং তোমার পরিচিত যেসব ইনফ্লুয়েন্সার আছে তাদেরকে নিয়ে এই অ্যাওয়ার্নেসটা সোশালি ক্রিয়েট করতে হবে। আমি এসব শুনে উনাকে ডিরেক্ট বললাম, ‘ভাইয়া আমি তো এটা করতে পারবোই না আর যারা আছে তাদেরকে যদি ৫ গুণ টাকা বেশীও দেওয়া হয়, তাও তারা করবে না। এটা বিবেক আর ক্যারিয়ারের ব্যাপার।’ তখন এজেন্সি আমাকে বলে ‘আরে ভাই আমরা তো স্টুডেন্টের বিপক্ষে পোস্ট দিচ্ছি না, আচ্ছা তুমি একটা মিটিং ফিক্সড করে দাও, বাকিটা আমি ওদেরকে বুঝিয়ে দিবো। এরপর আমি ওদের সাথে তাল মিলিয়ে হ্যাঁ-ওকে বলে ব্যাপারটা সেখানে শেষ করি।’’
নেটিজেনদের উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘‘আপনারাই একবার চিন্তা করে দেখুন এই অবস্থায় কেউ কি স্টুডেন্টের পক্ষে ছাড়া ভিডিও বা পোস্ট করবে, পেমেন্ট যতই হোক? যাই হোক এরপর কয়েকজন ছোট ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে নিয়ে আমি ওদের সাথে মিটিং করিয়ে দিই। মিটিংয়ে এজেন্সি সবাইকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করে। মিটিংয়ে সবাই পোস্ট এবং ভিডিও করার আশ্বাস দিলেও মিটিং শেষে কেউ ভিডিও দিতে আর রাজী ছিলো না। এমনকি অনেকেই টাকা নিয়েছে কিন্তু ভিডিও দেয়নি। এরপর এজেন্সি থেকে আমাকে সবার ভিডিওর জন্য আবার ফোন দেওয়া হলে, আমি ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে আবার যোগাযোগ করি। সবাই আমাকে জানায় এমন পরস্থিতিতে কেউ ভিডিও বা পোস্ট দিতে পারবেনা। একটা সময় এজেন্সি যখন দেখলো আমার এবং বাকি ইনফ্লুয়েন্সারদের কেউ কিছু করতে রাজী হচ্ছে না তখন তারা বলে অন্তত ‘সরকার যদি ভুল করে সেটা নিয়ে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কাজ করা যাবে না’ এই পোস্টটা করো, ভিডিও করার দরকার নাই। একদিকে এতো এতো ছাত্র আর মানুষ মারা যাচ্ছিলো আর অন্যদিকে এজেন্সি আমার সাথে বারবার কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছিলো, তখন আমি ডিরেক্ট ওদের সাথে কন্টাক্ট অফ করে দিই।’’
আফ্রিদি নিজের অবস্থান জানিয়ে বলেন, ‘ছাত্রদের বিপক্ষে যাওয়া, কোন ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে হুমকি দিয়ে পোস্ট বা ভিডিও করা এবং ছাত্রবিরোধী কোনো কেম্পেইনের সাথে থাকা, এসবে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। আপনারা যেটা হুমকি দিয়ে ছাত্রদের বিপক্ষে ক্যাম্পেইনের কথা বলছেন সেই ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে আমার জিরো পার্সেন্ট আইডিয়াও নেই। আমার মিটিংটা ছিলো শুধু কয়েকজন ছোট ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কথা বলিয়ে দেওয়া।’
ডিবি হারুনের হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এসব ঝামেলার মধ্যে হঠাৎ ডিবি হারুন আমাকে আবার কল দিয়ে বলে ‘তোমাকে দেখা করতে বলছিলাম, তুমি দেশে আইসা আমার সাথে দেখা করলা না কেন? তোমার নামে যে মামলা হইছে এটার একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে তাই না?’ সে এসব কথা বলে আমাকে আবার তার অফিসে ডাকে। যাওয়ার পর সে আমার সাথে আমার মামলা নিয়ে একটা কথাও বললোনা। আমাকে সে বলে তার এক ভিডিও নাকি ভাইরাল হইছে, মানুষ নাকি তার ফেইস চেঞ্জ করে ভাইরাল করতাছে। আমি তখন তার কাছ থেকে ভিডিওটা দেখতে চাই। আমি তখনও জানতাম না তার কি ভিডিও ভাইরাল হইছে। ভিডিও দেখে আমি বুঝতে পারি যে এটা তারই ভিডিও, তারপর সে বলে তার ভিডিও অনলাইন থেকে রিমুভ করে দিতে হবে। আমি তখন তাকে বলি ‘চাচা আপনি সাইবার সিকিউরিটির সাথে কথা বলেন ওরাই পারবে’। কিন্তু সে বারবার আমাকে ফোর্স করে ভিডিওটা রিমুভ করে দিতে। পরে আমি তাকে বলি এইটা তো রিমুভ করা যাবে না। এটা বলার সাথে সাথে সে এবার আমার মামলা নিয়ে কথা বলা শুরু করে। আমাকে বলে তোমার নামে তো জঙ্গি মামলা হইছে, তোমাকে কিন্তু এই মুহূর্তে গ্রেফতার করা যায়। আমাকে সে ইনডিরেক্টলি হুমকি দেয়। তারপর তাকে দেখানোর জন্য আমি কয়েকজনকে ফোন দিই, তার ভিডিওটা রিমুভ করা যাবে কিনা। কিন্তু সবাই না বলে। এরপর তাকে আমি বলি যে আমি বাসায় গিয়ে একটা ব্যাবস্থা করছি।’’
ডিবি হারুন ক্ষমতার অপব্যবহার করতো জানিয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘আপনারা যে কোন সেলিব্রেটিকেই জিজ্ঞাসা করুন, তারাই বলবে, ডিবি হারুনের কাছে যে একবার সাহায্যের জন্য গিয়েছে তাদেরকে সে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে। তার ফেমাস হওয়ার একটা নেশা ছিলো, সেটা তার পেইজের ভিডিও দেখলেই আপনারা বুঝবেন। যারাই তার কাছে যায়, তাদেরকে ভাত খাইয়ে সেটার ভিডিও করে সে ছেড়ে দেয়। সে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এতো বাজেভাবে করতো যে, আমি এবং আমার এক ইউটিউবার বন্ধুকে দিয়ে সে তার রিসোর্টের প্রমোশনে যেতে বাধ্য করেছিলো। তার রিসোর্টের প্রমোশনে আমরা এতোটাই হেল্পলেস ছিলাম যে, পেমেন্ট পাওয়া তো দূরের কথা, নিজে খরচে, তার দেওয়া তারিখের মধ্যেই নো মেটার হোয়াট শুট করে, তার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই পোস্ট করতে হয়েছিলো। ইভেন প্রায়ই সে আমাকে তার অফিসে ডেকে ভøগ করতে বলতো।’
টাকার প্রতি কোনো লোভ নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই যে পরিমাণ টাকা দেখে বড় হইছি আমার টাকার প্রতি কোনো লোভ নাই। উপরে মহান আল্লাহ তায়ালা আছেন, উনি দেখছেন, উনি সাক্ষী আছেন, আমি কি করছি। আল্লাহ যদি মনে করেন আমি কোনো ভুল করছি তাহলে আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন। ভয়ে চুপ ছিলাম এটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিলো। আর সেটার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন। সেটার জন্য আমি আপনাদের কাছেও ক্ষমা চাচ্ছি। আমার শুভাকাক্সিক্ষরা জানে এবং বিশ্বাস করে আমি কেমন। আপনি পাব্লিকলি যখন কিছু করবেন তখন আপনার পক্ষে বিপক্ষে অনেক মানুষ কথা বলবে। কিন্তু বিপক্ষের মানুষগুলো ভালো কাজে চুপ থাকে, আর যখনই কোনো অজুহাত পায় সেটাকেই তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে। কথা আগেও হতো, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে, কিন্তু তাই বলে আমি কখনো থামিনি এবং থামবোও না ইনশাহআল্লাহ। সেটার একমাত্র কারণ হলো আমার ওয়েল উইশারদের সমর্থন, এর আগেও থেমে যেতাম কিন্তু তারা আমাকে থামতে দেয়নি এবং আজকেও দিচ্ছে না।’