সহযোগিতা পেলে ‘কাগজের ফুল’ নির্মাণ করতে চান ক্যাথরিন মাসুদ
তারেক মাসুদের অসমাপ্ত ‘কাগজের ফুল’ সিনেমাটির শুটিং শেষ করে মুক্তি দিতে চান ক্যাথরিন মাসুদ । চার বছর পর বাংলাদেশে এসে আবারও তিনি কথা বললেন ছবিটির প্রসঙ্গে। তিনি জানালেন, সহযোগিতা পেলে ‘কাগজের ফুল’ নির্মাণ করবেন। শুক্রবার (১২আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টায় কাঁটাবন পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে আয়োজিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ১১তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় এমনটাই জানান তিনি।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের জোকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ আরও তিনজন চলচ্চিত্রকর্মী নিহত হন। সেদিন তারা ‘কাগজের ফুল’ ছবির লোকেশন দেখতে গিয়েছিলেন। ফিরলেন লাশ হয়ে। সেই রক্তমাখা ‘কাগজের ফুল’ সিনেমা নিয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় তারেক মাসুদের জীবন ও চলচ্চিত্র সহযোদ্ধা ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, ‘অনেকদিনের প্রশ্ন এটি, কাজ করা হবে কিনা। আমি আজও একই কথা বলবো। আসলে কাজটা তখন শুরুই হয়নি, আমরা শুধু স্ক্রিপ্টটা লিখেছিলাম। এরপর প্রি প্রোডাকশনের কাজ কিছুটা এগিয়েছি। আরও অনেক কাজ বাকি ছিলো। তখন যে বাজেট ছিলো তা আমাদের জন্য বিশাল পাহাড় মনে হয়েছে। আসলে এতো বড় বাজেটের সিনেমা বাংলাদেশে কীভাবে সম্ভব! বাংলাদেশে এখন চলচ্চিত্রে অনেক এগিয়েছে, ভালো ভালো কাজ হচ্ছে সব জায়গায়। এখন হয়তো একটা সম্ভাবনা আছে, কাজটা নতুন করে শুরু করার। আমারও ইচ্ছে আছে। যতদিন জগতে থাকি আমার শেষ ইচ্ছা এই কাজটি আমি সমাপ্ত করে যাবো।’
ক্যাথরিন যোগ করেন, ‘‘আসলে ২০১১ সালের ঘটনার পর বোঝা খুব কষ্টসাধ্য ছিলো যে, একজন মানুষের ওপর কতটা মানসিক চাপ যেতে পারে। আমি ভাবিনি মানুষ বুঝবে, তখন আমার হাতে এক বছরের বাচ্চা। আমার সাথে একজন সঙ্গী থাকলে কাজগুলো হয়তো করতে পারতাম। মিশুক মুনীর বেঁচে থাকলেও হতো। কিন্তু আমরা দুজনকেই হারালাম। আমরা তবুও স্বপ্ন দেখি ‘কাগজের ফুল’ নিয়ে। সহযোগিতা পেলে সিনেমাটি নির্মাণের ইচ্ছে আছে। ’’
স্মরণ অনুষ্ঠানে তারেক মাসুদের লেখা ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ গ্রন্থটি প্রকাশ হয়। বইটি প্রসঙ্গে ক্যাথরিন বলেন, ‘তাকে (তারেক মাসুদ) বুদ্ধিজীবী বলবো না। কারণ তিনি নিজের সম্পর্কে তা ব্যাবহার করতেন না। তাকে চলচ্চিত্র চিন্তাবিদ বলা যায়। তারেক নিজেকে চিন্তাবিদ নয়, দুশ্চিন্তাবিদ বলতো। সে বলতো যদি কখনও আমার লেখাগুলো সংকলন করে প্রকাশ হয়, আমি খুব খুশি হবো। তারেক মারা যাওয়ার পর আমার কিছু কাজের লিস্ট ছিলো কী কী করতে হবে তার জন্য। তার মধ্যে প্রথম ছিলো এই বইটি প্রকাশ করা। আমাদের ইচ্ছে ছিলো তারেকের এই বইয়ের মাধ্যমে বর্তমান মানুষের ভাবনাকে নাড়া দিতে পারে। তাদের কাজে তার চিন্তার প্রভাব রাখতে পারে, তাহলে হয়তো এগুলোর মধ্যে তাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। সে ছিলো সিনেমার ফেরিওয়ালা, হাতে হাতে মানুষের কাছে তার চিন্তা-দর্শন পৌঁছে দিতো।’
ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্র নির্মাতা অদ্রি হৃদয়েশের সঞ্চালনায় এই আয়োজনে তারেক মাসুদ ও তার চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক ও লেখক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, নির্মাতা প্রসূন রহমান, সমালোচক মনিরা শরমিন প্রমুখ। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন।
উল্লেখ্য, ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এই সভার নাম রাখা হয় তারেক মাসুদ স্মরণ ও ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ গ্রন্থের পাঠ-পর্যালোচনা।