লেখার উপকরণ পাই অভিনীত চরিত্র থেকে : ফারজানা ছবি

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বইমেলায় মাকে নিয়ে ফারজানা ছবি

বইমেলায় মাকে নিয়ে ফারজানা ছবি

মেধাবী অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী ফারজানা ছবি এবার নিজের বলয় ছেড়ে হাজির লেখক পরিচয়ে। একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছেন তার প্রথম উপন্যাস ‘জলছবি’। অভিনেত্রীর লেখক হওয়ার গল্পটি জানিয়েছেন বার্তা২৪.কমকে। কথা বলেছেন মাসিদ রণ


লেখালেখির চর্চা কবে থেকে শুরু করলেন?

বিজ্ঞাপন

আমার পুরো পরিবারেই বই পড়ার চর্চা ছিল। এখনো কোন পুরনো বই খুললে দেখি তাতে হয়ত বাবা নাম কিংবা পরিবারের অন্য কারও নাম লেখা। এটা দেখে খুব গর্ববোধ করি। কারণ সব পরিবারে এমন পড়ার চর্চা থাকে না।
ছেলেবেলায় বাবা এবং বড় ভাইয়ের পড়ার অভ্যাস আমাকেও বইয়ের প্রতি অনুরাগী করে তোলে। এজন্যই স্কুলজীবনেই আমি বইয়ের প্রেমে পড়ি। ক্লাসের পড়াশুনার ফাঁকে আমিও তাদের বই লুকিয়ে পড়তাম। এই যে নানা ধরনের বই পড়ার অভ্যাস, এটাই আমার অনুভূতিপ্রবণতা, জীবনবোধ, চিন্তা চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। এক পর্যায়ে বাবাই আমাকে বলতেন, ‘পড়ার পাশাপাশি একটু একটু করে লেখার অভ্যাস গড়। কারণ, সবকিছু হারিয়ে ফেললেও জ্ঞান আর লেখার দক্ষতা কখনো হারায় না।’ এখন তার কথাগুলো আরও ভালো করে টের পাই। লিখতে গিয়ে বাক্যগঠন কিংবা রসদ খুঁজতে আমার বেগ পেতে হয় না।

বইমেলায় নিজের বই হাতে ছবির পোজ

একুশে বইমেলায় নিজের প্রথম বই এসেছে। কেমন অনুভূতি হচ্ছে?

বিজ্ঞাপন

অমর একুশে বইমেলা তো আমাদের প্রাণের উৎসব। প্রতিবছরই বই কিনতে মেলায় যাই। বিয়ের আগে নিজের জন্য বই কিনতে যেতাম। বিয়ের পর স্বামী তন্ময় সরকার এবং দুই সন্তান অভিরূপ ও অনির্বাণকে সঙ্গে নিয়ে বই কিনতে যাই। তবে এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এবারই প্রথম আমি পাঠক নই, লেখক হিসেবে মেলায় যাচ্ছি! আমার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘জলছবি’ প্রকাশ করেছে মিজান পাবলিশার্স (প্যাভিলিয়ন নম্বর ৭)। এ উপন্যাসের স্তরে স্তরে ভিড় করেছে মানুষের অসংগতি, অসম্পূর্ণতা, বিরোধ কিংবা সংঘাতের আবরন ছিড়ে তুমুল আকাঙ্খায় বেঁচে থাকার নির্যাস। আমি ভালো মন্দ, ধর্ম অধর্ম, ঔদর্য্য সংকীর্ণতার মাঝেও মানবজীবনের জয়গান গেয়েছি।
আমার বাবা যেখোনেই আছেন, নিশ্চয়ই এই ঘটনায় আমার চেয়ে অনেকগুণ আনন্দিত। বাবার পর আমার লেখাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রানীত করেন আমার স্বামী। তিনিও খুব খুশি। তাছাড়া জীবনের যে কোন প্রথমের সঙ্গে কিন্তু আবেগটা অনেক শক্তভাবে জড়িয়ে থাকে। আমার প্রথম বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। আমি চাই পাঠকরা আমার বইটি সংগ্রহ করুক। আমি প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে স্টলে থাকছি। কাছের দূরের অনেকের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হচ্ছে। খুব উৎসবমুখর সময় কাটছে।

অভিনেত্রী ফারজানা ছবি

লেখার উপকরণ কোথায় পান?


আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছি, ফলে নানা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে জীবনকে নানা আঙ্গিকে দেখেছি। আমার লেখার উপকরণ আমি সেখান থেকেই পাই। আমার প্রথম বই কতোখানি পাঠকপ্রিয় হলো সেগুলো সব পরের কথা। আমি নিজে এবার লিখতে গিয়ে নিরেট আনন্দ পেয়েছি। তাই নিয়মিত হতে চাই লেখায়।


বই লিখতে গিয়ে কি নতুন কোন অনুভব যোগ হলো?


আমাদের তো আসলে পড়ার অভ্যাস কমে গেছে সবারই। আমরা অনেকটাই মুঠোফোনকেন্দ্রীক হয়ে পড়েছি। কিছু পড়তে গেলেও মুঠোফোনে সার্চ দিয়ে পড়ে ফেলি। শুধুমাত্র বইমেলা এলেই সবার মধ্যে বই কেনা বা বই পড়ার তাগিদ দেখা যায়। কিন্তু এটা আসলে ভালো প্র্যাকটিস নয়। আমাদের এই সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারন সারা বছরই লেখকরা অনেক কষ্ট করে অনেক বই লেখেন, সেগুলো প্রকাশিত হয়। সবাই না পড়লে সেই বইগুলো যতোই উন্নতমানের হোক না কেন, তা কিন্তু সার্থকতা পাবে না।
আমি এবার লিখতে গিয়ে আবারও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে। এখন একটা বই কারও হাতে দেখলে মনে হয়, বইটি একজন লেখক কতো সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে লিখেছেন। আমার বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে আমি নিজে একই জার্নির মধ্যে দিয়ে গেছি। এজন্য বই দেখলেই পড়তে খুব ইচ্ছে করে। তাছাড়া যতোই আমরা অনলাইনে পড়ি না কেন, একটি ছাপা অক্ষরের বই পড়ার যে আবেদন সেটি কিন্তু অনলাইনে পাওয়া যায় না।

নিজের লেখা বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন ছবি

পাঠকদের উদ্দেশ্যে কি বলার আছে?


আমাদের সবার উচিত নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। কারণ জ্ঞানচর্চার কোন বিকল্প নেই। একটি দেশকে উন্নত করতে কিংবা অবনতির পেছনে জ্ঞানী গুনীজনের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। এজন্যই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সরকার যখন আমাদের সঙ্গে পেরে উঠছিল না, তখন বাংলাদেশের উন্নতি রোধ করতে শেষ ছোবল হিসেবে সকল বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করে মেরে ফেলে। যে ক্ষতি আমরা আজও পূরণ করতে পারিনি। নয়ত আমরা আরও অনেক দূরে যেতে পারতাম।