পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম তার ‘মনপুরা’ ছবিটি মুক্তির পরপরই ২০০৯ সালের শেষ দিকে ‘কাজলরেখা’ নির্মাণের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেন। দীর্ঘ ১২ বছর গবেষণা, গীত সংগ্রহ, চিত্রনাট্য রচনা, লোকেশন নির্বাচন ইত্যাদি শেষে ২০২২ সালে ছবিটির দৃশ্যায়ন শুরু হয়। এখন চলচ্চিত্রটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই ঈদুল ফিতরে বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতে পর্যায়ক্রমে মুক্তি পাবার অপেক্ষায় 'কাজলরেখা'।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজলরেখার শুটিং হয়েছে প্রায় ৫০ দিন। সিনেমার মূল শুটিং লোকেশন সুসঙ্গ দুর্গাপুরের লক্ষ্মীপুর অঞ্চল। এছাড়া খুলনার সুন্দরবন, কক্সবাজার, সিলেটের হাওর অঞ্চল এবং ঢাকার মিরপুর অঞ্চলে সিনেমাটির শুটিং হয়েছে। তরুণ ও অভিজ্ঞদের মিশ্রণে শতাধিক শিল্পী-কুলাকুশলী এতে কাজ করেছেন। আর ছবিটির বিভিন্ন শুটিং পর্যায়ে সহস্রাধিক কর্মী সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম নির্মিত পাঁচটি সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি ‘কাজলরেখা’। ময়মনসিংহ গীতিকার আদি গল্পকাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘কাজলরেখা’ সিনেমাটির সব শিল্পী ও কলাকুশলী বাংলাদেশের হলেও ভিএফএক্সসহ কিছু কারিগরি সহায়তায় যুক্ত ছিলেন ভারতের কুশলী শিল্পীরা।
তারকাবহুল এই সিনেমায় একটি চরিত্রের মধ্যে নাকি অসংখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দক্ষ অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন নির্মাতা সেলিম।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেত্রী রায়িফাত রশিদ মিথিলা রয়েছেন এই সিনেমায়। মিথিলা 'কাজলরেখা' সিনেমায় কঙ্কণদাসী চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ইরেশ যাকের অভিনয় করেছেন ছবির প্রধান চরিত্র কাজল রেখার বাবার চরিত্রে। অনেক আগে যখন ছবিটি নির্মাণের কথা ভেবেছিলেন সেলিম, তখন এই চরিত্রে ইরেশের বাবা আলী যাকেরকে কাস্ট করতে চেয়েছিলেন। এখন সেই চরিত্রটিই তার ছেলে করেছেন। আর ইরেশের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘প্রাচ্যনাট’ থিয়েটার দলের গুণী অভিনেত্রী সাহানা সুমি।
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শরীফুল রাজ কাজলরেখা সিনেমায় সুঁচরাজা চরিত্রটি করেছেন।
ছবিতে কাজল রেখার দুটি সময়কে দেখানো হবে। প্রথমে এই নাম ভূমিকার জন্য নির্মাতার পছন্দ ছিলেন দর্শকের ভীষণ প্রিয় অভিনেত্রী অগ্নিলা ইকবাল। কিন্তু এখন তিনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বাস করছেন বলে নতুন কাস্টিংয়ের কথা ভাবেন সেলিম। কাজল রেখার ছোটবেলার চরিত্রে দেখা যাবে, এ সময়ের টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকে। আর বড় বেলায় দেখা যাবে চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসা মন্দিরা চক্রবর্তীকে।
এই দুটি চরিত্র নিয়ে সেলিম সংবাদ সম্মেলনে সেলিম বলেন, মন্দিরা আর সাদিয়ার চেহারায় মিল আছে। দুজনেরই ঢেউ খেলানো চুল। তাই, আমার মনে হয়, এই কাস্টিং পারফেক্ট আছে।
গানমেলার তৃতীয় প্রযোজনা হেমন্ত মুখার্জীর "মাগো ভাবনা কেন" প্রকাশিত হয়েছে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে। গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন উওর আমেরিকার স্বনামধন্য শিল্পীরা।
তাঁরা হলেন আফজাল হোসেইন, কৃষ্ণাতিথী, নাজু আখন্দ, প্রমি তাজ, রায়ান তাজ, সজল রায়, শাহ মাহবুব ও শেখ নীলিমা শশী।
সঙ্গীত আয়োজন করেছেন ছিলেন অভিজিৎ জিতু এবং পরিচালনায় ছিলেন গানমেলার কর্ণধার শান্তনীল ধর। গানটি স্বাধীনতাকামী প্রতিটি শ্রোতাকে আনন্দ দেবে বলে গানমেলার বিশ্বাস।
আমেরিকান মালিকানাধীন সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গানমেলার অন্যতম প্রধান লক্ষ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে একটি সঙ্গীতের মেলবন্ধন সৃষ্টি।
হেমন্ত মুখার্জীর কালজয়ী গান "মাগো ভাবনা কেন" এর মিউজিক ভিডিও ধারণ করা হয়েছে নিউ ইয়র্কের ঐতিহাসিক টাইম স্কয়ারে।
গানটির চিত্রগ্রহণ করেছেন আবীর বড়ুয়া ও সম্পাদনা করেছেন রাজেশ মজুমদার। গানটি শ্রোতাকূলের কাছে সাদরে গৃহিত হবে বলে গানমেলার বিশ্বাস। গানটি শুনতে ঢুঁ মারতে পারে গানমেলার ইউটিউব চ্যানেলে youtube.com/@gaanmela001.
সম্প্রতি সিনেমা থেকে বিরতি নেওয়ার বিষয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছিলেন অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি। সে খবর প্রকাশ্যে আসতেই মন ভেঙেছিল তাঁর অনুরাগীদের। এত অল্প বয়সে তাঁর এই সিদ্ধান্তে ভীষণ ভাবে অবাক হয়েছিলেন বিনোদন জগত। এবার সেই পোস্ট এবং ঘোষণা নিয়ে মুখ খুললেন নায়ক নিজেই।
তিনি জানিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই নেওয়া। 'আজ তক' -এর একটি ইভেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিক্রান্ত তাঁর এই সিদ্ধান্তের পিছনের কারণগুলি ব্যাখ্যা করেন এই অভিনেতা।
নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে বিক্রান্ত বলেছেন, ‘যে জীবনের স্বপ্ন আমি সবসময় দেখেছিলাম, অবশেষে আমি তা পেয়েছি। আমার মনে হয়েছিল এটা বেঁচে থাকার সময়। জীবনের সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। এই উপলব্ধি আমাকে পিছিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। আগামী বছর শুধুমাত্র একটি ছবিতে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি।’
বিক্রান্ত বলেন, ‘আমি জীবনকে যাপন করি, কিন্তু আমি স্বভাবতই অন্তর্মুখী। আমার ইচ্ছে হলে তবেই আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতাম, বেছে বেছে কিছু পোস্ট করতাম। তবে, আমি অনুভব করেছি যে আমার সিদ্ধান্ত আমার দর্শকদের জানানো গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সিনেমা দেখেছেন জানিয়ে বিক্রান্ত আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তাঁর ছবি ‘সবরমতি রিপোর্ট’ দেখেছিলেন, এটা তাঁর অনেক বড় প্রাপ্তি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গত এক দশকে কোনও ছবি দেখেননি। কিন্তু তিনি একমাত্র আমার ছবি দেখেছিলেন। এটা আমার জন্য কত বড় বিষয় তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। এটা আমার ক্যারিয়ারের একটা উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
বিক্রান্ত আরও জানান যে, তাঁর ছেলের জন্ম তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির উপর গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কথায়, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি আমার ছেলে বা আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইমও কাটাতে পারছিলাম না। একজন অভিনেতা, স্বামী, ছেলে এবং বাবা হিসাবে আমার ভূমিকাগুলিকে থামানো এবং প্রতিফলিত করা আমার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। আমার জীবনে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্তটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।’
অভিনেতা একজন শিল্পী হিসাবে তার নৈপুণ্যকে সম্মান করার দিকে মনোনিবেশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পেশাগত ভাবে আমার যা আছে তা অর্জন করার পরে, আমি একজন অভিনেতা হিসাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
কন্যা সন্তান মা হলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। শনিবার অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর সকালেই তাদের পরিবারে নতুন অতিথি আসে। সন্তানের আগমনের খবর জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টকার্ড শেয়ার করেন কোয়েল।
অভিনেত্রী লিখেন, আমরা আশীর্বাদধন্য আমাদের কন্যাকে পেয়ে। সামাজিক মাধ্যমে এই পোস্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা বার্তায় সিক্ত হন এই অভিনেত্রী। অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে সকলেই তাকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন।
এর আগে দুর্গাপূজার সময় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আনেন কোয়েল মল্লিক। তখন থেকে মল্লিক-রানে পরিবারের মধ্যে শুরু হতে থাকে অধীর অপেক্ষা। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল, ঘর আলো করে কোয়েলের কোলে এলো এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। জানা যায়, কোয়েল ও সদ্যোজাত দুজনেই সুস্থ আছেন।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম সন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী কোয়েল। পুত্রসন্তান কবীরের জন্মের আগে নানা ধরনের খবর সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতেন কোয়েল। তবে দ্বিতীয় সন্তান জন্মানোর আগে তেমন কোনও পোস্ট বা ছবি শেয়ার করেননি অভিনেত্রী। বিষয়টি একেবারেই পারিবারিক রেখেছিলেন কোয়েল ও তার স্বামী।
কিছুদিন আগেই ‘মিতিন মাসি’ সিরিজের শ্যুটিং শেষ করেছেন কোয়েল, এছাড়া মহালয়ায় টেলিভিশনের পর্দায় তাকে দুর্গার বেশে দেখা গেছে। ছেলে কবীরের জন্মের পর কাজে ফিরেছিলেন তিনি। এবার মেয়ের জন্মের পর কতদিনের মাথায় নতুন কাজ নিয়ে পর্দায় ফেরেন কোয়েল সেই অপেক্ষায় তার অনুরাগীরা।
কবি হেলাল হাফিজ শাহবাগে সুপার হোমে থাকতেন। সেখানে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যান, পিজিতে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন (৭ অক্টোবর ১৯৪৮- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪)। ৭৬ বছর বয়স ছিল কবির। লিখেছিলেন বাংলাদেশে বেশি বিক্রি হওয়া কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। হেলাল হাফিজের ইন্তেকালের খবরে কবি সাদী কাউকাব লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে বাংলাদেশি কবিতা উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ’। বিষয়টি ঠিক তাই। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি কবিতার পালস ধরতে পেরেছিলেন। না চাইতেই তিনি এই ভূখণ্ডকে যা দিয়েছেন তা রাষ্ট্রের স্বীকার করা উচিত। সমকালীন সময়ে তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি বলা হয়। বাংলা ভাষায় একটি মাত্র বই লিখে আর কোনো কবি এতো জনপ্রিয় হয়নি। প্রিয় কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শিল্প সংস্কৃতি জগতের অনেকেই বেছে নিয়েছেন ফেসবুককে। তেমনি কিছু পোস্ট নিয়ে এই আয়োজন-
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমর মন দারুণ খারাপ প্রিয় কবির প্রস্থানে। দিয়েছেন দুটি স্ট্যাটাস। লিখেছেন, ‘‘নিউট্রন বোমা বোঝ/ মানুষ বোঝা না / মানুষ হয়তো সব বুঝবে / মানুষকে বুঝবে না...’ কিংবা ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিলেন প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ। অনন্তে এই যাত্রা শুভ হোক।’’
প্রখ্যাত অভিনেত্রী বন্যা মির্জা কবির উৎসর্গ কবিতাটি পোস্ট করেছেন, ‘আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো / আপনাকে, তোমাকে ও তোকে। / কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা? / কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন? / কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা -সেলুন? / কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো / চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত, / তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত। / কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে / খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে / কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।...’
গুণী অভিনেতা রওনক হাসান লিখেছেন, ‘প্রস্থান কবি হেলাল হাফিজ! অনন্ত যাত্রা আনন্দময় হোক।’
জনপ্রিয় নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন লিখেছেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়- তারই কবিতার লাইন। ফেরিওয়ালা কবিতার তিনি কষ্ট ফেরি করে বিক্রি করেছিলেন- কষ্ট নেবে কষ্ট / হরেক রকম কষ্ট আছে / কষ্ট নেবে কষ্ট! / লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট / পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট / আলোর মাঝে কালোর কষ্ট / ‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে / কষ্ট নেবে কষ্ট।’
জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মৌসুমী মৌ কবির সঙ্গে একটি পুরনো ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুঃখী নই, দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয় যে, আমাকে দুঃখ দেবে।’ ‘আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে কিছু থাকে, হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই, মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না কিচ্ছু থাকে না, খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।’ ওপারে ভালো থাকবেন প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ!
সিনিয়র সাংবাদিক গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ খোকন লিখেছেন, ‘কবিতা খুব কম পড়েছি বলা যাবে না। কিন্তু কবিতার বই সেই অর্থে কিনি নাই। এরপরও ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কিনেছিলাম। চট্টগ্রামের স্টেশন রোডে অমর বইঘর নামে একটি পুরনো বইয়ের দোকান ছিল, সেখান থেকে। আমার কলেজের খাতায় নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতার লাইন লিখে রাখতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখলাম আমার এক বন্ধু হেলাল হাফিজের কবিতায় বিরাজিত বিরহের লাইন কোট করে। ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো এমন মলিন। সেই কবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রয়াত বেবী মওদুদ। আপার ক্লাসমেইট ছিলেন কিংবা এক ক্লাস নিচে পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকবারই কবির সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে। যৌবনে তার মিছিলের ডাক উপেক্ষা করা আমাদের প্রজন্মের জন্য কঠিন ছিল। মার্চের গণহত্যার রাতে অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি আজ থেকে আর লৌকিক নন। মিছিলের কবি, ভালবাসার কবি হেলাল হাফিজ, আপনার প্রস্থান সত্যিই বেদনার।’
আরেক সাংবাদিক মৌসুমী আচার্য্য লিখেছেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ জীবন নামক যুদ্ধ; বিকেলের রোদের মতো খেয়ালী মেজাজে পাড়ি দিয়ে চিরবিদায় নিলেন কবি হেলাল হাফিস। ‘এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে, এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে’- এমন অনবদ্য সব উচ্চারণ পিছনে ফেলে চলে গেলেন যাবতীয় অধিকার ও এখতিয়ারের বাইরে। বিদায় অনবদ্য প্রেমিক, অসামান্য কবি।
নির্মাতা খিজির হায়াত খান কবির অটোগ্রাফটি সংযুক্ত করে লিখেছেন, ‘ওপারে ভালো থাকবেন প্রিয় কবি।’
সাংবাদিক মারজান ইমু লিখেছেন, ‘গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে? / আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি, / নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়? / এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে, / এক জীবন কতোটা আর কষ্ট দেবে!’ বিদায় হে প্রিয়, বিদায়...
মূকাভিনয় শিল্পী নিথর মাহবুব লিখেছেন, ‘প্রিয় কবি, দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ ইন্তেকাল করেছেন।’
মঞ্চ নির্দেশক ওয়াহিদুল ইসলাম এই কার্ডটি শেয়ার করেছন।’
তরুণ অভিনেতা ইভান সাইর লিখেছেন, ‘বিদায় কবি। আজ থেকে আরও জীবন্ত হেলাল হাফিজ।’
শিশু সাহিত্যিক পলাশ মাহবুব লিখেছেন, ‘কবি হেলাল হাফিজ শারীরিকভাবে চলে গেলেও কবিতায় তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।’
জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘একজন অভিমানী কবি। তিনি বাংলার কবি। হেলাল হাফিজ। পরপারে ভালো থাকবেন আপনি। শ্রদ্ধা আর প্রণাম। ‘কেউ জানে না কেনো তোমার এমন হলো কেনো হলো! / জানি তুমি ভালোই আছো / ভালো থেকো / পত্র দিয়ো।’ প্রার্থনা আপনার জন্যে। এভাবেই শূণ্য হচ্ছে আমাদের চারপাশ।’’
তরুণ সাংবাদিক নাজমুস সাকিব রহমান লিখেছেন, ‘‘হেলাল হাফিজের প্রথম বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ যখন আমার হাতে আসে তখন হাই স্কুলে পড়ি। ততদিনে বইটার বয়স দুই দশক পার হয়ে গেছে। প্রচ্ছদেও বদল এসেছে। এরপর কত কত দিন পার হলো। তার অনেক কবিতা এখনো মুখস্ত রয়ে গেছে। যদিও ‘কষ্ট নেবে কষ্ট’ শুনলেই আমার বিশ্রি রকম মেজাজ খারাপ হয়। অবশ্য ‘স্লোগান লেখক’ হিসেবে তার বদনাম আছে। মেয়েরা পছন্দ করে বলেও। সে থাকুক, কিন্তু তার দুটি কবিতা আমি ভীষণ পছন্দ করি। একটা হলো ‘কিছুই পারিনি দিতে, এই নাও বাম হাত তোমাকে দিলাম’। এটা ছিল তার পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড। বাম রাজনীতির প্রতি তার আহ্বান। তিনি জানতেন মানুষের কথা কারা বলে।
আরেকটা কবিতা খুব ছোট্ট। তিনি বলছেন, ‘কে আছেন?/ দয়া করে আকাশকে একটু বলেন— সে সামান্য উপরে উঠুক/ আমি দাঁড়াতে পারছি না।’ সাহিত্য বিচারে বিদগ্ধদের কাছে এগুলো হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমার মতো অনেক সামান্য মানুষ যারা প্রচণ্ড পরিশ্রম করেও দাঁড়াবার জায়গা পাচ্ছে না— তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এই শব্দগুলো। এই ঢাকা শহরে আমি চাইলেই তার কাছে যেতে পারতাম। প্রেস ক্লাবে তিনি যেভাবে সবাইকে খাওয়াতেন হয়তো আমার ক্ষেত্রেও তাই হতো। কিন্তু কখনো ইচ্ছে করেনি। কী জিজ্ঞেস করব, সবই তো পড়া। ইন্টারভিউ নেব? ওটাও তো সিফাত নিয়ে রেখেছে। আমার জন্য বাকি ছিল শুধু ছবি তোলা। আমার কাছে তার ফোন নম্বর আছে কয়েক বছর হলো। এখন সবই অতীত। খোদা তার পরবর্তী জীবন শান্তিময় করুক। আমিন।’