‘শেষমেশ’ ঝড় তুলবেন ইভানা!



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
‘শেষমেষ'-এ সহশিল্পীদের সঙ্গে পারসা ইভানা

‘শেষমেষ'-এ সহশিল্পীদের সঙ্গে পারসা ইভানা

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান সময়ে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পারসা ইভানা। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটক দিয়ে ভক্তদের কাছে দারুণ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। এই নাটকে ইভা চরিত্রটিকে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি। এরপর কাজ করেছেন আরও অনেক দর্শকপ্রিয় নাটক-টেলিছবি ও ওয়েবে। 

গেল ভালোবাসা দিবসে তার অভিনীত ‘দু:খিত’সহ একাধিক কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এবার ঈদের কাজ দিয়েও দর্শকের মন মাতাতে আসছেন ইভানা। তারমধ্যে একটি জনপ্রিয় নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির ‘শেষমেশ’। আসছে ঈদে এটি প্রচারে আসবে।

দুটো ছবি পোস্ট করে পারসা ইভানা রহস্য জিইয়ে রেখেছেন। তিনি প্রকাশ করেননি তার চরিত্রের নাম ও ধরন। প্রকাশ করেননি ‘শেষমেশ’ কি নাটক নাকি ওটিটির কোনো ফিল্ম বা সিরিজ।

শুধু এটুকু বোঝা গেল, এতে নাচ দিয়ে ঝড় তুলবেন ব্যাচেলর পয়েন্টের ইভা। কারণ এই তারকা অভিনয়ের আগে থেকেই নাচের জগতে তারকাখ্যাতি পান চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

এছাড়া ইভানাকে দেখা যাবে তার জুটি হিসেবে সবসময় দেখতে পাওয়া অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশের পরিচালনায় ‘সন্ধ্যা ৭ টা’য়। এই নাটকে একেবারেই ভিন্ন ধরনের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইভানা।

   

সোহেল চৌধুরী খুনের রায় শুনে যা বললেন মেয়ে লামিয়া



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
(বাঁমে) বাবা সোহেল চৌধুরী ও মা দিতির সঙ্গে ছোট্ট লামিয়া, বর্তমানে লামিয়া চৌধুরী (ডানে)

(বাঁমে) বাবা সোহেল চৌধুরী ও মা দিতির সঙ্গে ছোট্ট লামিয়া, বর্তমানে লামিয়া চৌধুরী (ডানে)

  • Font increase
  • Font Decrease

২৫ বছর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এই রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে সোহেল চৌধুরীর মেয়ে লামিয়া চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা তো ফেরত আসবে না। উনারা (অপরাধীরা) যেটা করেছেন, সেটার জবাব উনাদেরই দিতে হবে। উনাদের যাবজ্জীবন হোক কিংবা যেটাই হোক—বাবার মৃত্যু আমার জীবনে যে প্রভাব ফেলেছে, সেটা কোনোভাবেই পরিবর্তন হবে না। রিয়েলিটি নিয়েই আমাকে থাকতে হবে। এখন তাঁদের বিচারে আমাদের কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি, হবেও না।’

(বাঁমে) লামিয়া চৌধুরী, বাবা সোহেল চৌধুরীর কোলে ছোট্ট লামিয়া (ডানে)

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সেই খুনের মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আবদুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাই সিনেমার তারকা জুটি সোহেল চৌধুরী ও দিতির দুই সন্তানের মধ্যে লামিয়া চৌধুরী বড়। ছেলে শাফায়েত চৌধুরী কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে করে ইউরোপে থিতু হয়েছেন। কানাডার টরন্টো ফিল্ম স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় এসে নির্মাণে মনোযোগী হয়েছিলেন লামিয়া।

শৈশবেই বাবাকে হারানোর পর মা দিতির কাছেই বেড়ে উঠেছেন লামিয়া ও শাফায়েত। ২০১৬ সালে দিতির মৃত্যুর পর মা-বাবার স্মৃতিচিহ্ন নিয়েই বেঁচে আছেন তারা।

ঢাকাই সিনেমার তারকা জুটি সোহেল চৌধুরী ও দিতির দুই সন্তানের মধ্যে লামিয়া চৌধুরী বড়

এদিকেম গতকালেই লামিয়া তার নিজের কারণে আলোচনায় এসেছেন। তিনি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। ‘মেয়েদের গল্প’ শিরোনামের নারীকেন্দ্রিক সেই সিনেমাটি প্রযোজনা করবেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজেমেরী হক বাঁধন। এই ছবিতে অভিনয়ও করবেন বাঁধন।

;

নন্দিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের আদ্যোপান্ত



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

২৫ বছর আগে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তারা তিনজনই পলাতক। বাকি ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার কাগজপত্র ও রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে উঠে আসে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।

স্ত্রী চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতি ও কন্যা লামিয়ার সঙ্গে সোহেল চৌধুরী

আদালতে সাক্ষীরা যা বলেছিলেন

সাক্ষীরা বলেছেন, ওই দিন রাতে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গান বন্ধ করতে বলেছিলেন সোহেল ও তার বন্ধুরা। গান বন্ধ করা নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী আজিজের ওপর খেপে যান। তখন সোহেলের বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে যান। এ সময় ক্লাবের বাথরুমে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এই ট্রাম্প ক্লাবের মালিকানা ছিল বান্টি ও আশীষের। বিরোধের শুরু এখান থেকেই।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ট্রাম্প ক্লাবের কার্যক্রম চলত বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সপ্তম তলায়। ক্লাবের পশ্চিম পাশে ছিল একটি জামে মসজিদ। জবানবন্দিতে একাধিক সাক্ষী বলেছেন, ওই ক্লাবে নাচ-গানসহ অসামাজিক কার্যক্রম চলত। ক্লাবের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে স্থানীয় মুসল্লিদের পক্ষে অবস্থান নেন সোহেল চৌধুরী।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝামেলা হয়। ট্রাম্প ক্লাবের কাজ ব্যাহত হলে সোহেল চৌধুরীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আসামিরা।

২৪ জুলাইয়ের পার্টিতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝামেলার পর থেকে তার ওপর ট্রাম্প ক্লাবে ঢোকায় অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আসে। সেটি ক্লাবের কর্মচারীরাও পুলিশকে তখন জানিয়েছিলেন।

সোহেল চৌধুরীর মা নূরজাহান বেগম আদালতকে বলেছিলেন, বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। ক্লাবের পাশের মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন।

পলাতক আজিজ মোহাম্মদ ভাই এই বয়সেও এমন আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন বিদেশে

আজিজ ও সোহেলের বিরোধ

আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরীর মধ্যে যে গন্ডগোল হয়েছিল, সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মির্জা মাহাফুজ আদালত ও পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবে যান তিনি। তখন ক্লাবে আসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। আজিজ মোহাম্মদ তার স্ত্রীকে গান গাইতে বলেন। অন্যদিকে সোহেল চৌধুরী ও তার কয়েক বন্ধু গান থামাতে বলেন। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী ও তার দলের লোকজন মাহাফুজের টেবিলের সামনে আসেন। তখন তারা আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পাশে বসা এক নারীকে উঠে আসতে বলেন। ওই নারী না উঠলে সোহেল চৌধুরী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে যান।

মামলার আরেক সাক্ষী গোলাম মোহাম্মদ। তিনি সোহেলের বন্ধু। সাক্ষী হিসেবে তিনি তখন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বিচারককে বলেছিলেন, খুন হওয়ার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝগড়া হয়। বিষয়টি তার সামনে ঘটেছে। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্লাবের বান্টি ইসলামের সঙ্গে সোহেলের দুই থেকে তিনবার ঝগড়া হয়। পরে তা মিটেও যায়। তবে আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। আশীষ চৌধুরীই সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দেন। ভবিষ্যতে সোহেলকে ক্লাবে না আসার জন্য হুমকিও দেন।

তরুণ সোহেল চৌধুরী

খুনের ১৫ দিন আগে সোহেলকে টেলিফোনে হুমকি

সোহেল চৌধুরী হত্যা নিয়ে তার মা নূরজাহান বেগম আদালতকে বলেন, তাদের বাসার উল্টো দিকে ট্রাম্প ক্লাব। হত্যাকাণ্ডের দিন রাত দুইটায় সোহেল বাসায় ফেরেন। ক্লাবের সামনে জামে মসজিদ। পরে সোহেল আবার ক্লাবে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে দুটি গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সোহেল চৌধুরীর মা আদালতকে আরও বলেছিলেন, সোহেল খুন হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে টেলিফোনে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলামের লোকজন হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, সোহেলের মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে।

যেভাবে খুন

সোহেল চৌধুরীকে কীভাবে গুলি করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেদিন সোহেল চৌধুরী ক্লাবে ঢুকতে চেয়েছিলেন। তবে তাকে ক্লাবে ঢোকার অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাত তিনটার দিকে সোহেল চৌধুরী আবার ক্লাবের সামনে আসেন। তখন পেশাদার খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

স্ত্রী পারভীন সুলতানা দিতি ও দুই সন্তানের সঙ্গে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী

মামলার সাক্ষী আবুল কালাম পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেদিন সোহেলসহ সাত থেকে আটজন লোক ক্লাবের সামনে গেলে হঠাৎ গুলি করা হয়। তার পেটে গুলি লাগে। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আরও গুলিবিদ্ধ হন নীরব ও দাইয়ান। আর সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গুলি করার পর ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক গাড়িতে করে পালিয়ে যান। সোহেলের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর আগের ঝগড়ার জেরে তাকে ঠান্ডা মাথায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

;

‘পুনর্জন্ম’, ‘দ্য সাইলেন্স’র নির্বাহী প্রযোজকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অকালপ্রয়াত প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান

অকালপ্রয়াত প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান

  • Font increase
  • Font Decrease

নির্মাতা ভিকি জাহেদের তুমুল জনপ্রিয় ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্জন্ম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘আরারাত’-এর নির্বাহী প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান আর নেই। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রূহানের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন নির্মাতা ভিকি জাহেদ।

তার বন্ধু-সহকর্মীরা জানিয়েছেন, আত্মহত্যা করেছেন রূহান। রাত দেড়টার দিকে নিজের রুমে সিলিং ফ্যানে ঝুলছিলেন তিনি। ভিকি জাহেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে ওর রুমমেট দরজা খুলে দেখে, রূহান ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।’ নির্মাতা আরও জানান, ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে রূহানের মা–বাবা রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা হয়েছেন। তারা ঢাকায় ফিরলে লাশের ময়নাতদন্ত হবে।

ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্জন্ম’র পোস্টার

জানা গেছে, সম্প্রতি স্ত্রীর সঙ্গে রূহানের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, এর পর থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন রূহান। সামাজিক মাধ্যম দেখলেও বোঝা যায় হতাশায় ডুবে ছিলেন রূহান। 

সর্বশেষ ৪ মে একটি পোস্ট তিনি লিখেছেন, ‘আমার চেনা পৃথিবীর বুকে যেমন তুমি নাই, তোমার বুকেও আমি নাই! তাহলে কেন সেদিন বলেছিলে? আমার সঙ্গেই এই জন্ম কাটিয়ে দেবে? ভুল বুঝিও না। আমি দোষ দিচ্ছি না। জাস্ট বললাম আর কি!’ রূহানের এই অনুভূতির পোস্টে তাকে অকালে হারিয়ে শোকবার্তা দিচ্ছেন সহকর্মী-বন্ধুরা।

ওয়েব ফিল্ম ‘আরারাত’-এর নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন মাসুদুল মাহমুদ রূহান

রূহানের এই অকালপ্রয়াণের খবরে শোকে মুষড়ে পড়েছেন বন্ধু-সহকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যম ভরে উঠেছে শোকবার্তায়। রূহানের সঙ্গে তোলা একটি ভিডিও শেয়ার করে অভিনেতা শ্যামল মওলা লিখেছেন, ‘এই হাসি আর কখনো হাসবে না…ওপারে দেখা হবে…রূহান।’

জনপ্রিয় অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব অকালপ্রয়াত এই প্রযোজকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কেন করলি রুহান???? কেন করলি রুহান???? কেন করলি রুহান????’

সিনেমাটোগ্রাফার বিদ্রোহী দীপনের সঙ্গে অকালপ্রয়াত প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রূহান (ডানে)

‘পুনর্জন্ম’, ‘রেডরাম’, ‘চম্পা হাউজ’, ‘শুক্লপক্ষ’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘আরারাত’–এর মতো জনপ্রিয় ওয়েব ফিল্ম, নাটক-সিরিজের নির্বাহী প্রযোজক তিনি। ভিকি জাহেদের বেশির ভাগ কাজেরই নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন রূহান। গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত সিরিজ ‘রুমি’রও লাইন প্রোডিউসার ছিলেন রূহান। এ সিরিজটিরও নির্মাতা ছিলেন ভিকি জাহেদ।

;

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই, যেভাবে সম্পৃক্ত সোহেল চৌধুরী হত্যায়



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরী

আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও সোহেল চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

আজিজ মোহাম্মদ ভাই, পরিচিত চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবে। তাকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি এই রহস্যময়তাকে আরো আলোচনায় নিয়ে এসেছে। পারিবারিক এ পদবী তিনি পেয়েছেন পিতা মোহাম্মদ ভাই এর কাছ থেকে। যুবক বয়স থেকেই প্লে-বয় হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে, তৈরি করেন নানা বিতর্ক, আলোচনা। মুখরোচক অনেক গল্পও রয়েছে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে নিয়ে। অভিনেতা হত্যা ও নায়িকাদের নিয়ে কেলেঙ্কারিসহ চলচ্চিত্র জগতের সব অপরাধে যেন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নাম। এছাড়াও রয়েছে মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। তবে এসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ না থাকায় সবসময় তিনি থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বর্তমানে থাইল্যান্ডে প্রবাসী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। বেশ কিছুদিন আলোচনার বাইরে থাকলেও, বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ২৫ বছর পর চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারক। এবার আবারও আলোচনায় এসেছেন রহস্যময় এ ব্যক্তি।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা জানিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাইয়ের একটি ঘটনা থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই, আজিজের আত্মীয় বান্টি ইসলাম, বান্টির বন্ধু আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে সোহেলের বিরোধের শুরু। এর জেরেই ট্রাম্প ক্লাবের সামনে ভাড়াটে লোক দিয়ে হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে।

এর আগে ২০১৯ ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় আরেকবার আলোচনায় এসেছিলেন বহুল আলোচিত এই ব্যক্তি। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মালিকানাধীন গুলশান-২-এর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বাড়ির ছাদে মিনি বার ও ক্যাসিনোর সন্ধান পেয়েছিল। এছাড়া বিপুল পরিমাণে বিদেশি নামি-দামি ব্র্যান্ডের মদ, গাঁজা, সিসার উপকরণ এবং ক্যাসিনো সামগ্রীও জব্দ করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

কে এই আজিজ মোহাম্মাদ

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঠিকুজি অনুসন্ধানে জানা যায়, শিয়া মুসলিম ও প্রিন্স করিম আগা খানের ইসমাইলি সম্প্রদায়ভুক্ত তারা। মোহাম্মদ ভাই পরিবার নিয়ে ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসেন। ধণাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় বসবাস শুরু করে।

পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত থাকলেও ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে ঢুকে পড়েন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। অলিম্পিক ব্যাটারি, বেলপেন অলিম্পিক ব্রেড, বিস্কুট ইত্যাদি ছিল তাদের পারিবারিক ব্যবসা।

আজিজ মোহম্মদ ভাই এরশাদ জামানায় লাইমলাইটে আসেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কন্যা মুনমুন সেনকে ঢাকায় এনে। এক সময়ের টালিগঞ্জের হার্টথ্রব এ নায়িকা বহুবার ঢাকা আসেন।

কথিত আছে, সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা আছে উপমহাদেশের কুখ্যাত ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে। তার পরামর্শে আজিজ মোহাম্মদ ঢুকে পড়েন সিনেমা ব্যবসায়।

পরিবারের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই

তার প্রোডাক্টশন হাউস এমবি ফিল্মস ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছে। শুরুতেই নায়িকাদের নিয়ে মুখরোচক খবরে আসে এই প্রযোজকের নাম। আশির দশকের বাংলা সিনেমার নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে আসে তার নাম। এই হত্যাকাণ্ডটি বনানীর কামাল আতার্তুক সড়কের তৎকালীন ট্রাম্পস ক্লাবে সংঘটিত হয়।

জনশ্রুতি আছে, জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুতেও তাঁর হাত রয়েছে। এ নিয়ে মোহাম্মদ আজিজ ভাইকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

জানা যায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে নারীঘটিত বিতর্কে জড়িয়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তবে তাকে মুক্ত করতে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ধর্মীও নেতা প্রিন্স করিম আগা খান নিজেই বাংলাদেশে এসেছিলেন।

তবে এতসব অভিযোগে যার নামে, তার এসব বিষয়ে নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ! দিব্যি থাইল্যান্ডে বসে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। গুলশানের বাসা দেখাশুনা করেন তার ভাই-বোন।

নায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যায় যেভাবে জড়িত আজিজ মোহাম্মাদ

সোহেল চৌধুরীকে হত্যার কারণ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে যে সুপার ট্রাম্পস ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপকে ঘিরেই মূলত আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয় এবং পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ড ঘটে।

সেই দিন রাতে বনানীর ট্রাম্প ক্লাবে গান বন্ধ করতে বলেছিলেন সোহেল ও তাঁর বন্ধুরা। গান বন্ধ করা নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সোহেল চৌধুরী আজিজের ওপর ক্ষেপে যান। তখন সোহেলের বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে যান। এ সময় ক্লাবের বাথরুমে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এই ট্রাম্প ক্লাবের মালিকানা ছিল বান্টি ও আশীষের। বিরোধের শুরু এখান থেকেই।

তদন্ত কর্মকর্তার অভিযোগপত্রে বলেন, ‘বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের আট তলায় সুপার ট্রাম্পস ক্লাব। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও নারী দিয়ে অশ্লীল নাচ হতো। সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।’

মামলার এক সাক্ষীর তথ্যমতে, খুন হওয়ার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর ঝগড়া হয়। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্লাবের বান্টি ইসলামের সঙ্গে সোহেলের দুই থেকে তিনবার ঝগড়া হয়। পরে তা মিটেও যায়। তবে আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। আশীষ চৌধুরীই সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দেন। ভবিষ্যতে সোহেলকে ক্লাবে না আসার জন্য হুমকিও দেন।

এছাড়া সোহেল চৌধুরী হত্যা নিয়ে তাঁর মা নূরজাহান বেগম আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, সোহেল খুন হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে টেলিফোনে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলামের লোকজন হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, সোহেলের মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন রাত দুইটায় সোহেল বাসায় ফেরেন। ক্লাবের সামনে জামে মসজিদ। পরে সোহেল আবার ক্লাবে গেলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে দুটি গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

মামলার অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর বাকবিতণ্ডা হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। তারা তখন সোহেল চৌধুরীকে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা পেশাদার খুনি দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করান।‘

২৩ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে ডিবির তদন্তে উঠে আসে, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে খুন করা হয়।

;