বন্ধুত্বটা হারিয়ে যায় নি : পুতুল ও রেজা দম্পতি

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রেজা ও পুতুল দম্পতি /  ছবি : শেখ সাদী

রেজা ও পুতুল দম্পতি / ছবি : শেখ সাদী

সাজিয়া সুলতানা পুতুল ও সৈয়দ রেজা আলী- বন্ধু থেকে এখন দম্পতি। দুজনেই মাল্টি ট্যালেন্টেড। গান লেখেন, সুর করেন, কম্পোজিশন করেন এবং গান গেয়ে থাকেন। একসঙ্গে সুরের সাগরে ভাসছেন তারা। সদা হাসিমুখ এই দুই শিল্পীর রসায়নও বেশ মজার। আজ তাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী। দাম্পত্যের নানা বিষয় নিয়ে বার্তা২৪.কমের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ


তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে মনের মধ্যে কী অনুভব হচ্ছে?

বিজ্ঞাপন

সৈয়দ রেজা আলী : আমাদের তিন বছরের অ্যানিভার্সারি, না?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : বিশ্বাস করা কঠিন! কিন্তু আসলেই তিন বছর।

বিজ্ঞাপন

সৈয়দ রেজা আলী : সাথে আমাদের একটা মেয়েও (গীতলিনা) আছে।

কন্যা গীতলিনাকে নিয়ে পুতুল ও রেজা দম্পতি /  ছবি : শেখ সাদী

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : হ্যাঁ। সেটি বাড়তি পাওয়া! একেবারে ভরা করোনার মধ্যে আমাদের বিয়েটা হয়। একেবারে ঘরোয়াভাবে। যেদিন বিয়ে হয় দুপুরবেলা আমার শাশুড়ি মায়ের তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে সন্ধ্যায় বিয়ে হয়। কারণ, তারপর দিন থেকে লকডাউন শুরু হয়। একটা বিচ্ছিন্নতা শুরু হবে সেই ভাবনা থেকেই তিনি চেয়েছিলেন বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে তুলে নেবেন সেদিনই।

সৈয়দ রেজা আলী : সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল, সাধারনত বিয়ে করতে জামাই যায় শশুর বাড়ি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে উল্টো হয়েছিল। পুতুল ও তার পরিবার এসেছিল আমাদের বাড়িতে। সেখানেই বিয়ে হয় (হাহাহা)।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আমার ঠিকানা বদলে গেল সেই থেকে। এখন আমরা একসঙ্গে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

রেজা ও পুতুল দম্পতি /  ছবি : শেখ সাদী

আপনারা একে অন্যকে ‘তুই’ সম্বোধন করেন। এর পেছনের কারণ কী?


সৈয়দ রেজা আলী : আসলে আমরা তো আগে থেকেই বন্ধু ছিলাম। বন্ধুদের তো তুই তুকারি সম্পর্ক। আর আমরা কখনো স্বামী-স্ত্রী হবো সেটি তো ভাবিনি তখন। সেই যে সম্পর্ক, বিয়ের পর তা আর বদলায়নি। এজন্যই তুই করে ডাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : হ্যা। বন্ধুত্বের খাতিরে আমার আসা যাওয়া ছিল রেজাদের বাড়িতে। তার বাবা-মা আমাকে ভালোভাবে জানতেন। আমিও তাদের জানতাম। আমরা একসঙ্গে গানের কাজ করতাম। একপর্যায়ে বাবা মায়ের পক্ষ থেকেই আমাদের বন্ধুত্বকে বিয়েতে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন মনে হয়, তারা ঠিক কাজটাই করেছেন। রেজার মতো জীবনসঙ্গী আমি পেয়েছি, এটা সত্যিই আরামের।

পুতুল /  ছবি : শেখ সাদী

বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একে অন্যকে কোন উপহার দিয়েছেন কী?


(সমস্বরে) অবশ্যই। বছরে একটা দিন আসে, উপহার না দিলে কী হয় (হাহাহা)!

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আমার কাছে রেজার চাওয়া থাকে মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট জাতীয় কিছু। যদিও আমি চেষ্টা করি তা না দিতে। কারণ সে সারা বছরই ওগুলো কিনতে থাকে। তাই অন্যকিছু দিয়েছি গত দুই বছর। কিন্তু এবছর সে বলেছে, না আমার মিউজিক্যাল কিছু হলেই ভালো হয়। পরে তাকে একটি গীটারের প্যাডেল দিয়েছি। যতোবার সে ব্যবহার করবে আমার কথন মনে পড়বে!

সৈয়দ রেজা আলী : আমি এখনো দিইনি। সবটা এখনই বলে দেব? সারপ্রাইজ থাকাই ভালো।

কন্যা গীতলিনাকে নিয়ে রেজা ও পুতুল দম্পতি /  ছবি : শেখ সাদী

কাজের জায়গায় পরস্পরকে কিভাবে সাপোর্ট করেন?


(সমস্বরে) আমরা একে অপরের কাজকে সম্মান করি। তাই কেউ যাতে কারও জন্য বিরক্ত না হয় সেদিক খেয়াল রাখি। এমনকি যার কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ থাকে তাকে কাজের মধ্যেই থাকতে দেই। সে সময় আমাদের মেয়েকে অন্যজন টেক কেয়ার করি।


দুজন শিল্পী হওয়ায় একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে কোন বিড়ম্বনা তৈরী হয় কী?


সৈয়দ রেজা আলী : না, আমরা একে অন্যের ব্যাপারে জাজমেন্টাল নই। সবচেয়ে বড় কথা আমরা একে অন্যকে স্পেস দিই। সেটা কাজ হোক বা একান্তে কিছু মি টাইম কাটানো হোক। কারণ আমাদের একে অন্যের ব্যক্তিত্ব, মেধা কিংবা এথিক্যাল জায়গায় প্রচন্ড সম্মানবোধ রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, যেহেতু দুজনই ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত ফলে আমরা তো একে অপরের কাজ কিছুটা হলেও বুঝি। তাই আমরা কেউ কিছু তৈরী করলে সবার আগেই একে অপরকেই দেখাই। এবং কোন সাজেশন আসলে সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : বিড়ম্বনা তো হয় না। বরং লাভ হয়েছে আমার। দেখা গেল কেউ বলল, একটা গানের ভয়েস দিতে হবে, স্টুডিওতে আসুন। আমি যদি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে থাকি, তাহলে বলি যে, আপনি কি আমাকে মিউজিক্যাল ট্র্যাক টা পাঠাবেন? আমি ভয়েসটা রেকর্ড করে পাঠাচ্ছি। পরে সেটা রেজার ওপর চাপিয়ে দিই। ও শত ব্যস্ত থাকলেও আমাকে এক ফাঁকে ভয়েসটা রেকর্ড করে দেয়।

নিজের ব্যান্ডদল ‘ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশ’-এর সদস্যদের সঙ্গে রেজা

তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে নিজের কাছে এবং একে অপরের কাছে কী প্রত্যাশা রয়েছে?


সৈয়দ রেজা আলী : আমি সত্যি স্টুডিওটা হওয়ার পর কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকি। এটা অবশ্য পুতুলেরই চাওয়া ছিল। আমার বাবা বিয়ের পর পুতুলকে বলেছিলেন, ‘কি চাও তুমি?’ ও বলেছিল, ‘বাবা, আমাদের একটা স্টুডিও করে দেন।’ তবে এ বছর চেষ্টা করব আমার স্ত্রী, কন্যা ও পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে। আর নিজের কাছে প্রত্যাশা হলো আমি একটি ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবাম করছি। সেটি যতো সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায় সেই চেষ্টা করব।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আমার ক্ষেত্রেও গান নিয়ে সব চাওয়া পাওয়া। কারণ গান আ ব্যক্তিজীবন আমাদের মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রেজার কাছে আমারও প্রত্যাশা ওর ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবামটা যেন এ বছর ঠিকঠাকভাবে প্রকাশ করতে পারে। কারণ এটা ওর অনেক বড় একটি স্বপ্ন ও সাধনার কাজ। আর নিজের কাছে প্রত্যাশা হলো আমাদের কন্যা এখন থেকে একটু একটু পড়তে পারে। আমরা চাই এই সময়ে তাকে আরও সময় দিয়ে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে।