সব ধরনের গঠনমূলক কমেন্ট গ্রহণ করতে প্রস্তুত: ইমি
দেশের শীর্ষ র্যাম্প মডেল শাবনাজ সাদিয়া ইমি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। মাঝেমধ্যে নাটকে অভিনয়ও করতে দেখা গেছে তাকে। আজ শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত ‘আজব কারখানা’ চলচ্চিত্রে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে বড়পর্দায় অভিষেক হয়েছে ইমির। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন এই তারকা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
আজ সিনেমা হলে প্রথমবার নিজেকে দেখলেন। অনুভূতি কেমন?
এই অনুভূতি আমি ঠিক বোঝাতে পারবো না! এতো জিনিস একসঙ্গে মাথা আর মনে খেলছে যে ঠিক কোন অনুভূতির কথা বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না। আজ আমার বাবা থাকলে হয়তো খুব খুশি হতেন। কারণ তিনি একজন মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। তিনি বুঝতেন একজন শিল্পীর প্রথমবার বড়পর্দায় নিজেকে দেখার অভিজ্ঞতা কেমন! আমি দীর্ঘকাল এই দিনটির জন্য অপক্ষো করেছি। আজ একটা স্বপ্ন সত্য হলো।
প্রথমদিনে দর্শকের কেমন সাড়া পেলেন?
আজ আমার পরিচিতি-অপরিচিত অনেক দর্শকের সঙ্গে দেখা হয়েছে সিনেমা হলে। যারা দেখতে এসেছেন তারা ভালোটাই বলেছেন। তবে আমি যদি কোন ভুল করি বা আমার কোন খামতি থাকে সেটা শুনতেও প্রস্তুত। কারণ অভিষেক সিনেমাতেই শতভাগ পারফেক্ট হবো না এটা খুব ভালো করেই মাথায় আছে। ফলে সব ধরনের গঠনমূলক কমেন্টই আমি গ্রহণ করবো। যা ভবিষ্যতে আমার কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করি।
ছবিটি বেশ অল্প সংখ্যক হলে মুক্তি পেয়েছে। এর কারণ কী?
ছবিটি কতো সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছালো কিংবা সিনেমাটি কতোখানি ব্যবসা করলো সেটি আমার কাছে মূখ্য নয়। আমার কাজ ছিলো, নিজের চরিত্রটি সুচারুরূপে ফুটিয়ে তোলা। সেটি একদম না পারলে ডিরেক্টর নিশ্চয়ই শট ওকে করতেন না। আর ব্যবসার দিকটি প্রযোজক-পরিচালকের ডিপার্টমেন্ট। যদিও আমার প্রযোজক-পরিচালক এরইমধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এই ছবি একেবারে সিঙ্গেলস্ক্রিন পূর্ণ হওয়ার মতো ছবি নয়। কারণ প্রতিটি ছবি আলাদা উদ্দেশে নির্মিত হয়। এই ছবিটির উদ্দেশ্যই ছিলো আমাদের বাংলার ফোকগানের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারকে সিনেমার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা। সেটি অনেকটাই করতে পেরেছেন নির্মাতারা। ছবিটি এরইমধ্যে ঢাকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে, প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাছাড়া নির্মাতা এও বলেছেন যে, এখনই সারাদেশের অনেক বেশি সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি দিতে চান না তারা। কারণ এই কাজে যে পরিমাণ লোকবল দরকার তা আপাতত আমাদের নেই।
প্রথম ছবি হিসেবে ‘আজব কারখানা’কে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
যেহেতু অনেক বছর ধরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, তাই এরমধ্যে সিনেমার একেবারেই প্রস্তাব যে পাইনি তাতো নয়! বেশকিছু ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি নানা কারণে। কিছু ছবির গল্প, নির্মাতা কিংবা সহশিল্পী পছন্দ হয়নি বলে করিনি। একটা সময় আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাও যা ছিলো তাতে আমার মতো মানসিকতার মেয়ের ছবি করার সুযোগ ছিলো না। তাছাড়া একটা সময় নিজেকে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুতও মনে করতাম না। কারণ আমার বাবা অভিনয়ের জন্য কি পরিমাণ ডেডিকেটেড ছিলেন সেটা নিজের চোখে দেখেছি। আমিও চাইতাম অভিনয় করতে হলে অবশ্যই একটু শিখে পড়েই আসবো। এজন্য কিছু নাটকে অভিনয় করে এবং নিজস্ব চর্চার মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছি। এরপর আমার কাজ ছিলো একটি ভালো গল্প, ভালো নির্মাতা ও ভালো সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করা। সেটি আমি ‘আজব কারখানা’তেই পেয়েছি। নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী আমাকে আগ্রহ করে ছবিতে নিয়েছেন। সহশিল্পী হিসেবে কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে পাওয়াটাও কম সৌভাগ্যের কথা নয়। সব মিলিয়ে রাজী হওয়া।
প্রথম ছবিতে অভিনয়, তাও পরমব্রত’র মতো তারকার সঙ্গে বেশিরভাগ দৃশ্য। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
এক কথায় বলতে গেলে ভালো ছিলো। কারণ অভিনয়টা আরাম করে করার মতো একটি পরিবেশ পেয়েছি। নির্মাতা বেশ ধরে ধরে আমার অংশের কাজটুকু করেছেন। তাছাড়া চরিত্রটিও ছিলো আমার বাস্তব জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মিল। এখানে আমি একজন নামকরা মডেলের চরিত্রেই অভিনয় করেছি। এজন্য কাজটি করা আমার জন্য অতো কঠিন ছিলো না। তবে যতোই চেনাজানা চরিত্র করি না কেন, পরমব্রত’র মতো পাকা অভিনেতার সঙ্গে প্রথম সিনেমায় কাজ করতে গেলে কিছুটা ভয় থেকেই যায়। সেটি আমাকে কাটিয়ে উঠতে তিনি বেশ সাহায্য করেছেন। যার ফলে তার সঙ্গে রোমান্টিক দৃশ্যগুলো করতেও আমার খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
আাগামীর কাজের পরিকল্পনা কী?
‘আজব কারখানা’র শুটিং শেষ করেছিলাম কোভিডের আগেই। তখন থেকেই আমি অপেক্ষা করছিলাম এই ছবিতে আমার অভিনয় দর্শক কিভাবে নেয় সেটা দেখার। এই ছবির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই আমার আগামীর অভিনয়ক্যারিয়ার নির্ভর করবে বলে মনে হয়েছে। এজন্য এরমধ্যে আর কোন সিনেমায় কাজ করিনি। দেখা যাক দর্শক কিভাবে নেয় আমাকে। ভালোভাবে নিলে নিশ্চয়ই ভালো নির্মাতাদের ভালো ভালো ছবিতে কাজের প্রস্তাব পাবো। আর সিনেমার বাইরে মডেলিং তো চলবেই। সম্প্রতি বলিউড তারকা আর্জুন রামপালের সঙ্গে ঢাকাতেই একটা ফ্যাশন শো করলাম। তিনি আমার পছন্দের তারকাদের একজন। সেই অভিজ্ঞতাও মনে রাখার মতো।