যথার্থ শিল্পীর মূল্যায়ন হয় না কখনোই : ক্যামেলিয়া মুস্তাফার মৃত্যুতে ফাহমিদা
না ফেরার দেশে চলে গেছেন একসময়ের জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনেত্রী ক্যামেলিয়া মুস্তাফা (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি গতকাল ১৭ জুলাই সকালে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সঙ্গীতশিল্পী ফাহমিদা নবী ও কম্পোজার রিপন খান।
দর্শকের মধ্যে ক্যামিলিয়া মুস্তাফাকে নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিলো। অনেকেই মনে করতেন তিনি প্রয়াত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার মেয়ে ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার বোন। আদতে তার বাবা দেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম। কন্যা ক্যামেলিয়ার জন্মের পর স্ত্রী হোসনে আরা বিজুর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় তার। পরে তাকে বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা। তারপর থেকে মুস্তাফা পরিবারেই বড় হয়েছেন ক্যামেলিয়া।
ফাহমিদা নবী আজ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ক্যামেলিয়া মুস্তফা একজন কবি এবং আবৃত্তিশিল্পী ছিলেন। অভিনয় করেছিলেন কিছু অল্প। উপস্থাপনা করেছিলেন বেশকিছু। গতকাল রাতে দেশে ফিরেই তার চলে যাওয়ার খবরটা শুনে অনেক খারাপ লাগছে। ২০০৭ সালের কথা, ক্যামেলিয়া আপার অসুস্থতার জন্য ‘শিল্পীর পাশে’ নামে একটি চিঠি প্রথম আলোতে লিখেছিলাম। তখন অনেকেই পাশে দাঁড়ান এবং কিছু অর্থ যোগানে তার অপারেশন হয়। সেই সময় থেকে তার বেদনা এবং অভিমান অভিযোগ অনেকেই শুনেছে। ডাক্তার আশীষ তার হাসপাতালে চিকিৎসা করেন। কৃতজ্ঞতা ডাক্তার আশীষ। এরশাদুল হক টিংকু, শাহেদ ভাই আর আমি সে সময় অনেক দৌড়াদৌড়ি করি। ‘শিল্পীর পাশে’ নামটি এনামুল করিম নির্ঝরের দেয়া। তারপর ‘শিল্পীর পাশে’ উদ্যোগটি কি যেন হয়ে গেলো! বড় পরিসরে কিছু হবে বলে উধাও! কিছুই হয়নি আর।’’
ফাহমিদা নবী আরও লিখেছেন, ‘হঠাৎ ক্যামেলিয়া আপার মৃত্যু অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলো। সত্যিকার শিল্পীর পাশে আসলে কেউ থাকে না। তার সার্ভাইভটা তাকেই করতে হয়! যথার্থ শিল্পীর মূল্যায়ন হয় না কখনোই। মাঝে মাঝেই দেখেছি তাকে রাস্তায়। পায়ে ভীষন রকমের ক্ষত, ঘাঁ নিয়ে হাটঁতেও কষ্ট। তার মধ্যেও অভিযোগ করেই যেতেন। মাথায় ব্যথা হতো, থামতে পারতেন না। শেষমেষ অসমাপ্ত অভিযোগের বাক্স নিয়েই চলে গেলেন কোন উপসংহার-উত্তর ছাড়াই। কি সুন্দর ছিলেন দেখতে, তেমন রুচিশীল, কথা বলার ধরনে আধুনিকতার ছোঁয়া। তার চাহনি ছিলো অপূর্ব। অনেকটাই লাবন্য চরিত্রের মতোন লাগতো। আমরা ছোটবেলায় পাশাপাশি থাকতাম এলিফ্যান্ট রোডে। মুস্তাফা চাচার বাসার পিছনের বাসাটাই ছিলো আমাদের। ক্যামেলিয়া আপাকে তখন যেভাবে দেখেছিলাম, এতো মর্ডান একজন হাসিমুখের মানুষ তেমনটাই মনে গেঁথে আছে। তার ক্ষত হৃদয়ের ব্যথা মিশে যাক মাটিতেই। এই দোয়া করি। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
পরিশেষে ফাহমিদা লিখেছেন, ‘আবারও জানলাম অভিযোগ করে কিছুই হয় না। নিজেকে নিজের তৈরী করতে হয়। টিকে থাকার যুদ্ধ করতে হয়। অভিযোগে অভিমানের অসুখ বাড়ে। সুখ হয়ে যায় ক্ষত। তারপর একদিন ক্ষত নিয়ে চলে যেতে হয়! কেউ মনে রাখে, কেউ ভুলে যায়। সময় থাকতে নিজেকে সুখী হৃদয়ের কথা বলো, আপসোস ছেড়ে দাও। ভালো থাকতে চেষ্টা করো। একজন ক্যামেলিয়া আপাকে যেভাবে হাসতে দেখেছিলাম ছোটবেলায় সেভাবে মনে রাখবো। তার একটা কবিতার বই পড়েছিলাম, দারুন তার লেখার হাত। কবিতা পড়ার কন্ঠ আর চোখের দৃষ্টি মনে রাখবো সবসময়। কোন প্রশ্ন উত্তর নয়, একজন মানুষ তার অতৃপ্তির বেদনা পৃথিবীতে রেখে চলে গেলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সে হিসেবটাও সময়মতো পরিশোধ করে দেবেন। আমিন’।