শাফিন আহমেদের কিছু বিরল ছবি আর অজানা কথা

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে শাফিন আহমেদ ও হামিন আহমেদ (২০১০) / ছবি : আবেগ রহমান

মা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে শাফিন আহমেদ ও হামিন আহমেদ (২০১০) / ছবি : আবেগ রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার সেন্টারা হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী শাফিন আহমেদ।

তার মৃত্যুর শোকের আঁচ এখনো পাওয়া যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে যেভাবে পারছেন প্রিয় শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন
শাফিনকে পেলে এভাবেই মধ্যমণি করে রাখতেন শিল্পীসমাজ। ছবিতে শাফিনের পাশে আসিফ আকবর, শওকত আলী ইমন, শহিদুল্লাহ ফরায়েজী, ফুয়াদ নাসের বাবু, লাবুসহ গানের মানুষরা
 

অনেকেই জানেন না শাফিন আহমেদের জন্ম কলকাতায়। আর তারা তিন ভাই- তাহসিন, হামিন ও শাফিন। বাবা কমল দাশগুপ্ত, মা ফিরোজা বেগম। দুজনেই সংগীতাঙ্গনের কিংবদন্তি। তবে অনেকেই জানেন না, ছেলেবেলায় শাফিন আহমেদের নাম ছিল মনোজিৎ দাশগুপ্ত!

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৬৭ সালের দিকে গোটা পরিবারসহ পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন তারা। এরপর ভর্তি হন স্কুলে। সেসময়ই পরিবর্তন করা হয় তার নাম। মনোজিৎ দাশগুপ্ত থেকে তিনি হয়ে যান শাফিন আহমেদ।

বিজ্ঞাপন
কিশোর বেলায় মাকে ঘিরে তিন ভাই তাহসিন, হামিন ও শাফিনের হাসিমুখ

নাম পরিবর্তন নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে শাফিন জানিয়েছিলেন, ‘ভারতবর্ষ যখন স্বাধীন হলো, তখন হিন্দু-মুসলিমের মাঝে যে দূরত্ব বা বিবাদ, সেই সময়ে তা প্রবল ছিল। সেখান থেকেই কিন্তু দুটো দেশের জন্ম- ভারত ও পাকিস্তানের। সেজন্য ভারতে থাকাকালীন একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে হিন্দু পরিচিতিটা যে রকম প্রয়োজন ছিল, একই রকমভাবে যখন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসলাম তখন দেখা গেল মুসলিম পরিচয়টা খুব জরুরি ছিল। কারণ আমরা স্কুলে ভর্তি হতে পারছিলাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাসার ব্যাপারটা ছিল কি, বাবা খুবই প্রগ্রেসিভ একজন মানুষ ছিলেন। ধর্ম নিয়ে তার মধ্যে সে রকম কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না। উনি গানের জগতের মানুষ, গান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা ছোটকাল থেকে বড় হয়েছি আসলে ইসলাম ধর্মকে ঘিরেই। মায়ের কাছ থেকেই এই প্রভাব এসেছে। ইসলাম ধর্মের চর্চাটা বাসায় ছিল। এ ব্যাপারে আব্বার কোনো মন্তব্য ছিল না। উনার কোনো দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই তিনি চাপিয়ে দিতে চাননি।’

ছবিটি ২০১২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ফিরোজা বেগমের স্বামী ও শাফিনের বাবা কমল দাশগুপ্ত’র ১০০ তম জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে তোলা। ফ্রেমবন্দী হয়েছিলেন দেশের চার প্রখ্যাত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, সুবীর নন্দী, ফিরোজা বেগম ও শাফিন আহমেদ। একে একে সবাই চলে গেছেন, রয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন (তিনিও বেশ অসুস্থ)। 

শাফিন আহমেদের ডাক নাম ছিল মুনা। পরিবারের অনেকে এ নামেই ডাকে। এ ছাড়া সংগীতাঙ্গনের অনেকে যারা আমাকে ছোটবেলা থেকে চেনে, তখনও এমন তারকাখ্যাতি পাইনি, বয়স ১৭-১৮ হবে; সেই সময়ে যারা চিনতেন তারাও মুনা নামটিই আগে বলেন।

কিংবদন্তি সুরকার কমল দাশগুপ্ত ও প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন। যেন সুরের চামচ মুখে জন্মেছিলেন তিনি। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত আর তবলা, মায়ের কাছে নজরুলসংগীত শিখেছেন। ৯ বছর বয়সে নজরুলের শিশুতোষ গান ‘প্রজাপতি প্রজাপতি’ রেকর্ড করেছেন শাফিন।

কৈশোরে বিটলসসহ বহু ওয়েস্টার্ন অ্যালবাম হাতের নাগালে পেয়েছেন। ইংরেজি গানে মুগ্ধতা জমে; বাড়িতে ড্রামস ও গিটার বাজাতেন। মা-বাবা নাখোশ হননি; বরং আশকারাই দিয়েছেন।

মায়ের সঙ্গে হামিন ও শাফিন

শাফিন আহমেদের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ বলেছেন, ‘ওনার কণ্ঠটা একদমই আলাদা। অত্যন্ত সুরে গান করেন। একই সঙ্গে বেজ বাজিয়ে গান করা ভীষণ কঠিন কাজ। এটিই তাকে আলাদা করেছে।’

প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘কী করে সব ভুলে যাই’সহ ১০ টির মতো গান গেয়েছেন শাফিন। মাইলসের বাইরে শাফিনের বেশির ভাগ জনপ্রিয় একক গানের কথা ও সুর করেছেন তিনি।

১৯৭৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস। চার দশকের ক্যারিয়ারে ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা অন্তরে’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’সহ বহু হিট গান উপহার দিয়েছেন শাফিন।

কনসার্টে রীতিমতো ঝড় তুলতেন রক তারকা শাফিন

কনসার্টে রীতিমতো ঝড় তুলতেন রক তারকা শাফিন। গান আর গিটারের তালে শ্রোতাদের হৃদয়ে উন্মাদনা ছড়িয়েছেন। প্রাণশক্তিই তাকে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করেছে বলে মনে করেন আরেক ব্যান্ড তারকা মাকসুদ হক।

নব্বইয়ের দশকে কলকাতায় মাইলসের কনসার্টে শ্রোতাদের ঢল নামত। কলকাতার শিল্পীরাও শাফিন আহমেদকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে কলকাতায় গায়ক অনুপম রায় বলেছেন, মাইলসে শাফিনের গান শুনেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। ব্যান্ডটির ভক্ত তিনি। কলকাতার ক্যাকটাস ব্যান্ডের সিধুসহ আরও অনেকেই শাফিনের গানের প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন।

ব্যান্ড মাইলস-এর সদস্যরা