ব্যাংকার থেকে নৃত্যশিল্পী পরিচয় বহন করাটা সহজ নয়: কাজী মুস্তা
তরুণ নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার কাজী মুস্তার সাফল্যের ঝুলিতে যুক্ত হলো নতুন পালক। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে নাচ করলেও এবারই প্রথম পারফর্ম করলেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক ফোবানা সম্মেলনে। আজ তার জন্মদিন। সমসাময়িক বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
বার্তা২৪.কম : শুভ জন্মদিন...
কাজী মুস্তা : ধন্যবাদ। দেশের একটি স্বনামধণ্য গণমাধ্যম থেকে শুভেচ্ছা পেয়ে জন্মদিনটি আরও স্পেশ্যাল মনে হচ্ছে। তবে আমি একা প্রবাসে থাকায় জন্মদিনে খুব একটা আয়োজন করতে পারি না। সবচেয়ে বড় কথা আমার পরিবারকে খুব মিস করি। তাই কোন আনন্দ আয়োজন করতে আরাম লাগে না। তবে সবার শুভেচ্ছা, ভালোবাসায় সিক্ত হই, এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চে বাংলাদেশের নাচকে নিয়ে যেতে পারি।
বার্তা২৪.কম : জন্মদিনের আগেই ক্যারিয়ারে দারুণ একটি প্রাপ্তি যোগ হলো। সে বিষয়ে কিছু বলুন...
কাজী মুস্তা : একদম ঠিক বলেছেন। আসলে দীর্ঘদিন ধরে নৃত্যচর্চা করার সুবাদে দেশে বিদেশে নিয়মিত নৃত্য পরিবেশন করার সুযোগ হয়। ব্রুকলিন ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মতো মঞ্চেও নেচেছি। কিন্তু ফোবানা সম্মেলনে আগে অংশ নেয়া হয়নি। এবারই প্রথম সেখানে পারফর্ম করে ভালো লেগেছে। কেননা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান এই ফোবানা সম্মেলন। উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’ আয়োজিত এই উৎসবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকাদের পাশাপাশি ভারতের বিখ্যাত তারকারাও অংশগ্রহণ করেন।
বার্তা২৪.কম : এবারের ফোবানা সম্মেলনে আপনার নাচ ও অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই...
কাজী মুস্তা : এতো চমৎকার আয়োজনে দেশের প্রবাসে থাকা মানুষরা বিনোদন দিতে আসেন, তাদের মধ্যে দেশিয় শিল্প সংস্কৃতি দেখার আনন্দ আমাকেও ছুয়ে গেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বসেছিলো ফোবানা সম্মেলনের ৩৮তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট শুরু হয় এই উৎসব আর শেষ হয় ১ সেপ্টেম্বর। উদ্বোধনী নাচটাই ছিলো আমাদের। প্রখ্যাত মডেল ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ, লায়লা হাসান, রণবীর সাহা ও কাজী মুস্তার নাচের মাধ্যমে এই আয়োজনের উদ্বোধন হয়। ‘চেতনায় বাংলাদেশ’ নামের এই গীতি নৃত্য আলেখ্যটি কোরিওগ্রাফি করেছেন রোজেমরী মিতু রেবারিও। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী স্বপ্নিল সজীব।
আর ফোবানার সমাপনী পরিবেশনাও ছিলো আমার। আধ ঘণ্টার বেশি সময়ের সেই পরিবেশনায় আমরা তুলে ধরি বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি। বাউল নাচ, রবীন্দ্র-নজরুল, ক্ষূদ্র নৃগোষ্ঠীর নাচ, ধান কাটা, নৌকা বাওয়া- কিছুই বাদ পড়েনি সেই পরিবেশনায়। রণবীর সাহার কোরিওগ্রাফিতে আমার সহশিল্পী ছিলেন অপর্ণা মিত্র ও রণবীর। সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন তাসকিম বিনতে সিদ্দিক।
ফোবানার মতো বড় আয়োজনে উদ্বোধনী ও সমাপনী নৃত্য পরিবেশন করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। দর্শক দারুণ উপভোগ করেছেন আমাদের নাচ। সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের মতো তারকার সঙ্গে আগেও নাচ করেছি যুক্তরাষ্ট্রে। তবে তার সঙ্গে কাজ করে প্রতিবারই নতুন কিছু শিখতে পারি।
বার্তা২৪.কম : আপনার এ পর্যন্ত আসার পেছনের গল্পটা যদি সংক্ষেপে বলেন...
কাজী মুস্তা : ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশের স্বনামধণ্য নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার কবিরুল ইসলাম রতনের কাছে নাচ শিখেছি। দেশের অনেক আয়োজনে নিয়মিত নাচ করেছি একটা সময়। আমি বিটিভির তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী। তবে একটা পর্যায়ে নাচ থেকে কিছুটা দুরত্ব তৈরি হয়। আমি ব্যাংকে চাকরী পেয়ে সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কারণ বাংলাদেশে নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা এখনো খুব কষ্টসাধ্য। তবে উচ্চতর পড়াশুনার জন্য যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসলাম তখন দৃশ্যপট বদলে গেলো। বর্তমানে পেশাগত কারণে নিউইয়র্কে বসবাস করছি। তবে হাজার ব্যস্ততার মাঝেও নাচকে ভুলে যাইনি। যদিও ব্যাংকার থেকে নৃত্যশিল্পী পরিচয়ে ফিরে এসে সেই লেগেসি বহন করাটা সহজ নয়। এজন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। পেশাজীবন ও নাচকে ব্যালেন্স করতে প্রতিনিয়ত পরিকল্পনা করে কাজ করতে হয়। একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলে যে কোন একটি কাজে ক্ষতি হতে পারে, সেদিকে শতভাগ সাবধান থাকতে হয়। এতোকিছু করি শুধু নাচটা মনেপ্রাণে ভালোবাসি বলে, এটা ছাড়তে চাই না।
বার্তা২৪.কম : সম্প্রতি আর কি কাজ করলেন?
কাজী মুস্তা : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে নৃত্য পরিবেশনের ডাক পেয়ে ছুটে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস (বিপা)-এর সঙ্গেও কাজ করছি। আর একটা সুখবর দিতে চাই। বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রেও শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্ক চ্যাপ্টারে সভাপতি হিসেবে আছেন অ্যানি ফেরদৌস, সাধারন সম্পাদক রণবীর সাহা আর আমি রয়েছি কোষাধ্যক্ষ পদে।
এছাড়া এ বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো আয়োজিত মহানায়িকা ‘সুচিত্রা সেন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এন্ড অ্যাওয়ার্ডস’-এর থিম সং কোরিওগ্রাফি এবং পারফর্ম করেছি।