তুষ্টির উপলব্ধির এক বর্ণও বিশ্বাস করছে না নেটিজেন!
আওয়ামীপন্থি শিল্পী সমাজের তালিকায় সবচেয়ে বেশি যারা সরব ছিলেন তাদের মধ্যে শামীমা তুষ্টি অন্যতম। পুরো ছাত্র আন্দোলনে তিনি সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
বিশেষ করে ‘আলো আসবেই’ নামে শিল্পীদের গোপন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন তিনি। সেখান থেকে তার একাধিক এসএমএস ছাত্রদের প্রতি ঘটে যাওয়া নৃশংসতাকে ছোট করে দেখায়।
অথচ সেই অভিনেত্রীর উপলব্ধি জাগ্রত হয়েছে সরকার পতনের ৩২ দিন পর! সেই ‘কুমিরের কান্না’ ফেসবুকে পোস্ট করার পর নেটিজেনরা এক বর্ণও বিশ্বাস করেনি। একইসঙ্গে বিরক্তি, ক্ষোভ এবং শ্লেষ প্রকাশ করেছে তারা।
তুষ্টি লিখেছেন, ‘আমি এই মুহূর্তে যা লিখতে যাচ্ছি, আমি জানি, তার জন্য আমি গালি ও ট্রোলের সম্মুখীন হতে পারি। তবুও আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই যে, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। এর কারণ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং ১৯৬৫ সালে মালিবাগ আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাই আমার বাড়িতে সবসময় এই পরিবেশই ছিল যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিজের পক্ষ ভেবেছি। আমার এই পক্ষপাতিত্ব যে ভুল তাও আমি মনে করি না। আমি মনে করি, আমি আমার অংশগ্রহণ ঠিক বিবেচনা করেই করেছি।’
তুষ্টি এরপর লেখেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন কেউ কোনো দলের কর্মী হিসাবে কাজ করে, তখন তার সেই দলের নেতাদের কথামতো কাজ করতে হয়। সে সব দলীয় নির্দেশনার বিপক্ষে গিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি থাকে না। এবং আমি তা করতেও চাই না দলের কর্মী হিসাবে। তাই বলে এই হত্যাকাণ্ড, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতার আমি সমর্থক নই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে বহু কর্মীই তা ছিলেন না।’
নিজের ভুল স্বীকার করে তুষ্টি লেখেন, ‘আমাদের অনেকেরই পজিশন নেয়া দরকার ছিল। অনেক আগেই দরকার ছিল। আমি জানি, আপনাদের অনেকে এই কথাতেও ক্ষুব্ধ হবেন। কিন্তু আশা করি এটা মানবেন যে, আমরা বাংলাদেশে কী ঘটছে তাও জানতে দেরি করেছি। দলীয় রাজনীতির মধ্যেও খবর ফিল্টার হয়। যার সন্তান গেছে তার অবস্থা ভেবেছি। প্রতি মুহূর্তে আমি, আমাদের কেউ কেউ একটা পজিশন নিতে গেছি। সেসব পজিশন কারো না কারো কারণে অন্য আরেকটা পজিশন হয়ে গেছে। আমরা বিটিভিতে গেছি শিল্পীরা সহিংসতা ও ছাত্রদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, তবে সেটা সংবাদে তেমন করে আসেনি। বরং যা এসেছে তাতে আরও ভুল বোঝার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরা হাসপাতালেও আহতদের দেখতে গেছি। আর তখনো আমি সকল কিছু বুঝে উঠতে পেরেছি তেমন না।’
নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে তুষ্টি লেখেন, ‘আমরা যে যাই ভাবি না কেন, দল মূলত কি কি করতে যাচ্ছে বা কি করবে তা সম্পূর্ণ জানার উপায় আমাদের ছিল না। আমি এসব কথা বলে পক্ষ বদলের চেষ্টা করছি না বরং আমার দলের পক্ষে যে সব মারাত্মক ভুল ছিল বা আমার যে সব ভুল বোঝাবুঝি ছিলো সেগুলো আপনাদের জানাতে এসেছি। আমি একটা সংগঠন করি যেখানে সিংহভাগই এই হিংস্রতা, এই হত্যার সমর্থক নয়। কিন্তু আমাদের কোনো একটা পজিশন কীভাবে নিতে পারি তা ভাবতে ভাবতেই প্রতিদিন আরও নতুন মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন আরও বেশি করে আপনাদের থেকে দূরে সরে গেছি।’
এই অভিনেত্রী তার স্ট্যাটাসে ‘আলো আসবেই’ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। এ নিয়ে লিখেছেন, ‘আমি একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছিলাম। সেখানেও আমি বলেছি যে সকলের সাথে গিয়ে আলাপ করতে হবে। এগুলো বন্ধ করা দরকার। কিন্তু ঘটনা এত দ্রুত ঘটছিল আমি যা সমর্থন করি না তা আপনাদের জানানোর সুযোগ পাইনি। তাছাড়া আমার অনেক সহকর্মীরাও এসবের ভিতরে ছিলেন, পরে হয়তো থাকেননি। তারাও আমাকে অনেক গালাগাল করেছেন তবু আমি বলতে চাই যে আমি আমার সহকর্মীদের জন্য অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছি। এখনো তাই করবো। এছাড়াও আমরা আমাদের সিনিয়র সহকর্মীদের সাথেও যোগাযোগ করতে পরিনি এক সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য।’
সবশেষে তুষ্টি লেখেন, ‘আপনাদের সামনে এসে কথা বলতে দেরি করেছি। যে ঘৃণার সম্মুখীন আমরা, যে গালাগালি আমি খেতে পারি সে সবের ভয়েই আরও দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু আমি নিজেকে বুঝিয়েছি, এইসব সমালোচনা আর গালি আর ট্রোল আমার গ্রহণ করতে হবে। আর সে সবের মধ্য দিয়েই শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। আপনারা দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আমি দল বদলের ইচ্ছা থেকে আসিনি। আমি যে দলে ছিলাম সেই দলের নেতৃবৃন্দের সকল কার্যক্রম যে আমি সমর্থন করি না সেটা জানাতে এসেছি। আমি জানাতে এসেছি আমি দল করলেও নিজের বিচারবুদ্ধি বিবেক-বিবেচনা বিক্রি দিয়ে আমি দল করি না। আমি সকলের মঙ্গল কামনা করছি। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বাংলাদেশে বিফলে না যায় সেই প্রত্যাশা করছি।’