কিংবদন্তি ফিরোজা বেগমের ১০ম প্রয়াণ দিবসেও নেই কোন আয়োজন

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তরুণী ফিরোজা বেগম ছিলেন দারুণ ফ্যাশনেবল

তরুণী ফিরোজা বেগম ছিলেন দারুণ ফ্যাশনেবল

এক দশক আগে এই দিনে ভারতীয় উপমহাদেশের অগণিত ভক্তদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন কিংবদন্তি নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগম। ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি।

সরাসরি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে গান শেখার সুযোগ হয়েছিলো এই শিল্পীর। নজরুলসঙ্গীতকে জনসাধারনের মধ্যে জনপ্রিয় করার পেছনে রয়েছে তার অসামাণ্য গায়কির অনবদ্য অবদান। তাইতো মৃত্যুর ১০ বছর পরও প্রতিদিন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বেজে ওঠে তার গান। নজরুলসঙ্গীত শিল্পীদের জন্য তার গায়কী যেন পাঠ্যবই!

বিজ্ঞাপন

অথচ প্রবাদপ্রতীম এই শিল্পীর দশম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যেও রাজধানীতে নেই কোনো আয়োজন। পারিবারিকভাবে একেবারে নীরবে পালিত হচ্ছে এ দিনটি।

মায়ের সঙ্গে শাফিন আহমেদ ও হামিন আহমেদ

ফিরোজা বেগমের পুত্র বাংলাদেশে মিউজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বাবমা) সভাপতি হামিন আহমেদ বলেন, ‘পারিবারিকভাবেই মায়ের জন্ম-মৃত্যুর দিনটি স্মরণ করা হয়। এবারও তাই হবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর দিনটিও স্মরণ করা হয় না। গুণী মানুষদের স্মরণ করা উচিত। রাষ্ট্রেরও একটি দায় থাকে। আমার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।’

বিজ্ঞাপন

ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন ফরিদপুর জেলায়। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মা বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশবেই তার সংগীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে।

তরুণী ফিরোজা বেগম

চল্লিশের দশকে তিনি সংগীত ভূবনে পদার্পণ করেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এই রেকর্ড প্রকাশের মাধ্যমে কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে ফিরোজা বেগমের ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্রপাত।

১০ বছর বয়সে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। গ্রামোফোন কোম্পানি তার কণ্ঠে নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। প্রকাশিত রেকর্ডে ফিরোজা গাইলেন সর্বকালের জনপ্রিয় দুটি গান ‘দূরদ্বীপবাসিনী’ আর ‘মোমের পুতুল’। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।

কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগম

নজরুলগীতি ছাড়া তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ, নাতসহ বিভিন্ন ধরনের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। জীবদ্দশায় তার ১২টি এলপি, চারটি ইপি, ছয়টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।

শিল্পচর্চায় অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি একুশে পদক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি প্রদান করে।

বিভিন্ন বয়সে ফিরোজা বেগম