আতিফ আসলামকে আমরা মিস করি না: গহের মুমতাজ

  • মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘জল (ওয়াটার)’-এর সদস্যরা এখন ঢাকায়। ‘লেজেন্ড অব দ্য ডেকেড’ কনসার্টে গাইতে এসেছেন তারা। এ উপলক্ষ্যে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন ব্যান্ডটির ভোকালিস্ট ও জনপ্রিয় অভিনেতা গহের মুমতাজ। তিনি কথা বলেছেন ব্যান্ড ক্যারিয়ার, আতিফ আসলামের ব্যান্ড ছেড়ে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে। লিখেছেন মাসিদ রণ

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

মাসিদ রণ: আজকের কনসার্টটি তো স্থগিত হয়ে গেলো...

বিজ্ঞাপন

গহের মুমতাজ: হ্যাঁ। সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার পর শেষ মুহূর্তে কানসার্ট বাতিল হলে মন তো খারাপ হয়ই। তাছাড়া আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) আমাদের ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘আদাত’ ২০ বছর পূর্ণ করছে। ‘লেজেন্ড অব দ্য ডেকেড’ কনসার্টে আজ তা উদযাপন করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটিও ঠিক সময়ে হলো না। আসলে প্রাকৃতিক ঘটনায় তো আমাদের কারও হাত নেই। এমন টানা বৃষ্টির দিনে একটি উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্ট করা কারও জন্যই নিরাপদ নয়। সেটি বিবেচনা করেই আয়োজকরা আজকের কনসার্টটি পিছিয়ে দিয়েছেন। তবে ঢাকায় আমার প্রিয় ভক্তদের গান না শুনিয়ে ফিরবো না। আজ সন্ধ্যায় কনসার্টের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। আশা করি সবাইকে নিয়ে দারুণ একটি সন্ধ্যা আমরা উপভোগ করবো।

‘লেজেন্ড অব দ্য ডেকেড’ কনসার্টের পোস্টারে গহের মুমতাজ

মাসিদ রণ: ঢাকায় এসে কেমন লাগছে?

গহের মুমতাজ: এক যুগ পর ঢাকায় গাইতে এলাম। প্রথমবার যখন এসেছিলাম, আমার বার বার শুধু মনে হচ্ছিল, আমরা উর্দুতে গান করি আর এখানে সবাই বাংলায় কথা বলে। আমাদের গান এখানকার দর্শক কতোটা বুঝবে! কিন্তু স্টেজে উঠে আমি প্রতি মুহূর্তে অবাক হয়েছিলাম। আমাদের ব্যান্ডের প্রতিটি গানের প্রতিটি লাইন তাদের মুখস্ত। সে বার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম পাকিস্তানে।

গতকাল ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে গহের মুমতাজ । ছবি: মাসিদ রণ

এবারও কিন্তু মনে হচ্ছে না যে এতোদিন পর এসেছি। কারণ বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের থেকে আমাদের ব্যন্ড একটি দিনও দূরে ছিলো না। আমি মনে করি বাংলাদেশর ভক্তরা সবচেয়ে কিউট। তারা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের ভালোবাসে। আমরা কোন নতুন গান, ভিডিও কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দিলে প্রথম রিঅ্যাকশনটাই পাই বাংলাদেশ থেকে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমন্ত্রণ করেন বাংলাদেশে গাইতে আসার। অবশেষে তাদের আশা আমরা পূরণ করতে পেরেছি।

আতিফ আসলাম, ফারহান সাঈদ ও গওহর মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

মাসিদ রণ: ‘জল’ ব্যান্ডের প্রাক্তন দুই সদস্য আতিফ আসলাম (বলিউড ও পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী) ও ফারহান সাঈদ (এখন পাকিস্তানের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা)। তারা ব্যান্ড ছেড়ে দেওয়ায় কোন সমস্যায় পড়েছিলেন কি?

গহের মুমতাজ: এটাকে ঠিক সমস্যা বলবো না। তবে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ তো তৈরি হয়ই। যখন আপনি একটা স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করবেন সেটা যখন বদলে যায় তখন নতুন করে গুছিয়ে নিতে সময় লাগে। আমাদের ব্যান্ডের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তারা চলে যাওয়ার পর আমরা আবার নতুন সেট-আপে শুরু করতে চ্যালেঞ্জ ফেস করেছি। তবে আমরা যেহেতু বেশিরভাগ গান সমন্বিত কণ্ঠে গেয়ে আসছি তাই নির্দিষ্ট একজনের অভাব অনুভব করেনি দর্শক। তারা চলে যাওয়ার পর এক যুগ হয়ে গেলো আমাদের ব্যান্ডে আর কোন পরিবর্তন হয়নি। এই সময়ে আমরা অনেক নতুন গান করেছি। সেগুলো দর্শক শ্রোতার ভালো লেগেছে বলেই আমরা এখনো টিকে আছি। যদি ভক্তরা কাউকে মিস করতো তাহলে তো আমরা ব্যান্ড হিসেবে এতোদূর আসতে পারতাম না। আর আমাদের পুরনো গানগুলো আমরাও যেমন করি, তেমনি আতিফও তার সলো শোতে করে। এতে করে গানগুলো আরও বেশি পরিচিতি লাভ করছে বলে আমার ধারণা।

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

মাসিদ রণ: আতিফ আসলামের মতো গায়ককে কি আপনাদের ব্যান্ডে একদমই মিস করেন না?

গহের মুমতাজ: সত্যি বলতে গেলে, মিস করি না। এটা তো ২০ বছর আগের ঘটনা, তিনি কেন ব্যান্ড ছেড়েছিলেন সে গল্প সবার জানা। তিনি চেয়েছেন তার একক সঙ্গীত ক্যারিয়ার তৈরি করতে। আর একজন শিল্পীর সেই স্বাধীনতা রয়েছে। যে সিদ্ধান্তে তার ভালো হবে সেখানে তাকে আটকে রেখে বা মিস করে কি লাভ? তবে এখনো তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এখনো গান নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। তার প্রতি আমার অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

আতিফের সঙ্গে কিন্তু গানের সূত্রে আমার পরিচয় নয়। আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। আমার দু-এক বছরের জুনিয়র ছিলো সে। আমি তখন থেকেই গান লেখা, কম্পোজিশন করা- এসব নিয়েই ছিলাম। ‘আদাত’ গানটিই প্রথম কম্পোজ করেছিলাম। তবে গানটি নিয়ে অতোটা আত্মবিশ্বসী ছিলাম না। আমার বন্ধু বান্ধবও তখন বলেছিলো এটা কি ধরনের গান? কিন্তু আতিফ আমার মিউজিক পছন্দ করতো। তাইতো একসঙ্গে মিউজিক করার ইচ্ছা পোষণ করলো। এভাবেই আমাদের যাত্রা শুরু এবং পরিচিতি পাওয়া মানুষের কাছে।

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

মাসিদ রণ: আপনাদের ব্যান্ডের শেষ অ্যালবাম এসেছিলো ২০১৩ সালে। এরপর আর অ্যালবাম করেননি কেন?

গহের মুমতাজ: পাকিস্তানে এখন অ্যালবাম কালচারটা এখন আর নেই। সবাই এখন সিঙ্গেল গানই বের করে। তাই আমরাও সর্বশেষ ১২-১৩ বছরে ১৫টির বেশি সিঙ্গেল গান প্রকাশ করেছি। এছাড়া আমরা নিয়মিত পাকিস্তানি সিরিয়ালের জন্য গান তৈরি করছি। সম্প্রতি আমরা প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য পুরো একটি অ্যালবাম করলাম। সেখানে আমি ছাড়াও রাহাত ফাতেহ আলী খান, আইমা বেগের মতো শিল্পীরা গেয়েছেন।

তবে আমরা ভারত-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অ্যালবাম করার অনেক অনুরোধ পাই। তাই এবার একটি নতুন অ্যালবামের কাজ শুরু করেছি। পাকিস্তানে এখনো ঘোষণা করিনি। যেহেতু বাংলাদেশের ভক্তরা আমাদের কাছে অনেক স্পেশ্যাল, তাই এখানেই আমাদের তৃতীয় অ্যালবামের ঘোষণা দিয়ে গেলাম। অ্যালবামের নাম ‘বারিষ’। আশা করছি আগামীবার এলে এই নতুন অ্যালবামের গানগুলো দিয়েই আপনাদের মাতিয়ে রাখতে পারবো।

‘আভি’ সিনেমার পোস্টারে কুবরা খান ও গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

মাসিদ রণ: সম্প্রতি আপনি নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন...

গহের মুমতাজ: হ্যাঁ। এর আগে ৬-৭টি সিরিয়ালে অভিনয় করেছি। অভিনয়ে নিজেকে দক্ষ করেই তারপর সিনেমায় এসেছি। কিছুদিন আগেই আমার প্রথম সিনেমা ‘আভি’ মুক্তি পেয়েছে। এতে আমার সহশিল্পী ছিলেন কুবরা খান, হারীম ফারুখের মতো তারকা। আসাদ মুমতাজ মালিক পরিচালিত সিনেমাটি দর্শক বেশ পছন্দ করেছে।

গহের মুমতাজ । ছবি: ফেসবুক

মাসিদ রণ: বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। সেদিক থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ব্যাপারে আপনি কতোটা জানেন?

গহের মুমতাজ: সত্যি বলতে এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো যতোটা জানা জরুরী আমি অতোটা জানি না। তবে বিষয়টি অবশ্যই আমার চোখে পড়েছে পাকিস্তানি সংবাদপত্রের শিরোনামের মাধ্যমে। কিন্তু আমি যেহেতু নিজের অভিনীত প্রথম সিনেমার প্রচারণা নিয়ে দারুণ ব্যস্ত ছিলাম, তাই এর বাইরে কোনকিছু নিয়েই সেভাবে ভাবার অবকাশ ছিলো না। তবে এটুকু বলতে পারি, এ দেশে যে পরিবর্তন এসেছে তাতে আপনারা যদি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে পুরো পৃথিবীই তাতে সন্তুষ্ট। এটা যে কোন দেশের জন্য প্রযোজ্য। সেই দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে সেটা পুরো পৃথিবীর জন্যই ভালো।