‘আলো আসবেই’ গ্রুপকে কেন ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে: জ্যোতি
জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে যে ক’টি ঘটনা শোবিজে সবচেয়ে আলোচিত তারমধ্যে অন্যতম ঘটনা ‘আলো আসবেই’ নামের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের চ্যাট ফাঁস। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে ওই গ্রুপে থাকা শিল্পীরা সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পেড়ছেন। তাদেরই একজন মেধাবী অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি।
এই ঘটনার এতো দিন হয়ে গেলো, গ্রুপের সব শিল্পীই একদমই চুপ ছিলেন। কিন্তু এবার ফেসবুক লাইভে এসে পুরো বিষয়টি নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরলেন জ্যোতিকা জ্যোতি।
তিনি বারবারই বলতে চেয়েছেন, কেন এই গ্রুপের সদস্যদের সাধারণ ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হলো? স্বপক্ষে অভিনেত্রীর যুক্তিও রয়েছে।
জ্যোতি বলেন, ‘এতোদিন কথা বলিনি। কিন্তু আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। কারণ আমাকেসহ ওই গ্রুপের সবাইকে সামাজিক কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনই করতে পারছি না। বলতে পারেন সামাজিক হেনস্তার শিকার হচ্ছি। তাই একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আমি আমার জায়গাটি পরিষ্কার করতে ফেসবুক লাইভে এসেছি।’
জ্যোতি প্রথমেই বলেন, যারা ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে ছিলেন তাদেরকে আপনারা দুটি তকমা দিয়ে কথা বলছেন ইদানিং। একটি হলো স্বৈরাচারের দোসর, আরেকটি হলো গণহত্যার ইন্ধনদাতা! এই দুটি কথার মানে কি আপনারা জানেন? আমরা কি করেছি যে এ ধরনের কথা শুনতে হবে? আমি আজ থেকে আর একটি বারের জন্যও এই অপবাদ নিজের কাঁধে নিতে চাই না বলেই কথাগুলো বলতে এসেছি। আমি যে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তার কোন প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে? না থাকলে এসব কথা কেন বলছেন? আপনারা কি জানেন, এই ধরনের অপবাদ মানুষের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে? আমি তার সহ্য করতে না পরে আজ কথাগুলো বলছি।’
জ্যোতি আরও বলেন, ‘একে তো আমি নারী, আজকাল দেশে নারীদের কোন সম্মান নেই। তারওপর আমি অভিনেত্রী, তাতে তো আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা আরও সহজ! সেই সাথে আমি হিন্দু, আমি অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ রাখি না- এই সবকিছুতেই তো আপনাদের সমস্যা। এজন্য এমনিতেই আমি নানা ধরনের চাপের মধ্যে আছি। কিন্তু যে কাজের সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততাই নেই তার জন্য দয়া করে আমাকে অপবাদ দিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না। এটুকু অনুরোধ থাকলো সবার প্রতি।’
তিনি কেন ওই গ্রুপে ছিলেন সে বিষয়ে বলেন, ‘আওয়ামীলীগকে সমর্থন করেন যেসব শিল্পী, তারাই ওখানে ছিলেন। এটা আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বলব না যে, আমাকে কেন অ্যাড করেছে, কে অ্যাড করেছে জানি না। আমি জেনেশুনেই ছিলাম গ্রুপটিতে। কারণ আমি জানতাম, ওই গ্রুপের এমন কোন উদ্দেশ্য নেই যা আমাদের দেশের বা দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। যে কোন ছোট ছোট বিষয়ে আমরা গ্রুপ খুলি। এটাও তেমন একটা গ্রুপ। এখানে আমি সব সময় ঢাকার কোথায় কি অবস্থা সে সব আপডেট দিতাম। কারণ আমাদের তো পরিস্থিতি বুঝে ঘরের বাইরে বেরোতে হতো। দু একজনের দু একটা কথা হয়ত আপনারা ক্ষতিকর মনে করছেন। কিন্তু সেই কথাগুলো কোন পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে সেটা আপনারা জানেন না। কোনো শিল্পী কখনোই মানুষ হত্যার সমর্থন করতে পারে না, এটা আপনারা ভুলে গেছেন।’
জ্যোতি আরও বলেন, ‘আমি সে সময় দুটি মাত্র প্রোগ্রামে গিয়েছি। একটি বিটিভিতে হামলার প্রতিবাদ করতে, অন্যটি আন্দোলনে যে ছাত্ররা আহত হয়েছে তাদের হাসপাতালে দেখতে। কিন্তু আপনারা ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টি কেউ সামনে আনলেন না, আনলেন বিটিভির বিষয়টি। আমরা তো সেখানে গিয়েছিলাম সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে। এটা তো দোষের কিছু নয়। আমরা সব সময় বলে এসেছি যে, এই ধরনের ধংসযজ্ঞ ছাত্ররা করতে পারে না। ছাত্রদের মধ্যে একদল সুবিধাবাদী ঢুকে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করেছে। তাহলে আপনারা কেন আলো আসবেই গ্রুপের শিল্পীদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন? অহেতুক আপনারা এই গ্রুপটিকে নিয়ে নানা রঙচঙ মাখিয়ে শিল্পীগুলোকে ক্ষতির মুখে ফেলেছেন।’