ভূখণ্ডের পরিবর্তন হলেও, পরিবর্তন ঘটেনি তাঁর!



মো. রায়হান কবির শুভ্র
বাড়ির আঙ্গিনায় টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং

বাড়ির আঙ্গিনায় টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমুদিনী হাজং। বিপ্লবের জীবন্ত কিংবদন্তী। সংগ্রাম করেছেন ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে। এই কুমুদিনী হাজংকে ঘিরেই সেদিন ছড়িয়ে পরেছি লোটঙ্ক আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৫০ সালে বাতিল হয় টঙ্ক প্রথা। সময়ের সাথে সাথে একে একে বিদায় নিয়েছেন সেই অগ্নি সময়ের বিপ্লবী সন্তানেরা। তাঁদের ভেতর শুধুমাত্র কুমুদিনী হাজং বেঁচে আছেন কালের সাক্ষী হয়ে।

বিরিশিরির উৎরাইল বাজার ধরে খানিক এগুলেই সোমেশ্বরী নদী। স্নিগ্ধ সোমেশ্বরী পার হয়ে পথেই পরলো টঙ্ক আন্দোলনের শহীদ স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। সৌধের উঠানে রোদে শুকাতে দেয়া হয়েছে সোনালী ধান। এই ধান আর জমির জন্যই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিলো কুমুদিনী হাজংদের। সৌধকে পেছনে ফেলে কুমুদিনী হাজং এর বাড়ির পানে যাত্রা। সূর্য তখন মধ্য গগনে আলো ছড়াচ্ছে। এক পথিকের সহায়তায় সন্ধান পাওয়া গেলো কুমুদিনী হাজং এর বাড়ি। ছোট একখানা টিলার উপর ছোট্ট তিনটি ঘর। সেই ছোট মাটির ঘর আর একটি টিনের ঘরে সন্তান, নাতি-নাতনিদের নিয়ে তাঁর বাস। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছেলে ভারতের কোনো এক আশ্রমে থাকে। আর দুই ছেলে দিন মজুরের কাজ করে। এদের নিয়েই আছেন তিনি। উঠান জুড়ে বাহারি ফুলের হাতছানি। বাড়ির উঠানে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম তিন পতাকা তলের সংগ্রামী মুখ কুমুদিনী হাজং পাটায় পান সুপারি বাটছেন।

বারান্দায় বসে হামান দিস্তায় পান সুপারি বাটতেছিলেন কুমুদিনী হাজং

তাঁর সাথে দেখা করতে আসছে ঢাকা থেকে, এমন খবর পেয়ে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বলতেছিলেন, “ওমায়াগো কিতা করছুইন” ওনি তখন নিজেই ভারি ভারি পিঁড়ি এগিয়ে দিতে চাইলেন। এ যেন শাশ্বত বাংলার চিরায়ত আতিথেয়তার মনোলোভা দৃশ্যপট। বয়সের ভারে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন এই মহীয়সী, স্মৃতি ও বেশ ধূসর, আন্দোলনের সেই আগুন ঝরা দিনের কথা ভুলে গেছেন। কথা শুরু হতেই ধীর কণ্ঠে বললেন, ‘আমি কেমনে কইতাম? সেই সব কিমনে আছে? এখন বয়স হইছে আর কত? এই বার আমারে বিদায় দাও। কোনোদিকে যাইতাম পারিনা আমি” কিছুক্ষণ থেমে বলতে লাগলেন, ‘এক বারতো আমি গেছিলাম গা ,ডাক্তার আমারে সুই ভরলো, আমি দেইখা রাগ হইছি। কইছি এটা কিতা দিছো? কিচ্ছু দরকার নাই। আমার এখন যাওনের সময়।’ 

ঘুরেফিরে কুমুদিনী হাজং শুধু বিদায়ের কথা বলছিলেন। নানা কথায় আলাপ অলিগলি অ্যাভিনিউ পেরিয়ে মহাসড়কে চলে গেলো। কথার ফাঁকে টঙ্ক আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলাম তবে বার্ধক্যজনিত কারণে বেশির ভাগ স্মৃতিই বিস্মৃতির অতল গভীরে তলিয়ে গেছে। এর মাঝেই তাঁর নাতনী লিপি হাজং ইতিহাসের স্বর্ণালী দিনের স্মৃতিচারণ করলেন। তাঁর আলোচনায় উঠে আসলো সংগ্রামের দিনগুলি।

১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। শীতের সকালে গ্রামের বেশির ভাগ নারী-পুরুষ কৃষিকাজে ক্ষেতে খামারে কাজে গেছে। সকাল ১০টার দিকে বিরিশিরি থেকে ৪ মাইল উত্তর-পশ্চিমের এই বহেরা তলী গ্রামেই তৎকালীন ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর একটি দল কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজং এর খোঁজে বাড়িতে হানা দেয়। টঙ্ক আন্দোলনের মাঠ পর্যায়ের নেতা লংকেশ্বর হাজং ও তাঁর ভাইদের গ্রেফতার করাই ছিল সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশ্য। ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার বাহিনীর বহেরা তলীর দিকে আসার সংবাদ পেয়েই লংকেশ্বর হাজং ও তাঁর তিন ভাই আত্মগোপন করে বিপ্লবী নেতা কমরেড মনি সিংহের গোপন আস্তানায় চলে যান। তাঁদের ধরতে না পেরে ক্ষিপ্ত সশস্ত্র সেনারা বাড়ির নারীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে লংকেশ্বর হাজং এর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কুমুদিনীর কাছে জানতে চায় লংকেশ্বর হাজং কোথায়। কুমুদিনী হাজং ‘জানিনা’ বললে সেনারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা কুমুদিনী হাজংকে বিরিশিরি সেনা ছাউনিতে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এই অবস্থায় বাড়ীর আরেক নারী সদস্য পাশের বাড়িতে গিয়ে কুমুদিনী হাজংকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সংবাদ পৌঁছায়। এ সংবাদ হাজং অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক হাজং নারী-পুরুষরা শিমনি হাজং এর নেতৃত্বে দিস্তা মনি হাজং, বাসন্তি হাজংসহ লাঠি, কাস্তে, দা, বটি নিয়ে প্রতিরোধ করে দাঁড়ায় এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কুমুদিনী হাজংকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে সশস্ত্র সেনারা নৃশংসভাবে তাঁদের ওপর গুলি চালায়। এতে রাশিমনি হাজং গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সুরেন্দ্র হাজংসহ আরও বেশ কয়েকজন এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় অন্যান্য হাজং নারী পুরুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সশস্ত্র সেনাদের উপর বল্লম ও রামদা দিয়ে হামলা চালায়। তাঁদের হামলায় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর দুই সেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। বাকি সেনারা দৌঁড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। কৃষক নারীদের মধ্যে শহীদ হিসেবে রাশিমনি হাজং এর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। নিঃসন্তান হয়েও হাজংদের অধিকার ও নারী সংগ্রামের প্রতীকরা শিমনি হাজং সম্প্রদায়ে হাজং মাতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন, আর কুমুদিনী হাজং হয়ে ওঠেন টঙ্ক আন্দোলনের প্রেরণার উৎস।

টঙ্ক আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গারো পাহাড়ের বহেরাতলী গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ

কুমুদিনী হাজং সংগ্রাম করেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও। এমন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জন্ম নিলো বাংলাদেশ। আমরা পেলাম স্বাধীন রাষ্ট্র। এই কিংবদন্তীরা জন্মেছিলেন বলেই আমাদের রয়েছে মাথা নত না করা সংগ্রামী ইতিহাস। যাদের শাসনে আজ ধরণী হলো সুন্দর কুসুমিতা মনোহরা তাঁরাই আজ কুসম শয্যা থেকে বঞ্চিত। তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। তিন পতাকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা, দুই শাসকের পতাকার পরাজয়ও ঘটেছে তাঁর চোখের সামনেই। তাঁর সামনেই উড়ে চলেছে লাল সবুজ পতাকা, পেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশ কিন্তু খুব বেশি কিছু পরিবর্তন ঘটেনি তাঁর জীবনের। রোগ শোক দুঃখ দৈন্য দশা তাঁর নিত্যসঙ্গী। হাত পায়ে মাঝে মাঝেই তীব্র ব্যথা উঠে, অসহ্য যন্ত্রণা পোহাতে হয় তখন। আর্থিক টানা পোড়নের কারণে সু-চিকিৎসা করাতে পারে না। রোগে শোকে ক্লান্ত তিনি। দারিদ্রতা থাকলেও যে জীবন তিনি বয়ে চলছেন এক কিংবদন্তীর জীবন। বন বিভাগের আওতাধীন এক টুকরো জমির উপর তাঁর বসবাস। ক্ষুধা আর দারিদ্রতা নিয়েই কেটে গেলো পুরো জীবন। সরকারী সুযোগ সুবিধা বলতে মাসিক বয়স্ক ভাতা ঐটাই সম্বল। শতভাগ বিদ্যুতায়নের এ যুগে তাঁর বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ এর সুবিধা। জমি-ধানের জন্য তাঁদের লড়াই করতে হয়েছিলো সেই জমিও শেষ পর্যন্ত দখল হয়ে যায় পাকিস্তানি শাসন আমলে। তবুও মাথা নত করেননি। সংগ্রাম করেই কাটিয়ে দিলেন পুরোটা জীবন। এক বুক হাহাকার আর উদাস চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন ‘জমি জমা নাই, কিচ্ছু নাই। সব গেছে গা, এইখানে জঙ্গল ছিলো। সব সাফ কইরা সুন্দর কইরা যখন ঘর উঠাইছি তখন ফরেস্টার (বন বিভাগের কর্মী) আইসা কয় এইটা বন বিভাগের জমি। কি কই তাম?’ কিংবদন্তীর এই হাহাকার “রাষ্ট্র” শুনতে কি পায়?

পশ্চিম আকাশের সূর্য লাল আভা ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে ফিরতে হবে নীড়ে। আলোচনার ইতি টেনে বিদায় নিয়ে তাঁর বাড়ির ঢাল বেয়ে নেমে আসতে থাকি সমতল পথের দিকে, পেছনে ফেলে আসি অসমতল এক সংগ্রামী মুখ, যার ললা টেত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয়নি ডালি ভরে। বারেক ফিরে দেখি হাত নেড়ে বিদায় দিচ্ছেন সংগ্রামী এই নারী, যেন কোনো বিরান বন্দরে দাঁড়িয়ে জাহাজ ভর্তি স্বজনদের বিদায় দিচ্ছেন নিঃসঙ্গ এক মানুষ।

মো. রায়হান কবির শুভ্র, শিক্ষার্থী, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;