ঐতিহাসিক নায়িকা বীরাঙ্গনা সখিনা



রিফাত আহমেদ
ঐতিহাসিক নায়িকা বীরাঙ্গনা সখিনা

ঐতিহাসিক নায়িকা বীরাঙ্গনা সখিনা

  • Font increase
  • Font Decrease

যুদ্ধ তখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অতর্কিত আক্রমণ সামলাতে না পেরে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে ফিরোজ খাঁর বাহিনী। ইতিমধ্যে বন্দিও করে ফেলছে তাদের সেনাপতিকে। এমন সময় হঠাৎ যুদ্ধের ময়দানে আবির্ভূত হলো সতেরো-আঠারো বছর বয়সী এক তরুণের। তার হাতের ছটায় যেন বিদ্যুৎ লাফাচ্ছে। তার নেতৃত্বে ফিরোজের বিপর্যস্ত বাহিনী নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ায়। ক্ষ্যাপা নেকড়ের মতো তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রু সৈন্যর ওপর। দুর্ধর্ষ আক্রমণে উমর খাঁর বাহিনী বিপন্নপ্রায়। একের পর এক আক্রমণে বিপক্ষ শক্তি বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। এমন সময় ঘটে এক নিন্দনীয় ঘটনা যা কাহিনীর কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। কিছু মিথ্যে তথ্য আর গুজব এই মহাবীরের মনোবলকে একদম ভেঙে দেয়। মুহূর্তেই পাল্টে যায় যুদ্ধের ভাব-গতি। আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তার নিথর দেহ! দুর্ধর্ষ এই তরুণ সেনাপতির শিরোস্ত্রাণ ছিটকে মাটিতে পড়লে বের হয়ে আসে তার অপূর্ব চুল। এতক্ষণে সবাই বুঝতে পারে, যে সেনাপতি অভূতপূর্ব রণকৌশলে যুদ্ধ করছিল সে আসলে কোনো তরুণ নয়, একজন তরুণী। মুঘল সাম্রাজ্য চলছিলো তখন। সেই কিল্লাতাজপুর তখন মুঘল নবাব উমর খাঁর অধীন। সমর যুদ্ধে ছদ্মবেশ ধরে বিপক্ষ শক্তিতে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া এ নারী আর কেউ নয় তারই আদরের মেয়ে বীরাঙ্গনা সখিনা।

যোদ্ধা মানেই সুঠাম দেহ আর সুদর্শন তরুণ, যোদ্ধা মানেই বিচক্ষণ আর রণকৌশলে দক্ষ নেতৃত্বদানে যোগ্য সেনা। কল্পনাতে তো আমরা এমনটাই দেখি। নারী হিসেবে এসব পারদর্শীতার গল্প আমাদের কম। তাঁদের এ বিষয়ে শিক্ষাদানে আগ্রহও কম বা আমরা পদ্মাবতী, প্রীতিলতাদের গল্প যতোটা শুনি এসব বীর সেনানীর গল্প ততোটা শুনি না। অথচ ব্রিটিশদের আসার আগেও বীরত্বের গৌরবময় ইতিহাস আছে বীর সখিনার মতো নারীদের। তারা মুসলিম পরিবারে পর্দার মাঝে থেকেও শিখেছেন রণকৌশল, ছিলেন বিচক্ষণ। পান্ডিত্য ছিলো সরাসরি যুদ্ধেও। তাই প্রয়োজনে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রতিপক্ষের ওপর আঘাত হানতে।

ইতিহাসখ্যাত এই সখিনা লড়াই করেছেন তাঁর স্বামীর জন্য। নিজের বাবার বন্দিশালা থেকে স্বামীকে মুক্ত করতে ছদ্মবেশ ধরে লড়াই শুরু করেন তিনি। তাঁর স্বামী কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি ঈশা খাঁর দৌহিত্র ফিরোজ খাঁ দেওয়ান। কেল্লা তাজপুরের মুঘল দেওয়ান উমর খাঁর মেয়ে সখিনা ছিলেন অপরূপ সুন্দরী ও প্রতিভাবান এবং বহু কাজে পারদর্শী। জন্মকালীন সময়ে তার প্রকৃত নাম ছিল সখিনা এবং ডাক নাম সাকি। তিনি কেল্লা তাজপুরের মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুঘল সুবেদার ছিলেনl

সমর যুদ্ধে ছদ্মবেশ ধরে বিপক্ষ শক্তিতে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া এ নারী বীরাঙ্গনা সখিনা

পারিবারিক পরিবেশে বাড়িতেই শিক্ষালাভ করেন সখিনা। তবে নিজের মেয়েকে নিজের মনের মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টাই করেন উষ্ণ হৃদয়ের অধিকারী এই বাবাl আদর করে তিনি সখিনাকে সাকি নামে ডাকতেনl বাবা মুঘল সাম্রাজ্যের কেউকেটা বলে ঐ সময়ের অধিকাংশ নারীদের তুলনায় অনেক বেশী স্বাধীনতা ভোগ করতে পেরেছিলেন সাকি। আত্মরক্ষামূলক শিক্ষালাভের পাশাপাশি ঘোড়া চালনা, আর্চারী শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন তিনি। নির্ভীকতা ,সহজাত সৌন্দর্য্য, চতুরতা এবং অসাধারণ অধ্যবসায়ের জন্যেও স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। এছাড়াও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক নেতার তুলনায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূমিকাও নিতেন।

বাংলার কিশোরগঞ্জে লোকগাঁথায় তার সম্বন্ধে ব্যাপক ও বিস্তৃতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে তার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বিবরণ জানা দরকার। দরকার আরো প্রচারl বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলপত্রাদি, প্রচলিত লোকগাঁথা, কবিতাসমগ্র এবং মুখে মুখে চলে আসা বিভিন্ন তথ্যাবলী সমন্বয় করার মাধ্যমে তার সম্পর্কে আরও গবেষণা করা দরকার। কেল্লা তাজপুর থেকে ৫০-৬০ মাইল দূরেই বাস করতো কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির স্বাধীন শাসক ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁ। ঈশা খাঁ ছিলেন বারোভূঁইয়ার অন্যতম স্বাধীন শাসক। সখিনার কথা তার সুযোগ্য নাতি ফিরোজ খাঁর কানেও পৌঁছে। সেই থেকে অপরূপ সুন্দরী সখিনাকে একপলক দেখতে ব্যকুল হয়ে পড়েন তিনি।

এদিকে দেওয়ান উমর খাঁ পারিবারিকভাবে কড়া নিয়ম পালন করতেন। তাই, কোনভাবেই দেখার সুযোগ নেই সখিনাকে। ফলে ফিরোজ খাঁ একটি কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি দরিয়া নামে এক সুন্দরী মহিলাকে তসবি বিক্রেতা হিসেবে উমর খাঁর অন্তঃপুরে সখিনার বাসায় পাঠান। দরিয়ার মুখে ফিরোজ খাঁর অসামান্য রূপ-গুণের কথা শুনে সখিনা নিজের অজান্তেই মনেপ্রাণে ফিরোজ খাঁ-কে ভালবাসতে শুরু করেন।

সাকির মনের কথা বুঝতে পেরে ফিরোজ খাঁ পরিবারের সম্মতি পেতে জঙ্গলবাড়িতে ফিরে আসেন এবং পরিবারের সম্মতি নিয়েই উমর খাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু নিজের মেয়ের সাথে ফিরোজ খাঁর বাগদানে আপত্তি জানান উমর খাঁ। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়। এতে করে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে। লজ্জা, ঘৃণা আর ক্ষোভে ফিরোজ খাঁ বিশাল সৈন্যদল নিয়ে আক্রমণ করেন। অতর্কিত এ আক্রমণে উমর খাঁর সৈন্যদল পিঁছু হটে যায়। সৈন্যবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে উমর খাঁ পরাজয় বরণ করেন। এই সংঘাত আর শত্রুপক্ষের বিজয়ে কেল্লা তাজপুর নারীশূন্য হয়ে যায়।

তবে এতে একটুও বিচলিত হননি সখিনা৷ তিনি নিজের ঘরেই বসে ছিলেন। এসময় ফিরোজ খাঁ স্বসম্মানে তাকে বরণ করে নেন। শানাই বাজলো, ঢোল বাজলো। বিয়েও হলো! কিন্তু উমর খাঁ তখনো এ বিয়ে মানতে পারেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ আর মেয়েকে ফেরৎ পাওয়ার আশায় তিনি আরও শক্তি-সামর্থ নিয়ে বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কন্যাকে তিনি ফিরিয়ে আনবেনই l পরবর্তীতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরোজ খাঁ-কে বন্দীও করেন। এছাড়া ফিরোজ খাঁ-কে বারবার তালাক দেওয়ার চাপ দিতে থাকলেও ফিরোজ খাঁ তাতে সম্মত হননি।

যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরোজ খাঁর বন্দী হওয়ার ফলে যখন সৈন্যবাহিনী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত, তখন যুদ্ধ ময়দানে ছদ্মবেশে হাজির হন সখিনা। যুবক বেশে তিনি ফিরোজ খাঁর সেনাপতির পরিচয় দিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। একে একে বিপক্ষ শক্তিকে নাজেহাল করতে শুরু করেন। এমন সময় উমর খাঁর জনৈক উজিরের কুমন্ত্রণায় একটা গুজব রটিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়, যার জন্য এই যুদ্ধ সেই ফিরোজ খাঁই নাকি তার স্ত্রী সখিনাকে তালাক দিয়েছেন।

এ খবর সখিনার কানে পৌঁছালে তিনি ভেঙে পড়েন। ফলে নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে একসময় বিপক্ষ শক্তির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। শিরোস্ত্রাণ খুলে মাটিতে পরেl অবাক কাণ্ড! দেখা যায় ছদ্মবেশ ধরা এই যুবক আসলে অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী বিদ্যান বীর সখিনা। অন্যদিকে উমর খাঁ তার আদরের মেয়েকে হারিয়ে শোকে পাগল প্রায়। প্রাণ প্রিয় মেয়ের প্রাণহীন দেহ কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেই কান্নার সুরে জঙ্গলবাড়ীর বাতাস কী পরিমাণ ভারী হয়েছিল তা জানা যায়নি, তবে এ কাহিনী শুনে আজও সবার অন্তর করুণ সুরে সিক্ত হয়ে ওঠে! মেয়েই যখন নাই তখন শত্রুতা আর কার সাথে? ফিরোজ খাঁকে বন্দীশালা থেকে মুক্তি দেন উমর খাঁ। বন্দী দশা থেকে মুক্তির পর সখিনার বিরহে ফিরোজ খাঁ পাগলের মতো হয়ে পড়েন।

এরপর থেকে কেল্লা তাজপুরবাসী বিচিত্র এক দৃশ্য দেখেন। প্রতি সন্ধ্যায় দরবেশধারী একজন প্রদীপ জ্বেলে সখিনার সমাধির পাশে নিশ্চুপে বসে থাকেন। পরে অবশ্য সবাই বুঝতে পারে, বেশধারী এই ব্যক্তি আসলে সখিনার স্বামী ফিরোজ খাঁ। প্রচন্ড শোক সহ্য করতে না পেরে একদিন তারও মৃত্যু হয়l বীরাঙ্গনা নারী সখিনার প্রাণত্যাগের স্থানেই সমাধি হয় তাঁর। স্থানটি কুমড়ী নামে খ্যাত।

এককালে কেল্লা তাজপুর গ্রামের চারপাশে উঁচু উঁচু মাটির প্রাচীর ছিলো। প্রায় চার মাইলব্যাপী এই প্রাচীরের মাঝে ঘোড়াদৌড় হতো। গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে দুই মাইল বিস্তৃত সুরিয়া নদী। যুদ্ধের পরিখার চিহ্নও রয়েছে এখানে। উঁচু মাটির টিলা এখনো রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। দেওয়ান উমর খাঁর বাড়ির ধ্বংসাবশেষও রয়েছে সেখানে।

দেওয়ান উমর খাঁ দিল্লির মুঘল সম্রাটের অনুগত ছিলেন। এদিকে বারোভূঁইয়ার সম্রাট ঈশা খাঁ ও তার নাতি ফিরোজ খাঁ বংশীয় ভাবেই মোঘলদের শত্রু ছিলেন । বাংলা সবসময়ই দিল্লির শাসন থেকে পুরোপুরি না হলেও আলাদা ছিলো, দিল্লির কোনো প্রদেশ বা রাজ্য হিসেবে বাংলা অধিনস্ত ছিলো না। ভারতবর্ষ এক থাকায়। বাংলা স্বাধীনভাবে থাকলেও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার মতো মাসিক বা বার্ষিক চাঁদা দিয়ে পুরো ভারতবর্ষের সাথে একত্র বা মিলেমিশে থাকতো।

দেওয়ান উমর খাঁ কেন ফিরোজ খাঁর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন বা বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাগে, ক্ষোভে বা অপমানেই যে কেবল ফিরোজ খাঁ আক্রমণ করে তা নয় বরং এর ভিত্তি আরও গভীর। দিল্লির শাসনের অধীনস্থ হয়ে বিভিন্ন সুবেদার বা গভর্নর তাদের প্রতি এতোটাই অনুগত ছিলেন যে বাংলার ধন সম্পদ উপঢৌকন হিসেবে দিয়ে দিতেই বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। ফলে বাংলার নবাব, বারোভূঁইয়া সকলের সাথে বিরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকতো।

এ ঘটনায় আরেকটি বিষয়ে বিশেষ লক্ষণীয় দিক আছে সেটা হলো, প্রেম ভালবাসার অধিকতর গ্রহণীয় কাহিনী হচ্ছে পবিত্রতা। ভালবাসায় সখিনা যেমন গভীর অনুরাগী ছিলেন তেমনি ফিরোজ খাঁও সখিনার প্রতি গভীর ভালবাসা দেখিয়েছেন। কেবল ক্ষমতার দাম্ভিক বা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক দিয়েই ঘটনাটি ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। ফিরোজ খাঁ পুরোপুরি বন্দি হয়েও যেমন অসংখ্য চাপের পরেও স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে সম্মত হননি। তেমনিভাবে স্বামীকে মুক্ত করতেই নিজে শত্রু শিবিরে হানা দেন। লড়াই করে জয়ের দিক এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক এমন সময় তালাকের মিথ্যে খবর ছড়িয়ে পড়লে তিনি ভেঙে পড়েন। এর মাধ্যমে একজন নারীর বীরত্বের কথা যেমন বুঝা যায়, তেমনি তার কোমলতার বিষয়টিও ফুটে উঠে। নারী তো এমনই! দৃঢ়চিত্তে লড়াই ও মনোভাবে কোমল এই দুই গুণে বিজেতার গল্প কেবল নারীরই। নারীই প্রকৃত বীর। নারীর এই অদম্য স্পৃহা নারীকে বরাবরই ইতিহাসখ্যাত করেছে। তাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হবে সখিনাকে। সম্মান জানাতে হবে শীর উন্নত সকল বীর নারীদের। নারীদের ভালোবাসার আগুনের কতোটা তেজ তার প্রমাণ দিয়েছেন সখিনা। শ্রদ্ধা জানাই বাংলার বৃহত্তর ময়মনসিংহের অগ্নিকন্যাকে।

লেখক:  রিফাত আহমেদ, চেয়ারপারসন, সিদ্দিকি’স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’স এসিস্ট্যান্স ফাউন্ডেশন। ইতিহাস, বিজ্ঞান নিয়ে লেখা staycurioussis.com (বাংলা এবং ইংলিশ) ওয়েব সাইটির প্রতিষ্ঠাতা।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;