শীতেই একত্রিত হয় পাতি শরালির দল

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাতি শরালি উড়ন্ত সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত

পাতি শরালি উড়ন্ত সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত

শীত এসে গেলেই ফিরে আসে পাতি শরালিরা। কোথা থেকে ওর আসে – কেউ জানে সুস্পষ্টভাবে না! তবে ধারণা করা হয়- গ্রামীণ নানান ছোটবড় জলাশয় থেকে ওরা একত্রে একটা জলাশয়ে এসে জড়ো হয়। তখন সংখ্যায় এরা এতো বেশি হয় যে, দৃষ্টি শুধু ওদের দিকেই যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে দলবেঁধে হাওর-বিলে ঘোরাফেরা করে কিংবা উড়া-উড়ি করে।

অনেকে না চিনে আমাদের দেশে বসবাস করা এই জলজ পাখিগুলোকে পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি বলে থাকেন। এরা পরিযায়ী পাখি নয়। এরা আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। শুধুমাত্র শীতকালে ওরা বিলে-জলাশয়ে একত্রিত হয়ে থাকে বলে এদের বেশি দেখা যায়। প্রজনন মৌসুমসহ অন্য সময় ওরা আলাদা আলাদাভাবে অর্থাৎ জোড়ায় জোড়ায় বিল-হাওরগুলোতে বসবাস শুরু করে। তাই শীত মৌসুম ছাড়া তাদের একত্রিতভাবে এতো বেশি সংখ্যা দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপন

পাতি শরালি ছাড়াও এদের ছোট শরালি বা গেছো হাঁস বলা হয়। এদের ইংরেজি নাম Lesser Whistling Duck এবং বৈজ্ঞানিক নাম Dendrocygna javanica।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাস সূত্রে জানা যায়, রাতের বেলা উড়ে যাওয়া সময় শিস দিয়ে ডাকে যায়। ডাক শোনো চিনে নিতে অসুবিধা হয় না এদের। ডানায় রয়েছে এদের বিশেষ ধরণের পালক। উড়ার সময় সেই পালকগুলো থেকে শব্দ ধ্বনিত হয়। অনেক সময় ডাক না দিলেও পালকের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাইক্কা বিল ওদের একত্রিত দাপাদাপি, হাঁকডাক আর ছুটোছুটি দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। প্রতি বছর এভাবেই এরা শীতকালে বড় দলে মিশে থাকে। এমন চিত্র শুধু বাইক্কা বিলেই নয়; দেশের অন্যান্য জলাশয়েরও।

বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন বিল থেকে এসে একত্রিত হয়েছে পাতি শরালি। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. কামরুল হাসান বলেন, পাতি শরালি দেশি পাখি। শীতকালে ওরা একত্রে ঝাকবাঁধে। গরমকালে ওরা জোড়ায় জোড়ায় আলাদা হয়ে যায় বলে আমাদের নজরে পড়ে খুবই কম। আমাদের দেশে দুই প্রজাতির শরালি দেখা যায়। একটি রাজ শরালি এবং অপরটি পাতি শরালি। তবে রাজ শরালি পরিযায়ী পাখি। আকারে এরা পাতি শরালি থেকে বড়।

তিনি আরো বলেন, পাতি শরালি গাছে বাসা করে থাকে। অন্যান্য হাঁস তো মাটিতে বাসা করে। সাধারণত এরা মাটিতে বাসা করে না। এই পাতি শরালি কিন্তু গাছের গর্তে বা গাছের চিপা জায়গায় বাসা করে। আগে বিল-হাওরের আশেপাশে বড় হিজল-করচ গাছ, তাল ও নারকেল গাছ প্রভৃতি ছিল এখন তো আর সেরকম নেই। তাই বর্তমানে তাদের বাসা করার স্থানের কিছুটা সংকট অবশ্যই রয়েছে।

প্রফেসর কামরুল আরো বলেন, পাতি সরালির ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম এবং দৈর্ঘ্য ৪৫ সেমি। এক নজরে দেখলে এদের কালচে-বাদামি রঙের পাখি বলে মনে হবে। গলা বুক বাদামি। পা কালো এবং ঠোঁট ধূসর-কালচে। পিঠে হালকা বাদামিতে কিছুটা নকশা আঁকা। লেজের তলা সাদা এবং মাথা বাদামি। মিঠাপানির পুকুর, ঝিল, বিল, হাওর, নদীতীর ইত্যাদি অগভীর জলাশয়ে এরা বসবাস ও বিচরণ করে। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ প্রভৃতি এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে।

বিভিন্ন কলকারখানায় রাসায়নিক বর্জ্য, চাষাবাদে বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং মাছ শিকারের ক্ষেত্রে বিষ-টোপ ব্যবহারে আমাদের ছোট-বড় জলাভূমিগুলো ক্রমশই দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে পাতি শরালিসহ অন্যান্য প্রজাতির জলজ পাখিগুলোর বিচরণক্ষেত্র স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।