মাস্কের আড়ালে অস্ফুট ‘শুভ নববর্ষ ২০২১’

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাস্কের আড়ালে অস্ফুট ‘শুভ নববর্ষ ২০২১’/ ছবি: সংগৃহীত

মাস্কের আড়ালে অস্ফুট ‘শুভ নববর্ষ ২০২১’/ ছবি: সংগৃহীত

করোনার প্রকোপ ও প্রলেপ মেখে পৃথিবীতে অদ্ভুত-ভীতিকর এক নতুন বছর এসেছে। যত জোরে বলতে বা শুনতে অভ্যস্ত আমরা, ‘শুভ নববর্ষ’ তেমন করে শোনা যায়নি। মুখ-ঢাকা মাস্কের আড়ালে অস্ফুটে উচ্চারিত হয়েছে ‘শুভ নববর্ষ ২০২১’।

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ক্যালেন্ডারের শেষ পাতাটি যথারীতি ঝরে গেছে। গতায়ু অতীত, জীর্ণতা, মলিনতাকে মহাকালের গর্ভে বিলীন করে এসেছে নতুন বছর। তবে, নতুন আশাবাদ, প্রতীতি ও প্রত্যয়ের সমান্তরালে বৈশ্বিক মহামারির চলমান তাণ্ডবও বিগত বছরের দিনগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে এসেছে ইংরেজি নতুন বছরে।

বিজ্ঞাপন

করোনা-দংশিত নতুন বছর অতীতের নববর্ষগুলোর চেয়ে আলাদাভাবে দৃশ্যমান। যে নববর্ষ সার্বজনীন অংশগ্রহণে পালিত একটি বিশ্বজনীন অনুষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে, তা বহুলাংশে ম্লান। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে এবং পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোতে উদ্দামতায় উদযাপিত হওয়া নববর্ষ, এবার আগের মতোই পালিত হওয়ার সুযোগ ক্ষীণ। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি ও দেশকালের সীমানা পেরিয়ে যে নববর্ষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস স্পর্শ করে সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে, তা কেমন করে আন্দোলিত করবে স্বজনহারা, রোগক্লিষ্ট, বিপন্ন মানবমণ্ডলীকে?

অতীতের প্রতিটি ইংরেজি নববর্ষের নব আবহে আলোকিত হয়েছে নিউইয়র্কের এভিনিউ, টরেন্টোর স্কাইলাইন, বনেদী লন্ডনের চার্চ, ইউরোপের গথিক স্থাপনা, প্যারিসের ক্যাফে, অস্ট্রেলিয়ার হারবার, রোমের প্রত্ন-অস্তিত্ব, কায়রোর চা-খানা, ইস্তাম্বুলের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো। বিশ্বের দেশে দেশে আলোকমালায় ভূষিত হয়ে শুভাশিস জাগিয়ে বছরের পর বছর এসেছে নতুন বছর।

বিজ্ঞাপন

চিরায়ত আয়োজনে নববর্ষ পালনের ধারা এবার সীমাবদ্ধ। বছরব্যাপী করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে আছে পৃথিবী ও মানুষ। ভ্যাকসিন এলেও পৃথিবীতে এসেছে করোনার নতুন আঘাত ও ঢেউ। আশা ও হতাশার দোলাচলে বহমান জীবনের ধারায় নববর্ষের স্পন্দন তাই ম্রিয়মাণ।

নববর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণেও পৃথিবীর অনেক দেশেই চলছে লকডাউন। কারফিউ জারি হয়েছে বহু জায়গায়। বন্ধ আছে বিমান যোগাযোগ। স্তব্ধতায় মূহ্যমান হয়ে আছে জীবনের স্বাভাবিক গতি। দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে গৃহবন্দিত্ব, কোয়ারেন্টাইন, সঙ্গরোধ, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। জীবনের নিত্য উপকরণের জায়গা দখল করেছে মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার। মুক্ত, স্বাধীন, বাধাহীন জীবনের বাঁকে বাঁকে ভর করেছে সন্দেহ, সতর্কতা, ভয়, আতঙ্ক ও উদ্বেগ।

তবু অপরাজেয় মানুষ অদম্য সাহসে লড়াই করছে মহামারির বিরুদ্ধে। নতুন বছরের দিকে আশায় তাকিয়ে আছে তার একজোড়া জীবনবাদী চোখ। মুখ-ঢাকা মুখোশের তলদেশে স্পন্দিত হচ্ছে তার জীবন্ত কণ্ঠস্বর। সেখানে উচ্চারিত হচ্ছে শুভ ইচ্ছার ধ্বনিপুঞ্জ এবং প্রসারিত জীবনের অনিবার্য বর্ণমালার স্বর ও ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলো।

যেভাবে আদি পৃথিবীর আদিম অন্ধকারে পাথরে পাথর ঘষে যুথবদ্ধ মানব-মানবী জ্বেলেছিল সভ্যতার প্রথম আলো, সেভাবেই করোনাকালের মৃত্যুময় পাকদণ্ডী পেরিয়ে আসবে জীবনের সবুজ উপত্যকা। ২০২০ সালের দুঃখ-তাপিত যন্ত্রণা মুছে ২০২১ সালের নতুন সূর্যের আলোকিত দিনগুলো রাঙাবে পৃথিবীকে। জীর্ণতার বিবরে আচ্ছন্ন জরা, গ্লানি, শোক ও মৃত্যুর অবসান ঘটবে। বিষন্নতায় জর্জরিত পৃথিবী আবার উচ্ছলসৌন্দর্যে উজ্জ্বল হবে। প্রীতি ও শুভেচ্ছায় নিরাপদ ও আনন্দময় হবে প্রতিটি মানুষের জীবন। নববর্ষের নতুন আবহে এমন প্রত্যাশা বিশ্বের সকল মানুষের।

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ ২০২১ সাল।