২০২০: যা কিছু চির স্মরণীয়-শিক্ষণীয়



শুভ্রনীল সাগর, স্পেশালিস্ট রাইটার
২০২০ সালকে ‘ফেস মাস্ক ইয়ার’ বললে অত্যুক্তি হবে না

২০২০ সালকে ‘ফেস মাস্ক ইয়ার’ বললে অত্যুক্তি হবে না

  • Font increase
  • Font Decrease

ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকদের নজর এখন আমাদের ওপর। সব অর্থেই ২০২০ ছিল ভীতিকর আর দুর্দশার বছর। কোনো এক সময় আমাদের উত্তর প্রজন্ম হয়তো জানতে চাইবে, কেমন ছিল সেই প্রচণ্ড মানসিক আঘাত আর নাটকীয় বাঁকের দিনগুলি! ইতিহাস সাধারণ লিখিত হয় ক্ষমতাবান, সুবিধাপ্রাপ্ত ও কুখ্যাতদের ঘিরে। সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প খুব কমই আসে।

ধরা যাক, আজ হতে শতবর্ষ পরে, যদি ২০২০ সাল নিয়ে কথা ওঠে, তাহলে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো কোন বিষয়গুলো থাকবে? যেগুলো ২০২০ সালকে সব অর্থেই তুলে ধরে?

২০২০ শেষ হয়ে এলো। অনেকে এই বছরটি স্মৃতি থেকেই একদম মুছে ফেলতে চাইবেন। এরপরও, এইসব অভিজ্ঞতা ও যাপন তো রয়েই যাবে। সদ্য পার করে আসা অশান্ত বছরটি আমাদের কাজ-কর্ম, জীবন যাপন, চিন্তাধারা ও পরিবর্তনের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক সেইসব বিষয়গুলো যা সত্যিকার অর্থেই মনোযোগ, স্মরণ ও শিক্ষণের যোগ্য দাবিদার!

ফেস মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

বিষময় বিশ সালকে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় সেটি হলো ‘ফেস মাস্ক’। এটিকে ‘ফেস মাস্ক ইয়ার’ বললে অত্যুক্তি হবে না। এটি কেবল ২০২০ সালই নয়, আগামীতেও এর প্রয়োজনীয় প্রভাব বজায় থাকবে।

অণুজীব বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের যে বাড়-বাড়ন্ত তাতে কোভিড-১৯ এর চেয়েও শক্তিশালী ভাইরাস সামনে হানা দেবে। সেক্ষেত্রে ফেস মাস্ক আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন-যাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে যাচ্ছে।

শুধু ফেস মাস্কই নয়, অন্যান্য যেসব শারীরিক সুরক্ষা সামগ্রী যেমন: স্যানিটাইজার, হ্যান্ড রাব, পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই), গ্লাভস প্রভৃতি বছরজুড়েই মানুষের প্রয়োজনীয় তালিকার শীর্ষে ছিল এবং আগামীতেও পরিসরভেদে থাকবে। সাধারণ মানুষ শুরুতে পিপিই ও গ্লাভস পরলেও পরে শুধু মাস্কে এসে ঠেকে। কিন্তু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবাদানকারীদের তো এসব এড়ালে চলে না! তাদের জন্য এসব অত্যাবশ্যকীয়।

সম্প্রতি গবেষকরা করোনাভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেন’ (অণুজীবের জিনগত ভিন্ন প্রকার) খুঁজে পেয়েছেন যা আরও ৭০ গুণ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন। ইতিমধ্যেই এই স্ট্রেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গণসংক্রমণ এড়াতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অন্যান্য অনেক দেশ। বাংলাদেশেও স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে। কাজেই ২০২০ সালে যেরকম মাস্ক-রাজ ছিল, নতুন বছরেও তা বাড়বে বৈ কমবে না। এছাড়া করোনা মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে রীতিমতো বাধ্য করেছে। শুরুতে বাধ্যবাধকতা থেকে করলেও ধীরে ধীরে তা অভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবন-যাপন ছাড়া যে আগামীতে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা সম্ভব নয়, সেই শিক্ষা আমরা চরম মূল্য দিয়েই অর্জন করেছি।

পরিবারিক-সামাজিক নৈকট্য

বলাই বাহুল্য, করোনার প্রথম চার-পাঁচ মাস ছিল বিভীষিকাময়। সবাইকেই ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকদের মতে, বিশ্ব এর আগেও মহামারি দেখেছে। দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধ পার করেছে। কিন্তু এমন একযোগে বিশ্বব্যাপী বন্দিত্ব স্মরণকালে কেউ কখনও দেখেনি। এর ফলে অধিকাংশেরই পরিবারের সঙ্গে লম্বা সময় কাটানোর সুযোগ ঘটেছে। গ্রাম-মফস্বলে তাও পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে জানা-শোনার সুযোগ থাকে। কিন্তু মহানগরে সেটি ঠিক উল্টো। বরং এমন হয়, বছরের পর বছর পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকে কিন্তু কারও সঙ্গে কারও পরিচয় বা যোগাযোগ নেই। শহুরে ব্যস্ত জীবন তা হতেও দেয় না! কিন্তু এই লকডাউনে নিজের পরিবারের বাইরে সবচেয়ে আপনজন ছিল প্রতিবেশীরাই। সেটা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস হোক বা সহানুভূতি-সান্ত্বনা – আতঙ্কময় দিনগুলোতে তারাই পাশে ও কাছে ছিল।

এই প্রকৃতিপ্রদত্ত নৈকট্য অতি বিরল। করোনা কেটে গেলেও এমন মায়াময় বন্ধন কেউ হারাতে চাইবে না সেটা নিশ্চিত। শুরুর দিকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়াতে এর উল্টোটাও যে ঘটেনি তা নয়। কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব। একা সে অতীতে যেমন বাঁচতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। বরং ধনতান্ত্রিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় রোজকার ইঁদুর দৌড় ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে আসার যে ফুসরত মিলেছে, এও বড় পাওয়া। মানুষের পাশে যে শেষ পর্যন্ত মানুষকেই দাঁড়াতে হয় তা আরও কার্যকরীভাবে প্রমাণ হলো গত বছরে।

দূষণমুক্ত নির্মল পরিবেশ

লকডাউনে কার্যত গোটা বিশ্ব থমকে ছিল। মানুষ ঘরবন্দি কাজেই বাস-ট্রেন-মোটরবাইক-উড়োজাহাজও চলেনি। অধিকাংশ কারখানাও ছিল বন্ধ। আকাশে-বাতাসে কালো ধোঁয়া নেই। যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ছড়ানো নেই। হোটেল-মোটেল খালি। প্রকৃতি যেনো হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল। মা-প্রকৃতির এই বিশ্রামটুকু ভীষণ দরকারি ছিল। ওই সময় পরিবেশ দূষণ কী হারে কমেছিল তা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষণীয় শহর ঢাকার উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে। এমনিতে ঢাকার গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ১৯৪। হরহামেশা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। একিউআই অনুযায়ী, ২০০-৩০০ এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভীষণ অস্বাস্থ্যকর’। লকডাউনে একিউআই নেমেছিল একশোর নিচে, যা ঢাকাবাসীদের আজন্ম স্বপ্ন ও চির কাম্য।

বিশ্বব্যাপী সীমাহীন পরিবেশ দূষণে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এর নানামুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমরা নানাভাবেই প্রত্যক্ষ করছি। এই নির্মল পরিবেশ সবসময়ের জন্য থাকে এটাই সবার কামনা। লকডাউন তথা ২০২০ সাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলো পরিবেশ দূষণের কার্যকারণ এবং ফলাফল। এই শিক্ষা আমরা কেউই ভুলতে চাইবো না, ভোলা উচিতও হবে না!

সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন

গেলো বছর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস মুভমেন্ট’ নতুন করে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। ঘটনার সূত্রপাত ২৫ মে ২০২০। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে গলায় হাঁটু চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এক শেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা। লকডাউন ভেঙে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনকারীরা পথে নামেন। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। ভাস্কর্যের এই ব্যক্তিরা তাদের কাজ ও চিন্তার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বর্ণবিদ্বেষী ও মানবাধিকার হরণকারী ছিলেন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম শতাধিক বিতর্কিত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য আন্দোলনকারীরা গুঁড়িয়ে দেন। বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এগুলো স্থাপিত ছিল। ভাস্কর্যগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামজিক ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও, দিকে দিকে পরিবেশ ও মানবাধিকারসহ প্রয়োজনীয় নানা আন্দোলন দানা বাঁধে। একদিক দিয়ে এটা অনেকটা ইতিহাসের দায় শোধের মতো।

সম্পর্ক ও পারস্পরিক দেখভাল

এটা মিথ্যে নয়, করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে চরম আতঙ্কিত অবস্থায় স্বার্থপরতা ও মেরুকরণ প্রাধান্য পাচ্ছিল। সবারই ভয় ছিল, সাহায্য করতে গিয়ে আমি নিজে না সংক্রমিত হই! করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নিজের পরিবারের লোকজনকেও বাগানে-রাস্তায় ফেলে এসেছে মানুষ। করোনায় কেউ মারা গেলে মৃতের স্বজনদের প্রতিবেশীরা পাড়ায় ঢুকতেও দেয়নি বলে খবর এসেছে।

তবে প্রথম পর্বের আতঙ্ক কেটে গেলে মানুষকে ফিরতে হয়েছে মানুষের সাহায্য-সহানুভূতির কাছেই। সেটি নিজ পরিবারের লোকজন হোক বা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশী। ফলে যেকোনো ধরনের সম্পর্কেরও পুনরাবিষ্কার হয়েছে বলা চলে। ২০২০ সালে নানাবিধ শীতলতা কাটিয়ে নতুনভাবে মানুষ মানুষের উপকারে এসেছে। মহামারিকালে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের যত্ন ও দেখভাল এই মহাবিপদ কাটাতে সবচেয়ে বেশি কাজে এসেছে।

ভবিষ্যতের উপহার

করোনা মানুষের অসহায়ত্বেরও একটি বড় পরীক্ষা নিয়েছে বলা চলে। চোখের সামনে লাখো মানুষ মরছে। প্রিয়জন ছেড়ে যাচ্ছে বিনা চিকিৎসা ও ওষুধে। ভ্যাকসিন নেই, কবে আবিষ্কার হবে এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। গোটা মানবজাতি একসঙ্গে দিশাহারা। এরকম সামষ্টিক-সামগ্রিক দুরাবস্থা নিকটকালীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও গেছে কিনা সন্দিহান।

এমন অনিশ্চয়তা, টালমাটাল আর স্নায়বিক চাপের সময়ে মানবতাই আমাদের শেষ আশা ও ভরসা যুগিয়েছে। মানবতার কথা সবসময়ই বলা হয়ে থাকে। জীবনের বিভিন্ন পরিসরে এর চর্চাও চলে কিন্তু ২০২০ ছিল সামষ্টিকভাবে মানবতার অগ্নিপরীক্ষার বছর। বলা চলে, সেই পরীক্ষার প্রথম ধাপ আমরা উতরেছি। পরবর্তী শত-সহস্র উত্তর প্রজন্মের কাছে ২০২০ সাল ‘মানবতা’ নামক এই মহার্ঘ্য উপহারটিই রেখে গেলো..

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;