বসন্ত-ভালোবাসায় মেতেছে রাজধানী



আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বসন্ত-ভালোবাসায় মেতেছে রাজধানী

বসন্ত-ভালোবাসায় মেতেছে রাজধানী

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতের জীর্ণতা সরিয়ে, গাছে গাছে কচি পাতা আর তাতে মৃদু হাওয়ার ঝিরিঝিরি কাঁপন জানিয়ে দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে। আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। প্রতি বছর এই দিনটিকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় দেশবাসী। গত বছর থেকে পহেলা ফাল্গুনে যোগ হয়েছে নতুন আমেজ। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করায় পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ১৪ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের সাথে এই দিনটি পালন করে থাকে বাঙালি। দুটি উৎসব এক সাথে পেয়ে যেনো বাড়তি আনন্দ এসেছে নাগরিক জীবনে।

করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা ভাটা পড়লেও থেমে নেই উৎসবের উচ্ছ্বাস। দিনের শুরুতে রাজধানীর জনসমাগম স্থানগুলোতে উৎসব প্রিয় মানুষের উপস্থিত কম থাকলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের বাড়তে থাকে। তরুণ-তরুণীর উপস্থিত বেশি থাকলেও সকল বয়সের মানুষের ভিড় ছিল। প্রিয় মানুষের সাথে ঘুরতে বের হয়েছে উৎসব প্রিয় মানুষ। তাছাড়াও পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, সহকর্মীদের সাথে ঘুরতে এসেছেন। ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বরসহ জনসমাগম স্থানগুলোতে ছিল চোখে পড়ার মত ভিড়।

উৎসবের সাথে মিলিয়ে ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েদের দেখা যায় লাল, হলুদ ও বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছেন

বেসরকারি চাকরি করেন বেলাল আহমেদ, পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ উপলক্ষে অনেক দিন পর কোন উৎসব পালন করতে পরিবার নিয়ে বের হয়েছি। করোনার কারণে প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া হয় না। করোনা যেহেতু এখনো আছে তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।

উৎসবের সাথে মিলিয়ে ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েদের দেখা যায় লাল, হলুদ ও বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছেন। চোখে কাজল, হাতে বাহারি রঙের রেশমি চুড়ি, কপালে টিপ আর খোঁপায় গোঁজা নানা ফুলের মালা। হাতে বিভিন্ন ফুল দেখা গেলেও গোলাপ ফুল প্রায় সবার হাতে হাতে জায়গা করে নিয়েছে।

দুটি উৎসব এক সাথে পেয়ে যেনো বাড়তি আনন্দ এসেছে নাগরিক জীবনে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুবিন ফারহানা বলেন, বসন্তের প্রথম দিন। প্রতিবছরই এই দিনটি পালন করে থাকি। তাছাড়া আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। ভার্সিটি বন্ধ থাকায় আমার অনেক বন্ধু ঢাকার বাইরে রয়েছে। যারা ঢাকায আছে তাদের সাথে দেখা হবে। সারাদিন বন্ধবীদের সাথে কাটাবো, রাতে পরিবারের সাথে কাটবো।

দেশের সবচেয়ে বড় বসন্ত উৎসবের আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের প্রাঙ্গণে। প্রতি বছর বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানাতে পহেলা ফাল্গুন "বসন্ত বরণ" উৎসব পালন করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর “বসন্ত বরণ” উৎসবটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এবার জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ চারুকলার পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে এ উৎসবের আয়োজন করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে 'বসন্ত উৎসব'। আজ বিকেল ৪টায় একাডেমির নন্দন মঞ্চে আলোচনা সভা দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠানটি।

পৃথিবীকে ছাড়িয়ে ‘স্বর্গে জমি’ বিক্রি চলছে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমরা অনেক কিছুই দেখতে পাই, শুনতে পাই। এইতো কয়েক মাস আগে চাঁদে জমি কেনার একটি বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে এবার আর চাঁদে নয়, চাইলে 'স্বর্গে জমি' কিনতে পারবেন! আসলেই কী তাই?

চলতি সপ্তাহে মেক্সিকোর একটি গির্জা ‘স্বর্গে জমি বিক্রি’ করছে বলে- এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য এর আগে একজন এই বিষয়টি নিয়ে টিকটকে একটি ভিডিও ছেড়েছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, এমন বিষয় প্রচার পর্যন্তই তারা সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং জমির প্লট বিক্রি করে লাখ লাখ ডলার সংগ্রহও করেছে চার্চটি। 

এ নিয়ে অনেক মূলধারার গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এসব খবরে বলা হয়েছে, ইগলেশিয়া দেল ফাইনাল দে লস গির্জা ‘স্বর্গে একখণ্ড জমি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে।

আসলে ব্যঙ্গ করে ইভানজেলিক্যাল গির্জার নাম করে এই ‘স্বর্গে জমি বিক্রি’র কথা বলা হচ্ছে। যাঁরা কাজটি করেছেন, তাঁরা এর মাধ্যমে গির্জার একশ্রেণির ধর্মগুরুর প্রতারণার কথা তুলে ধরতে চেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংগঠনের পেজটি বেশ জনপ্রিয়।

তারা বলছে, প্লটের প্রতি বর্গমিটারের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার অর্থ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৭৫৮ টাকা। আগ্রহী ক্রেতারা আমেরিকান এক্সপ্রেস, অ্যাপল পে ব্যবহার করে অর্থপ্রদান করতে পারেন বা পেমেন্ট প্ল্যান অ্যাপের মাধ্যমেও এই অর্থ দেওয়া যাবে।

ওই গির্জার ধর্মযাজককে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মযাজক ২০১৭ সালে স্বর্গে প্লট বিক্রয়ের বিষয় নিয়ে ঈশ্বরের সাথে কথা বলেছেন। তখন তাকে ঈশ্বর ওই প্লট বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন।

এ বিষয়তি নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পরে যায় সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই তাদের নিজেদের অভিমত তুলে ধরেছেন।

একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, "আমি আশা করি ধর্মযাজক আমাকে স্বর্গে কিছু জমি ক্রয় করা সুযোগ দেবেন। আমি প্রথমে তাকে সেখানে পাঠাব এরপর তাকে ফেসটাইমের মাধ্যমে আমাকে কল দিতে বলব যাতে আমি কি কিনতে যাচ্ছি তা দেখতে পারি।"

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমার জানা দরকার, কারা জমি দিচ্ছে, যাতে আমি তাদের স্বর্গের জমিতে মূল্যছাড়ের অফার দিতে পারি।’

তৃতীয় আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ঈশ্বরের নামে এমন চুরির কাজ শয়তানের কাজ।’

;

টাকার বান্ডিল দিয়ে তৈরি ‘কার্পেট’, হাঁটলেন প্রেমিকাকে নিয়ে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধনী ব্যক্তিরা তাদের অর্থসম্পদ দেখানোর জন্য কতই কিছু না করে। মাঝেমধ্যে তারা এমন কিছু কাজ করে যা শেষ পর্যন্ত স্রেফ পাগলামির পর্যায়ে চলে যায়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক নিন্দা কুড়িয়েছে। তারা এমন কাজকে 'জঘন্য' বলেও অভিহত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাশিয়ান এক উদ্যোক্তা তার প্রেমিকার হাত ধরে তাকে টাকার বান্ডিলের উপর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যদিও এই ঘটনাটি অনেক পুরাতন। কিন্তু নতুন করে আবার ব্যবহারকারীদের সামনে এলে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছিলেন রাশিয়ান উদ্যোক্তা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সের্গেই কোসেনকো। তিনি ‘মিস্টার থ্যাংক ইউ’ নামেও পরিচিত। ভিডিও তৈরি এবং প্রেমিকাকে ‘রাজকীয় অভ্যর্থনা’ দিতেই নগদ টাকার বান্ডিল দিয়ে ‘কার্পেট’ তৈরি করেছিলেন তিনি।

ভিডিওতে দেখা যায়, কোসেনকোর প্রেমিকা একটি হেলিকপ্টার থেকে নেমে তার হাত ধরে নগদ টাকার স্তূপের ওপর দিয়ে হাঁটছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনটি ‘প্রেম-পূর্ণ ইমোজি’ দেয়া ছিল।

কার্পেট হিসাবে ব্যাঙ্কনোট ব্যবহারের এমন ভিডিও দেখে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকেই আবার এই দম্পতিকে "ধনের কুৎসিত প্রদর্শন" বলে আখ্যায়িত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নোটগুলো জাল।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ''আপনি অনেক ধনী হতে পারেন, কিন্তু এভাবে টাকা নষ্ট করাটা উচিত না। এই টাকা দিয়ে আপনি শত শত পরিবারকে সাহায্য করতে পারতেন এবং হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার জোটাতে পারতেন।''

আরেকজন বলেছেন, ''এভাবে টাকার অপমান করা লজ্জাজনক।''

উল্লেখ্য, সের্গেই কোসেনকো ইনস্টাগ্রামে নিজেকে একজন গায়ক, উদ্যোক্তা ও ক্রিয়েটর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমের এই প্ল্যাটফর্মে তার চার কোটির বেশি ফলোয়ার রয়েছে।

;

রূপময় বর্ষায় খুলনা নগরীর সৌন্দর্য



ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলছে বর্ষাকাল। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঋতু বর্ষা। খুলনায় তীব্র তাপদাহের পর টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নগরী যেন এক নতুন রূপে সেজে উঠেছে। প্রতিটি গাছ, পাতা আর ফুল যেন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। রাস্তাঘাট, পার্ক আর বাগানগুলো সবুজে ভরে উঠেছে।

প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই আপনার চোখ আটকে যাবে সেই সব রঙ বেরঙের ফুলে। বৃষ্টির জলে ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে হয়ে উঠেছে সবকিছু, যা মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে তুলছে।


গাছের পাতায় জমে থাকা জলবিন্দুগুলো রোদ্দুরে রঙধনুর মতো ঝিলমিল করছে। ফুটপাতের ধারে ধারে ফুটে ওঠা রঙ বেরঙের ফুলগুলি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক একটি ছবিতে পরিণত হয়েছে। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ সব রঙ মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নীল দৃশ্য। গাছের নিচে জমে থাকা জলকাদায় শিশুদের কাদামাখা খেলাও নতুন রঙ যোগ করেছে নগরীর এই নবরূপে।

মানুষের মনে এই পরিবর্তন যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে একটু সময় বের করে মানুষজন বিকেলে পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছে। শিশুদের হাসি-খুশি মুখ আর তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় মুখরিত চারপাশ। প্রিয়জনের সঙ্গে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছে তারা।


নগরীর এই নবরূপ শুধু মানুষকে নয়, পশু-পাখিকেও নতুন উদ্যমে ভরিয়ে তুলেছে। গাছের ডালে ডালে পাখির কলরব আর ভেজা ভেজা গন্ধ মিশে পরিবেশকে আরও মধুর করে তুলেছে। পাখিরা যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, তাদের ডাকে প্রাণের সুর বাজছে।

নগরীর প্রতিটি কোনে এখন নতুন কাহিনী। পুরনো দেয়ালেও যেন নতুন রঙের ছোঁয়া লেগেছে। বৃষ্টির পরে সেই মাটি ভেজা গন্ধে মনে হয় যেন এক টুকরো গ্রাম উঠে এসেছে শহরের বুকে।

বৃষ্টি যে খুলনা মহনগরীর এমন পরিবর্তন এনে দিতে পারে, তা হয়তো অনেকেই ভাবেনি। এই নবরূপ শুধু নগরবাসীর নয়, পুরো প্রকৃতির এক মিলিত উৎসব। এ যেন এক নতুন সকাল, এক নতুন শুরু। প্রতিদিনের ব্যস্ততায়, ধুলো-ময়লার মাঝে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য এখন আবার ফিরে এসেছে, যা দেখে মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।


প্রকৃতির এই অপরূপ রূপের প্রশংসা করতে করতে সময় কেটে যায় নিমিষেই। নগরী যেন নতুন করে বাঁচতে শিখেছে। ফের শুরু হয়েছে তাপদাহ। তারপরও দুদিনের এই বৃষ্টি শেষে নগরী যেন রূপে রঙে আরও বেশি সুন্দর, আরও বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে।

;

শুভ জন্মতিথি মহীয়সী কবি সুফিয়া কামাল



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কবি সুফিয়া কামাল

কবি সুফিয়া কামাল

  • Font increase
  • Font Decrease

সুফিয়া কামাল কেবল একটি নাম নয়, এ যেন পরিবর্তনের জোয়ার। বাঙালি নারীর অন্ধকার জীবনে অধিকারের একটি মশাল আলোকিত ব্যক্তি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। এখনকার নারীবাদী দেখলে অধিকাংশ মানুষ কেমন আতঙ্ক প্রকাশ করে নাক সিটকায়! তবে প্রকৃত নারীবাদী, যারা হাজার হাজার নিপীড়িত নারীকে শোষণ ও অত্যাচার থেকে বাঁচিয়ে স্বাধিকারে সোচ্চার করতে সাহায্য় করেছেন তেমন নারীবাদীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি সুফিয়া। নারী প্রগতি আন্দোলনের অন্যতম ভিত্তি গড়ে এবং একাধারে আন্দোলনের অংশ ছিলেন তিনি। অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই মহীয়সী নারীর জন্মতিথি আজ।

১৯১১ সালের ২০ জুন (১০ আষাঢ় ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের দেশের ই ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ মহীয়সী এই নারীর ১১৩ তম জন্মবার্ষিকী। ‘জননী সাহসিকা’ হিসেবে খ্যাত কবি সুফিয়ার ছোটবেলা কেটেছিল তার মাতুতালয়ে। করি জন্মের পরপরই তার বাবা সাধক অনুসারী হয়ে সংসার ত্যাগ করেন। তারপর থেকে মা সাবেরা খাতুনের সঙ্গে তার নানাবাড়ি শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে থাকার সময়ই তার হাতেখড়ি হয়। নারীশিক্ষার প্রথা প্রচলিত না থাকায় অন্দরেই অন্য শিশুদের সাথে তিনি উর্দু, আরবি, ফারসি ভাষা শিখতেন। পরবর্তীতে একটু বড় মায়ের কাছেই তিনি বাংলা শিখতে শুরু করেন। কে জানতো,পরবর্তীতে এই বাংলার সাহিত্য তারই হাত ধরে বিশাল এক যাত্রা সম্পন্ন করবে!

রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ায় তার ব্যক্তিত্ব ছিল বিশেষ। মাত্র ৭ বছর বয়েসে তিনি বেগম রোকেয়ার সাক্ষাৎ পান কলকাতায়। তবে পারিবারিক কারণেই সুযোগ পেয়েও বেগম রোকেয়ার ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল’ স্কুলে ভর্তি হওয়া হয়নি। তবে স্কুলে কখনো যাওয়া না হলেও ছোটথেকেই তার মেধা সুপ্ত রাখার উপায় ছিল না। যদিও মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায় মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে। তবে স্বামীর সহযোগিতায় বাংলা সাহিত্য চর্চার পথ সুগম হয় কবির। স্বামী নেহাল ছিলেন একজন নারীশিক্ষা সমর্থক এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তাচেতনাসম্পন্ন ব্যক্তি। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েও তিনি স্ত্রী সুফিয়াকে পত্রিকায় লেখা ছাপানোর সুযোগ করে দিয়ে সাহায্য করেন।      

কবি সুফিয়া কামাল

১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা বাসন্তী ছাপা হয় সওগাত পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায়। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সাঁঝের মায়া, কেয়ার কাঁটা, মায়া কাজল, মন ও জীবন, প্রশস্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, ইতল-বিতল, দিওয়ান, সোভিয়েতে দিনগুলি, অভিযাত্রিক, মৃত্তিকার ঘ্রাণ, একাত্তরের ডায়েরী, নওল কিশোরের দরবারে, একালে আমাদের কাল- সহ আরও অসংখ্য সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেছেন তিনি। কলকাতায় থাকার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র, বেগম রোকেয়া নানান কিংবদন্তী সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে আসেন। তার চিন্তা-চেতনা এবং সাহিত্যের অনুপ্রেরণা হিসেবে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান তিনি।

জীবনের মাঝামাঝি স্বামী নেহাল হোসেনের হঠাৎ মৃত্যুতে (১৯৩২ সাল) বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন কবি সুফিয়া। তখন তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা এবং বেগম পত্রিকার সম্পাদনা করতে শুরু করেন একাধারে। এর কিছু বছর পর তিনি ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন কবি এবং এখানে সাহিত্যচর্চা ও নারীস্বার্থে কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমনকি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধেও যান।

কবি সুফিয়া কামাল

তার গঠিত নারী সংগঠন ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে সমাবেশ ও মিছিরে অংশগ্রহণ করে, যার মূলহোতা ছিলেন কবি সুফিয়া নিজেই। মুক্তযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের নজর ফাঁকি দিয়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে গেছেন। সুযোগ পেয়েও দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে, মৃত্যুর সম্ভাবনাকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে অনবরত ষোলআনা দেশপ্রেমের প্রমাণ দিয়ে গেছেন।        

যুদ্ধের পরও তিনি আমৃত্যু বাংলা সাহিত্য এবং নারী অধিকার উন্নতির লক্ষ্যে সংগ্রাম ও সাহায্য করে গেছেন। বাঙালি আজীবন মহীয়সী এই নারীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। যতদিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য রয়েছে,  কবি সুফিয়া কামালের কৃতিত্ব অমলিন রয়ে যাবে।

;