চিরসবুজ বনের বিরল পাখি জার্ডনের বাজ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চির সবুজ বনের উচু ডালে বসে থাকে জর্ডানের বাজ। ছবি: সাঈদ জামাল

চির সবুজ বনের উচু ডালে বসে থাকে জর্ডানের বাজ। ছবি: সাঈদ জামাল

দেশের প্রায় সব বনই এখন নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে! বনের মাঝে আশ্রয় করে থাকা নানান পাখিসহ বন্যপ্রাণীরা আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কবে এবং কী করে যে এই সংকট কাটবে তা জানা নেই কারো। এই সংকট না কাটা অবধি ভালো থাকবে না বনকে নির্ভর করা থাকা বন্যপ্রাণীরা।

স্বাধীনতার ৫০বছর উদযাপনে আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার হোক - দেশের সবকটি সংরক্ষিত বনের সুস্বাস্থ্য আমরা পুনরুদ্ধার করবো। সুনিশ্চিত করবো বনপ্রাণীদের আবাসস্থল এবং অবাদ বিচরণ। নানা প্রজাতির বনজ ও ফলদ বৃক্ষে ভরিয়ে তুলবো আমাদের মূল্যবান প্রাকৃতিক বনের অস্তিত্ব।

বিজ্ঞাপন

দুঃখের সাথে বলতে হয় - এমন অস্তিত্ব সংকটময় বনের একটি বিপন্ন শিকারি পাখি জার্ডনের বাজ। বনের বড় বড় গাছপালা ধ্বংসের জন্য মারাত্মক বাঁধা পড়েছে তার জীবনাচরণে। কারণ সে গাছের মগডালে বসে থাকা পাখি। তার জন্যে বড় বৃক্ষ দরকার। কিন্তু সমস্ত প্রাকৃতিক ও সংরক্ষিত বন থেকে বড় বড় গাছগুলো উপড়ে ফেলা হচ্ছে।

তাকিয়ে থাকে শিকারের সন্ধানে। ছবি: সাঈদ জামাল

বিজ্ঞাপন

 

কখনো বনের উঁচু গাছে খুব ভালোভাবে না দেখতে পারলেও মাথার উপরের ঝুঁটিকে দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না এটি জর্ডানের বাজ। তার মাথায় রয়েছে ঝুঁটি। সেইঝুঁটিময় সৌন্দর্য তাকে সব পাখি থেকে আলাদা করে রেখেছে। ঝুঁটিসৌন্দর্য মনে রাখার মতো।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‌‌‌‘জর্ডানের বাজের ইংরেজি নাম Jerdon’s Baza এবং বৈজ্ঞানিক নাম Aviceda jerdoni। এরা মিশ্র চিরহরিৎ সবুজ বনের পাখি। শুধুমাত্র সিলেট আর চট্টগ্রামের বন ছাড়া দেশের কোথাও এদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের প্রাকৃতিক বনগুলোর বিরামহীন ধ্বংসের মাঝে যে কয়টা জর্ডানের বাজ এখানো টিকে আসে এগুলো আমাদের জন্য অমূল্য ধন। আমি নিজেও একটা জর্ডানের বাজ থেকে সীমাহীন উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়ি।’

প্রাপ্তি স্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমাকালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, দুধ পুকুরিয়া ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য এসব ছোট ছোট বনেই ওরা এখনও একটা-দুটো কোনোক্রমে টিকে আছে। এর বেশি নেই কিন্তু। এগুলো সবই ছোট-ছোট বন, খন্ড বন; ধ্বংস হয়ে একেবারে কোনো রকম দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানেই এই পাখিটির বসবাস। জর্ডানের বাজ আমাদের দেশেরই পাখি। সারা বছর আমাদের দেশেই ওরা থাকে। বাসা তৈরি করে ছানা ফোটায়।’

মাথার ঝুঁটি তাকে সব শিকারি পাখি থেকে আলাদা করেছে। ছবি: সাঈদ জামাল


 

পাখিটির খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওরা কীট-পতঙ্গ এবং পোকা ধরে ধরে খায়। এই সব বনগুলোর প্রকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার ফলে এবং ব্যাপকহারে পর্যটক পরিভ্রমণের ফলে ওর খাবারও অনেক কমে গেছে। আমাদের দেশে বাজ প্রজাতির মধ্যেই এই জর্ডানের বাজটিই আমরা এখনো পাহাড়ি বনে দেখতে পারি। যদিও তার সংখ্যা অত্যন্ত কম। তবে অন্যান্য বাজগুলোকে তো দেখতেই পাই না। সে হিসেবে বলা যেতে পারে জর্ডানের বাজটাই তুলনামূলকভাবে ভালো আছে।’

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, জার্ডনের বাজ আমাদের দেশের বিরল আবাসিক পাখি। এদের দৈর্ঘ্য ৪৮ সেমি এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৩০.৫ সেমি। দেহ বাদামি। মাথার পেছনে খাড়া ঝুঁটির আগা সাদাটে। এরা উচুস্বরে বিড়ালের মতো : ‘পি-আউ’ কিংবা ‘কিকিয়্যা...কিকিয়্যা’ এভাবে ডাকে।

এরা চিল, শকুনের মতো মানুষের বর্জ্য খেয়ে বাঁচে না। শুধুমাত্র বনের পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, ছোট ছোট সরীসৃপ খায়। এরা পুরোপুরিভাবে বনের খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। ফলে বন যেহেতু প্রায় শেষ করে দিয়েছি আমরা তাই ধীরে ধীরে বনের উপর নির্ভরশীল পাখিগুলোও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানান এই পাখি বিজ্ঞানী।