করোনার বিরুদ্ধে টেক্কা দিল ইসরায়েল

  • মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

করোনার বিরুদ্ধে টেক্কা দিল ইসরায়েল

করোনার বিরুদ্ধে টেক্কা দিল ইসরায়েল

করোনার বিরুদ্ধে টেক্কা দিয়ে গোটা বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে ছোট্ট অথচ শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসরায়েল। মোট জনসংখ্যা ৯৩ লক্ষের মধ্যে ৫৩ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয় ১৬ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স হলেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই বয়সসীমায় থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে ৮১ শতাংশেরই ফাইজার-বায়োএনটেক কোভিড টিকার দু’টি ডোজ় দেওয়াও হয়ে গিয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাকে কাবু ও আয়ত্তাধীন রেখেছে ইসরায়েল। সোমবার (১৯ এপ্রিল) গোটা পৃথিবী যখন নতুন করে ‘গৃহবন্দি’ হয়ে পড়ছে, তখন দরজা খুলে দিয়েছে ইসরায়েল। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘প্রকাশ্য স্থানে আর মাস্ক পরার দরকার নেই।’

বিজ্ঞাপন

ইসরায়েল এত দিনের কড়া নিয়ম, কৃচ্ছ্রসাধন এবং টিকাকরণে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছে। যার ফলে দেশটিতে বইছে মুক্ত পরিবেশ ও খোলা বাতাস। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা বজায় রাখা হচ্ছে। কারণ, বাকি পৃথিবী এখনও ‘অসুস্থ’।

গত বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে করোনার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম টিকাকরণ শুরু করেছিল ব্রিটেন। প্রথম ছাড়পত্র পায় ফাইজ়ার-বায়োএনটেক জুটির কোভিড টিকা। তারপরে টিকাকরণে ছাড়পত্র দেয় আমেরিকা। এর পরপরই সারা পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে টিকাকরণ চালু করে ইসরায়েল।

বিজ্ঞাপন

আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, বাকি দুই দেশে টিকাকরণে গতি হারালেও ইসরায়েল শুরু থেকেই এক নম্বরে। যদিও করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত ততটুকু মারাত্মক হয়নি, তথাপি স্বাস্থ্যবিধির মান্যতায় ও সবচেয়ে দ্রুত গতিতে টিকাকরণে এক নম্বরেই ছিল ইসরায়েল। করোনার উদ্ভবের পরক্ষণেই রক্ষণশীল ইহুদি দেশটি কড়া করোনা-বিধি বজায় রেখেছে। যার ফলে বিশ্বে যখন দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ঢেউয়ের তাণ্ডব চলছে, তখন ইসরায়েলে করোনা-সংক্রমণের হার ও হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি সংখ্যা, দুই-ই একেবারে কমে গিয়েছে।

তবে করোনা-যুদ্ধে এহেন সাফল্যের পরেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ ঢিলে দিতে রাজি নয় ইসরায়েল সরকার। কারণ ব্রাজিল ও ভারতে নয়া সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়েছে। নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেনের ধাক্কায় অর্ধেক ইউরোপে লকডাউন। আমেরিকাতেও পরিস্থিতি খুব সহজ নয়। তা ছাড়া ইসরায়েলে ছোটদের (১৬ বছরের নীচে) টিকাকরণ বাকি। মাস্ক পরা নিয়ে কড়াকড়ি শিথিল হলেও রাস্তাঘাটে প্রত্যেককে মাস্ক সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে। স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণ ভাবে খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বদ্ধ জায়গা কিংবা বড় কোনও জমায়েত, অনুষ্ঠানে মাস্ক পরতে হবে এখনও।

তবে, বিদেশিদের ইসরায়েলে প্রবেশেও কড়াকড়ি বজায় রাখা হচ্ছে। সীমিত সংখ্যক বিদেশিকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশ-ফেরত ইসরায়েলিদেরও দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে একমাত্র উপসর্গহীন হলেই। তার পরেও একটি নির্দিষ্ট সময় নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে তাদের। নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেনগুলোকে নিয়ে চিন্তায় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলে ৭ জনের শরীরে করোনার ভারত-স্ট্রেন মিলেছে। যদিও সংখ্যাটি অতি নগণ্য তথাপি সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে যাবতীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

দেশটিতে কিছুটা রাজনৈতিক সঙ্কট ও নির্বাচনী উত্তাপ থাকার পরেও টিকাকরণে সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গোটা বিশ্বে আমরাই সবচেয়ে এগিয়ে।’ নেতৃস্থানীয় একটি ইসরায়েলি দৈনিকে সোমবার (১৯ এপ্রিল) শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘ব্রিদিং ফ্রিলি’। অর্থাৎ ‘স্বাধীন ভাবে শ্বাস নিন।’ ১৯ বছর বয়সি অমিতাই হলগার্টেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে এই প্রথম মাস্ক ছাড়া বেরিয়েছি। অদ্ভুত লাগছে। কিন্তু ভালো লাগছে।’

প্রাথমিক স্কুল থেকে হাইস্কুল, ফের কচিকাঁচাদের কোলাহলে ভরপুর। তবে পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ক্লাসরুমের ভেন্টিলেশন প্রক্রিয়া ঠিক মতো কাজ করছে কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে তাদের। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। কারণ, দেশবাসীর এই অংশেরই টিকাকরণ হয়নি এখনও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ‘১৬ বছরের নীচে টিকা দেওয়া হয়নি। তাই টিকাকরণের পূর্ব-পর্যন্ত বাচ্চাদের বিশেষ নিরাপদে রাখতে হবে।