বন্যপ্রাণী আইনে এখন টিয়াপাখি পালা অপরাধ
শরীরে অপূর্ব সুন্দর সবুজ রঙ। এমন রঙের সাথে মিল রেখে পাখি বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছেন সবুজ টিয়া। এরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এরা সবুজ বনভূমি, পাতাঝরা বন, আবাদি জমি, বাগান ও লোকালয়ে বিচরণ করে। সচারাচর ছোট ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। ফুল ও ফলদ গাছের ঘেরা বাগান ও শস্যক্ষেতে এসে খাবার খায়।
তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ফুল, ফুলের রস, ফল, লতাপাতা, বীজ প্রভৃতি। নীরব গাছের ডালে অন্যপাখিদের সঙ্গে রাত কাটায়। এর ইংরেজি নাম Rose-ringed Parakeet।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, আমাদের দেশে প্রায় ৭ রকমের টিয়া রয়েছে। এর মাঝে ‘সবুজ টিয়া’ একটি বিশেষ প্রজাতি। কলাপাতা ও সবুজ রঙের দীর্ঘ সুদর্শন পাখি। আকারে অনেকটা কাকের সমান। এর আরেকটি নাম ‘টিয়া-তোতা’। এরা সারা দেশেই আছে, সহজে দেখা মেলে।
কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে বেশ কিছু জায়গায় এর সংখ্যা কমে আসছে। তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ বলে ঘোষণা করেছে বলে জানান তিনি।
এর আকার-আকৃতি সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, এদের দেহের দৈর্ঘ্য ৪২ সেন্টিমিটার, ওজন ১৩০ গ্রাম। সামান্য কিছু পালক ছাড়া পুরো দেহই সবুজ। ঠোঁট লাল, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। চোখ হলদে-সাদা। ছেলেপাখি ও মেয়েপাখির গলায় ভিন্ন রঙের দাগ আছে। ছেলেপাখির থুতনিতে কালো রেখা, গলা ও ঘাড়ের পেছনে গোলাপি পাটল বর্ণ। মেয়েপাখির ঘাড় পান্না সবুজে ঘেরা। এর ঠোঁট টুকটুকে লাল। গলায় গোলাপী একটা রিঙ রয়েছে। এর লেজ অনেক লম্বা ও সুচালো।
জানুয়ারি থেকে জুলাই এদের প্রজনন মৌসুম। তখন এরা গাছের কোটোরে কাঠঠোকরাদের পরিত্যাক্ত বাসায় বা পুরানো দালানের ফাটলে বাসা করে ডিম দেয়। সবুজ টিয়ার ছানারা গাছের গর্তের মধ্যে থাকে। তবে তাদের আবাসস্থল বিনষ্ট হওয়ার কারণে তাদের অবস্থা বিছুটা বিপন্ন বলে জানান ইনাম আল হক।
বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ জানান, এ ছবি দু’টি ঢাকার উত্তরা থেকে তোলা। তখন তাদের ব্রিডিং সিজন (প্রজনন মৌসুম) চলছিল। টিয়াগুলো যখন বাসায় ডিমে তা দিতে ব্যস্ত। তখন পুরুষগুলো দলে দলে গম খেতে নেমে শূন্যে থেকে ধারালো ঠোঁট দিয়ে গমের শীষ কেটে নিয়ে যায়। গাছ থেকে ছিড়ে ক্যাক্টাস গাছে বসে খাচ্ছিল বলে।
টিয়ারা সহজেই পোষ মানে এবং কিছুটা মানুষের মতো করে কথা বলতে পারে। আর এটিই বিভিন্ন প্রজাতির টিয়াদের জন্য চরম বিপদের কারণ হয়েছে। এর জন্যই বর্তমানে প্রচুর পরিমানে টিয়া অবৈধভাবে ধরা ও বিক্রি করা হয়। বন্যপ্রাণী নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ আইনে এমন কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং দন্ডবিধিযুক্ত অপরাধ। অবৈধভাবে বন বা পাহাড়ি এলাকা থেকে সবুজ টিয়াসহ অন্য প্রজাতির টিয়া শিকার এবং তারা যেসব গাছে বসবাস করে সেগাছগুলো কেটে ফেলার ফলে জীবন বর্তমানে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।