উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কাব্যময় লেক ডিস্ট্রিক্ট



সাঈদ চৌধুরী
উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কাব্যময় লেক ডিস্ট্রিক্ট

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কাব্যময় লেক ডিস্ট্রিক্ট

  • Font increase
  • Font Decrease

লেক ডিস্ট্রিক্ট মানেই হৃদ আর সবুজ ছায়াঘেরা মনোরম পর্বতমালায় হারিয়ে যাওয়া। যেখানে রয়েছে ইংল্যান্ডের গভীরতম হ্রদ এবং সর্বোচ্চ পর্বত, বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী জাতীয় উদ্যান, সুরম্য উপত্যকা ও বিস্তীর্ণ বালুকাময় উপকূলরেখা। জুলাই মাসে গিয়েছিলাম সেখানে। প্রকৃতি প্রেমী শত শত মানুষের পদচারণায় ছিল মুখরিত। উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের স্নিগ্ধ মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হৃদয় ছুঁয়েছে।

দেশ-বিদেশের মানুষের অন্যতম জনপ্রিয় বিরতির জায়গা এই লেক ডিস্ট্রিক্ট। সাধারণত লকল্যান্ড নামেই অভিহিত। ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম কোণে কুমারিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। স্কটিশ সীমান্তের ঠিক নীচের অংশ। অর্ধ শতাধিক হ্রদ আর পাহাড় ঘেরা নয়নাভিরাম দৃশ্য। এই মৌসুমে মানুষের ঢল নামে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক লীলাভূমির পিকনিক ও পর্যটন স্পটগুলোতে। নিবিড় ঘন গাছপালায় সমৃদ্ধ পুরো অঞ্চল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ন্যাশনাল পার্ক। 


লেক ডিস্ট্রিক্টে উইন্ডারমেয়ার (WINDERMERE) হল ইংল্যান্ডের বৃহত্তম হ্রদ। এটি সাড়ে ১০ মাইল দীর্ঘ। এছাড়া অনিস্টন ওয়াটার পাঁচ মাইল লম্বা এবং আধ মাইল চওড়া। এখানকার কনিস্টন নৌকা কেন্দ্র থেকে অত্যাধুনিক ইঞ্জিন নৌকা এবং বাইক ভাড়া নেয়া যায়। শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে স্থানীয় হ্রদ কেসউইক। হ্রদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়া ফ্রায়ার ক্র্যাগের দুর্দান্ত ভিউ পয়েন্ট। এটি বোরোডেল উপত্যকার প্রবেশদ্বার। চতুর পাশেই রয়েছে উল্লেখযোগ্য হলিডে কটেজ।

লেক ডিস্ট্রিক্টের সবচেয়ে সুবিধাজনক হ্রদটি হল, এম-৬ পেনরিথ জংশন থেকে ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে অবস্থিত। পর্বতমালা এবং ময়দানের চমৎকার দৃশ্যগুলি অপূর্ব। ছোট ছোট হ্রদগুলির মধ্যে একটি বুটমেইর। দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা অঞ্চল। পাশেই রয়েছে ওয়েস্ট মোরিল্ল্যান্ড গ্রিন স্লেট হস্টিস্ট। স্লেট খনি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। আপরদিকে আছে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের গ্রাম গ্রাসমেয়ার এবং গ্রাসমেয়ার ওয়াটার। 


ইংরেজ কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার মতই তার জন্মভূমি। নিঃসর্গের মাঝে যেন রোমান্টিসিজমের আবহ। ১৮ শতকের শেষের দিকে রোমান্টিকতা সাহিত্য প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে ইউরোপে উদ্ভূত হয়েছিল। উইলিয়াম এই ধারার সফল প্রবর্তক। এখানকার জীবনাচরণ আর আবেগ-অনুভূতির নিগূঢ় রহস্য তার কবিতায় অসাধারণ মহিমা লাভ করেছে। আবেগ এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের পাশাপাশি প্রকৃতি ও আত্মার সাথে গভীর অনুভূতির প্রকাশ। রোমান্টিকতা ইংরেজি কবিতা এবং ছন্দবদ্ধ রচনার ইতিহাসে বৈপ্লবিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার প্রেরণা এই লেক ডিস্ট্রিক্ট। দুনিয়ার লেখক-সাহিত্যিকদের কাছে তাই জায়গাটি বিখ্যাত। আধুনিক রোমান্টিসিজমের অনন্য কবি উইলিয়াম। তার কবিতা ইংরেজি সাহিত্যকে বিপুলভাবে সম্পদশালী করেছে। প্রকৃতিকে অসাধারণ মহিমায় সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহিত্যে যার অবদান অনস্বীকার্য। ব্রিটিশ রাজসভার কবি উইলিয়াম তার কাব্যে সাধারণ মানুষের জীবনাচরণ, মানবিক বৈশিষ্ট্য এবং আবেগ-অনুভূতির কথা অত্যন্ত নান্দনিকতার সাথে তুলে ধরেছেন। তবে প্রকৃতির কবি হিসেবেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত।


উত্তর ইংল্যান্ডের ককারমাউথ গ্রাসমেয়ারে ১৭৭০ সালের ৭ এপ্রিল উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের জন্ম। জন ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও অ্যান বুকসনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ছেলে বেলায় বাবার কাছে মিলটন, শেক্সপিয়র ও স্পেনসারের কবিতা শিখেছেন। তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৭৯১ সালে। তারও আগে ১৭৮৭ সালে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম সনেট প্রকাশিত হয় ‘দি ইউরোপিয়ান’ ম্যাগাজিনে। এরপর তিনি ওয়াচম্যান নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তখন ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের সাথে পরিচয় ঘটে। কোলরিজের অনুপ্রেরণায় ১৭৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তাদের যৌথ কাব্য LYRICAL BALLADS। বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয় তার কবিতা।

নিচের অসাধারণ পঙক্তিমালা থেকে অনুধাবন করা যায় কবি কীভাবে প্রকৃতি অন্বেষণ করতেন। ‘FIVE YEARS HAVE PASSED; FIVE SUMMERS, WITH THE LENGTH / OF FIVE LONG WINTERS! AND AGAIN I HEAR / THESE WATERS, ROLLING FROM THEIR MOUNTAIN SPRINGS / WITH A SOFT INLAND MURMUR. ONCE AGAIN / DO I BEHOLD THESE STEEP AND LOFTY CLIFFS, / WHICH ON A WILD SECLUDED SCENE IMPRESS / THOUGHTS OF MORE DEEP SECLUSION, AND CONNECT / THE LANDSCAPE WITH THE QUIET OF THE SKY.‘ (Lines Composed a Few Miles above Tintern Abbey, On Revisiting the Banks of the Wye during a Tour. July 13, 1798, By William Wordsworth).


তবে TINTERN ABBEY উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের সর্বাধিক বিখ্যাত কবিতা, এটি ১৭৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। কথোপকথনের মধ্য দিয়ে নাটকীয় একাত্ত্বিক উপাদান সমৃদ্ধ। কবিতাটি ওয়াই নদীর ওয়েলশ তীরে মনমাউথশায়ারের টিনটার্ন গ্রামে অবস্থিত একটি ছোট জায়গার উপর ভিত্তি করে। এই কবিতার মাধ্যমে কবি তার পাঠকদের প্রকৃতি এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে নিজস্ব দর্শন বুঝতে চেয়েছেন।

১৮০৭ সালে প্রকাশিত কবিতা SOLITARY REAPER পড়লে অন্যরকম ওয়ার্ডসওয়ার্থের দেখা মিলে। একটি অল্পবয়সী মেয়েকে নিয়ে অপূর্ব গীতিনাট্য। গীতিকার এবং গানের সুর ও অভিব্যক্তি যে কোন পাঠক মন্ত্রমুগ্ধ হন। 

অবশ্য উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের সবচেয়ে আলোচিত কবিতা হচ্ছে ‘THE PRELUDE OR, GROWTH OF A POET'S MIND; AN AUTOBIOGRAPHICAL POEM‘. এই কবিতার কেন্দ্রবিন্দু ও শৈলী থেকে বোঝা যায় নব্য-ক্ল্যাসিক্যাল ধারা থেকে কবিতাটি রোমান্টিক ধারার দিকে ঝুঁকেছে। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত একটি আত্মজীবনী মূলক কথোপকথন। ১৭৯৮ সালে ২৮ বছর বয়সে উইলিয়াম এই কবিতাটি রচনা শুরু করেন এবং সারা জীবন ধরে আপডেট করেছিলেন। তিনি এই কবিতার কোনো শিরোনাম দেননি। ১৮৫০ সালে তার মৃত্যুর তিন মাস পর প্রথম প্রকাশিত হয় এবং শিরোনামটি দেন তার স্ত্রী মেরি।    


লেক ডিস্ট্রিক্টের গ্রাসমেইর উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের বাড়ির কাছে রয়েছে একটি ছোট দর্শনীয় লেক। সবাই একবার সেখানে যায়। তার উত্তর প্রান্তে ক্ষুদ্র গ্রাম উভয়। রোমান্টিক কবিদের কাছে সবচেয়ে বিখ্যাত। সেখানে রয়েছে ডোভ কুটির। যেখানে উইলিয়াম তার বোন ডোরোথি এবং স্ত্রী মেরি নিয়ে বেশিরভাগ বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন। আর এখানেই কবি সস্ত্রীক চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। এখান থেকে অনতিদূরে রয়েছে ওয়ার্ডসওয়ার্থ যাদুঘর। 

এক সময় অভিজাত ইংরেজ শিল্পপতিরা গ্রীষ্মের ছুটির দিনগুলি লেক ডিস্ট্রিকে কাটাতেন। ফলে তারা খুবই আকর্ষণীয় ডিজাইনের বাড়িঘর বানিয়েছেন। কয়েক শত বছর আগের এই সুবিশাল বাড়িগুলি এখন কটেজ, গেস্ট হাউস ও হোটেল হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে।

বাড়ির আমেজে ছুটি কাটাতে কটেজ বেশ উপযোগী। লোকেশনের ওপর ভাড়া নির্ভর করে। উচু টিলা বা পাহাড়ের উপর বাড়িগুলি পর্যটকদের অধিক পছন্দ। আমাদের পারিবারিক ট্যুর ছিল। তাই হোটেলে না গিয়ে কটেজ নিয়েছিলাম। সে হিসেবে পূর্বের বুকিং দেয়া ছিল। পাহাড়ী ঢাল বেয়ে ওঠা-নামা করতে হয়। বিশাল উচুতে মন ভুলানো কাঠের বাড়ি।

লেখক

এখানে পাহাড় ও আকাশের মধ্যে দূরত্বটা খুব কম মনে হয়। অভূতপূর্ব সৌন্দর্য দৃশ্য। কবির ভাষায় ‘ওপরে পর্বতের ঢেউরাশি গোধূলির বাঁকে। নিচে ঝরনার হাসি রংধনু বনের ফাঁকে।’

বিস্তীর্ণ বনভূমিতে আশপাশের পাহাড় ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে সবাই পুলকিত। কিন্তু বৃষ্টির সময় পাথর বাঁধানো আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু রাস্তা থেকে শিশুদের ছিটকে পড়ার ভয়ে মনটা শিহরিত হয়ে উঠে।

পাহাড়ের পাশে লেক বা নদী হলে মজাই আলাদা। আমরা যেখানে ছিলাম তার পাশে লেক সাইডে ভিক্টোরিয়ান স্টিমার রাখা আছে। মন চাইলেই ঘুরে বেড়ানো যায়। এখানকার পাহাড় হল একটি ভূমিরূপ, যা পার্শ্ববর্তী ভূখন্ডে প্রসারিত। নানা উচ্চতা থেকে দূর দূরান্ত পর্যন্ত দেখা যায়। বিশেষ করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।

জায়গাটা ন্যাশনাল পার্কের ফ্রন্ট সাইট হওয়ায় দেশি-বিদেশি মুভির শুটিংও হয়। এখানে প্রধান ঝর্ণার উৎপত্তিস্থল। পাথরের গায়ে ছুটে চলা ঝর্ণার তুমুল গর্জনে আমরা বার বার অভিভূত হয়েছি। পাহাড়ের ঢালে সকলেই বাহারি ফুল আর মায়াবী গাছপালায়  ছবি তুলেছেন। গাড়ি দিয়ে যাবার সময় সেলফির ব্যবহার ছিল লক্ষণীয়।

লেক ক্রজিংয়ের দিন ছোটদের আনন্দের সীমা ছিলনা। সকাল বেলা বৃষ্টি দেখে মনটা খারাপ হয়েছিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্য ঝলমল আকাশ দেখে তারা হেসে উঠল। সারা দিন ইঞ্জিন নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি মনে রাখার মত। বৃহদাকার লেক দেখে সমুদ্রের মতো মনে হয়। তবে এই সমুদ্র প্রায় সরোবরের মতো শান্ত। বিভিন্ন স্থানে নৌকা বাধার ঘাট ও খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। সাথে সাথে ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম আপডেট তো আছেই।

প্রাতঃরাশ সেরেই রোদচশমা চোখে সবুজ পাহাড়ের কোলে বেরিয়ে পড়তাম। নির্মল বাতাসে হালকা রঙের পোশাকে দৌড়াতে খুব ভাল লাগে। হাসি-আড্ডা, মজা-মাস্তি আর ঘোরাঘুরি। ফুর্তির মেজাজে গোটা এলাকা। স্যুভেনিয়র শপে টুকিটাকি উপহার কেনাকাটার প্রয়াস লক্ষণীয়। কাফেতে জমিয়ে পানাহার চলছে। ফিস এ্যান্ড চিপসের  দোকানে সবচেয়ে দীর্ঘ সাড়ি।

সবচেয়ে সমরণীয় ছিল ঘরের পাশে চমৎকার পাখির বাসা। যেন নানা প্রজাতির পাখির আশ্রয়কেন্দ্র। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে আমি বিহ্বল হয়ে পড়ি। ছোট বেলায় গ্রামের বাড়িতে পাখির কোলাহলের কথা মনে পড়ে। এদের নিয়ে দীর্ঘ কবিতা লিখেছি।

লেক ডিস্ট্রিক্টে ঘুরে বেড়ানোর সময় উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ড্যাফোডিলস ফুলের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা আজো সমানভাবে দৃশ্যমান। ১৮০৭ সালে লেখা কবিতার বঙ্গানুবাদ হল, ‘আমি মেঘের মত একাকী ঘুরে বেড়াই / মেঘ ভেসে যায় পাহাড় আর উপত্যকায় / আমি  তখন অবলোকন করি সমাবেশ / স্বর্ণালী ড্যাফোডিল শাখায় শাখায় পল্লবিত / লেকের পাশে, গাছের নিচে / মৃদুমন্দ বাতাসে নেচে নেচে দোল খায় / উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো অবিরাম / ছায়াপথে আলো জ্বলজ্বল করে / সুবিন্যস্ত তারকারাজির সারি শেষ অবধি / দশ হাজার আমি এক নজরে দেখেছি / নৃত্যে মাথা নাড়ানোর স্বতঃস্ফুর্ত দৃশ্য / কিন্তু তারা উল্লাসে ঝলমলে / ঢেউগুলিও ছাড়িয়ে যাচ্ছে / এমন আমুদের সঙ্গ পাওয়া কবি / বিহ্বল না হয়ে পারে না / আমি শুধু ভাবলাম এবং তাকালাম / এই দৃশ্যের মাঝে কী সম্পদ রয়েছে যা আমার জন্য ছিল / প্রায়শ আমি যখন শূন্যমনে / চিন্তিত মেজাজে / সোফায় শুয়ে থাকি ফুলগুলি আমাকে ঝলকানি দেয় / নির্জনতার আনন্দে / আমার হৃদয় ভরে যায় / নেচে ওঠে ড্যাফোডিলের সাথে।’ (I WANDERED LONELY AS A CLOUD BY WILLIAM WORDSWORTH)

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সময় সম্পাদক, কবি ও কথাশিল্পী

   

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;

বান্টি গ্রাম: উড়ছে রং-বেরঙের কাপড়



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

বান্টি গ্রামের মাঠে শুকাতে দিচ্ছেন বাটিকের রং করা কাপড়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই বান্টি গ্রাম। বাটিকের গ্রাম বলেই এর পরিচিতি। এখানে ঘরে ঘরে বাটিক-ব্লকের কাজ চলে। গ্রামজুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কারখানা। এই গ্রামে দিনরাত কাজ করেন হাজারো শ্রমিক। এই কাজে তাদের সংসার চলে। বান্টি গ্রামের কর্মময় জীবন চিত্র তুলে এনেছেন বার্তা২৪.কম এর ফটো এডিটর নূর এ আলম। 

বান্টি গ্রামে থ্রিপিস, ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারে বাটিকের কাজ করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


 

দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসব কিনতে আসেন। তাদের হাত ধরেই এসব কাপড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে


কাপড় রং করার আগে প্রতিটি কারখানায় গরম পানিতে রং প্রস্তুত করা হয়/ছবি: নূর এ আলম

 

কাপড়ের রং পাকা করতে সেদ্ধ করা হচ্ছে।/ছবি: নূর এ আলম


কয়েক ধাপে চলে কাপড়ে বাটিকের করার কাজ/ছবি: নূর এ আলম


রং মেশানোর প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে কিনা হাত দিয়ে দেখছেন একজন/ছবি: নূর এ আলম


গ্রামে কাপড়ে রঙ মেশানোর কাজ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে/ছবি: নূর এ আলম


বাটিকের গ্রামের অনেক বাড়িতে বসানো হয়েছে লুম মেশিন। এই মেশিন দিয়ে নানান ধরনের নকশা করা হয়/ছবি: নূর এ আলম


লুম মেশিনে চলছে কাপড় বুননের কাপড়/ছবি: নূর এ আলম


কাপড়ে রঙ করা শেষে শুকাতে দেওয়ার আগে পানি ঝরিয়ে ফেলা হয়/ছবি: নূর এ আলম


রং করা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন এক নারী শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


বান্টি গ্রামের নারী পুরুষ সবাই ব্লক বাটিক ও প্রিন্টের সঙ্গে জড়িত/ছবি: নূর এ আলম

রং করা কাপড় ছাদে ও মাঠে শুকাতে দেওয়া হয়/ছবি: নূর এ আলম


কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা।/ছবি: নূর এ আলম


প্রচন্ড তাপদাহে বাটিকের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। /ছবি: নূর এ আলম


;