আফগানিস্তানে মৃত্যু ও ধ্বংসের দায় কার?



ড. মাহফুজ পারভেজ
আফগানিস্তানে মৃত্যু ও ধ্বংসের দায় কার?

আফগানিস্তানে মৃত্যু ও ধ্বংসের দায় কার?

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায়-পঞ্চাশ বছর ধরে আফগানিস্তানে চলছে সংঘাত, পাল্টা সংঘাত, যুদ্ধাবস্থা। প্রথমে আসে সোভিয়েত বাহিনী। তাদের হটায় মুজাহিদিন গ্রুপগুলো। এদের সরিয়ে আসে তালেবান। তালেবান সরিয়ে নর্দান অ্যালায়েন্স। তারপর আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট হামিদ কারজাই সরকার। তারপর আশরাফ গণির সরকার। এবং অবশেষে আবার তালেবান। এরাও কতদিন থাকবে, তা সুনিশ্চিত নয়। অস্থিরতার দোলাচলে এখনও আফগানিস্তান।

অতীত বা বর্তমানের এইসব  পালাবদলের ঘটনাগুলো শান্তিপূর্ণ ছিলনা। রক্ত, মৃত্যু ও ধ্বংসের পথে ছিন্নভিন্ন হয়েছে সারা দেশ। পৃথিবীর দ্বিতীয় এবং এশিয়ার শীর্ষ শরণার্থী হয়েছে আফগানিস্তানের নাগরিকগণ। কত নারী, শিশু, আপামর মানুষ মরেছে তার ইয়াত্তা নেই। এই দীর্ঘ সময়ের সংঘাত, মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষতির জন্য দায়ী কে?

আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ এই  প্রশ্নের উত্তর চাইতেই পারেন। কলকাতার বিখ্যাত 'সবার উপরে' ছবির সেই প্রসিদ্ধ সংলাপের মতো দাবি জানাতেই পারেন তারা। সেই ছবিতে মিথ্যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত বাবাকে কারাগারের অন্ধকূপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ছেলে সর্বস্ব দিয়ে নিজেই বাবার ওকালতি করছে এবং জয়ী হচ্ছে, কিন্তু জীবনের দুর্মূল্য দীর্ঘ বারোটা বছর কালো কুঠুরিতে কাটিয়ে 'মিথ্যে' আসামীরূপী অভিনেতা ছবি বিশ্বাস কাঠগড়ায় বলে উঠেন 'দাও, ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও আমার সেই বারোটা বছর'। শুধু সংলাপ নয় একজন অসহায়-সর্বহারা মানুষের যে অভিব্যক্তি ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, পুরো আফগান জাতির ভাগ্যেও যেন তেমনই করুণ, অসহায় পরিস্থিতি বিরাজমান। কে তাদের এতোগুলো বছর, এতো রক্ত, এতো মৃত্যু, এতো ধ্বংস ফিরিয়ে দেবে?

আফগান প্রশ্নে আমেরিকা নানা লাভ-ক্ষতি এবং দায়-দায়িত্বের মূল্যায়ন করছে। অতি-স্পর্শকাতর আফগানিস্তান ইস্যুতে সেখানে চলছে তীব্র বাদানুবাদ। সেসব তর্ক-বিতর্ক মোটেও গ্রাহ্য না করে নিজের সিদ্ধান্তকে 'সঠিক' জানিয়ে অনঢ় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমেরিকার দুটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কস্ট অব ওয়ার' প্রজেক্ট যে ভয়াবহ ক্ষতির বিবরণ দিয়েছে, তাতে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থে আফগানিস্তান থেকে বাইডেনের পিছিয়ে আসার বিষয়টি 'দূরদৃষ্টিসম্পন্ন' বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তথাপি বিভাজিত আমেরিকান জনমতের সামনে এই প্রশ্নও থেকেই যাচ্ছে যে, আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণকারী বুশ, ওবামা, ট্রাম্প সঠিক ছিলেন নাকি সৈন্য প্রত্যাহার করে বাইডেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসবই এখন আবর্তিত আমেরিকার পণ্ডিতমহল ও থিঙ্কট্যাঙ্কে।

অন্যদিকে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কেনেডি স্কুল' এবং ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ওয়াটসন ইনস্টিটিউট' আফগান যুদ্ধের যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করেছে, তাতে বাইডেনের সৈন্য প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ সীমাহীন খরচে বছরের পর বছর পরিণামহীন যুদ্ধে আমেরিকা কত প্রাণের মূল্য আফগানিস্তানে দিয়েছে এবং কতটা নিয়েছে, তা পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

‘কস্ট অব ওয়ার’-এর তথ্য বলছে, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে ৬ হাজার ৩০৭ জন আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৪৬১ জন আমেরিকার সেনা। ৩ হাজার ৮৪৬ জন আমেরিকার ঠিকাদার। অন্য দিকে, ২০ বছরে নিহত তালেবানের সংখ্যা ৫১ হাজার ১৯১ জন।

আমেরিকা ছাড়াও তালেবান উৎখাত করতে নেমেছিল বহুজাতিক ন্যাটো বাহিনী। এই ন্যাটোর সদস্য আমেরিকা ছাড়াও বৃটেন-সহ প্রায় ৩০টি দেশ। ২০ বছরে আমেরিকার সহযোগী ওই দেশগুলোর সৈন্যদের মধ্যে ১ হাজার ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তদুপরি, আমেরিকার হয়ে যুদ্ধে নামা ৬৬ হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ মারা গিয়েছেন। এমনকি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিল যে সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, তাদেরও ৪৪৪ জন মারা গিয়েছেন সেনা-তালেবান সংঘর্ষে।

২০ বছরের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে বলি হয়েছেন বহু সাংবাদিক। তালিকায় শেষ নাম পুলিৎজার পাওয়া ভারতীয় চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। তার মতো আরও ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছেন আফগানিস্তানের পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে। এরা সবাই যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন।

কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক তথ্য হলো, যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন না এমন ৪৭ হাজার ২৪৫ জন আম আফগান জনতা মারা গিয়েছেন। যারা আফগানিস্তানে থাকার মূল্য দিয়েই চলেছেন। চলে আসার আগেও বিমানবন্দরে রকেট হামলার জবাবে আমেরিকার ড্রোন হানায় একই আফগান পরিবারের ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে সাত জনই শিশু এবং নাবালক।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কেনেডি স্কুল'-এর এসব তথ্যের বাইরে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ওয়াটসন ইনস্টিটিউট'-এর তথ্যানুযায়ী, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশ পর আমেরিকা সর্বমোট ২.৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই খরচের বিষয়টি কেবল আফগানিস্তানের ভেতরে হয়েছে। এর বাইরে পঙ্গুদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও বীমা ব্যয়ের বিশাল অঙ্ক রয়েছে। ১/১১ পরবর্তী আমেরিকার মোট যুদ্ধ সংক্রান্ত খরচের সিংহভাগই ব্যয় হয়েছে আফগানিস্তানে। আর এ সময়কালে উভয়পক্ষের প্রায় তিন লক্ষ মানুষ আহত, নিহত কিংবা উদ্বাস্তু হয়েছেন, যে মানবিক বিপর্যয়ের চিত্রটিও মর্মন্তুদ।

ফলে করোনায় চরমভাবে আক্রান্ত আমেরিকার আর্থিক অধঃপতন, বেকাত্ব ও অন্যান্য সঙ্কট মাথায় রেখে বিপুল ব্যয়ের অলাভজনক ও ফলাফলবিহীন 'আফগান প্রজেক্ট' থেকে বাইডেনের সরে আসায় আমেরিকার 'ইমেজ' বা 'সুপ্রিমেসি' আপাতত নষ্ট হলেও অপরিসীম লোকসানের বোঝা কমেছে। এসব টাকা এখন অতীব জরুরি জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক-মানবিক খাতে ব্যয় করা সম্ভব হবে।

যদিও ৩১ আগস্ট তারিখটি ক্যালেন্ডার ছোঁয়ার এক মিনিট আগেই আফগানিস্তান ছেড়েছে আমেরিকার সেনা। রাতের অন্ধকারে মাথা নিচু করে আমেরিকার শেষ সৈন্যের হেঁটে আসার দৃশ্য দেখে থমকে গিয়েছে গোটা বিশ্ব। অনেকে তখন মনে করেছেন আমেরিকার প্রায়-পঙ্গু হয়ে যাওয়া এক সেনার আক্ষেপ, ‘এই দিন দেখার জন্যই কি আমরা এত কিছু হারালাম!’ তথাপি বাইডেন দাঁড়িয়ে আছেন আবেগ থেকে বহুদূরের বাস্তবের মাটিতে। তালেবানদের পক্ষের উন্মাদনা কিংবা বিপক্ষের ক্ষোভ-বিদ্বেষের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে প্রবীণ বাইডেন হিসাব করেছেন আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের প্রকৃত লাভ-ক্ষতি।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতেই জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান নীতি প্রসঙ্গে নিজের সিদ্ধান্তের অটলতার কথাই জানালেন। বললেন, সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত 'একেবারে সঠিক' ছিল। তার দাবি, এটাই একমাত্র উপায় ছিল দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম যুদ্ধে ইতি টানার। পাশাপাশি সেনার সাহায্যে অন্য দেশের পুনর্নিমাণের ব্যর্থ চেষ্টারও অবসান হয়েছে এতে।

তবে বাইডেন আশ্বস্ত করেন যে, ৯৮ শতাংশ আমেরিকানকে উদ্ধার করা হয়েছে যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চাইছিলেন। বাকি ২০০-৩০০ জন আমেরিকানকে নিরাপদে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে 'প্রতিশ্রুতি' দেন তিনি। তিনি বলেন, আফগান বিষয়ক 'সিদ্ধান্তের দায় আমার'। 'কেউ হয়তো বলবেন এটা আগেই করা উচিত ছিল। তাতে আমি একমত নই। তড়িঘড়ি সেনা প্রত্যাহার করলে সে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত,' জানান তিনি।

বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনও আফগান নীতি ও সৈন্য প্রেরণের বিরোধিতা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েও তিনি সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে গুরুত্ব দেন। বার বারই তিনি বলেছেন, 'আমার বিশ্বাস, এটা একেবারে নির্ভুল ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলাম, যুদ্ধ শেষ করব। এই যুদ্ধ অনন্তকাল চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।'

অবশ্য সেনা প্রত্যাহার করলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকা চলমান লড়াই চালিয়ে যাবে বলে অঙ্গীকার করেছেন বাইডেন। বিশ্লেষকদের মতে, বাইডেনের যুদ্ধ আগ্রাসী হবে না, হবে কৌশলী। যেমনটি তিনি আফগান ইস্যুতে দৃঢ়তার সঙ্গে করেছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে বাইডেনের আফগান নীতির তীব্র নিন্দা করেছেন সেখানে নিজের সিদ্ধান্তেই অনড় থেকেছেন বাইডেন।

ফলে অদূর ভবিষ্যতে নির্ধারিত হবে আফগানিস্তানে অর্থ ও মৃত্যুর পর্বত-সদৃশ্য 'কস্ট অব ওয়ার' এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত দায় কার? আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণকারী বুশ, ওবামা, ট্রাম্প সঠিক ছিলেন নাকি সৈন্য প্রত্যাহার করে বাইডেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ প্রশ্নের উত্তরও একদিন জানা যাবে। ইতিহাস অবশ্যই মূল্যায়ন করবে সোভিয়েত, আমেরিকান, মুজাহিদিন, তালেবান ইত্যাদি বাহিনীর কার্যকলাপ। আজ না হলেও অদূর ভবিষ্যতে আফগান প্রজন্ম এসব প্রশ্ন নিশ্চয় উত্থাপন করবে। একদিন অবশ্যই লিপিবদ্ধ হবে, আফগানিস্তান নামক দেশটি কে বা কাদের কারণে এতো প্রাণের মূল্য আর ধ্বংসের পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছে?

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

   

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;

সাংবাদিকের ফেসবুকে পোস্ট: মিললো আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর, ইজিবাইক



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

৭৭ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের স্ট্রোক হয়েছে একাধিকবার। এই বয়সে যখন তার বিছানায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম করার কথা, তখন তাকে একটি রিকশার প্যাডেল মেরে অবিরাম ছুটে চলতে হয় ঢাকার রাস্তা-ঘাটে।

দিন শেষে যা আয় হয়, তার একটা অংশ নিজের জন্য রেখে, বাকিটা পাঠাতেন গ্রামে থাকা বৃদ্ধ স্ত্রীর কাছে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।

হাবিবুরের ইচ্ছে ছিল, শেষ বয়সের সময়টা তিনি শহর ছেড়ে গ্রামে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কাটাবেন। কিন্ত সেখানে থাকার মতো ঘর ও জীবিকার নিশ্চয়তা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতে হতো তাকে।

হাবিবুরের দুরবস্থার খবর জানার পর সে বিষয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক জ. ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

সে পোস্টটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের সুখবর পান হাবিবুর। পাশাপাশি হাবিবুরের কর্মসংস্থানের জন্য ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী তাকে একটি ইজিবাইক উপহার দেন।

এতে করে গ্রামের ফেরার ইচ্ছা ও গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলেছে এই অসহায় বৃদ্ধের।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নে সোনাকান্দি গ্রামে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া উপহারের ইজিবাইকের চাবি হাবিবুর রহমানের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি সোনাকান্দি গ্রামে এই বৃদ্ধের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার তাগিদে ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সংসারে তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের সবাই গরিব ঘরে বিয়ে হওয়ায় বাবাকে দেখার সামর্থ্য নেই তাদের। স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মাত্র আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই হাবিবুর রহমানের। সে কারণে বাধ্য হয়েই ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাত্রিযাপন করতেন রাস্তায় রাস্তায়।

এদিকে, রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুরবস্থা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক জ.ই. মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টটি নজরে আসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের। এরপরই নির্দেশনা আসে হাবিবুরকে তার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার।

ওপর থেকে নির্দেশনা আসার পর গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ সোনাকান্দি গ্রামে গিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি পরিদর্শনে করে দেখেন, তার মাত্র আধা শতাংশ জমি রয়েছে। এটুকু জমিতে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপত্তি বাধে। এ সময় হাবিবুর রহমানের জমির পাশেই দুই শতাংশ জমি দানের ঘোষণা দেন সহনাটি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল আহমেদ। ইতোমধ্যে, জমির দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, সারাজীবন কষ্ট করেছি। আধা শতাংশ ভিটে ছাড়া নিজের আর কিছুই ছিল না আমার। সাংবাদিক মামুন ভাইয়ের লেখালেখির কল্যাণে এখন বাড়ি ও একটি ইজিবাইক হয়েছে। এখন স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আমার দিন ‘রাজার হালে’ কাটবে। আমি অনেক আনন্দিত ও খুশি। সেইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাসহ যারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ বয়সে হাবিবুর রহমানের রিকশা চালানো নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক জ.ই. মামুনের একটি পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়। তার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে হাবিবুরকে নিজ গ্রামে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও হাবিবুর ও তার স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ারও উদ্যোগ নে্ওয়া হয়েছে।

 

;

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!



আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চমচমের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে! তারপরে যদি হয় সেই টাঙ্গাইলের চমচম! তাহলে তো কথাই নেই! ছোট-বড় সব বয়েসি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে- টাঙ্গাইলের চমচম।

কথায় আছে, ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।’

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের কথা তো সবারই জানা। কেবল নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও এই মিষ্টি সেরাদের সেরা। ঐতিহ্য আর বাংলার লোক-সংস্কৃতির ইতিহাসের উত্তরাধিকার টাঙ্গাইল জেলা। জানা যায়, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস।

ইতিহাস বলছে, দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এখন পোড়াবাড়ির সে জৌলুস আর নেই।

বর্তমানে ‘টাঙ্গাইল মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া শহরের পাচঁআনি বাজরের মিষ্টির দোকানগুলোতেও চমচম তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি মিষ্টির দোকানেই এখন নির্ভেজাল পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যায়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চম চম, স্বাদে সেরা, মানে সেরা, ছবি-বার্তা২৪.কম

এই পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত মিষ্টির দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে, চমচমের দোকান। চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মণ চমচম তৈরি হয়। বর্তমানে মিষ্টি শিল্পে টাঙ্গাইলের ঘোষ ও পাল সম্প্রদায় বংশানুক্রমিকভাবে নিয়োজিত আছে। তবে দে, নাগ ইত্যাদি উপাধিধারী অনেকেও মিষ্টান্ন তৈরিতে নিয়োজিত হয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভৌগলিক নিদের্শক ইউনিট ভৌগলিক নিদের্শক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন-২০১৩ অনুয়ায়ী, চলতি বছরের (৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি চমচম ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, এই সুস্বাদু চমচম তৈরির কাজে জড়িত শত শত কারিগর কাজ করছেন। আগুনের তাপে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্বাল হচ্ছে চমচমের। নিজেদের তৈরি চমচম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় কারিগররাও খুশি।

বর্তমানে চমচম বিক্রি হচ্ছে, মান ভেদে তিনশ থেকে চারশ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন ছুটে আসেন মিষ্টির দোকানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী চমচমের স্বাদ নিতে।

মিষ্টি কিনতে আসা সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের গর্বের। টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজারে আসলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যাই। ছোট বড় সবাই টাঙ্গাইলের মিষ্টি পছন্দ করেন।

মিষ্টি কিনতে আসা আরেকজন হরিপদ সরকার বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আমি যেমন টাঙ্গাইলের মিষ্টির জন্য এসেছি, আমার মতো অনেকেই টাঙ্গাইলের মিষ্টি নিতে এসেছেন। এই মিষ্টির স্বাদ অন্যরকম! না-খেলে বোঝা যাবে না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন, আমাদের টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য পোড়াবাড়ির চমচম। প্রায় দুইশ বছর আগে থেকেই টাঙ্গাইলে পোড়াবাড়ির মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের মিষ্টির সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে। আমাদের পোড়াবাড়ির চমচমে ভেজাল কোনো কিছু যুক্ত করা হয় না। চমচম স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ, ছানা ও ময়দা দিয়ে পোড়াবাড়ির চমচম তৈরি করা হয়। এজন্য এত স্বাদ! প্রতিদিন দোকানগুলিতে ৫ থেকে ১০ মণ মিষ্টি তৈরি করা হয়।

টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা, ছবি- বার্তা২৪.কম 

মিষ্টি ব্যবসায়ী কালাচাঁদ বলেন, আমি ৪০-৪৫ বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মিষ্টি স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। মিষ্টির স্বীকৃতি পাওয়ায় আমাদের সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের মিষ্টি দেশের বাইরে পাঠাতে পারবো। আমাদের মিষ্টি চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের আগ্রহও বেড়ে যাবে।

সরকারের কাছে দাবি, বিদেশে এই মিষ্টি রফতানি করার ব্যবস্থা করলে আমাদের বিক্রি আরোও বাড়বে। তখন আমরা আরো বেশি বেশি মিষ্টি তৈরি করতে পারবো।

টাঙ্গাইল জেলা রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, সারাদেশে এই পোড়াবাড়ির মিষ্টির সুনাম রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা মিষ্টি ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। এই মিষ্টি যদি বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে আমাদের ব্যবসা আরো প্রসার পাবে।

তিনি বলেন, আমার বাবা মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার হাত ধরেই মিষ্টির ব্যবসায় আসা। আমি করছি। আমার ছেলেও এই পেশায় আছে। পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাস প্রায় দুইশ বছরের। টাঙ্গাইলের চমচম সুস্বাদু হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে, গাভির দুধ চরাঞ্চল থেকে আসে। এখানকার দুধ অনেক ভালো হয় আর জলেরও একটা বিষয় আছে! দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয় অন্যরকম। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। এই মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।

;

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

আধুনিকতার ছোঁয়ায় কমেছে শ্রমিকের কদর, কমেছে আয়/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কৃষি কাজে ও কলকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছোঁয়া বিভিন্ন সেক্টরে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে পরিবর্তন হয়নি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানে। বরং কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে কমছে তাদের কাজের সংকুলান। কমেছে আয়-রোজগারও।

রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বালি ও কয়লা ভিত্তিক ব্যবসা। এক সময়ের জনপ্রিয় ও বহু লোকের কর্মসংস্থানের এই ব্যবসাতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বালু লোডিং-আনলোডিং-এ যান্ত্রিকীকরণের কারণে কাজ হারিয়েছেন শ্রমিক। ফলে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের কদর; প্রসার ঘটেছে উন্নত যন্ত্রাংশের।

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. হান্নান। দীর্ঘদিন ধরে গাবতলীতে বালু ও কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। হান্নান জানালেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার তার উপার্জনের প্রভাব ফেলেছে।

যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে শ্রমিকের কদ/ছবি: নূর এ আলম


এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার বছর এখানে এই কাজ করি। আগে ভালই ইনকাম হতো। এখন আর সেরকম ইনকাম হয় না। আগে এতো মেশিন ছিলো না সব কাজ আমরা করতাম। আর এখন সব মেশিনে করা হয়। শুধু যেগুলো মেশিন দিয়ে করা যায় না সেগুলো আমরা করি।’

তিনি আরও যোগ করেন, তাছাড়া আগে শ্রমিক কম ছিল। তখন মেশিনও ছিলো না। শ্রমিকদের চাহিদা ছিলো। কিন্তু এখন শ্রমিক বেশি, মেশিনও এসেছে। এক মেশিনে অনেক কাজ হয়; তাই চাহিদা কম। ইনকামও কম।

‘আগে দৈনিক দিন ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ইনকাম করতে পারতাম। আর এখন সারাদিন কষ্ট করে কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা ইনকাম করি। আবার কোন কোনদিন এর থেকে কমও ইনকাম হয়।’- বলেন এই শ্রমিক।

পাবনার বেড়ার কামরুজ্জামান ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন। টানা ১৬ বছর ধরে গাবতলী বালু ও কয়লার ঘাটে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

কঠোর পরিশ্রমের পর দিনশেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার/ছবি: নূর এ আলম

‘এক একটা টালি মেরে ২ টাকা ৪ আনা হিসেবে টাকা পাই। এখন যন্ত্র আসাতে লেবারের কোন কাজ কাম নেই। সব মাল এখন মেশিনে ওঠায়। এজন্য লেবারের কাজ কমে গেছে। টালির এখন আর রেট নেই। কাজ না করেও উপায় নেই কি করবো? ঢাকা শহরে আছি কাম না করলে চলবো ক্যামনে।’- বলেন কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। আগে ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু এখন ৫০০ টাকা ইনকাম করতেই কষ্ট হয়ে যায়। হবে না আগে যেখানে একটি বাল্কহেড থেকে বালু খালাস করতে ১৫০ জন শ্রমিকের দুই দিন সময় লাগতো। সেখানে শুধুমাত্র একজন ক্রেন অপারেটর এবং চার-পাঁচজন শ্রমিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলে।’

মেহনতি এই মানুষটার কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা, না করলে কোন টাকা নাই। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করাই লাগে। এমনও মানুষ আছে ঘুম থেকে উঠে ভোরে কামে আসে। কাম না করলে সংসারই চলে না।

মূল্যস্ফীতি এখন লাগামহীন অবস্থায় আছে বলে মনে করে দেশের অন্যতম বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি দাম মানুষের ওপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে শ্রমিকরা/ছবি: নূর এ আলম


তীব্র রোদ ও গরমে মাথায় করে বালু টানছে নাজমা বেগম। তার ও স্বামীর উপার্জনে কোন রকমে সংসার চলে নাজমার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘এই গরমে কাজ করা যায় না। সারাদিন কাজ করলেও খুব বেশি ইনকাম হয় না। জিনিসের যা দাম বেড়েছে তাতে। এই ইনকামের টাকায় পরিবার চালানো অনেক কষ্টের। তাই আপনাগো ভাই সারাদিন রিকশা চালায় আর আমি এই কয়লা-বালি টানার কাজ করি।’

আগের মতো আয় নেই জানিয়ে শ্রমজীবী এই নারী বলেন, ‘আগেতো ভালই ইনকাম করতাম। কিন্তু এখন আর পারি না। এখন বেশিরভাগ মালিক মেশিন দিয়ে মালামাল নামায় তাই আমাদের লাগে না। আর সেভাবে ইনকামও হয় না। এখন কোন দিন ৩০০ টাকা, কোন দিন ৪০০ টাকা ইনকাম করি।’

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা ও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বার্তা২৪.কম বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সে হারে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। সব সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দিলে শ্রমিক বাঁচবে না। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা করুণ। তাদের শ্রমের দামের বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবে না।’

;