রাস পূর্ণিমা: প্রেমরসে সিক্ত চাঁদের গল্প



অসীম নন্দন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
রাস উৎসব

রাস উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

রাতের খাবার খেয়ে একটু হাঁটতে বের হয়েছি। হেমন্তের হিমেল বাতাসে শীতের আগমনী জানান দিচ্ছে। আর আকাশে উঠেছে তখন রাস পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের স্বচ্ছ মায়াবী আলোয় বিশ্বচরাচর সিক্ত হয়ে গেছে। বাংলা সাহিত্যের কবি-লেখকেরা যুগে যুগে এই চাঁদের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে সৃষ্টি করেছেন কত-শত অপূর্ব সাহিত্যকর্ম; তার কোনো হিসেব আমরা জানি না!

এই মায়াবী চাঁদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই কখনো বিশ্বকবি রবিঠাকুর বলে গেছেন, ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো, ও রজনীগন্ধা তোমার, গন্ধসুধা ঢালো।’ আবার কখনো রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বলে গেছেন, ‘বেবিলন কোথা হারায়ে গিয়েছে-মিশর-অসুর কুয়াশাকালো; চাঁদ জেগে আছে আজও অপলক, মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!’

আর কখনো সকল রোমান্টিকতাকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে কঠিন বাস্তবতার নিরিখে কবি সুকান্ত বলেছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়, পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’

চাঁদের আলোয় হাঁটতে হাঁটতে এসব কথা ভাবছিলাম। তখনই মনে পড়লো, আমার বাড়ির থেকে ৫/৭ মিনিটের হাঁটা-পথের দূরত্বেই রাস-উৎসব হচ্ছে। ভাবলাম হাঁটিহাঁটি পা-পা করে একটু দেখেই আসি। চলে গেলাম মধুপুরের ‘মদন গোপাল আঙিনায়’। টাংগাইলের মধুপুর উপজেলায় ‘শ্রী শ্রী মদন গোপাল বিগ্রহ মন্দির’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১২৯৮ বঙ্গাব্দে। প্রায় ১৩০ বছর পুরানো এই মন্দির। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজশাহী জেলার পুঠিয়া নিবাসী মহারাণী শ্রীমতী হেমন্ত কুমারী দেবী।

প্রতি বছরই এই মন্দিরে রাস-উৎসব পালিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি বৈষ্ণব মতাদর্শীদের প্রাণের উৎসব এই রাসপূর্ণিমা। এছাড়া মণিপুরীদের প্রধান উৎসব এই রাসপূর্ণিমা। মন্দিরে গিয়ে দেখি লীলা-কীর্তন হচ্ছে। একদল কীর্তনীয়া লীলা-কীর্তন গাইছে আর ভক্তেরা শ্রীকৃষ্ণের সেই লীলা'র মহিমা ভক্তিভাবে গানে গানে সুরে সুরে শুনছে।


কীর্তন শেষে অনুষ্ঠিত হলো রাধাকৃষ্ণের পূজা। পূজা শেষে দেখলাম, ভক্তরা রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহকে চক্রাকারে ঘোরাচ্ছে। বিগ্রহটা মূলত রাধাকৃষ্ণ এবং গোপিনীদের মাটির মূর্তি দিয়ে তৈরি। রাধাকৃষ্ণের মূর্তিকে কেন্দ্রে রেখে বৃত্তাকারে গোপিনীদের মূর্তি। আর এই পুরো বিগ্রহটি একটা চাকাযুক্ত চক্রাকার কাঠামোতে উপবিষ্ট করা। যাকে সহজেই চক্রাকারে ঘোরানো যায়।

গোপিনী সংবলিত রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহকে এইভাবে চক্রাকারে ঘোরানোর মাঝেই রাসলীলার মাহাত্ম্য নিহিত। সবশেষে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটলো।

রাসপূর্ণিমা'র মাহাত্ম্য:
পদ্মপুরাণে শারদরাস এবং বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে বাসন্তীরাসের উল্লেখ থাকলেও শারদরাসের উল্লেখ নেই। শারদরাসের কথা বলা আছে শ্রীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে। শারদরাস মূলত কার্তিক মাসের শেষ পূর্ণিমাতে পালন করা হয়। বস্ত্রহরণের দিন শ্রীকৃষ্ণ তাঁর গোপিনীদের কথা দিয়েছিলেন, পরবর্তী পূর্ণিমা-তিথিতে তিনি গোপিনীদের সাথে রাস-উৎসব করবেন।

কৃষ্ণের বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে গোপিনীরা সংসারের কর্তব্যজ্ঞান ভুলে বৃন্দাবনে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পায়ে নিজেদেরকে নিবেদন করেছিল। কৃষ্ণ তাদেরকে বারবার স্ব-গৃহে ফিরে যেতে বললেও, গোপিনীবৃন্দ সেই অনুরোধ মানে নাই।

গোপিনীদের একমাত্র কামনা ছিল শ্রীকৃষ্ণকে একান্তে নিভৃতে পাওয়া। তাদের বিশেষ ভক্তি আর অনুরোধে কৃষ্ণ তাদের নিকটে এলেই তারা ভাবছিল, কানাই শুধু তার একার। যখনই এরকম ভাবছিল তখনই কৃষ্ণ তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। আর গোপিনীরা গভীর বিরহে কাতর হচ্ছিল। ভগবান কারো একার সম্পত্তি নয়। ঈশ্বর সকলের। এই সারকথা বোঝানোর জন্যই কৃষ্ণ এই রাসলীলা করেছিলেন।


গোপিনীরা ভক্তিভাবে আচ্ছন্ন হয়ে যখন শ্রীকৃষ্ণের এই সারকথা অনুধাবন করতে পারলো, তখন তিনি 'যতজন গোপিনী ততজন কৃষ্ণ' রূপে সকলের সাথে রাসনৃত্য করলেন। রাস-উৎসব মূলত জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনের কথা। এটি দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় রূপায়িত করার উৎসব। মানুষের কামপ্রবৃত্তিগুলোকে প্রেমসূচক করে তোলার উৎসব এই রাসপূর্ণিমা।

কীভাবে শুরু হলো এই উৎসব?:
জনশ্রুতি আছে, বৈষ্ণব মতাদর্শের প্রবক্তা শ্রীচৈতন্যদেবের হাত ধরেই এই উৎসব প্রথম শুরু হয়। সেই দিক থেকে দেখলে ১৬ শতকের দিকে এই উৎসব নবদ্বীপে পালিত হওয়া শুরু হয়। যদিও চৈতন্যদেবের পরবর্তী সময়ে নবদ্বীপে বৈষ্ণবীয় ধারার চক্র-রাস উৎসব পালন একটু ফিঁকে হয়ে যায়। এবং চক্ররাসের পরিবর্তে শাক্ত-রাস উৎসবের সূচনা ঘটে। শাক্ত-রাস মূলত মদ-মাংস এবং আড়ম্বরপূর্ণ জৌলুস সমৃদ্ধ উৎসব।

প্রধানত যেসব জায়গায় রাস-উৎসব পালিত হয়:
ভারতের মথুরা, বৃন্দাবন, নবদ্বীপ, নদীয়ার শান্তিপুরে এই উৎসব খুব ধুমধামের সাথে পালন করে ভক্তরা। এটাকে মূলত শান্তিপুরের ভঙ্গারাস বলা হয়ে থাকে। এছাড়া ওড়িশা, আসাম এবং মনিপুরে এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবের অংশ হিসেবে অঞ্চলভেদে কথ্থক, ভারতনাট্যম, ওড়িশি, মণিপুরি প্রভৃতি শাস্ত্রীয় ও লোকায়ত নৃত্যসুষমার ব্যবহার দেখা যায়।

নবদ্বীপে শাক্তরাস খুবই জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়ে থাকে। এখানে রাধাকৃষ্ণ ছাড়াও সকল দেবদেবীরই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এটি নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ উৎসব। এখানে এই উৎসবকে ঘিরে নির্মিত হয় চমৎকার সব মূর্তি। অপরূপ কারুকার্যময় নির্মাণশৈলী এবং বিচিত্র রূপকল্পে নানান শক্তিরূপের নির্মিত মূর্তিকে পূজা করার মধ্য দিয়েই এই উৎসব নবদ্বীপে পালিত। এছাড়া নবদ্বীপের কোথাও কোথাও অনাড়ম্বরভাবে চক্র-রাসও পালিত হয়।

আগেই বলেছি, এটি মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় উৎসব। কথিত আছে, আঠারো শতকের দিকে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র বাংলাদেশে এই উৎসবের প্রথম প্রচলন করেন। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামন্ডপে প্রতি বছর এই উৎসব বিরাট কলেবরে পালিত হয়। লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে এই উৎসবে।

এইদিন কৃষ্ণের বিগ্রহকে ঘিরে কুমারী মেয়েরা নৃত্য পরিবেশন করে থাকে। ১৭৭৯ খ্রীস্টাব্দের দিকে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নৃত্যগীতের সমন্বয়ে এই উৎসবের প্রচলন ঘটান মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র। ভাগ্যচন্দ্রের মৃত্যুর পর মহারাজ চন্দ্রকীর্তির শাসনামলে রাসনৃত্যকে আচৌকা, বৃন্দাবন, খুড়ুম্বা, গোস্ট, গোস্ট বৃন্দাবন ইত্যাদি ভঙ্গিমায় মণিপুরিদের মাঝে রাসনৃত্য ছড়িয়ে দেন।

রাসলীলা উৎসব শুরু হয় মূলত গোষ্ঠলীলা থেকে। গোষ্ঠলীলায় ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেরা গোপালের মতন রাখাল সেজে গোষ্ঠনৃত্য করে এবং গরু চড়াতে যায়। পাশাপাশি চলতে থাকে মণিপুরিদের নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব। মণিপুরি সমাজে রাসনৃত্য ছয় ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো মহারাস, নিত্যরাস, বসন্তরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদুখলরাস।

এবং সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উপলক্ষে ভক্তদের জন্য তীর্থ-স্নানের আয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ এবং ভারতের বাঙালি অধ্যুসিত বিভিন্ন অঞ্চলে এই রাস-উৎসব পালন করা হয়।

রাধাকৃষ্ণ হচ্ছে সেই নাম যাঁদের সাথে অমর প্রেমকাহিনী জড়িয়ে আছে। তখনও রোমিও-জুলিয়েটের প্রেমকাহিনী মানুষের কাছে পৌঁছায় নাই। আর সেই মধ্যযুগ থেকেই এই প্রেমকাহিনী বাঙলার মানুষের হৃদয়ের গল্প হয়ে আছে। আমাদের বাংলাসাহিত্যের মধ্যযুগের কবিগণ রাধাকৃষ্ণের প্রেমকে তাদের শৈল্পিক ভাষা আর ছন্দে করে তুলেছেন অমর।


ভক্তিবাদীরা আর বৈষ্ণব মতাদর্শের মানুষেরা রাধাকৃষ্ণকে ঈশ্বরের সিংহাসন থেকে নামিয়ে নিজেদের ঘরের আসনে রক্তমাংসের মানুষের মতন প্রেমের-প্রতীক হিসাবে স্থান দিয়েছে। আমাদের বাংলাসাহিত্যের অন্যতম সোনালী যুগ হচ্ছে বৈষ্ণব-পদাবলীর যুগ। বৈষ্ণব-পদাবলীর মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি মহাকালের মহান মহান কবিদের। যাঁরা ভক্তিভাবে প্রেমের কথা বলে গেছেন যুগের পর যুগ ধরে।

কবি বৃন্দাবন দাস'র একটি পদের কথা এইখানে বলবার লোভ সামলাতে পারছি না। তিনি লিখেছিলেন; কৃষ্ণ রাধাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ‘শুন রাধে এই রস আমি যে তোমার বশ, তোমা বিনে নাহি লয় মনে। জপিতে তোমার নাম ধৈরয না ধরে প্রাণ, তুয়া রূপ করিয়ে ধেয়ানে।’ গল্প বলতে শুরু করেছিলাম পূর্ণিমার চাঁদকে নিয়ে, কথা বলতে বলতে নিতাই-চাঁদের গল্পে এসে থামলাম।

চাঁদের গল্প বলতে গেলে তো প্রেম আসবেই। যুগে যুগে রোমান্টিকতার কথায় যখনই চাঁদ এসেছে তখনই তো প্রেমের কথাও উঠেছে। ভবা পাগলার সেই গানের কথা মনে পড়ছে। মনসুর ফকির সুন্দর করে গেয়েছিলেন-‘আমার নিতাই চাঁদের বাজারে, গৌর চাঁদের দরবারে, একমন যার সেই যেতে পারে। ও ভাই সেই যেতে পারে।’

প্রেম তো তাই, যা একমনে একপ্রাণে করতে হয়। কায়মনোবাক্যে নিষ্কামভাবে প্রেমই তো মানুষকে শান্তি দেয়। জীবনের দিকে হাঁটতে আস্বস্ত করে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: শুভ্রা গোস্বামী

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;