শৈত্যপ্রবাহ, ওমিক্রন, উদ্বেগ!
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) কর্মদিবস শুরু হবে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস সঙ্গী করে। সঙ্গে রয়েছে ইউরোপ জুড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের তাণ্ডবের আতঙ্ক, যা ভারতসহ দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশকেও ছুঁয়েছে।
ঋতুচক্রে শীতকালের প্রথম মাস পৌষের শুরুর দিকেই চলতি শীত মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ আগামীকাল রোববার থেকে সারা দেশে শুরু হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তাপমাত্রা কমে নামতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে। এদিকে, শনিবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৬ দশমিক ১, ময়মনসিংহে ১২ দশমিক ৬, চট্টগ্রামে ১৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ৪, রাজশাহীতে ১১ দশমিক ৪, রংপুরে ১২ দশমিক ৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৪ এবং বরিশালে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বর মাসে দেশের দক্ষিণ ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি এবং অবশিষ্টাংশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশ উপকূলে আসার সম্ভাবনা কম। ডিসেম্বর মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে।
এদিকে শীতের পদধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে শোনা যাচ্ছে করোনা বিস্তারের ভয়াল ও দ্রুতলয় বিপদঘণ্টা। ‘আলোর গতিতে’ করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করে খোদ ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্যাসটেক্স বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতে দেশজুড়ে আধিক্য দেখা দেবে এই ভ্যারিয়েন্টের। ব্রিটেন থেকে যেসব ভ্রমণকারী প্রবেশ করবেন ফ্রান্সে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি এ কথা বলেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় রয়েছে ব্রিটেন। শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত একদিনে সেখানে ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞরা সেদেশে ওমিক্রনের আরও ব্যাপক বিস্তারের আশঙ্কা করছেন।
অন্যদিকে ইউরোপ জুড়ে নতুন সংক্রমণ ঢেউ সৃষ্টি করছে ওমিক্রন। এমনই সতর্কতা দিয়েছেন মহাদেশের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। যে কারণে ইউরোপের নানা দেশে গৃহীত হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। ভ্রমণ বিধি-নিষেধ ঘোষণা করেছে জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস। এসব দেশের সরকার করোনা সংক্রমণের গতিকে স্তিমিত করার জন্য এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
জার্মানিতে শুক্রবার আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার। এ অবস্থায় জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটোরব্যাচ সাংবাদিকদের বলেছেন, জার্মানি মুখোমুখি হয়নি এমন এক চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে হবে পুরো দেশকে।
আয়ারল্যান্ডেও শুরু হয়েছে তৃতীয় ঢেউ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে দেখা যায়নি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। আগের যেকোনো রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে এই সংক্রমণ।
ব্রিটেনে টানা তৃতীয় দিনের মতো করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন রেকর্ড তৈরি করেছে তখন নতুন করে নানা সর্তকতা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য টানা তৃতীয় দিনের মতো সেখানে একদিনের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করেছে ৯৩ হাজার। এর বেশিরভাগই আক্রান্ত ওমিক্রনে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটেন থেকে যাওয়া যেকোন পর্যটক অথবা ব্যবসায়ীকে ফ্রান্সে প্রবেশের ক্ষেত্রে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। ফলে পোর্ট অব ডোভার এবং ইউরোস্টার টারমিনালে বিপুল পরিমাণ মানুষের ভিড় রয়েছে।
বিদ্যমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ক্যাসটেক্স বলেছেন, করোনা সংক্রমণের ঢেউকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার মধ্যে ভ্রমণ বিধি-নিষেধ অন্যতম। সেদেশে এরইমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নতুন বর্ষবরণের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা এবং আতশবাজির উৎসব।
নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুথ বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন। এ অবস্থায় নভেম্বরের শেষের দিকে বার, রেস্তোরাঁ এবং বেশিরভাগ দোকানপাট বিকাল ৫টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার নেদারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৫ হাজার ৪০০। তবে এই সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম। খেলাধুলার আয়োজন করা হচ্ছে অর্ধেক সক্ষমতা নিয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে সেখানে সর্বোচ্চ ১০০ অতিথি উপস্থিত থাকতে পারবেন।
ইউরোপের চরম উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তার করেছে। ভারতে ক্রমেই বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বত্র নতুন করে বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থবিধি আরোপের পাশাপশি চলছে বুস্টার ডোজ দেওয়ার তোড়জোড়।