সুনামগঞ্জে বিলুপ্তির পথে দেশীয় পাখি



আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সুনামগঞ্জ
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হাওরে বাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জ। এই সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক নজর দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারও পর্যটক। এখানেই শেষ নয়, এক সময় সুনামগঞ্জকে দেশীয় পাখির রাজ্যও বলা হতো।

কারণ সুনামগঞ্জ ছিল দেশীয় পাখির রাজ্য। ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পাখির মিষ্টি কণ্ঠের আওয়াজ মুগ্ধ করত সবাইকে। এমনকি গ্রামগঞ্জের খেড়ের চালের উপর বাসা বেধে থাকত দেশীয় পাখিরা। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে গ্রামগঞ্জের বাসা বাড়ি আধুনিক হচ্ছে সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় পাখির আশ্রয়ের ঠিকানা।

আর যে খাবারের সন্ধানে পাখিগুলো ভোর সকাল থেকে বের হয়ে গ্রাম সবুজ মাঠের ফসলের চারদিকে ঘুরে বেড়াত কিন্তু আধুনিক যুগে সেখানে ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার দেশীয় পাখির বিলুপ্তি অনেকাংশেই দায়ী।

গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাখির কিচির মিচির ডাকে এখন ঘুম ভাঙেনা আমাদের। গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই ঝাউ-জঙ্গল কেটে ফেলছে। সবার ঘর বাড়ি মাটির ঘর থেকে দালান ঘরে নির্মাণ করছে।

ফলে পাখিরা হারিয়ে ফেলছে তাদের চিরাচরিত বাসস্থান। গ্রামের মুরুব্বিরা বলেন, আগেও মাঠ-ঘাট, ক্ষেতে-খামারে বিচিত্র ধরণের পাখিদের বিচরণ ছিল।পাখিরা সেসময় ঝাঁকে ঝাঁকে এসে তৃষ্ণা মেটাতো আর খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকতো। ফসলের মাঠে পাখি বসার দৃশ্য সচরাচর দেখা গেলেও এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে।

অতীতে গ্রাম এলাকায় ব্যাপকহারে টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস, কোকিল,বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, কাকসহ বিভিন্ন পাখিদের দেখা যেত। বর্তমানে জাতীয় পাখি দোয়েল, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, বাবুই, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাচাসহ অনেক পাখিকে আর দেখা যায়না। শোনা যায় না এসব পাখির ডাক।

গ্রামবাংলার অতি পরিচিত বসন্তে যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলতো সেই পাখির দেখাও আর পাওয়া যায়না। ফলে বর্তমান প্রজন্মরা চেনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনি কোনদিন। ফলে শিশু কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস।

বিশেষজ্ঞরা জানান, গ্রামগঞ্জের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার পাখি বিলুপ্তির অনেকাংশেই দায়ী। কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ মরে যায় বা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। পাখিরাও দিনের পর দিন এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে।

তাছাড়া পাখি শিকারীদের নিষ্ঠুরতা তো রয়েছেই। কখনও কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড়ে পাখির বাসা ভেঙ্গে পাখির ছানার মৃত্যু ঘটে ও ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাখির বিলুপ্তি ঘটায় যেমনি জীববৈচিত্রের সংকট বাড়ছে, তেমনি আমরা হারিয়ে ফেলছ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই কেবল আমাদের দয়া, সহনশীলতা এবং সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে পাখির স্বাভাবিক বেঁচে থাকা।

গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়া বলেন, আমার বয়স এখন ৭৯ বছর, যখন আমার বয়স ১০ বছর ছিল তখন আমাদের গ্রামে কত রঙের পাখি ছিল বলে শেষ করতে পারব না। ঘরের চালের উপর পাখিরা বাসা বেধে থাকত। পাখির শব্দে ঘুম ভাঙত আমার। অথচ এখন আর সেই পাখিগুলো নেই।

গ্রামের বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, আগে যখন আমরা মাঠে ফসল ফলাতাম তখন পাখিরা চারদিকে বসে থাকত, আর মিষ্টি কন্ঠে কত রকমের ডাক ডাকত। কিন্তু মাঠ আছে, ফসল আছে, গ্রাম আছে অথচ সেই পাখিগুলো নেই।

গ্রামের বাসিন্দা ঝুনাকি বেগম বলেন, আগে যখন আমরা পুকুর থেকে পানি আনতাম তখন পুকুরের চারপাশে কত পাখি থাকত, পাখিরা কিচির মিচির করত আর আমরা কলস ভরে পানি নিয়ে আসতাম। অথচ এখন সেসব পাখিগুলো দেখা যায় না।

বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুমেল আহমেদ বলেন, আসলে এখন গ্রামের চারদিকে ঘনবসতি বেড়ে উঠছে। ফলে পাখিরা তাদের আশ্রয়স্থল হারাচ্ছে। শুধু তাই না ফসল ভালো করার জন্য কৃষকরা বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেন সেগুলো খেয়েও অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। ফলে পাখি রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে একত্রিত কাজ করতে হবে। প্রশাসন বলুন আর রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব বলুন সবাই যদি একত্রিত মিলে কাজ করেন তাহলে বোধহয় কিছুটা হলে পাখিদের কিচির মিচির শব্দ গ্রামগঞ্জে শোনা যাবে।

এদিকে শীতের শুরুতেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে ঝাঁক বেঁধে আসা অতিথি পাখির শব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরের পাড়ের মানুষের ঘুম ভাঙতো। বোঝা যেতো হাওরে অতিথি পাখি আসছে। পাখিরা দল বেঁধে এক জলাশয় থেকে আরেক জলাশয়ে উড়াল দিলে ঝড়ের মতো শব্দ বাড়ি থেকে শোনা যেত। কিন্তু এ শব্দ গত কয়েক বছর ধরেই আর পায় না হাওর পাড়ের মানুষ। হাওরের পাখি কম আসার প্রধান কারণ হচ্ছে পাখি শিকারীরা অবৈধভাবে রাতের আধারে পাখি শিকারের নিষ্ঠুরতাকে দোষছেন তাহিরপুরবাসী।

আইইউসিএনের পাখি বিজ্ঞানীদের মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসিস ঈগল রয়েছে। কালেম, পানকৌড়ি, ভূতিহাঁস, পিয়ংহাঁস, খয়রাবগা, লেঞ্জাহাঁস, নেউপিপি, সরালি, রাজসরালি, চখাচখি, পাতি মাছরাঙা, পাকড়া মাছরাঙা, মরিচা ভূতিহাঁস, সাধারণ ভূতিহাঁস, শোভেলার, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, ডাহুক, বেগুনি কালেম, গাঙচিল, শঙ্কচিল, বালিহাঁস, ডুবুরি, বক, সারসসহ প্রায় ২১৯ প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী, ১২১ প্রজাতির দেশি ও ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখি।

এ ছাড়া ২০১১ সালের জরিপে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৬৪ হাজার পাখির অস্তিত্ব ছিল। এতে ৮৬ জাতের দেশি এবং ৮৩ জাতের বিদেশি পাখি ছিল। যার দেখা বর্তমান সময়ে একবারেই মিলেনা।

টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ের বাসিন্দা খলিল মিয়া বলেন, অতিথি পাখি প্রতি বছর ডিসেম্বরের শুরুতে দল বেঁধে হাওরে জলেকেলি করে। দল বেঁধে কান্দা জাঙ্গালের গাছের ডালে ডালে সঙ্গিনী নিয়ে ওড়াওড়ি করে। অথচ গত কয়েক বছর পাখিই আসেনা টাঙ্গুয়ার হাওরে।

টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ের বাসিন্দা ফজু মিয়া বলেন, আমরা ছোট বেলা কত জাতের পাখি যে এই টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখিছি তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে বর্তমান সময়ে হাওরে একবারেই পাখি আসেনা।

টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, আগে টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখির পাশাপাশি দেশীয় পাখির ভরপুর ছিল অতচ এখন শীত মৌসুমে অতিথি পাখির দেখা মিললে দেশী পাখি বিলুপ্তি হয়ে গেছে।

টাঙ্গুয়া হাওর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ মিয়া বলেন, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়, উত্তোর এশিয়া, নেপালসহ পৃথিবীর নানা শীতপ্রধান দেশ থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশের বৃহৎ জলমহাল টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে। এসব পাখির মধ্যে লেঞ্জা, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশির, পানকৌড়ি, পাতারি, দলপিপি, রাঙ্গামুড়ি, পান্তামুখী প্রভৃতি পাখি ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত অবস্থান করে হাওরে। অতচ পাখি শিকারীদের নিষ্ঠুরতা কারণে এইসব পাখিও এখন আর হাওরে আসেনা।

বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুমেল আহমেদ বলেন, হাওরের পাখি শিকারীদের সাজা দিয়ে কোন লাভ হবে না। কারণ পেটের তাগিদে তারা সাজা কেটে আবারও সেই পাখি শিকার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যদি পাখি শিকারীদের নির্দিষ্ট কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে হয়ত টাঙ্গুয়ার হাওরে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেশি বেশি পাখি আসত।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখি যাতে কেউ শিকার না করতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টদের নীবিড়ভাবে হাওর তদারকি করতে নির্দেশ দেয়া আছে। যেই পাখি শিকার করবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

   

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;