আলিকদমের দামতুয়া জলপ্রপাত



তৌফিক হাসান
দামতুয়া জলপ্রপাত

দামতুয়া জলপ্রপাত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝর্ণা বা জলপ্রপাত প্রেমীরা বর্ষার শেষদিকে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। যেন ডাক আসলেই দে ছুট! আমি ও আমার তিন ভ্রমণবন্ধুরও একই অবস্থা। এক শনিবারের সন্ধ্যায় ডিজিটাল আড্ডায় হঠাৎ সিদ্ধান্ত হল বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত দামতুয়া জলপ্রপাত দেখতে যাবো। সাথে সাথে সবাই রেডি, পারলে তো সেই রাতেই বেড়িয়ে পরে। অতঃপর পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত হলো ভিড় এড়াতে বুধবার রাতে রওনা হবো। আজকাল ছুটির দিনে শান্তি করে সৌন্দর্য উপভোগ করবার উপায় নেই তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বুধবার রাতে গিয়ে ঝর্ণা দেখে বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবো।

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ৮৫০ টাকায় রাত ১১টার নন-এসি শ্যামলী বাসে চড়ে সকাল ৭টা নাগাদ আলীকদম বাজারে নামলাম। নেমেই ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম বাজারের একটা হোটেলে। বাজারে ২/৩টা হোটেল আছে, খাবারদাবারও ভাল দামও সহনীয়। নাস্তা সেরে ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত গাড়িতে চড়ে পানবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, ভাড়া ৩০ টাকা আর সময় লাগলো ৭-৮ মিনিট। পানবাজারে গিয়ে দেখি চাঁদের গাড়ি বন্ধ, কারণ রাস্তার কাজ চলছে অগত্যা মোটরসাইকেল ঠিক করলাম আলীকদম-থানচি রোড ধরে ১৭ কিলোমিটার বা আদুপাড়ায় যাবো বলে।

পাহাড়ি পথ

মোটরসাইকেলে ভাড়া জনপ্রতি ৮০০ টাকা রিটার্ন। একটি মোটরসাইকেলে ওরা দুজন যাত্রী নেয়, চালক সকালে নামিয়ে দিয়ে যায় আবার বিকেলে এসে ফেরত নিয়ে যায়। আলীকদম-থানচি রাস্তাটি বাংলাদেশের উচ্চতম রাস্তা যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তৈরি করেছে এবং এখনো তারাই এই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ৩৫ কিলোমিটারের এই উঁচুনিচু পাহাড়ি সড়কটি চলে গেছে আলীকদম থেকে থানচিতে। এই সড়কেই বহুল আলোচিত 'ডিম' পাহাড় অবস্থিত। এপথে একাধিক আর্মি চেকপোস্ট আছে এবং সেখানে এনআইডি কার্ড প্রদর্শন করে যথাযত পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হবে। আলীকদম প্রবেশ করার আগে এবং আলীকদম ছেড়ে কিছুদূর যাবার পর ১০ কিলোমিটার নামক স্থানে আর্মি চেকপোস্টে এনআইডি কপি জমা দিয়ে যথাযতভাবে পরিচয় লিপিবন্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেলে ২৫-৩০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম ১৭ কিলোমিটারে। সেখান থেকে ১০০০ টাকার বিনিময়ে মাংরুম নামের এক কিশোর গাইড নিয়ে শুরু হলো আমাদের মূল ট্রেকিং । ১৭ কিলোমিটার স্টপেজ সংলগ্ন গ্রামটার নাম আদুপাড়া, সেই গ্রাম ছাড়িয়ে সামান্য যেতেই বেশ কয়েকটা খাঁড়া পাহাড়ের মুখোমুখি হলাম।

আলিকদমের দামতুয়া জলপ্রপাত


পাহাড়ে ট্রেকিং মানেই চড়াই-উৎরাই, তারপরও সকাল-সকাল খাড়া ট্রেক সবার হাঁপ ধরিয়ে দিলো। খাড়া পাহাড় ডিঙ্গিয়ে কিছুদূর যাবার পর হাতের বামে দিকে বেশ খানিকটা দূরে দেখা গেল একটা মায়াবী ঝর্ণা নাম “তং প্র”। দৃষ্টি সীমায় কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকায় খোলা খাদের অপর প্রান্তে পুরো ঝর্ণাটা দৃশ্যমান হলো। ট্রেক শুরু করার পর মোটামুটি ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই দেখা পেলাম এই ঝর্ণার। “তং প্র” এর কাছে যাওয়া আমাদের প্লানে ছিল না, তাছাড়া অকস্মাৎ বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল তাই দেরি না করে দামতুয়ার দিকে পা বাড়ালাম। পাহাড়ের বৃষ্টিতে ভিজে-ভিজে হাঁটা কিন্তু খুবই রোমাঞ্চকর। পাহাড়ে বৃষ্টি হলে পথ হয়ে যায় পিচ্ছিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ, তারপরও পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করায় আলাদা একটা মজা আছে। টিনের চালের বৃষ্টির যেমন একটা ছন্দ আছে, পাহাড়ি গাছের পাতায় পানি পড়ার শব্দটা কিন্তু অন্যরকম ছন্দময়। পাহাড়ে বৃষ্টি মানে উন্মত্ততা ও উচ্ছলতা। পাহাড়ে বৃষ্টি হলে ঝিরিগুলো উচ্ছল হয়ে উঠে, জলপ্রপাত কিংবা ঝর্ণাগুলো হয়ে উঠে উন্মত্ত।

ব্যাঙ ঝিরি

বৃষ্টির মাথায় নিয়ে খানিকটা যেতেই একটা ঝুম খেতে ঢুকে পরলাম। ক্ষেতে সুন্দর ধান ফলেছে, পাহাড়ের ঝুমক্ষেতগুলো কিন্তু খুব সুন্দর লাগে দেখতে। জুমক্ষেত পেরিয়ে সামান্য যেতেই একটা ঝিরি পড়লো নাম ওয়াং পা। আমাদের ট্রেক রুটের প্রথম ঝিরি, পাথরের বোল্ডারগুলোও বড়-বড় উপরন্তু বৃষ্টি হওয়াতে পানির স্রোত খানিকটা বেশি। ঝিরি থেকে উঠে কিছুদূর যেতেই একটা গ্রাম পড়লো নাম পামিয়া পাড়া। এই পথের সবগুলো গ্রামই মুরং গ্রাম, লোক সংখ্যাও বেশ কম। ঘরগুলো মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে বানানো, বাঁশ দিয়ে তৈরি উপরে খড়ের ছাউনি। পাহাড়ে সব বাড়িগুলোই মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে বানানো হয়। এরকম আরও দুটি গ্রাম পেরিয়ে, ঝিরির জলে পা ডুবিয়ে, গা ছমছমে জঙ্গলের মধ্যদিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম দামতুয়ার দিকে। গাইড আমাদের বেশ তাড়া দিচ্ছিলো কারণ ছবি তোলা এবং ভিডিও করার জন্য আমরা বেশ সময় নষ্ট করছিলাম। আমাদের আজই ফিরতে হবে এবং নিয়মানুযায়ী ফেরার পথে ১০ কিলোমিটারের আর্মি ক্যাম্পটা বিকেল ৫টার মধ্যেই পার হতে হবে। কেউ যদি থাকে রাতে পাহাড়ে থাকতে চায় তাহলে যাবার সময় আর্মি ক্যাম্পে ইনফর্ম করে যেতে হবে। থাকার ব্যাপারে গাইডকে আগেভাগে জানালে পাহাড়ি কোনো বাড়িতে সে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।

নৈসর্গিক পাহাড়

যাইহোক রোদ বৃষ্টি মাথায় করে চলতে চলতে একসময় দামতুয়া ঝিরিতে পৌঁছে বড় একটা পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিলাম আমরা। মোটামুটি ৩ ঘণ্টার মতো আমরা হাটছি, গাইড জানলো এখান থেকে দামতুয়া জলপ্রপাত আর বেশি দূরে নয়। আরও ২৫-৩০ মিনিট লাগবে দামতুয়াতে পৌঁছতে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খুব সাবধানে চলতে শুরু করলাম কারণ দামতুয়া ঝিরিতে পানির পরিমাণ বেশি, পাথরগুলোও বড় এবং পিচ্ছিল। চঞ্চলা কিশোরীর মতো বয়ে চলা দামতুয়া ঝিরিকে কয়েকবার ক্রস করে একসময় পৌঁছে গেলাম ব্যাঙঝিরিতে, ব্যাঙঝিরি থেকে সামান্য গিয়ে খাঁড়া নিচের দিকে নামতে হলো। জায়গাটা বেশ খাঁড়া এবং বৃষ্টির কারণে বেশ পিচ্ছিল হয়েছে। খুব সাবধানে বেশ খানিকটা নেমেই পেয়ে গেলাম কাঙ্ক্ষিত দামতুয়া জলপ্রপাত বা ঝর্ণা। মুহূর্তেই সকল ক্লান্তি চলে গেল এমন বিশাল জলপ্রপাত দেখে।

দামতুয়া জলপ্রপাত বা ঝর্ণাকে নানাজনে নানা নামে ডাকে। দামতুয়া, তুক-অ বা লামোনাই নামেও ডাকা হয়ে থাকে এই জলপ্রপাতকে । তুক-অ বা ব্যাঙঝিরির পানি খানিকটা নিচের দিকে গিয়ে দুই-তিন ধারায় পতিত হয়ে দামতুয়া প্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এলাকাটি মুরং অধ্যুষিত এবং মুরং ভাষায় ব্যাঙ হলো “তুক” আর ঝিরি হলো “ অ”। এই জলপ্রপাতের বিশেষত্ত হলো এর একাধিক পানির ধারা, দুই-তিন ধারায় পানি পরলেও মূলত দুটা ধারাই বড়। এই দুই ধারা মাঝে বেশখানিকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। দামতুয়াতে ধারায় অবগাহন করে, সাঁতার কেটে, খোলা চোখে এর সৌন্দর্য উপভোগ করে এবং ফ্রেমবন্দি করতে করতে অনেকটা সময় পার হলো। গাইড তাড়া দিল ফিরতে হবে বলে। গাইডের তাড়া দেওয়া সত্ত্বেও আরও কিছুটা সময় থাকলাম বিশালতা ও শুভ্রতার কাছে। একবারে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরতি পথ ধরলাম কারণ সবাইকে একসময় ফিরতে হয় বলে…

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;