বৈচিত্র্যরঙের শিকারী পাখি ‘মেঘহও মাছরাঙা’
‘পাখি’ পৃথিবীর আশ্চর্য এক ভালোলাগা! অদেখা কোনো সুন্দর পাখি দেখলে শুধুই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বারবার দেখতে ইচ্ছে করে তার শারীরিক রূপের অপূর্ব সৌন্দর্য। এমনই এক ভালোলাগার পাখি ‘মেঘহও মাছরাঙা’।
আমাদের দেশে অনেক প্রজাতির ‘মাছরাঙা’ পাখি রয়েছে। সংখ্যার হিসেবে গুনলে প্রায় এক ডজন তো হবেই। এ সমস্তগুলোর আপন আপন সৌন্দর্যমুখর। এরই মাঝে সৌন্দর্যের ভেতর আরো এক সৌন্দর্য টকটকে লাল চঞ্চু (ঠোঁট) আর নীল পিঠ ও ডানার পাখি মেঘহও মাছরাঙা।
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশাল ধাক্কা লেগে গেছে আমাদের প্রকৃতিতে। ফলে এখন প্রায়ই আকাশ মেঘলা হয়ে থাকে। শীতের মাঝে মেঘের উপস্থিতি। আশ্চর্যভাবে দেখা হয়ে যায় এখন মাঘে আর মেঘে।
এমন মেঘলা আকাশে বৃষ্টির আহ্বান। হঠাৎ মেঘযুক্ত আকাশে ভাজে ভাজে জমা বৃষ্টির পূর্বাভাষ। মনে করুন, গ্রামের পথে চলতে হঠাৎ কোনো বিরল মুহুর্তে একটি পাখি যেন আপন মনে বলছে- ‘মেঘহও, মেঘহও...।’ আসলেই কি তখন তা চমকে উঠার মতো! মেঘ মানে বৃষ্টি, বলছে বৃষ্টি নামো। তবে আসলে কি তাই? তার ডাকের প্রকাশভঙ্গি বা স্বরের প্রক্ষেপনই আসলে এমন। শুনলে মনে হয়- মেঘহওয়ার জন্য যেন বলছে।
মেঘহও মাছরাঙা বড় আকারের মাছরাঙা। দেখতে আমাদের শালিকদের মতো। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার। নীল ডানা ও লেজ ছাড়া বাদামি দেহ। মাথা ও ঘাড় বাদামি। তবে ডানা ও লেজ নীল। মাথা ও ঘাড় বাদামি। পেট হলদে কমলা। কাঁধ-ঢাকনি বাদামি নীল। ডানা নীল-সবুজ। পিঠ ও কোমর নীল। এদের ছোরার মতো রক্তলাল বিশাল চঞ্চু (ঠোঁট) রয়েছে। তবে চঞ্চুর অগ্রভাগ কালচে। এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ খুব কম তাদের দেখা যায়।
এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যাওয়ার সময় ডাকে ‘ক্যা-ক্যা-ক্যা’ স্বরে।’ আর প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটি সঙ্গিনীর উদ্দেশ্যে ‘পীউ-পীউ…পীউ-পীউ…পীউ-পীউ’ সুরেলা স্বরে অবিরাম ডেকে চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
গ্রামের পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ হয়তো কানে ভেসে আসবে ‘মেঘহও... মেঘহও...’ ধ্বনি। স্বভাবতই তখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- কার মেঘের প্রয়োজন? আসলে বিষয়টা হলো- যার কণ্ঠ থেকে এমন স্বর বেরুচ্ছে সেটা যে সে বুঝেশুনে বলছে তা কিন্তু কখনোই নয়। কারণ একটি পাখির কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ধ্বনিই প্রায় এমন। এটি কিন্তু ধারণানির্ভর বা অনুমানভিত্তিক।
মেঘহও মাছরাঙার ইংরেজি নাম ‘স্টর্ক বিলর্ড কিংফিশার’ (Stork-billed Kingfisher) এবং বৈজ্ঞানিক নাম Halcyon Capensis। তবে একে কিন্তু ‘মিস্ট্রি বার্ড’ কিংবা ‘মিসলিডিং বার্ড’ও বলা হয়। এর বাংলা তর্জমা হলো ‘রহস্যময়’ কিংবা ‘বিভ্রান্তিকর’। কেন এমন শব্দে তাকে বলা হয় এর কারণ অজানা।
এ পাখিটি কিন্তু অন্য মাছরাঙাদের মতো এক্কেবারে মাছের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল পাখি নয়। মাছের পাশাপাশি অন্য ছোটছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে। যেমন- ইঁদুর, ব্যাঙ প্রভৃতি। বৃষ্টি হলে তো ব্যাঙের আবির্ভাব হয়, তাই ব্যাঙের লোভেই এরা মেঘহও মেঘহও বলে ডাকে কি না – তা কেই বা বলতে পারে!