ভালোবাসার পরিমাপ!



ফারহানা রহমান
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

"ভালোবাসা, ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসায় বেঁধে যে রাখে"-

চারটি অক্ষরের সমন্বয়ে ছোট্ট একটি শব্দ "ভালোবাসা"। এই চার অক্ষরের শব্দটি আবার অনেক অক্ষরের অর্থ বহন করে। ভালোবাসা অর্থ হচ্ছে -অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান। যা সৃষ্টিগত ভাবে প্রতেকের মধ্যে বিদ্যমান। ভালোবাসা এক মানবিক অনুভূতি এবং আবেগ কেন্দ্রীক একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।

ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন ধর্মীয় ভালোবাসা,আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা, সমস্ত প্রাণীকুলের প্রতি ভালোবাসা, সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর প্রতি মায়ের ভালোবাসা, স্ত্রী সাথে স্বামীর ভালোবাসা। এই অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হল ভালোবাসা।

ভালোবাসা একটি ব্যক্তিগত অনূভুতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেটা একজন মানুষ অপর একজন মানুষের প্রতি অনুভব করে। কারো প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীলতা কিংবা প্রতি ক্ষেএে কারো উপস্থিতি অনুভব করা ভালোবাসার সাথেই সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু ভালোবাসার বিভিন্ন রুপ আছে। প্রতিটিই মূল্যবান, প্রতিটির নিজস্ব জীবন আছে। সুখ দুঃখ আছে, সৌরভ আছে। গভীর ভালোবাসার কোন ছিদ্র পথ নেই। আর ভালোবাসা অন্তর দিয়ে অনূভব করতে হয়,এ ক্ষেএে ভাষার প্রয়োজন হয়না।

 আমার মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীরা কেউ কেউ এই ডিজিটাল যুগে ভালোবাসার মতো পবিত্র একটি নাম ও অস্তিত্বকে ব্রাউজার ব্যবহারেই সমূলে নির্মূল করে তুলেছে। আর এর ভালো মন্দ দুইটি দিকই রয়েছে বৈকি। মধ্যযুগীয় দার্শনিক সেন্ট অগাস্টিন বলেছেন -বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সম্মান, আত্মমর্যাদা,  নিঃস্বার্থতা, সার্থপরতা ,বন্ধুত্ন,মিলন স্রেফ প্রেমের আরেক নাম ভালোবাসা।

 ভালোবাসার রং রস ঢং কল্পচিএ একেক জনের কাছে একেক রকম বা ভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়। অর্থাৎ কোন ভাষা দ্বারা এটা সংজ্ঞায়িত কর সম্ভব নয়। এটাকে শুধু হৃদয় থেকে হৃদয় দিয়েই হৃদয়ঙ্গম করতে হয়। ভালোবাসার সংজ্ঞায় আরও বলা যেতে পারে, সততা,সম্মান, দায়বদ্ধতা প্রতিটি ভালোবাসার মধ্যেই যেন এগুলো থাকে। সেটা হোক মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা,ভাই -বোনের মধ্যেকার ভালোবাসা। বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসা এবং প্রতিবেশির প্রতি ভালোবাসা। আরও থাকা উচিত অসহায় মানুষের প্রতি বিত্তশালীদের ভালোবাসা।মূলকথা, সুখে দুঃখে ও আনন্দে একে অন্যের পাশাপাশি থাকাটাকে ভালোবাসা বলে মনে হয়।

কীভাবে আমরা ভালোবাসার মানুষটির মন বুঝতে পারি এবং নিজের কাজের মধ্যে ভালোবাসার প্রকাশ করতে পারব,সেটারও রয়েছে বিশদ ব্যখ্যা। ভালোবাসা কখনো কাউকে ভালো রাখেনা। আবার অন্যদিকে প্রকৃত ভালোবাসা থাকলে দূরে থেকেও কাছে থাকা যায়। ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায় কথাটা কি সত্যি? নিজের মনের কাছে প্রশ্ন রাখি?ভালোবাসার গভীরতা কোনটিতে বেশি -ত্যাগের মাঝে নাকি প্রাপ্তির মাঝে?

ভালোবাসায় কোন কমা বা যতি চিহ্ন নেই।ভালোবাসা সীমাহীন। ভালোবাসায় নেই কোন ফুলস্টপ। ভালোবাসায় শুরু আছে শেষ নেই। ভালোবাসা অবিরাম ট্রেন চলার মতো, যার নেই  কোন ষ্টেশন বা থাকলেও টাচ করেনা কোন প্লাটফর্ম। কেবলই চলে আর চলে ভেপুঁ বাজিয়ে। ভালোবাসা আলোকময় চন্দ্র সূর্যের মতো উজ্জ্বল। এর কোন অন্ধকার নেই। কেবলই আলো আর আলো। ভালোবাসায় চলে না কোন ভালো মন্দের বিচার।

 ভালোবাসা বড় একমুখী একপেশে। শুধু দেয়ার আছে, নেবার কিছুই নেই। ভালোবাসার ভালো আছে শুরু থেকে শেষ অবধি। শুধু ভালো আর ভালো।ভালোবাসার অভিধানে মন্দ বলে কিছু নেই। ভালোবাসা সবচেয়ে সুদৃঢ় ভিত্তিহীন সাম্য। এটাই নিখাদ ভালোবাসার সংজ্ঞা।

সবশেষে বলব- সৃষ্টির আদি থেকে অদ্যবধি ভালোবাসা আছে বলেই পৃথিবী এখন ও টিকে আছে। যেদিন শব্দটির বিলুপ্তি ঘটবে সেদিন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। ভালোবাসা এমন একটি আপেক্ষিক শব্দ, যা দেখানো যায় না কিন্তু সম্পূর্ণ রুপে উপলব্ধি করা যায়। এর টান বা মমত্ব এতেটাই বেশি যে ভালোবাসার কারণে বিশ্বে বহু নগর ও জনপদ ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ১৪০০ বছর আগে কারবালার প্রান্তরের ঘটনাও ঘটেছিল শুধু ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে।

অন্যদিকে ট্রয়নগরী ধ্বংস হওয়ার পিছনে ও রয়েছে ভালোবাসার ইতিহাস। যুগে যুগে লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ, ইউসুফ জুলেখার কাহিনী মনে করিয়ে দেয় বিশ্বে ভালোবাসার ইতিহাস সুপ্রাচীন।বিশ্বে শুধু ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে যত কবিতা, গান, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও মহাকাব্য রচিত হয়েছে তা আর অন্য কোন বিষয়কে নিয়ে হয়নি।

 ভালোবাসার প্রকৃত মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমাদের সবাই কে এর পবিত্রতা রক্ষা করা বাঞ্চনিয়। নিজেকে ভালোবাসার পাশাপাশি সবাইকে ভালোবাসতে হবে। মন থেকে, প্রাণ থেকে, হদয় থেকে। শুভ্র সুন্দর ভালোবাসা বেচেঁ থাকুক মানুষের মাঝে। ভালো বাসার রঙে রাঙা হোক পৃথিবী। ভালোবাসার শক্তিতে জয় হোক সব শুভ চেতনার। তাই  ওমর খৈয়াম এর ভাষায় -

           জীবনে আধাঁর পথে

           পাও যদি কেউ এমন প্রাণ

           যে তোমাকেই ভালোবেসে

            আপন হৃদয় করবে দান।

            প্রাণ খুলে তায় ভালোবাসো

             জড়িয়ে ধরো বক্ষে তাকে,

            ত্যাগ করো সব খ্যাতিরে

              তুচ্ছ করো জগতটারে।

               অনিত্য এধরায় জেনো

               কিছুই বড় টিকি নারে,

              ভালোবাসাই হেথায় শুধু

              অমর হয়ে থাকতে পারে।।

লেখক: ফারহানা রহমানপ্রভাষক, ফুলছড়ি সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা।

   

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;