নতুন বইয়ের গন্ধ যেন আত্মা ছুঁয়ে যায়!



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
একুশে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা প্রাঙ্গণে

একুশে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা প্রাঙ্গণে

  • Font increase
  • Font Decrease

একুশের পড়ন্ত বিকাল। জাদুঘরের পাশে থাকা গাছগুলোতে ফুটেছে ফাগুনের রক্ত রাঙা শিমুল-পলাশ! রাজধানীর এই এলাকাটাতেই বসন্তের প্রকৃত রূপ দৃষ্টিগোচর হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলায় যাওয়ার স্রোতটিতে শাহবাগ থেকেই মানুষের গিজগিজ। গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে কচ্ছপ গতিতে এগোতে হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত। মেলা পর্যন্ত যেতেই একবারেই নাজেহাল অবস্থা।

একেকদিনের একেক বৈশিষ্ট্য; এ কারণে অনেক ভোগান্তি সত্ত্বেও মানুষ বিশেষ দিনটিকে কেন্দ্র করেই বের হন! আজ ভাষা শহীদ দিবসে স্রোতের মতো বইমেলায় দর্শনার্থীদের আগমন ছিল। পুরোপুরি একুশের চেতনায় নিজেকে সজ্জিত করে প্রাণের মেলায় এসেছেন তারা। এতে যেমন ‘পোয়াবারো’ হয়েছে প্রকাশকদের তেমনি ছুটির দিনটিকে উপভোগ করছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরাও।

আজ ভাষা শহীদ দিবসে স্রোতের মতো বইমেলায় দর্শনার্থীদের আগমন ছিল

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ নিচ্ছেন নতুন বইয়ের গন্ধ, কেউ কেউ আবার নিজের তালিকার বই সংগ্রহে ব্যস্ত। অনেকেই সঙ্গী সাথী নিয়ে একবারেই ঘোরাঘুরির মুডে! সঙ্গে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে এবং বই হাতে পোজ দিয়ে ছবি ও সেলফি তোলা তো রয়েছেই।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবসর প্রকাশনীর সামনে কথা হয় খিলক্ষেত থেকে আসা মিতু রহমানের সঙ্গে। তিনি একুশের ফেব্রুয়ারির ভিড় ভাট্টা ঠেলে শোকের সাজে ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষার্থী জানান, নতুন বইয়ের গন্ধ নিতেই তার মূলত একবার হলেও বই মেলায় আসা চাই-ই।

‘নতুন বইয়ের গন্ধ আমার আত্মা ছুঁয়ে যায়। আজকে ভিড় জেনেও এসেছি, কারণ ছুটি; তার উপর ছেলেকে একুশের চেতনায় উজ্জীবিত করা। আমার ছেলে বড় হয়েছে তার অনেক বইয়ের বায়না আছে সেগুলোও কিনে দেব। আমি মুক্তিযুদ্ধের বইও কিনে দেব। আমি চাই আমার ছেলে পড়ুয়া হোক; বাকিটা ওর ব্যাপার।’

বইমেলায় সেলফি তোলায় ব্যস্ত দর্শনার্থীরা

কথা প্রকাশনীর স্টলে রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণসাহিত্য, আবুল ফজলের প্রবন্ধ, মামুন মুনতাসিরের ঢাকা ইতিহাস নেড়ে চেড়ে দেখছেন ষাটোর্ধ্ব ভারিক্কি চেহারার এক ব্যক্তি। হঠাৎ সেলিনা হোসেনের ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ হাতে নিয়ে সঙ্গে থাকা মেয়েকে বললেন, জানো- ‘বাংলাদেশে জীবিত লেখকদের মধ্যে উনি এখন পণ্ডিত লেখক, অসাধারণ লেখেন এই লেখিকা’।

জাফর নামে এই ব্যক্তি জানান, ‘আজকাল লেখক কই, ঘুরে ফিরে আগের লেখক ও তাদের নিয়ে রচিত গ্রন্থগুলোর দিকেই যেতে হয় আমাদের। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। দেখবেন কেউ কেউ এসেছে- তার বন্ধুর বই বেরিয়েছে তা কিনতে, সেটা কিনে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে আলমারিতে তুলে রাখবে বইটি। বইয়ের প্রতি আন্তরিকতা কমে গেছে।’

মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের প্রচণ্ড ভিড়। স্টলে স্টলে বই উল্টে পাল্টে দেখছেন ক্রেতারা। অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রকাশকদের বেচাবিক্রিও বেশ। এরপরও সন্তুষ্ট নন তারা।

অনেকেই সপরিবারে একুশের সাজে সজ্জিত হয়ে এসেছেন মেলায়

কথা প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মকর্তা ড্যানিয়েল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মেলায় অনেক মানুষ দেখছেন কিন্তু কয়জনের হাতে বেই দেখছেন বলেন। বেশির ভাগই আজকে ঘুরতে এসেছেন। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় বই বিক্রি বেড়েছে। এখন দেখা যাক রাত পর্যন্ত কি হয়।’

তবে বাংলা প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মকর্তা মুনা একবাক্যে জানালেন, ‘আজকে বেচাবিক্রি বেশ ভালো।’

সাদা ব্যাগে বই নিয়ে সোহরাওয়ার্দীর লেকের সামনে দাঁড়িয়ে বইপ্রেমী মো. মানিক। নতুন লেখকদের নিয়ে আশাবাদী ব্যবসায়ী মানিক জানালেন, নতুন লেখকদের একবারেই হেলাফেলা করা যাবে না। তারাও অনেক মেধাবী। মূল সমস্যা হচ্ছে প্রচারণার অভাব। এদের অনেকেই ভালো বই লেখেন কিন্তু প্রচারণার অভাবে আড়ালেই থেকে যান।

মেলায় ক্ষুদে পাঠকদরে চাহিদার যেন শেষ নেই

হাতে থাকা বইটি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেখেন আমার বন্ধু লিখেছে বইটি। আমরা একসঙ্গে জগন্নাথে পড়তাম। বইয়ের নাম ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ সবাই ভালো বলছে। আমি এক কপি কিনলাম; যাতে উৎসাহ পান। মোট কথা হচ্ছে এখন মোবাইলে একটা আঙুল ছোঁয়ালে সব কিছু পাওয়া যায়, এ কারণে সবার আগ্রহ কম বই পড়ায়। তবে যাই হোক বই পড়ার বিকল্প নেই।’

বাংলা সাহিত্য ও ভাষাবিদরা মনে করেন, বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। মেলায় পুরাতন পাঠকদের সাথে যোগ হয় নতুন প্রজন্মের বই পড়ুয়া পাঠকরা। এই পরিবেশ দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, অনুপ্রেরণা যোগায়। কারণ বইমেলার কেন্দ্রবিন্দু হলো বই। তাই মেলায় ঘুরতে আসলেও বইয়ের ছোঁয়া নিয়েই তারা থাকেন।


এবারের বইমেলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজের মুঘল হেরেমের সুন্দরী নর্তকী আনারকলির জীবন ও ঘটনাবলি নিয়ে 'আনারকলি: মুঘল হেরেমের রহস্যময়ী নারী' স্টুডেন্ট ওয়েজ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে।

নিজের বই সম্পর্কে এই লেখক বলেন, ‘আমরা সাধারণ মুঘল আমলের রাজনীতিক ইতিহাস জানি, আলোচনা করি। কিন্তু এর প্রেম ও  অন্দরমহলের রহস্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে আমার বইয়ে।’

বইমেলার গুরুত্ব সম্পর্কে ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, আমাদের ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে বইমেলা নানা মাত্রা যোগ করে। মননশীলতার চর্চার জন্য বইমেলার গুরুত্ব অনেক। এখন অনেক ভালো ভালো বই বের হচ্ছে। তবে আমার একটাই চাওয়া বইমেলা যেন শুধু বাণিজ্যিক না হয়ে মননশীল চর্চার ক্ষেত্র হয়।    

   

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;