অরণ্যে-মাজারে-মন্দিরে (দুই)

  • সাঈদ চৌধুরী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অরণ্যে-মাজারে-মন্দিরে

অরণ্যে-মাজারে-মন্দিরে

প্রাতঃভ্রমণে প্রতিদিন রংধনু থেকে লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চা বাগানের প্রান্তসীমা ঘুরে আসি। লাক্কাতুরা চা বাগান সিলেট শহরের বিমান বন্দর সড়কে মনোলোভা পরিবেশে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চা বাগান। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে অবশ্য বেসরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আনন্দ ভ্রমণ আর উচ্ছল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান এটি। বিশাল এই বাগানটি থেকে প্রতি বছর ৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর পাশেই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত মালনীছড়া চা বাগান। এখানে চায়ের পাশাপাশি কমলা ও রাবার চাষ হয়। পাশে রয়েছে নান্দনিক পরিবেশে অবস্থিত সিলেট ক্যাডেট কলেজ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যাডেট কলেজ এটি। চা বাগান বেষ্টিত এই কলেজের সুবিশাল সবুজ উপত্যকা মনোমুগ্ধকর।
দরবেশ হযরত শাহ জালালের (রহ.) সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিনের (রহ.) মাজার সংলগ্ন মসজিদে ফজরের সালাত সেরে আমরা হাঁটা শুরু করি। আমার সাথে ৩ প্রবীণ আর ১ নবীন নিত্যসঙ্গী। সিলেট শহরে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক প্রবীণ মুসলিমলীগ নেতা আলাউদ্দিন চৌধুরী না আসা পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয় না। সরকারি কর্মকর্তা ও ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফ হোসেন মূলত মাতিয়ে রাখেন দুই ঘণ্টার প্রাতঃভ্রমণ।

বিজ্ঞাপন

মজুমদারি থেকে ডা. আব্দুস শহীদ খান অথবা তার ছোট ভাই সুলায়মান খান মাঝে মধ্যে যুক্ত হন আমাদের সাথে। সেদিন আমরা আম্বরখানা হয়ে দরগার দিকে যাই। ভোর বেলা যানবাহন বিহীন শহরে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। সূর্য ওঠার আগেই অনেক পথ হাঁটা হয়। হাঁটতে হাঁটতে প্রতিদিনই নতুন কিছু দেখি। সিভিল সার্জনের অফিস থেকে আলিয়া মাদরাসার মোড় পর্যন্ত গাছপালাগুলো খুবই ভাল লাগে। উল্টো দিকে অত্যাচারী পলাতক রাজা গৌর গোবিন্দের টিলা দেখে ইতিহাসের অনেক নির্মমতা চোখে ভাসে।

ডা. আব্দুস শহীদ খান সাথে থাকায় আমাদের কথাবার্তা স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক আলোচনায় রূপ নিয়েছে। তিনি বললেন, প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে প্রাতঃকালীন ভ্রমণ স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। শরীরে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। মন অনেক চাঙ্গা থাকে। রক্ত চলাচল ও হরমোনের স্বাভাবিক ছন্দের প্রয়োগ ঘটার ফলে শারীরিক ক্লান্তিও দূর হয়। শরীরের ক্যালোরি পোড়ে। ফলে ফ্যাট ঝড়ে। ওজন হ্রাস পায়। হৃদয় ভাল থাকে। ভ্রমণ হৃদরোগ বা স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিজ্ঞাপন

আলাউদ্দিন চৌধুরী বললেন, একসঙ্গে কয়েকজন ভ্রমণ করলে গল্প করতে করতে যাওয়া যায়। ভোরের বন্ধুদের সাথে গল্প করাটাও প্রাতঃভ্রমণের সুবিধার একটা দিক, যোগ করলেন আশরাফ হোসেন। এরই মাঝে চৌহাট্টায় ফুলের দোকান থেকে একটি গান ভেসে আসে, পাগল মন রে, মন কেন কথা বলে? গীতিকার ও সুরকার সম্ভবত আহমদ কায়সার এবং শিল্পী দিলরুবা খান।

আমাদের অবাক করে আশরাফ হোসেন গুন গুন করে সুর তোলেন, ‘কে বলে পাগল/ সে যেন কোথায়/ রয়েছ কতই দূরে/ মন কেন এত কথা বলে।/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এতো কথা বলে।/ মনকে আমার যত/ চাই যে বুঝাইতে/ মন আমার চায়/ রঙের ঘোড়া দৌড়াইতে। পাগল মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ আমি বা কে আমার/ মনটা বা কে?/ আজো পারলাম না/আমার মনকে চিনিতে।/ পাগল মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এত কথা বলে।

আশি তোলায় সের হইলে/ চল্লিশ সেরে মণ/ মনে-মনে এক মন না হইলে/ মিলবে না ওজন।/ পাগল মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এত কথা বলে/ কে বলে পাগল/ সে যেন কোথায়/ রয়েছ কতই দূরে/ মন কেন এত কথা বলে।/ ও পাগল মন, মন রে/ মন কেন এতো কথা বলে।

ছয়মাস ধরে একসাথে বেড়াই, আশরাফ যে এমন সুন্দর গান পারেন তা আমাদের জানা ছিল না। তার গানের গলা যেন মধুঝরা।

প্রাতঃভ্রমণ শেষে যখন ফিরছি, দরগা গেইটে সৌরভের সাথে দেখা। মাত্র একদিনের পরিচয় হলেও সৌরভ আমাকে দেখে এগিয়ে এল। যেন বহু দিনেরে চেনা-পরিচিত। জানতে চাইল আমি কোথায় যাব? বললাম বাসায় যাচ্ছি। আমার সাথে সেও হাঁটতে শুরু করল। আগের দিনের আলোচনা থেকেই আবারো দরগার চালচিত্র নিয়ে কথা শুরু হয়।

আম্বরখানা পয়েন্টে এসে আমরা একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢ়ুকি। পাশেই সুলভ বইঘর। প্রতিদিন এখান থেকে জাতীয় সংবাদপত্র নেই। মাঝে মধ্যে পাশের দোকানের জিলাপি খাই। এখানকার মচমচে জিলাপির জুড়ি নেই। আমাকে তারা একটু আলাদা খাতির করে। ফ্রেস জিলাপি বানিয়ে দেয়। আমার ইচ্ছা ও পছন্দ তাদের জানা আছে।

এই জিলাপির প্রস্তুত প্রণালি অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। একটি বড় বাটিতে ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার ও দই যত্ন সহকারে মিশায়। ভিনেগার ও পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ডো তৈরি করে। এতে সামান্য সোডা দেয় এবং কেচাপের বোতলে ডো নেয়। তারপর প্যানে তেল ও ঘি একসঙ্গে গরম করে। আমার জন্য ৩টি এলাচ ও ১ চামচ লেবুর রস যুক্ত করে। কেচাপের বোতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জিলাপির আকৃতিতে প্যানে ডো দিয়ে ভেজে নেয় জিলাপি। চিনির সিরা তৈরি করে কুসুম গরম থাকা অবস্থায় ভাজা জিলাপি ঢালে এবং ১০ সেকেন্ড পরে পরিবেশন করে।

মচমচে জিলাপিটা সৌরভের খুব পছন্দ হয়। খাওয়ার ফাঁকে আমাকে ধন্যবাদ জানায়। উচ্চ শিক্ষিত সৌরভ তার জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, আশা-হতাশার অনেক কথা বলে চলেছে। আমিও তার চিন্তার চারণভূমিতে ঢুকে পড়েছি। নরসিংদী থেকে সিলেট এসেছে একমাসও হয়নি। একটি নতুন ব্যবসায় নেমেছে। সিলেট থেকে কামরূপ ট্যুর। ঢাকায় অন্য কোম্পানির প্রতিনিধি ছিল। এখন নিজেই ট্যুর অপারেশন শুরু করেছে। আপাতত কোন বাসা নেয়নি। তাই দরগায় দর্শনার্থীদের সাথে থাকে। সেখানেই লোকজনকে কামরূপ যাবার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

কামরূপ কামাক্ষা সম্পর্কে অসংখ্য গল্প-কাহিনী শুনেছি। ছোট বেলায় মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরীর সাথে বদরপুর গিয়েছি। বদরপুরের ওয়াজের সময় জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে কোন ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই যাওয়া যেত। তখন কাউকে সাথে পাইনি বলে কামরূপ যাওয়া হয়নি।

আরেকবার ইফতেখার হোসেন শামীমসহ ঝর্ণা, পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া শিলং, চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয় গিয়েছিলাম। তখন কামরূপ যাবার কথা ছিল, শেখ হাসিনা সিলেট আসবেন বলে শামীম ভাই দ্রুত ফিরতে হল। ফলে যাওয়া হয়নি। তাই কামরূপ ঘুরে দেখার আগ্রহ আমার ছিল। শিলং, কলকাতা, বুম্বে, দিল্লি, আগ্রাসহ ভারতের বহু এলাকায় গেলেও কামরূপ যাওয়া হয়নি কখনো। এক বিস্ময়কর স্থান হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ভারতের এই জায়গাটি।

আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের কামরূপ এলাকায় নীলাচল পর্বতে অবস্থিত কামাক্ষা মন্দির। শুনেছি মানুষ সেখানে যায় যাদু শেখার জন্য। তারা মন্ত্র শিখে শক্তিশালী তান্ত্রিকে পরিণত হয়। সেই জাদুর নগরীতে যাবার পরিকল্পনা করে ফেলি সৌরভের সাথে।

গাঁজা সেবন করছে এক পাগল

পরের সপ্তাহে একটি ট্যুর যাবে। আমিসহ ৭ জনের মধ্যে ৩ জন যাবেন ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে গুয়াহাটিতে। আর বাকিরা মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে আসামে প্রবেশ করতে হবে।

সিলেটের তামাবিল দিয়ে ডাউকি সীমান্তে প্রবেশের পর সেখান থেকে শিলংয়ে যাওয়ার ট্যাক্সি নিলাম। চারজনের জন্য ট্যাক্সি ভাড়া ১৬শ রুপি। এরপর শিলং থেকে গুয়াহাটি যাবার জন্য একটি জিপ নিলাম। জিপের সিট প্রতি ৮০ রুপি দিতে হল। গুয়াহাটির পল্টন বাজার থেকে লোকাল বাসে করেই রহস্যে ঘেরা কামরূপ গিয়ে পৌঁছলাম।

রেল স্টেশন রোডে একটি হোটেলে উঠলাম আমরা। ১ হাজার রুপি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া। অনুষ্ঠান উপলক্ষে হোটেলটি বেশ জমকালো ভাবে সাজানো হয়েছে। রুমের কোনোটির বহির্ভাগ বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজানো, কোনোটির রুমই যেন আস্ত একটা রেকর্ডিং স্টুডিও।

স্টেশন এলাকায় রেস্তোরাঁ গুলোতে ২শ থেকে ৩শ রুপির মধ্যে খাওয়া যায়। সীফুড প্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ রেস্তোরাঁ আছে, যেটি আমার খুব পছন্দ ছিল। সৌরভ বলল, প্রথমে নিরামিষ খাবার, তারপর মাছ এবং সবশেষে মাংস। এতো টাকায় খাবেন, সব খেতে হবে।

কামরূপ কামাক্ষায় দুনিয়ার সব কুসংস্কার আর ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী মানুষের ঢল নেমেছে। ওঝা, বৈদ্য, কবিরাজ, ফকির, সাধু আর সন্যাসীর অভাব নেই। স্থানে স্থানে লালরঙের কাপড় দিয়ে বিশেষ ধরনের পতাকা টাঙিয়ে আস্তানা গেড়েছে তারা। সবাই কামাক্ষার দোহাই দিয়ে তাবিজ কবজ মানুষের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ইচ্ছে মত টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিচ্ছে।

এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসেছেন। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছেন। লন্ডন থেকে আসা একজনের সাথে দেখা হল। নিজের ঘরের মানুষটাকে বিশ্বাস হয় না তার। অথচ বিশ্বাস করছেন গাঁজা নামের সিদ্ধি আর নেশা জগতের এই মাদক সেবনকারীদের।

এখানে দেখা হল মনু পাগলার সাথে। শাহ জালালের (রহ.) মাজার টিলার পশ্চিমে ঝর্ণার কাছে সব সময় তাকে পাওয়া যায়। এই ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে তারা আয় রোজগার করে। ঝর্ণাটি নানা অলৌকিক কীর্তি কিংবদন্তী রূপে এখনও প্রচলিত আছে। ঝর্ণায় প্রবাহিত পানি জমজমের পানির সদৃশ বলে এরা মানুষের মধ্যে আবেগ সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ আরোগ্য লাভের জন্য এই পানি পান করে। ঝর্ণার পানি বোতলে করেও বিক্রি হয়।

মনু পাগলা আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে। তার হাতের হলদে রঙের পাউডারে আমার সাদা শার্ট রঙিন হয়ে যায়। আমার বিরক্তি বুঝতে পেরে মিনতির সাথে মুখে হাত বুলিয়ে দেয়। তাতেও হলদে রঙ মুখে লেগে আমাকে জোকারের মতো লাগছিলো। কিন্তু মনু পাগলার আন্তরিকতাকে ইগনোর করতে পারিনি।
মজার ব্যাপার হলো, সে আমাকে এমন একটি জিনিস দেখিয়েছে যা আমি আজো ভুলিনি। বলা যায়, কামরূপের আসল রহস্য মূলত মনু পাগলা আমাকে দেখিয়েছে। আমাদের দেশে সাধু-সন্যাসীগণ মানুষের মন জয় করার জন্য যেসব ভুয়া মন্ত্র পাঠ করেন তা সেখানে অর্থের বিনিময়ে সেখানো হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ধর্ম, সংস্কুতি এবং পুরাণ বা মিথের আঙ্গিকে সাজানো ও পড়ানো হয়।

আমাদের দেশে মাজার-মন্দিরে সাধু-সন্যাসীগণ নেশায় ভুত হয়ে নানা রকম তন্ত্র-মন্ত্রের ধ্বনি দিতে থাকে। তারা কালো চিকার রক্তমাংস থেকে তৈরি বাম তেল, ভাদ্র মাসের মশার রক্ত থেকে তৈরি তেল, আশুক-মাশুক নামক গাছের পাতা, চিনা জুকের মাথা ইত্যাদি সংগ্রহের কথা বলে খরচ নেয়। কথিত ঘোড়ার লোম, বাঘের ছাল, মহিষের শিং আর পুড়ামাটি খাওয়াইয়া বা কবজে ঢুকাইয়া হাতিয়ে নেয় সহজ সরল মানুষের কষ্টার্জিত টাকা-পয়সা।

প্রেমে ব্যর্থ সুন্দরী মেয়েকে বশে আনা, অবাধ্য স্বামীকে বাধ্য করা, মামলা মকদ্দমায় জয়ী হওয়া বা কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অজ্ঞ মানুষজন সাধু সন্যাসীদের চরণে লুটিয়ে পড়ে। স্বপ্ন পূরণের জন্য সাধু বাবারে বিশ্বাস করে। হাজার হাজার টাকা তাদের দান দক্ষিণা দেয়। বিলেতেও এদের ব্যবসা বেশ রমরমা।

মনু পাগলা আমাকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে দেখালো ওঝা, বৈদ্য, কবিরাজ, ফকির, সাধু আর সন্যাসী কেউ পাগল নয়। অন্য পেশার মত এটা এক ধরনের পেশা। বরং বেশির ভাগ অপরাধী পালাতে গিয়ে বা প্রথম জীবনে ব্যর্থ-বিফল হয়ে এই পথে আসে। একসময় অঢেল রুজি ও অবৈধ যৌনাচারের সুবিধা পেয়ে শক্তিশালী তান্ত্রিকে পরিণত হয়। এদের অনেকে জুয়েল আইচসহ নামকরা যাদু শিল্পীদের নানা রকম যাদুর কৌশল ও ইন্ডিয়ান ক্রাইম সিরিজ দেখে সেগুলি রপ্ত করে। এর সাথে মন্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই। মন্ত্র শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাব জাগানোর মাধ্যমে ঠকানোর হাতিয়ার মাত্র।

মন্ত্রগুলোর একটি হল- অটকশাহ মটকশাহ/ আমি বড় গনকশাহ/ মাঝে একটা ফাড়া আছে/ দুশমন দুইজন লগে আছে/ দুশমন ছাড়াইতে গেলে- কালা একটা মুরগি লাগব/ সোয়া পাচ আনা পয়সা লাগব/ সাদা একখান ধুতি লাগব।/ ইছিম পাদরনে/ মা কদরনে/ মশাই তরনে/ কালা চিকা বাম তেল, ভাদোমাইয়া মশার তেল/ আশুক-মাশুকের পাতা/ ছয়কুড়ি চিনা জুকের মাথা/ হাটুতে ছুকাইয়া তালুতে ভরন দিতে হবে।/ আল্লাবান, কুরানবান, আয়াতুল কুরছিবান/ ছয়কুড়ি ছয়বান ছাড়িবে/ ইষৎ মহাদেবী যথাচিরি ভূমিতে পড়িবে।

এজাতীয় মন্ত্রগুলি বলার বা আবৃত্তি করার একটা ভন্ডামি স্টাইল আছে, সেটাও তারা শিখিয়ে দেয়। (চলবে স্মৃতির ডাইরি থেকে)

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সাংবাদিক, কবি ও কথা সাহিত্যিক।