গ্রীষ্ম প্রকৃতিতে এখন ‘দাগি-বসন্ত’র ডাক

  • বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গাছের কোটরে দাগি-বসন্তের ছানার মুখে খাবার তুলে দেবার চেষ্টা। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

গাছের কোটরে দাগি-বসন্তের ছানার মুখে খাবার তুলে দেবার চেষ্টা। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

ছোট ছোট শব্দে বিরামহীন ডাক! কয়েক বার নয়; অসংখ্যবার। যারা এ ডাকটি শুনতে থাকেন তারা বরং শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন; কিন্তু ডেকে যাওয়া এই পাখিটি কখনো ক্লান্ত হয় না। দূরে থেকে ডাকছে গাছের ডালে ডালে ডাকছে তো ডাকছেই।

এই ডাক প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। তবে তার দেহ সবুজ থাকায় এরা পাতার সঙ্গে মিশে যায়। সহজে দেখা যায় না। তবে ডাকের প্রতিধ্বনি অনুমান করা যায় যে- গাছের এই দিকটা থেকে পাখিটির ডাক শোনা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

‘দাগি-বসন্ত’ ছাড়াও এ পাখির আরও নাম রয়েছে। সেগুলো হলো- বেঘ বউ, ডোরা বসন্তবৌরি, সবুজ বসন্ত বউরী, কুতলুশ বসন্তবউরী। এদের ইংরেজি নাম Lineated Barbet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima lineata। ‘বারবেট’ প্রজাতির প্রায় সব পাখিগুলোই ক্রমাগত ডাকের জন্য সেরা। প্রজনন মৌসুমে সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তার এই বিরামহীন ডাকের প্রতিযোগিতা। বসন্ত থেকে গ্রীষ্মে ক্রমাগত ডাকতে থাকে ওরা।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, এই ‘দাগি-বসন্ত’ আকারে শালিকের চেয়ে বড়। এরা ছোট মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি। তাদের রয়েছে শক্ত ও মোটা ঠোঁট এবং তীক্ষ্ম নখ। আকারে এরা ৩৩ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ১৫৫ গ্রাম।

বিজ্ঞাপন
গাছে গাছে জোর গলায় ডেকে চলে দাগি-বসন্ত। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

এর শারীরিক বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরা পাতার রঙের মতো শরীরের বেশিভাগ অংশই সবুজ। বস্তুতপক্ষে ডানা, পেট ও লেজ সবুজ। তবে এর শরীরে সবুজ ছাড়াও অন্য রংগুলো হলো- খয়েরি ও সাদা। হালকা খয়েরি রঙের মাথা, ঘাড়, পিঠ ও বুকে সরু আকৃতির সাদা দাগ। ছেলে এবং মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

দাগি-বসন্তের স্বভাব সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, এরা সব ধরণের বন, খোলা বনভূমি, উদ্যান ও গ্রামে বিচরণ করে। সাধারণত একা, জোড়ায় বা বিচ্ছিন্ন দলে দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে এরা এক ডাল থেকে অন্য ডালে অবিরাম ডাকাডাকি করে। খুব জোরে বনের চারদিক প্রতিধ্বনিত করে ডাকতে থাকে- ‘কুরুক-কুরুক-কুরুক’।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের হিমালয়ের পাদদেশ, নেপাল, ভূটান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এ পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। নানান রকমের ফল এবং ফুলের মধু, ইউপোকা, লার্ভা, টিকটিকি এবং গেছো ব্যাঙ প্রভৃতি এর খাদ্য তালিকার অন্যতম খাবার বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।