ভ্রমণক্লান্ত পরিযায়ী হিমালয়ী গৃধিনী শকুন



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
পরিযায়ী হিমালয়ী গৃধিনী। ছবি: সীমান্ত দীপু

পরিযায়ী হিমালয়ী গৃধিনী। ছবি: সীমান্ত দীপু

  • Font increase
  • Font Decrease

একপ্রাপ্ত থেকে আরেক প্রান্তে দীর্ঘ পরিযানের পথ। এর ফলেই অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে হারায় উড়ার শক্তি। মাটিতে পড়া এই বিশাল আকৃতির পাখিটাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় অনেকেই। ঠিক তখনই ভয়ে ভীত মানুষেরা বা অতি উৎসাহী এলাকাবাসীর আঘাতে এসব শকুনদের অসুস্থ হওয়াসহ প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে ব্যাপক।

পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের লোভে যেসব পরিযায়ী পাখিরা পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ (Himalayan Griffon Vulture)। প্রতি বছর শীতকালে এই শকুনগুলো মাইগ্রেট বা পরিযায়ন করে বাংলাদেশের সমতল ভূমিগুলোতে চলে আসে।

কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তিতে তারা আমাদের দেশে এসে অনেক সময় উড়তে পাড়ে না। মাটিতে পড়ে যায়। তখন গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা অনেক সময় অতি উৎসুক হয়ে অথবা ভয়ে সেই হিমালয় গৃধিনী শকুনদের মেরে ফেলে।

শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বলেন, আমরা কয়েক বছর আগে সিলেট অঞ্চলেও পেয়েছিলাম এমন অসুস্থ হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের। আমরা এগারোটা অসুস্থ শকুনদের সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়েছি। আমাদের ক্যাপভিট সেন্টারে গড়ে বিশ থেকে ত্রিশটা শকুন খাওয়াই-দাওয়াই, ট্রিটমেন্ট দিই, পরিচর্যা করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেই।

প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে আহত শকুনটিকে। ছবি: সীমান্ত দীপু

তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা প্রায় শতাধিক শুকুন সুস্থ করে ছেড়েছি। আগে যখন আমরা হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের নিয়ে কাজ করতাম না তখন কি পরিমাণ শকুন মারা পড়তো। প্রতি বছর শীত মৌসুমে গড়ে প্রায় ৫০টা শকুন বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে।

তাদের খাবারের অভাব সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এরা সুদূর হিমালয়ের এরিয়া থেকে আসে। এরা অনেক অনেক দূর জার্নি করে এসে খাবার পায় না। খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে একে বলে ‘সর্টেজ অফ ফুড’ অর্থাৎ খাদ্যের সংকট। অনেক দূর জার্নি করার ফলে তাদের খাবারের প্রয়োজন পড়ে; এই জিনিসটা সঙ্গে সঙ্গে ওরা পায় না। তখন খুব দুর্বল হয়ে যায় এবং উড়তে পারে না। গ্রামের উৎসুক মানুষ এমন অবস্থায় শকুনদের বেঁধে রাখে, আহত করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলে। কারো কারো পালক ওঠে যায়, কারো কারো পাখা ভাঙে, কারো কারো আবার পা ভাঙে। তখন আমারা এসব অসুস্থ শকুনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

শকুন গবেষণা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ী গৃধিনী পরিচর্যার জন্য দিনাজপুরের সিংড়াতে একটি রেসকিউ সেন্টার তৈরি করেছে বনবিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।

এ জাতের পাখি দেশের যেকোন জায়গায় আটকা পড়লে দ্রুত স্থানীয় বন বিভাগ বা আইইউসিএন দলকে জানান। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করছি এবং সবার সহযোগিতায় পেলে এবছরও হিমালয়ী গৃধিনী শকুনগুলোকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু।

পাখি ও বন্যপ্রাণীদের দুঃসময়



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
সুন্দরবনের বিপন্ন প্যারাপাখি। ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনের বিপন্ন প্যারাপাখি। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জলবায়ু পরিবর্তনে পাখিদের সংখ্যা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। কমেছে পাখির আবাসস্থল। ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী।

বৈশ্বিক পাখি বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার প্রজাতির মধ্যে প্রায় ৪২ হাজার প্রজাতি হুমকির মুখে আছে, যা মোট প্রজাতির প্রায় ২৮ ভাগ। বিগত দুশো বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। এভাবে চলতে থাকলে আগামী একশ বছরের মধ্যে এই বন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সুন্দরবনের খয়রাপাখা মাছরাঙা পাখি। ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতি বিশেজ্ঞরা বলছে, বনের ওপর মানুষের অধিক নির্ভরশীলতার কারণে ক্রমান্বয়ে এর আয়তন অতি দ্রুত সংকুচিত হয়ে আসছে। বনের আয়তনের সাথে সাথে হ্রাস পাচ্ছে এর জীববৈচিত্র। সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ, ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী প্রাণী হুমকির মুখে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সুন্দরবনে একাধিক অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হলেও কাজে আসছে না তার সুফল।

পাখি বিশেজ্ঞরা বলছেন, এক দিকে বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনে পাখি সংখ্যা কমলেও ভারত অংশে সুন্দরবনে পাখির সংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের পাখি-বৈচিত্র্যের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ‘জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’। ‘বার্ডস অফ দ্য সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার’ নামের সেই বইটিতে এই অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রতিটি পাখি প্রজাতির ছবি-সহ বিশদ বর্ণনা নথিভুক্ত হয়েছে।

‘বার্ডস অফ দ্য সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার’ নামক বই।

বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪২০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সুন্দরবনে পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখি মিলিয়ে রয়েছে ৪২৮টি প্রজাতি। দেশে প্রাপ্ত ১২টি প্রজাতির মাছরাঙার ৯টিরই দেখা মেলে এই অঞ্চলে। সেইসঙ্গে গোলিয়াথ হেরোন, স্পুনবিল স্যান্টপিপার, হুইমবেল, লার্জ ইগ্রেট, টেরেক স্যান্ডপিপার, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্রোভারের মতো বিরল প্রজাতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই অঞ্চলে।

যা ইতিবাচক দিক হিসেবেই মনে করছেন ভারতের প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। ভারতে বর্তমানে ১৩০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই বাসিন্দা সুন্দরবনের। বৈচিত্র্যের নিরিখে গোটা ভারতের মধ্যে যা রয়েছে শীর্ষস্থানে। আবাসস্থল ও অবাধে চলাচলের জন্যে বাংলাদেশ অংশের পাখিরা ভারত অংশের সুন্দরবনে নিজেদের নিরাপদ মনে করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

অন্যদিকে, কমতে থাকায় বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০। এর মধ্যে পাখি প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৭২১। বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর অবস্থা কী - তা দেখার জন্য ২০১৫ সালে প্রকাশিত আইইউসিএন এর ‘লাল তালিকা’ দেখা যেতে পারে। সেখানে রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় ১২৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী হুমকি বা বিলুপ্তির মুখে আছে, যা মোট প্রজাতির প্রায় ১৪ ভাগ। গত ১০০ বছরে প্রায় ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী হারিয়ে গেছে, যা এ দেশের মোট বন্যপ্রাণীর প্রায় ২ ভাগ।

;

হাকালুকিতে কম এসেছে পরিযায়ী পাখি



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
হাকালুকিতে পাতি-সরালির ঝাঁকও কমে গেছে। ছবি: এবি সিদ্দিক

হাকালুকিতে পাতি-সরালির ঝাঁকও কমে গেছে। ছবি: এবি সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

হাকালুকিতে পাখি শিকারিদের কারণে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। যার কারণে হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য অনেকটাই হুমকির মুখে।

হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, নদী দূষণ, জাল বিষ টোপ ও পটাশ দিয়ে পাখি শিকার। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বিলে মাছ আহরণ, বিল শুকিয়ে মাছ নিধন, বিলে ২৪ ঘণ্টা পাহারা ও জলজ বৃক্ষ নিধনসহ রয়েছে নানান সমস্যা।

চলতি বছরের শীত মৌসুমের পাখিশুমারিতে সে তথ্যই জানান দিয়েছে। জানুয়ারি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখ দু’দিন ব্যাপী হাকালুকি হাওরে করা হয় পাখি শুমারি করে বন বিভাগ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) যৌথ উদ্যোগে এ শুমারি করে।

বাংলাদেশে ৭১৮ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। এরা শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশে। আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় হাকালুকি হাওরের মতো জলাশয়। প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হাওরে রয়েছে ছোট-বড় ২৭৬টি বিল। পাখিশুমারিতে তাদের জরিপে হাকালুকিতে এ বছর এসেছে প্রায় ২৫ হাজার পাখি। যা বিগত বছর থেকে অনেক কম। যা ২০২০ সালে ছিলো প্রায় ৪০ হাজার ১২৬ পাখি। মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসতো। এসব পাখির বেশিরভাগ মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওরে অবস্থান করতো।

যুগল বেগুনি কালেমের সৌন্দর্য। ছবি: এবি সিদ্দিক

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) এর পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে সারা বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ৩৫ শতাংশ। হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে বিচরণ করতো প্রায় ৭৫-৮০ হাজার পাখি। তার ৮০ শতাংশই হাকালুকি হাওরে ছিলো।

পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাকালুকি হাওরে যে নদীগুলো মিলিত হয়েছে এখন সেই নদীগুলো প্লাস্টিক, পলিথিন, দূষিত পানি ও ময়লার ভাগাড়। পাখি কমার বিশেষ কয়েকটি কারণের মধ্যে এটি একটি। অরক্ষিত থাকায় দিন দিন কমেছে পাখির সংখ্যা। হাওরের পরিযায়ী পাখি রক্ষায় স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা থাকতে হবে। এতেই বাঁচবে পাখি।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর হাওরে বিল ইজারা দেওয়া হয়। এ বছরও হয়েছে। এতে বেশ লোকসমাগম ঘটে। দিনরাত পাহারা দেওয়া হয়। এসব কারণে পরিযায়ী পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে না। বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কারণে নষ্ট হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র্য। ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে।

;

লালসবুজ রঙের পাখি ‘সেকরা-বসন্ত’



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
আপন মনে গাছের ডালে বসে আছে সেকরা-বসন্ত। ছবি: এবি সিদ্দিক

আপন মনে গাছের ডালে বসে আছে সেকরা-বসন্ত। ছবি: এবি সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

ছোট আকারের লাল-সবুজ রঙের বর্ণিল পাখি ‘সেকরা-বসন্ত’। এ পাখিটির ইংরেজি নাম Coppersmith Barbet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Psilopogon haemacephala. এরা কাপিটোনিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত মেগালাইমা গণের এক প্রজাতির সুলভ পাখি। এরা বাংলাদেশের স্থানীয় পাখি।

এদের দেশের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। IUCN এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা শঙ্কাহীন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এরা Least Concern বা শঙ্কাহীন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, সেকরা-বসন্ত আকারে ছোট হয়। মাত্র ১৭ সেন্টিমিটার। দেহ মূলত সবুব। তবে এদের কপাল লাল রঙের। চোখের চারপাশে হলুদ দাগ দেখা যায়। গলার নিচে রঙিন দাগ দেখা যায়। দেহের উপরের অংশ সবুজ। ঠোঁট কালো এবং পা লাল বর্ণের হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই দেখতে একই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গায়ের রঙ মলিন এবং এদের দেহে কোন লাল দাগ দেখতে পাওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, সেকরা বসন্ত সাধারণত একা, জোড়ায় বা ছোট দলে চলাফেরা করে। এদেরকে বাগানে, বনে বাদাড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এরা বড় গাছের মগডালে রোদ পোহায়। গাছের গর্তে বাসা বানায় এবং সেখানে বিশ্রাম নেয়। শুষ্ক মরুভুমি ও জলাখভূমির বনে এদের সহজে দেখা যায় না।

পাখিটির খাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রজাতির পাখিরা সাধারণত ফলাহারী। তবে এরা মাঝে মধ্যে পোকা বিশেষ করে উইপোকা খেয়ে থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় থাকে বট গাছের ফল, জংলি গাছের ফল, জলপাই জাতীয় ফল এবং বেরি জাতীয় ফল। এরা ফুলে পাপড়িও খেয়ে থাকে।

সেকরা বসন্তের প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এরা গাছের সরু ডালের নিচে গর্ত করে বাসা বানায়। স্ত্রী পাখি একসাথে ৩ থেকে ৪ টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলিতে তা বাবা পাখি ও মা পাখি উভয়ই দিয়ে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে প্রায় ২ সপ্তাহ সময় লাগে বলে জানান এ পাখি বিশেষজ্ঞ।

;

বিপদ টের পেলে ঝোপের মাঝে লুকিয়ে পড়ে ‘বাংলা কুবো’



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
বাংলা কুবোর উড়ন্ত সৌন্দর্য। ছবি: এবি সিদ্দিক

বাংলা কুবোর উড়ন্ত সৌন্দর্য। ছবি: এবি সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বিপদের টের পেলে পাখিটি ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। কখনো ছোট দূরত্বে উড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে বাঁশবনে। তখন আর কেউ তাকে দেখতে পায় না।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে অন্যতম এক পাখি ‘বাংলা কুবো’। বিভিন্ন বন-জঙ্গল তথা শালবন এবং চা বাগানে এদের বসবাস। অঞ্চলভেদে এ পাখির নাম কুবো, কুক্কা নামেও পরিচিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কমরুল হাসান বলেন, এই পাখিটির নাম অন্যান্য বাংলা নামগুলো হলো কানকুয়া, কুক্কা, ছোট কোকা, কুক্কাল বা কানাকুক্কা। ইংরেজিতে একে Lesser Coucal বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Centropus bengalensis। কুবো মাঝারি গড়নের ভূচর পাখি। এদের লম্বা ও শক্তিশালী পা এবং লম্বা লেজ থাকে। এরা উড়তে পটু নয়। ছেলে ও মেয়েপাখি দেখতে একই রকম। বড় কুবো কালো ও তামাটে রঙের লম্বা লেজওয়ালা পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ৪০ সেমি, ওজন ২৫০ গ্রাম। পিঠ তামাটে ও দেহতল চকচকে কালো। এ রকম দুটো প্রজাতি আমাদের দেশে পাওয়া যায়, একটি হলো বাংলা কুবো অপরটি বড় কুবো।

পাতার আড়ালে বাংলা কুবো। ছবি: এবি সিদ্দিক

পাখিটির স্বভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ভূচর এ পাখি ওড়ার চেয়ে দৌঁড়াতে বেশ পটু। বাঁশঝাড়ে বসে থাকে চুপ করে। নিজেকে সবার থেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করে। এরা একটু লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। প্রয়োজনে এরা মাটিতে নেমে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ঘন ঝোপ, বাঁশবন ও খেজুরগাছের আগায় পেয়ালার মতো বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় তিন-চারটি। বনপ্রান্তে ও গ্রামাঞ্চলে এদের ঢের দেখা যায়। উঁচু ঝোপের মধ্য অগোছালোভাবে বাসা তৈরি করতে পছন্দ করে।

শারীরিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, উজ্জ্বল তামাটে কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই কালো। চোখ লাল, ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো। সাধারণত একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। মাটিতে ধীরে ধীরে হেঁটে শিকার খোঁজে। ঝোপের তলায় তলায় ঘুরে ওরা যখন খাবার খোঁজে, তখন দীর্ঘ পুচ্ছটি প্রায় মাটি ছুঁয়ে থাকে।

বেশ গভীর ও সুরেলা কণ্ঠে ধীরে ধীরে উক...উক... শব্দে ডাকে। অন্য রকম একটি ডাকও শোনা যায়। খুব দ্রুত সংগীতের ঝংকারের মতো কুপ..কুপ..কুপ করে ছয়-সাতবার ডাকে। গরমের দিনে বহুদূর থেকে ওদের ডাক শোনা যায় বলে জানান এ বন্যপ্রাণ গবেষক।

;