প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে বসন্তপাখির ডাক

  • বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বটফল মুখে নিয়ে আছে নীলগলা বসন্তবৌরি। ছবি আবু বকর সিদ্দিক

বটফল মুখে নিয়ে আছে নীলগলা বসন্তবৌরি। ছবি আবু বকর সিদ্দিক

প্রকৃতিতে আসতে শুরু করেছে বসন্ত। ঝরতে শুরু করেছে বয়স্ক পাতা। কিছু কিছু গাছে গাছে ডালে ডালে অবশ্য এখন সবুজ কচি পাতার ছড়াছড়ি। বৃক্ষরাজিতে আসতে শুরু করেছে নতুন প্রাণের আবহ।

প্রাকবসন্তে যেনো বেড়ে গেছে পাখির আনাগোনা। নজরকাড়া রঙের বর্ণিল পাখি বাংলার প্রকৃতিতে এনে দেয় মায়ামুগ্ধ রূপ। পাখি বাংলার মুগ্ধ মায়বি প্রকৃতির অনুষঙ্গ। আর বসন্ত দিনে বৃক্ষের কচি ঘন পাতার গাছের মগ ডালে পাখির কুজন মনে দোলা লাগিয়ে দেয়। হাজারো বর্ণিল পাখির ভেতর যে বসন্ত পাখির ডাক শোনা এখন যায় তার নাম ‘নীলগলা বসন্তবৌরি’।

বিজ্ঞাপন

তবে ‘বসন্ত বৌরি’ নামেও ডাকা হয়। ইংরেজি নাম Blue Throat Barbet বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima asiatica, বসন্তবৌরী হচ্ছে Capitonidae গোষ্ঠীর পাখি। এরা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, ফলাহারি বসন্তবৌরি গত কয়েক দশক ধরে আগের তুলনায় কমে গেছে। তবে বিলুপ্তির আশঙ্কায় পাখিটি নেই।

বিজ্ঞাপন

বসন্তবৌরি বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান, নেপাল, বার্মা, থাইল্যান্ডসহ চীনের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা মেলে। বাংলাদেশে শোভন এ পাখিটির সাধারণত গ্রামের চলার পথে গাছে এ মৌসুমে দেখা মেলে। বসন্ত দিনে তার ডাক শোনা যায়। বাংলাদেশে লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি মিশ্র চিরসবুজ বনে এটি বেশি দেখা মেলে।ফলের মৌসুমে গাছের ফল ঠোঁটে নিয়ে উড়াল দেয় দূরে। এই দৃশ্য অতি সুন্দর। বারবার মুগ্ধতা ছড়ায়।

নীলগলা বসন্তবৌরির রঙের সৌন্দর্য। ছবি আবু বকর সিদ্দিক

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, নীলগলা বসন্তবৌরি সবচেয়ে সুন্দর পাখি। পাখিটির মাথার উপরের রঙ লাল। গলার নীচে উজ্জ্বল নীল, চোখের দুই পাশে নীলচে। মাথার চাঁদির উপড় কালচে টান রয়েছে। বুক হলদেটে। ঠোঁটে হলুদ কালো মিশ্রণ রয়েছে। চক্ষু লালচে। উপড়ের সব পালক টিয়া পাখির মত সবুজ। লেজের তলার অংশে ফিকে নীল। ডানার তলায় সাদাটে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে ঠিক একই রকম। এদের গায়ের রঙ সবুজ বলে পাতার আঁড়ালে মিশে যায়। তাই সবুজ পাতার ফাঁকে সহজে এদেরকে দেখা যায় না। গাছের মগডাল পছন্দ করে। এরা কখনো দলবদ্ধভাবে থাকে না।

প্রজনন সম্পর্কে তিনি জানান, বসন্তবৌরি বাসার জায়গা খুঁজতে ব্যয় করে কয়েকটি দিন। সংখ্যার হিসেবে ৩ থেকে ৫ দিন। কাঁঠঠোকরার মত গাছের গায়ে ছোট গোল গর্ত করে এরা বাসা বাঁধে। কখনও কাঠ ঠোকরা পাখির পরিত্যক্ত বাসাও ব্যবহার করে। এদের প্রজনন কাল মার্চ থেকে জুলাই। পাখিটি ২-৩ টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয় ও বাচ্চা লালন পালন করে থাকে। ডিম ফোটে ২০-২২ দিনে।

খুব ঘন জঙ্গলে ফল-পাকুড়ের গাছ যেখানে বেশি সেখানে এদেরকে বেশি দেখা যায়। পাখিটি ফলআহারী পাখি। বটফল এদের প্রিয় খাবার। তবে ছোট পোকামাকড়ও এরা খেয়ে থাকে। বিশেষ করে পাকা বটের ফল,কদম, দেবদারু, আম, কলা, ডেউয়া ও তেলাকুচা ও কিছু পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে বলে জানান এই পাখি বিশেষজ্ঞ।