হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে, অনিশ্চয়তায় ১০টি প্রধান নদী
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট তাণ্ডবের জন্য দায়ী করা হয় বৈশ্বিক 'উষ্ণায়ন'কে। অতি গরম, প্রচণ্ড দাবদাহ, তীব্র শৈত্য কিংবা মারাত্মক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস অথবা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প এজন্যই এসে হানা দিচ্ছে বার বার। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে হু হু করে।
বিজ্ঞানিরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে হিমালয়ের হিমবাহগুলো ৮০ শতাংশ আয়তন হারাবে। তাতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে ওই এলাকা থেকে উৎপন্ন অন্তত ১০টি প্রধান নদী এবং তাদের যাবতীয় উপনদী ও শাখানদী।
গবেষকরা তাদের সরজমিন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে জানিয়েছেন যে, হিমালয়ে হিমবাহগুলোর গলনের তেজ এতটাই যে, একের পর এক হিমবাহ উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট দেখে বিজ্ঞানি চরমভাবে চিন্তিত। তাঁদের দাবি, গত দশকে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে হিমালয়ের বরফ যে গতিতে গলেছে, তা পূর্ববর্তী দশকের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, বরফ গলনের গতি এক দশকে ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পাহাড় পর্বতে জমে থাকা বরফ গলবে, এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। বরং, বরফ গলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু হিমালয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে চিন্তার, তা হল গলনের এই গতি। এত দ্রুত এত বরফ হিমালয় থেকে গলে যাবে, তা ভাবনাচিন্তার বিষয়। ফলে এ বিষয়ে এখন থেকেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, হিন্দুকুশ-হিমালয়ের হিমবাহগুলো সরাসরিভাবে দক্ষিণ এশিয়ার কমপক্ষে ২৪ কোটি মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জলের চাহিদা মেটায়। এ ছাড়া, বিভিন্ন নদী উপত্যকায় বসবাসকারী অন্তত আরো ১৬৫ কোটি মানুষ পরোক্ষ ভাবে এই হিমবাহগুলোর উপর নির্ভরশীল।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই শতাব্দীর শেষে হিমালয়ের হিমবাহগুলো ৮০ শতাংশ আয়তন হারাবে। তাতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে ওই এলাকা থেকে উৎপন্ন অন্তত ১০টি প্রধান নদী এবং তাদের যাবতীয় উপনদী ও শাখানদী। গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, ইয়েলো, ইরাবতীর মতো ভারত ও চীনের বহু গুরুত্বপূর্ণ নদীর জলের উৎস হিমালয়ের হিমবাহ। সেগুলো গলে গেলে এই নদীতে প্লাবন দেখা দেবে। নদীর উপত্যকায় বসবাসকারী বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হয়ে উঠবে তাতে।
হিমালয় উপত্যকার বাসিন্দাদের শুধু বাসস্থান নয়, খাবার, বিদ্যুৎ প্রভৃতি একাধিক প্রাথমিক চাহিদা মেটে নদীর জল থেকেই।নেপালের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহের পরিমাণ দাঁড়াবে এক তৃতীয়াংশ। হিমবাহ অর্ধেক হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। এসবের কারণ উষ্ণায়ন। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের তাপমাত্রা সার্বিক ভাবে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে আগের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। বেড়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রাও।
এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য পদক্ষেপ করতে হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানিরা।