আমাদের ছোটো নদী

  • কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের ছোটো নদী

আমাদের ছোটো নদী

রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’ সবারই জানা। কিন্তু 'ছোটো' নদী বলতে কল্পনাশ্রয়ী কবি কোনও বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা দেননি যা দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদগণ।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, নদী হল প্রাকৃতিক জলধারা। সম্পূর্ণরূপে তাকে প্রবাহিত হতে হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে। আর তা যদি প্রাকৃতিক উপত্যকা বা খাতের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয়, তবেই তাকে নদী বলা চলে।

বিজ্ঞাপন

ভূতাত্ত্বিকদের সংজ্ঞায়িত এই নিয়ম মেনে প্রবাহিত হওয়া এমনই কিছু ক্ষুদ্রতম জলধারা নদীদের কথাও জানা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশ্বের দীর্ঘতম নদী মিশরের নীল সম্পর্কে এক নিঃশ্বাসে বলা হলেও বিশ্বের ক্ষুদ্রতম নদী নিয়ে বলা সহজ নয়। বৃহত্তম নদীর খোঁজ রাখলেও ক্ষুদ্রতম নদীর কথা সেভাবে জানার চেষ্টা করা হয় না।

বিশ্বের এমনই কিছু ছোটো নদীর কথা বলা হলো।

বিজ্ঞাপন

ট্যাম্বোরাসি নদী

ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সুলাওয়েসির এই নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ মিটার। সুলাওয়েসির একটি পাথুরে ঝর্ণা থেকেই জন্ম এই নদীর। তারপর আঁকাবাঁকা পথে বেয়ে তা মিশেছে বনি উপসাগরে। ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্রতম নদী এটিই। সে-দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রও বটে।

রেপ্রুয়া নদী

জর্জিয়ার আবখাজিয়া প্রদেশের উপকূলে অবস্থিত এই নদীটির দৈর্ঘ্য ২৭ মিটার। অর্থাৎ, ১০০ ফুটের কম দূরত্ব অতিক্রম করে এই জলপ্রবাহ। রেপ্রুয়ার উৎস বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম গুহা ক্রুবেরা। জর্জিয়ার নিকটে অবস্থিত কৃষ্ণসাগরে গিয়ে মেশে এই নদী।

ওম্বালা নদী

রেপ্রুয়ার মতো এই নদীটির বাসস্থানও ইউরোপ। ক্রোয়েশিয়ার দুব্রোভনিচ অঞ্চলে অবস্থিত এই নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ৩০ মিটার। মজার বিষয় হল, বৃষ্টি কিংবা বরফ গলা জলে পুষ্ট নয় এই নদী। বরং, এই নদীকে জল সরবরাহ করে ভূগর্ভস্থ কার্স্ট স্প্রিং। আড্রিয়াটিক সাগরে মেশার পরেও, সমুদ্রের গভীরে বেশ খানিকটা প্রবাহিত হয় ওম্বালা। যদিও সেই প্রবাহ দৈর্ঘ্য হিসাবে গণনা করা হয় না। এই নদীই দুব্রোভনিচ অঞ্চলের মানুষদের পানীয় জলের প্রধান উৎস।

রো নদী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ছোটো নদী হিসাবে পরিচিত এই নদী। মন্টানার নিকটে অবস্থিত জায়েন্ট স্প্রিংস জলপ্রপাত থেকে এই নদীর জন্ম। মাত্র ৬১ মিটার বা ২১০ ফুট প্রবাহিত হয়ে এই নদী গিয়ে মেশে মিসৌরি নদীতে। প্রাথমিকভাবে এই নদীটিকেই বিশ্বের ক্ষুদ্রতম নদীর তকমা দিয়েছিল গিনেস বুক। যদিও পরবর্তীতে নদীর সংজ্ঞা বদলে যাওয়ায় এই তকমা হারাতে হয় রো-কে।

লস প্যাটোস

কথাটার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘হাঁস নদী’। ডোমিনিকান রিপাবলিকের বারাহোনা প্রদেশের প্যারাইসো শহরের কাছে অবস্থিত এই নদীটির দৈর্ঘ্য ৬২ মিটার। নদীটি মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে। একসময় প্রচুর পরিমাণ হাঁস বসবাস করত এই নদী। সেখান থেকেই এমন অদ্ভুত নাম। তবে আজ শুধু রয়ে গেছে নামটুকুই। ক্রমাগত শিকারের ফলে লস প্যাটোস হাঁসের দেখা মেলে না আর।

ডি নদী

ক্ষুদ্রতম নদীর তালিকায় রো ছাড়াও জায়গা করে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি নদী— ডি। ডেভিলস লেক থেকে তৈরি হয় এই নদী প্রবাহিত হয় প্রশান্ত মহাসাগরে। তৈরি করে ১৩০ মিটার দীর্ঘ উপত্যকা। ওরেগন প্রদেশের এই ছোট্ট নদীতে প্রতিবছর মাছ ধরতে হাজির জন কয়েক হাজার মানুষ।

আরাবারি নদী

এতক্ষণ যে-সকল নদীর কথা হল, তাদের সকলের দৈর্ঘ্যই ২০০ মিটারের কম। এত ক্ষুদ্র নদীর উপস্থিতি ভারতের বুকে নেই। তার জন্য দায়ী এ-দেশের ভূপ্রকৃতিই। অন্যদিকে ভারতের ক্ষুদ্রতম নদী হিসাবে ধরে নেওয়া হয় আরাবারি নদীকে। রাজস্থানের আলোয়ার জেলায় অবস্থিত এই নদীর দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার। মরুভূমির দেশে অবস্থিত হলেও সারাবছর জলপ্রবাহ থাকে এই নদীতে।