পুরনোদের সন্ধানে: দীর্ঘজীবী গাছের রহস্যভেদ ও কোথায় পাওয়া যায়



আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি:  ২০০ বছর বয়সী সাইকামোর গ্যাপ ট্রি বা রবিন হুড ট্রি

ছবি: ২০০ বছর বয়সী সাইকামোর গ্যাপ ট্রি বা রবিন হুড ট্রি

  • Font increase
  • Font Decrease

সাইকামোর গ্যাপ ট্রি বা রবিন হুড ট্রি। ইংল্যান্ডের নর্থম্বারল্যান্ডে ক্র্যাগ লফের কাছে হ্যাড্রিয়ানের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাইক্যামোর গাছটির বয়স ছিল ২০০ বছরেরও বেশি। গাছটি দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় গাছগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯১ সালে ‘রবিন হুড: প্রিন্স অফ থিভস’ চলচ্চিত্রের একটি বিশেষ দৃশ্যে এই গাছটিকে দেখানো হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের ইংল্যান্ডের ‘ট্রি অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতে নেয় সাইকামোর গ্যাপ ট্রি ।

কিন্তু, অন্তত দুঃখের বিষয় হলো গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে গাছটি কেটে ফেলা হয়। এই ঘটনাকে কর্তৃপক্ষ নাশকতা (অ্যান অ্যাক্ট অব ভেন্ডালিজম)’ দেখছেন। এদিকে গাছটি কেটে ফেলায় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও বিষাদ ছড়িয়ে পড়েছে। সাইক্যামোর গ্যাপ ট্রি রোমান স্থাপত্যকে মনে করিয়ে দিত। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, শাখা- প্রশাখা থেকে আবারও পুনরুত্থিত হবে সাইক্যামো। কিন্তু তা আর হতে দেওয়া হলো না।

পৃথিবীর প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে, মাত্র ২৫-৩০টি মানুষের সহায়তা ছাড়াই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। এসব গাছ ১ হাজার বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত পৌঁছায়। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১০টি প্রজাতি ২ হাজার বছর বাঁচে। এই সুপারমর্টাল গাছগুলো মধ্যে শুধুমাত্র তিনটিই ত্রিশ হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।

স্কটল্যান্ডের পার্থশায়ারের ফোর্টিংগাল গ্রামে গির্জার বাগানে বেড়ে ওঠা ইয়ুকে গাছকে যুক্তরাজ্যের প্রাচীনতম জীবন্ত গাছ

ঐতিহাসিক ডকুমেন্টেশনের অনুপস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা কিভাবে জীবের বয়স বের করেন সে প্রসঙ্গে আসা যাক। গাছের বয়স মাপার ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান কৌশল রয়েছে।
প্রথম কৌশলটি হলো একের পর এক বৃদ্ধির রিং গণনা করা। এটি একটি স্টাম্প দিয়ে করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কাটা গাছের প্রয়োজন হয়। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ব্যতীত ট্রি-রিং বিজ্ঞানীরা (ডেনড্রোক্রোনোলজিস্ট) গাছগুলোকে কেটে ফেলেন না। এর পরিবর্তে তারা একটি মূল নমুনা বের করেন। ট্রি-রিং কোর নমুনাগুলো আইস কোরের সাথে তুলনীয়। এক্ষেত্রে ভেতরের স্তরগুলোকে অতীতের পরিবেশগত অবস্থার পুনর্গঠনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা জলবায়ু গবেষণার জন্য অমূল্য।

কিন্তু খুব কম গাছই সেই চাহিদা পূরণ করে। প্রায় সব গাছের কাঠ সময়ের সাথে সাথে ফাঁপা হয়ে যায়। সবচেয়ে অ্যান্টিসেপটিক পরিবেশেও শুধুমাত্র সবচেয়ে রজনীক হার্টউড শতাব্দী পরেও ক্ষয় হয় না। ফলে বৃক্ষ-রিং বিজ্ঞানীরা অন্যান্য বাধার সম্মুখীন হন। দৈত্যাকার সিকোইয়ার মতো কিছু প্রাচীন গাছকে খুব পবিত্র মনে করেন স্থানীয়রা । এতে বিজ্ঞানীদের মূল নমুনা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।

এক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদদের জন্য দ্বিতীয় কৌশল হতে পারে রেডিও-কার্বন ডেটিং। এই কাজ করার জন্য একটি ফাঁপা গাছ প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে গাছটির অভ্যন্তরীণ কাঠের গঠনে কিছু প্রাচীন উপাদান অবশিষ্ট থাকে যা পর্যালোচনা করা হয়। কার্বন-১৪ ডেটিং গাছগুলোর কোনো বৃদ্ধির রিং বা কাঠ তৈরি করে না।

তৃতীয় কৌশলটি আকার এবং আকৃতি পর্যালোচনা (রূপবিদ্যা)। গাছের আকার আকৃতি থেকে বয়স অনুমান করা হয়। নির্দিষ্ট উচ্চতায় ট্রাঙ্কের ব্যাসকে একটি নির্দিষ্ট ফ্যাক্টর দ্বারা গুণ করে আর্বোরিয়াল বয়স গণনা করা হয়। সূত্রটি কম-বেশি জটিল এবং নির্ভুলও হতে পারে। নির্দিষ্ট আবাসস্থলে প্রজাতির বৃদ্ধির অভ্যাস সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই পদ্ধতি জ্ঞানের স্তর এবং বৃক্ষ-রিং ডেটার সাথে সম্পর্কিত তথ্যের উপলব্ধতার উপর নির্ভর করে।

ফিরে আসি বিস্তারিত আলোচনায়। প্রাচীন ফ্লোরা (পুরানো গাছ) এবং মেগাফ্লোরার (বড় গাছ) পূজা করার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। তাদের পুড়িয়ে মারারও লম্বা ইতিহাস রয়েছে। ২০০ বছর বয়সী উদ্ভিদ সাইক্যামোর গাছটিও তারই ভুক্তভোগী।

বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের আরেকটি প্রজাতি ইউরোপীয় ইউ। এটি গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রজাতি। বহু শতাব্দী ধরে শেখা ব্রিটিশদের সনাতনী প্রচেষ্টা এর বয়স নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।

ইয়ু চিরসবুজ গাছ হিসাবে পরিচিত। ইয়ুকে অনন্তজীবন এবং পুনর্জন্মের প্রতীক মানা হয়। প্রাক-খ্রিস্টীয় সময়ে এটি পবিত্র গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময়ে ইয়ুকে প্রাচীন সেল্টদের জন্য মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের প্রতীক হিসাবে মানা হতো। এই ধারণা খ্রিস্টীয় যুগেও অব্যাহত ছিল। বহু শতাব্দী ধরে আরাধনায় এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ইয়ু গাছের কাণ্ড ব্যবহার করা হতো। আজও প্রাচীন এই ইয়ু গাছগুলো প্রায়শই চার্চইয়ার্ডের সাথে যুক্ত।
প্রাচীন এই গাছগুলো পৃথিবীর কোন এলাকায় পাওয়া যায়?

সাধারণত চার্চইয়ার্ড, কবরস্থান, আর্বোরেটা এবং ম্যানর বাগানগুলোতে এই চিরসবুজ ল্যান্ডমার্ক দেখার সুযোগ হয়। অথবা বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চল বা পাহাড়ী আবাসস্থলগুলোতেও দেখা মিলতে পারে। গির্জা, উপাসনালয় এবং মন্দিরের মতো পবিত্র স্থানগুলোতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এরা বেঁচে থাকে। পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, ইরান, ইথিওপিয়া, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং মেক্সিকো জুড়ে এদের পাওয়া যায়। জয়া শ্রী মহা বোধি, শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুরায় বৌদ্ধ তীর্থস্থানের কেন্দ্রে ফিকাস দেখা যায়। সম্ভবত একই লোকেলে একই জার্মপ্লাজমের ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে প্রাচীন জীবন্ত উদ্ভিদ এটি।

গ্রেট বেসিন ব্রিস্টেলকোন পাইনকে প্রাচীনতম জীবন্ত গাছ বলে মনে করা হয়

গ্রেট বেসিন ব্রিস্টেলকোন পাইন গাছ পাওয়া যায় নিউ মেক্সিকোর এল মালপাইস (লাভার ক্ষেত্র), অন্টারিওর নায়াগ্রা এসকার্পমেন্ট (ডলোমাইটের ক্লিফস) বা নিউ জার্সির পাইন ব্যারেন্স (বালির বিস্তৃতি) এর মতো সাবমার্জিনাল আবাসস্থলগুলোতে। পূর্ব উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘজীবী এই ব্রিস্টেলকোন পাইন গাছ (টাক সাইপ্রেস) জলাভূমি এবং ব্ল্যাকওয়াটার নদীতে জন্মায়। সবচেয়ে বড় গাছটি উত্তর ক্যারোলিনার ব্ল্যাক রিভারের ব্যাকওয়াটার অংশে জন্মে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত টাক সাইপ্রেসটির বয়স প্রায় ২ হাজার ৬০০ বছরে পৌঁছেছে।

জিমনোস্পার্ম (নগ্ন বীজী/ ফুলবিহীন গাছ) আস্তে আস্তে বড় হয়। অ্যাঞ্জিওস্পার্ম (ফল সহ ফুলের গাছ) এর চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। পাইনের জন্য আনুমানিক বয়স সীমা ৫ হাজার বছর। কিছু প্রজাতির জন্য সেটা ৮০০ বছর প্রায়। এনজিওস্পার্মের মধ্যে, বয়সে চ্যাম্পিয়ন হল আফ্রিকান বাওবাব যা প্রায় ২ হাজার ৫০০ বছর ধরে বেঁচে থাকতে সক্ষম। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাচীনতম অনেক গাছ ভেঙে গেছে।
জিমনোস্পার্মের মধ্যে রয়েছে জিঙ্কগো (একটি প্রজাতি) এবং শঙ্কু প্রজাতি। আরও রয়েছে ইয়ু, পাইন, ফিয়ার, স্প্রুস, সিডার, রেডউডস, সাইপ্রেস, পোডোকার্পস এবং অ্যারোকেরিয়াস। সাইপ্রেস পরিবারে সর্বাধিক হাজার বছরজীবী সদস্যও রয়েছে।

কনিফারগুলো সর্বাধিক দীর্ঘায়ু অর্জন করে যখন পরিবেশ ঠান্ডা এবং শুষ্ক, বা গরম এবং শুষ্ক, বা খাড়া এবং উন্মুক্ত, বা উচ্চ উচ্চতায়, বা পুষ্টির অভাব হয়। গ্রেট বেসিন ব্রিস্টেলকোন পাইন (সবচেয়ে দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ) উপরের সবগুলো পরিবেশেই টিকে থাকে। এদের মধ্যে কিছু গাছের বয়স ৪ হাজার ৯০০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। ট্রি-রিং বিজ্ঞানী এডমন্ড শুলম্যান ১৯৫০ এর দশকে ‘প্রতিকূলতার অধীনে দীর্ঘায়ু’ নামের একটি উপযুক্ত ম্যাক্সিম তৈরি করেছিলেন। সেখানেই পাইন সম্পর্কে এই তথ্য পাওয়া যায়।

আফ্রিকার বাওবাব গাছ (সাভানা ল্যান্ডস্কেপে বসবাসকারী প্রাণীদের ছায়া প্রদান করে)

জলবায়ু পরিবর্তন কি এই সুপারমর্টালদের প্রতিকূলতার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেবে?

ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা প্রকৃতপক্ষে ব্রিস্টেলকোনের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। তবে সম্প্রতি উত্তাপ, খরা এদের মৃত্যুর ঠেলে দিচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।

প্রতিকূল বাসস্থান ছাড়াও এদের দীর্ঘ জীবনের পেছনে শক্তিশালী রাসায়নিক সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী কনিফারগুলো প্রচুর রজন তৈরি করে। এগুলো টেরপেনের মতো উদ্বায়ী, সুগন্ধযুক্ত হাইড্রোকার্বন যা ছত্রাক এবং পোকামাকড়ের আক্রমণকে প্রতিহত করে। গাছগুলো শুষ্কতা এবং ঠান্ডা সহ্য করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী চাপে কনিফারগুলো ধীরে ধীরে আরও রজন মজুত করে। এই ধীরগতির বৃদ্ধি আরও জৈব পলিমার (লিগনিন) তৈরি করে যা উদ্ভিদকে আরও স্থিতিস্থাপক করে তোলে।

নিউজিল্যান্ডের কৌরি গাছ (শুধু পুরানোই নয়, বিশালও)

হাজার বছর ধরে টিকে থাকে এমন উদ্ভিদ দেখার সেরা জায়গা কোথায়?

পশ্চিম উত্তর আমেরিকা অঞ্চল (বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া) হতে পারে দীর্ঘায়ু উদ্ভিদদের উল্লেখযোগ্য হটস্পট। তাসমানিয়াও তাই। হুওন পাইন হলো তাসমানিয়ার স্থানীয় প্রজাতির মধ্যে একটি হাজারবর্ষী উদ্ভিদ।

দীর্ঘজীবী সব জীবই উদ্ভিদ নয়। দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকা সমস্ত উদ্ভিজ্জ রূপকে জনপ্রিয়ভাবে বৃক্ষ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় না। জলবায়ু পরিবর্তন চলতে থাকলে, মেগাফ্লোরা বিরল হয়ে উঠবে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এসব জীবের পরবর্তী প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। তাহলেই সাইকামোর গ্যাপ ট্রির মতো অন্যান্য বহুবর্ষজীবীদের কেটে ফেলার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখতে হবে না।

সূত্র: বিবিসি

পৃথিবীকে ছাড়িয়ে ‘স্বর্গে জমি’ বিক্রি চলছে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমরা অনেক কিছুই দেখতে পাই, শুনতে পাই। এইতো কয়েক মাস আগে চাঁদে জমি কেনার একটি বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে এবার আর চাঁদে নয়, চাইলে 'স্বর্গে জমি' কিনতে পারবেন! আসলেই কী তাই?

চলতি সপ্তাহে মেক্সিকোর একটি গির্জা ‘স্বর্গে জমি বিক্রি’ করছে বলে- এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য এর আগে একজন এই বিষয়টি নিয়ে টিকটকে একটি ভিডিও ছেড়েছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, এমন বিষয় প্রচার পর্যন্তই তারা সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং জমির প্লট বিক্রি করে লাখ লাখ ডলার সংগ্রহও করেছে চার্চটি। 

এ নিয়ে অনেক মূলধারার গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এসব খবরে বলা হয়েছে, ইগলেশিয়া দেল ফাইনাল দে লস গির্জা ‘স্বর্গে একখণ্ড জমি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে।

আসলে ব্যঙ্গ করে ইভানজেলিক্যাল গির্জার নাম করে এই ‘স্বর্গে জমি বিক্রি’র কথা বলা হচ্ছে। যাঁরা কাজটি করেছেন, তাঁরা এর মাধ্যমে গির্জার একশ্রেণির ধর্মগুরুর প্রতারণার কথা তুলে ধরতে চেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংগঠনের পেজটি বেশ জনপ্রিয়।

তারা বলছে, প্লটের প্রতি বর্গমিটারের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার অর্থ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৭৫৮ টাকা। আগ্রহী ক্রেতারা আমেরিকান এক্সপ্রেস, অ্যাপল পে ব্যবহার করে অর্থপ্রদান করতে পারেন বা পেমেন্ট প্ল্যান অ্যাপের মাধ্যমেও এই অর্থ দেওয়া যাবে।

ওই গির্জার ধর্মযাজককে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মযাজক ২০১৭ সালে স্বর্গে প্লট বিক্রয়ের বিষয় নিয়ে ঈশ্বরের সাথে কথা বলেছেন। তখন তাকে ঈশ্বর ওই প্লট বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন।

এ বিষয়তি নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পরে যায় সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই তাদের নিজেদের অভিমত তুলে ধরেছেন।

একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, "আমি আশা করি ধর্মযাজক আমাকে স্বর্গে কিছু জমি ক্রয় করা সুযোগ দেবেন। আমি প্রথমে তাকে সেখানে পাঠাব এরপর তাকে ফেসটাইমের মাধ্যমে আমাকে কল দিতে বলব যাতে আমি কি কিনতে যাচ্ছি তা দেখতে পারি।"

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমার জানা দরকার, কারা জমি দিচ্ছে, যাতে আমি তাদের স্বর্গের জমিতে মূল্যছাড়ের অফার দিতে পারি।’

তৃতীয় আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ঈশ্বরের নামে এমন চুরির কাজ শয়তানের কাজ।’

;

টাকার বান্ডিল দিয়ে তৈরি ‘কার্পেট’, হাঁটলেন প্রেমিকাকে নিয়ে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধনী ব্যক্তিরা তাদের অর্থসম্পদ দেখানোর জন্য কতই কিছু না করে। মাঝেমধ্যে তারা এমন কিছু কাজ করে যা শেষ পর্যন্ত স্রেফ পাগলামির পর্যায়ে চলে যায়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক নিন্দা কুড়িয়েছে। তারা এমন কাজকে 'জঘন্য' বলেও অভিহত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি রাশিয়ান এক উদ্যোক্তা তার প্রেমিকার হাত ধরে তাকে টাকার বান্ডিলের উপর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যদিও এই ঘটনাটি অনেক পুরাতন। কিন্তু নতুন করে আবার ব্যবহারকারীদের সামনে এলে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছিলেন রাশিয়ান উদ্যোক্তা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সের্গেই কোসেনকো। তিনি ‘মিস্টার থ্যাংক ইউ’ নামেও পরিচিত। ভিডিও তৈরি এবং প্রেমিকাকে ‘রাজকীয় অভ্যর্থনা’ দিতেই নগদ টাকার বান্ডিল দিয়ে ‘কার্পেট’ তৈরি করেছিলেন তিনি।

ভিডিওতে দেখা যায়, কোসেনকোর প্রেমিকা একটি হেলিকপ্টার থেকে নেমে তার হাত ধরে নগদ টাকার স্তূপের ওপর দিয়ে হাঁটছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনটি ‘প্রেম-পূর্ণ ইমোজি’ দেয়া ছিল।

কার্পেট হিসাবে ব্যাঙ্কনোট ব্যবহারের এমন ভিডিও দেখে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকেই আবার এই দম্পতিকে "ধনের কুৎসিত প্রদর্শন" বলে আখ্যায়িত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নোটগুলো জাল।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ''আপনি অনেক ধনী হতে পারেন, কিন্তু এভাবে টাকা নষ্ট করাটা উচিত না। এই টাকা দিয়ে আপনি শত শত পরিবারকে সাহায্য করতে পারতেন এবং হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার জোটাতে পারতেন।''

আরেকজন বলেছেন, ''এভাবে টাকার অপমান করা লজ্জাজনক।''

উল্লেখ্য, সের্গেই কোসেনকো ইনস্টাগ্রামে নিজেকে একজন গায়ক, উদ্যোক্তা ও ক্রিয়েটর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমের এই প্ল্যাটফর্মে তার চার কোটির বেশি ফলোয়ার রয়েছে।

;

রূপময় বর্ষায় খুলনা নগরীর সৌন্দর্য



ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলছে বর্ষাকাল। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঋতু বর্ষা। খুলনায় তীব্র তাপদাহের পর টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নগরী যেন এক নতুন রূপে সেজে উঠেছে। প্রতিটি গাছ, পাতা আর ফুল যেন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। রাস্তাঘাট, পার্ক আর বাগানগুলো সবুজে ভরে উঠেছে।

প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই আপনার চোখ আটকে যাবে সেই সব রঙ বেরঙের ফুলে। বৃষ্টির জলে ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে হয়ে উঠেছে সবকিছু, যা মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে তুলছে।


গাছের পাতায় জমে থাকা জলবিন্দুগুলো রোদ্দুরে রঙধনুর মতো ঝিলমিল করছে। ফুটপাতের ধারে ধারে ফুটে ওঠা রঙ বেরঙের ফুলগুলি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক একটি ছবিতে পরিণত হয়েছে। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ সব রঙ মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নীল দৃশ্য। গাছের নিচে জমে থাকা জলকাদায় শিশুদের কাদামাখা খেলাও নতুন রঙ যোগ করেছে নগরীর এই নবরূপে।

মানুষের মনে এই পরিবর্তন যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে একটু সময় বের করে মানুষজন বিকেলে পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছে। শিশুদের হাসি-খুশি মুখ আর তরুণ-তরুণীদের আড্ডায় মুখরিত চারপাশ। প্রিয়জনের সঙ্গে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছে তারা।


নগরীর এই নবরূপ শুধু মানুষকে নয়, পশু-পাখিকেও নতুন উদ্যমে ভরিয়ে তুলেছে। গাছের ডালে ডালে পাখির কলরব আর ভেজা ভেজা গন্ধ মিশে পরিবেশকে আরও মধুর করে তুলেছে। পাখিরা যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, তাদের ডাকে প্রাণের সুর বাজছে।

নগরীর প্রতিটি কোনে এখন নতুন কাহিনী। পুরনো দেয়ালেও যেন নতুন রঙের ছোঁয়া লেগেছে। বৃষ্টির পরে সেই মাটি ভেজা গন্ধে মনে হয় যেন এক টুকরো গ্রাম উঠে এসেছে শহরের বুকে।

বৃষ্টি যে খুলনা মহনগরীর এমন পরিবর্তন এনে দিতে পারে, তা হয়তো অনেকেই ভাবেনি। এই নবরূপ শুধু নগরবাসীর নয়, পুরো প্রকৃতির এক মিলিত উৎসব। এ যেন এক নতুন সকাল, এক নতুন শুরু। প্রতিদিনের ব্যস্ততায়, ধুলো-ময়লার মাঝে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য এখন আবার ফিরে এসেছে, যা দেখে মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।


প্রকৃতির এই অপরূপ রূপের প্রশংসা করতে করতে সময় কেটে যায় নিমিষেই। নগরী যেন নতুন করে বাঁচতে শিখেছে। ফের শুরু হয়েছে তাপদাহ। তারপরও দুদিনের এই বৃষ্টি শেষে নগরী যেন রূপে রঙে আরও বেশি সুন্দর, আরও বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে সবার কাছে।

;

শুভ জন্মতিথি মহীয়সী কবি সুফিয়া কামাল



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কবি সুফিয়া কামাল

কবি সুফিয়া কামাল

  • Font increase
  • Font Decrease

সুফিয়া কামাল কেবল একটি নাম নয়, এ যেন পরিবর্তনের জোয়ার। বাঙালি নারীর অন্ধকার জীবনে অধিকারের একটি মশাল আলোকিত ব্যক্তি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। এখনকার নারীবাদী দেখলে অধিকাংশ মানুষ কেমন আতঙ্ক প্রকাশ করে নাক সিটকায়! তবে প্রকৃত নারীবাদী, যারা হাজার হাজার নিপীড়িত নারীকে শোষণ ও অত্যাচার থেকে বাঁচিয়ে স্বাধিকারে সোচ্চার করতে সাহায্য় করেছেন তেমন নারীবাদীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি সুফিয়া। নারী প্রগতি আন্দোলনের অন্যতম ভিত্তি গড়ে এবং একাধারে আন্দোলনের অংশ ছিলেন তিনি। অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই মহীয়সী নারীর জন্মতিথি আজ।

১৯১১ সালের ২০ জুন (১০ আষাঢ় ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের দেশের ই ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ মহীয়সী এই নারীর ১১৩ তম জন্মবার্ষিকী। ‘জননী সাহসিকা’ হিসেবে খ্যাত কবি সুফিয়ার ছোটবেলা কেটেছিল তার মাতুতালয়ে। করি জন্মের পরপরই তার বাবা সাধক অনুসারী হয়ে সংসার ত্যাগ করেন। তারপর থেকে মা সাবেরা খাতুনের সঙ্গে তার নানাবাড়ি শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারে থাকার সময়ই তার হাতেখড়ি হয়। নারীশিক্ষার প্রথা প্রচলিত না থাকায় অন্দরেই অন্য শিশুদের সাথে তিনি উর্দু, আরবি, ফারসি ভাষা শিখতেন। পরবর্তীতে একটু বড় মায়ের কাছেই তিনি বাংলা শিখতে শুরু করেন। কে জানতো,পরবর্তীতে এই বাংলার সাহিত্য তারই হাত ধরে বিশাল এক যাত্রা সম্পন্ন করবে!

রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ায় তার ব্যক্তিত্ব ছিল বিশেষ। মাত্র ৭ বছর বয়েসে তিনি বেগম রোকেয়ার সাক্ষাৎ পান কলকাতায়। তবে পারিবারিক কারণেই সুযোগ পেয়েও বেগম রোকেয়ার ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল’ স্কুলে ভর্তি হওয়া হয়নি। তবে স্কুলে কখনো যাওয়া না হলেও ছোটথেকেই তার মেধা সুপ্ত রাখার উপায় ছিল না। যদিও মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায় মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে। তবে স্বামীর সহযোগিতায় বাংলা সাহিত্য চর্চার পথ সুগম হয় কবির। স্বামী নেহাল ছিলেন একজন নারীশিক্ষা সমর্থক এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তাচেতনাসম্পন্ন ব্যক্তি। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েও তিনি স্ত্রী সুফিয়াকে পত্রিকায় লেখা ছাপানোর সুযোগ করে দিয়ে সাহায্য করেন।      

কবি সুফিয়া কামাল

১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা বাসন্তী ছাপা হয় সওগাত পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায়। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সাঁঝের মায়া, কেয়ার কাঁটা, মায়া কাজল, মন ও জীবন, প্রশস্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, ইতল-বিতল, দিওয়ান, সোভিয়েতে দিনগুলি, অভিযাত্রিক, মৃত্তিকার ঘ্রাণ, একাত্তরের ডায়েরী, নওল কিশোরের দরবারে, একালে আমাদের কাল- সহ আরও অসংখ্য সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেছেন তিনি। কলকাতায় থাকার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র, বেগম রোকেয়া নানান কিংবদন্তী সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে আসেন। তার চিন্তা-চেতনা এবং সাহিত্যের অনুপ্রেরণা হিসেবে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান তিনি।

জীবনের মাঝামাঝি স্বামী নেহাল হোসেনের হঠাৎ মৃত্যুতে (১৯৩২ সাল) বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন কবি সুফিয়া। তখন তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা এবং বেগম পত্রিকার সম্পাদনা করতে শুরু করেন একাধারে। এর কিছু বছর পর তিনি ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন কবি এবং এখানে সাহিত্যচর্চা ও নারীস্বার্থে কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমনকি ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধেও যান।

কবি সুফিয়া কামাল

তার গঠিত নারী সংগঠন ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে সমাবেশ ও মিছিরে অংশগ্রহণ করে, যার মূলহোতা ছিলেন কবি সুফিয়া নিজেই। মুক্তযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের নজর ফাঁকি দিয়ে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে গেছেন। সুযোগ পেয়েও দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে, মৃত্যুর সম্ভাবনাকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে অনবরত ষোলআনা দেশপ্রেমের প্রমাণ দিয়ে গেছেন।        

যুদ্ধের পরও তিনি আমৃত্যু বাংলা সাহিত্য এবং নারী অধিকার উন্নতির লক্ষ্যে সংগ্রাম ও সাহায্য করে গেছেন। বাঙালি আজীবন মহীয়সী এই নারীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। যতদিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য রয়েছে,  কবি সুফিয়া কামালের কৃতিত্ব অমলিন রয়ে যাবে।

;