বঙ্গদেশে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হলো যেভাবে



তুষার কান্তি সরকার
বঙ্গদেশে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হলো যেভাবে

বঙ্গদেশে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হলো যেভাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

সনাতন ধর্মশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ-কার’ বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা। যে দেবী অগম্যা বা যাকে সহজে পাওয়া যায় না তিনিই মা দুর্গা। দুর্গম নামক দৈত্যকে দমন করে মা দুর্গা নাম পান। হিন্দু ধর্মমতে পরমাপ্রকৃতি স্বরূপা মহাদেবী, মহাদেবের পত্নী। মার্কেণ্ডেয় পুরাণের মতে, মা মহামায়া, পরমবিদ্যা, নিত্যস্বরূপা, যোগনিদ্রা। মা জন্মমৃত্যু-রহিতা।

মার্কে-য় পুরাণ মতে মহিষাসুর নামক অসুর স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গ অধিকার করলে, দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মা এর প্রতিকারের জন্য মহাদেব ও অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হন। মহিষাসুর পুরুষের অবধ্য ছিলেন বলে– বিষ্ণু দেবতাদের পরামর্শ দেন যে, প্রত্যেক দেবতা নিজ নিজ তেজ থেকে একটি নারীমূর্তি সৃষ্টি করবেন। এরপর মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে স্তন, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙুল, বসুদের তেজে হাতের আঙুল, কুবেরের তেজে নাসিকা, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রু, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজে শিবারূপী দুর্গার সৃষ্টি হয়। এরপর দেবতারা তাকে বস্ত্র ও অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তোলেন।


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা মহাশক্তিরই প্রতীক। সেই মহাশক্তিকেই তারা প্রতিমার মধ্য দিয়ে চিন্ময়ী ব্রহ্মশক্তিকে দর্শন করে। তাই এই পূজা প্রতিমাকে পূজা করা নয়, প্রতিমাতে পূজা করা। যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন, চিকের আড়ালে দেবী সব সময়ই রয়েছেন। চিকের আড়ালে যিনি আছেন, তিনি মহাশক্তি দেবী দুর্গা। শাকম্বরী অবতারে তিনি দুর্গম নামের মহাশুরকে বধ করে দুর্গা নামে প্রসিদ্ধা হয়েছেন। আবার ভক্তদের অনুভবে ‘চিকের’ আড়ালে থাকা মহাশক্তি ভক্তদের দুর্গতি নাশ করেন, তাই তিনি দুর্গা।

আশ্বিনের শুক্লাষষ্ঠী থেকে শুক্লানবমী পর্যন্ত দেবী দুর্গার পূজা হয়ে থাকে। দেবীর সঙ্গে যুক্ত হয় আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্যাবিজ্ঞানদায়িনী দেবী সরস্বতী, সর্বৈশ্বর্য প্রদায়িনী দেবীলক্ষ্মী, সর্বসিদ্ধিদাতা গণেশ, বলরূপী কার্তিক এবং ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন ত্যাগ ও বৈরাগ্যের মূর্তবিগ্রহ দেবাদিদেব মহাদেব। এ যেন একই সঙ্গে শক্তি, জ্ঞান, ঐশ্বর্য, সিদ্ধি, বল ও বৈরাগ্যের এক অপূর্ব সমাবেশ।

ষষ্ঠীতে দেবীর ষষ্ঠাদিকল্প অর্থাৎ আবাহন, বোধন, আমন্ত্রণ, অধিবাস প্রভৃতি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। যষ্ঠীতে সন্ধ্যাকালে দেবীর বোধন হয়। শাস্ত্রমতে, দেবীর বোধন হয় বিল্ববৃক্ষে বা বিল্বশাখায়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিমায় দেবীর অর্চনা করা হয়ে থাকে। সপ্তমীতে অন্যতম অনুষ্ঠান নবপত্রিকা প্রবেশ কদলীবৃক্ষসহ আটটি উদ্ভিদ এবং জোড়াবেল একসঙ্গে বেঁধে শাড়ি পরিয়ে বধূর আকৃতির মতো তৈরি করে দেবীর পাশে স্থাপন করা হয়, প্রচলিত ভাষায় একে কলাবউ বলে। অষ্টমীতে বিশেষ অনুষ্ঠান- অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিতে আটচল্লিশ মিনিটে দেবীর বিশেষ পূজা ‘সন্ধিপূজা’। অষ্টমী তিথিতে কোনো কুমারী বালিকাকে পূজা করা হয় যাকে বলা হয় কুমারী পূজা।


নবমীতে হোমযজ্ঞের দ্বারা পূজার পুণ্যাহৃতি দেয়ার রীতি। দশমী তিথিতে হয় দেবীর বিসর্জন। এই দশমী তিথি বিজয়াদশমী নামে খ্যাত। রামায়ণ থেকে জানা যায়, পিতার আদেশ পালন করার জন্য রাজা দশরথের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীরামচন্দ্র স্ত্রী সীতা ও অনুগত ভাই লক্ষণকে নিয়ে পঞ্চবটী বনে যান। রাক্ষসরাজ রাবণের বোন সূর্পনখা শ্রীরামচন্দ্রের রূপে মুগ্ধ হয়ে তার ভালোবাসা চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। সূর্পনখা শ্রীরামচন্দ্রের ক্ষতি করতে গেলে শ্রীরামচন্দ্র তার নাক-কান তীর-ধনুক দিয়ে কেটে দেন। বোনের অপমানের প্রতিশোধ নিতে দুর্মতি রাবণ ছদ্মবেশে সীতাকে চুরি করে আটকে রাখেন অশোক কাননে। শ্রীরামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধার করার জন্য শক্তিদায়িনী দেবীদুর্গার পূজা করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রয়োজনীয় সবকিছু জোগাড় করে শ্রীরামচন্দ্র পূজা করতে বসেন। একে একে অঞ্জলি দেয়ার সময় একশ আটটা নীলপদ্মের জায়গায় একশ সাতটা নীলপদ্ম পান। আরেকটা নীলপদ্ম না পেলে পূজা থেকে যাবে অসম্পন্ন। সীতা উদ্ধারও হবে না। তাই তো নিরুপায় শ্রীরামচন্দ্র নিজের চোখ দিয়ে পূজা সম্পন্ন করতে উদ্যত হন, কেননা শ্রীরামচন্দ্রের চোখ পদ্মের মতো ছিল বলে তার আরেক নাম ছিল পদ্মলোচন। মা দুর্গা শ্রীরামচন্দ্রের ভক্তিতে খুশি হয়ে চোখ তুলতে বাধা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। দেবীদুর্গার আশীর্বাদে শ্রীরামচন্দ্র রাক্ষসরাজ রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করেন।

অধুনা বাংলাদেশের তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন। যদিও বাংলায় দুর্গোৎসবের ইতিহাস যে কংসনারায়ণের সময়কাল থেকে শুরু নয় তা প্রায় হলফ করেই বলা যায়। কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব করেছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে। খুব সম্ভবত, আট কি নয় লাখ টাকা ব্যয়ে কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব করে সে যুগের জনমানসে দুর্গাপূজার সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারও আগেকার সাহিত্যে ও অন্যান্য সূত্রে বাংলায় দুর্গাপূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর প-িতগণ ধারণা করেন, বর্মণসেন শাসনামল (১১-১৩ শতক) থেকে বঙ্গদেশে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়।

ব্রহ্মই আদ্যাশক্তি জগজ্জননী দেবী দুর্গা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অত্যাচারিত জীবের দুর্গতি হরণ করার জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব। দেবতাদের সম্মিলিত তপস্যা ও জ্যোতি থেকে সৃষ্ট আদ্যাশক্তি মহামায়া দুর্গা নাম ধারণ করে মর্ত্যলোকে আগমন করেন। তান্ত্রিক সাধকরা দেবী দুর্গাকে মাতৃজাতির প্রতীক করুণাময়ী বলে তাকে নারীমূর্তিতে কল্পনা করেছেন। আদ্যাশক্তি মহামায়া জগজ্জননী দেবী দুর্গা কখনো ত্রিভুজা, কখনো অষ্টভুজা, আবার কখনো দশভুজা হিসেবে আবির্ভূত হন। সনাতন ধর্মমতে, বস্তুত যিনি ব্রহ্ম, তিনিই শক্তি। তিনিই দেবী দুর্গা। দুর্গাপূজা মূলত শক্তির আরাধনা। এর দর্শনটি হলো, দুর্বলের কোনো আত্মজ্ঞান হয় না, জীবনে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য চাই শক্তির সাধনা। আর ব্রহ্ম পরিপূর্ণতা লাভ করেন শক্তিতে। শক্তির পরিপূর্ণতার রূপায়ণ ঘটে জগৎসৃষ্টিতে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

   

ছেলেরা খাবার দেয় না, ভিক্ষার থলি হাতে পথে পথে জাহানারা!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাবা, গতবছর কোরবানির ঈদে গরুর গোশত খাইছিলাম। এর পর আজ পর্যন্ত একটা কুডি (টুকরো) খাইতারলাম না। আগামী কোরবানির অপেক্ষায় তাকিয়ে আছি। এইবার রোজার ঈদেও একটু ভালো খাওন (খাবার) পাইনি। মাইনসে কিছু সেমাই দিছিলো কিন্তু জন্ম দেয়া ছেলেরা আমারে কিছুই দেয় না কোনো সময়ই। ঈদেও কিছু দিলো না। তারা দিলে মনডায় শান্তি লাগতো। তবুও তারা সুখী হউক’!

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবং আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষক জাহানারা (৬৫)।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কর্মে অক্ষম হয়ে ২০ বছর ধরে ভিক্ষার থলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করছেন বৃদ্ধ জাহানারা। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে শরীর। একটি ব্যাগ আর লাঠি ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে চলেছেন কটিয়াদী বাজারের পথে পথে! এই দোকান থেকে ওই দোকান!

জাহানারার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিয়ে হওয়ার দুই বছর পর থেকে টেনেটুনে চলেছিল সংসার তাদের। স্বামী অলস প্রকৃতির ও ভবঘুরে হওয়ায় কোনো সময়ই সংসারে সচ্ছলতা আসেনি।

অভাবের কারণে একসময় তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে স্বামী সফর উদ্দিনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। বয়সের কারণে জাহানাকে মানুষ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করেন জাহানারা, যা আজ অব্দি চলছে। ২০ বছর পার হতে চললো।

জাহানারা, সফর উদ্দিন দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা সবাই যার যার নিজেদের পরিবার নিয়ে সংসার করছে। কেউই মা-বাবার খোঁজ নেয় না। মেয়েরা মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিলেও ছেলেরা একদমই নেয় না জানালেন জাহানারা।

ছেলেরা খাবার দেয় না! ভিক্ষার ঝুলি হাতে পথে পথে ভিক্ষা করেন জাহানারা, ছবি- বার্তা২৪.কম

জাহানারার নামে একটু জমি ছিল। সেটুকুও ছেলেরা লিখে নিয়েছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাবা-মা ঝোপঝাড় সংলগ্ন কবরস্থানে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। বেঁচে থাকার পরেও কবরস্থানই যেন হলো বাবা-মায়ের হলো আপন ঠিকানা! বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে আর রাত হলেই শিয়াল ও বন্য প্রাণীর শব্দে রাত কাটে তাদের।

তার সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, গত কোরবানির ঈদে মানুষের দেওয়া গরুর মাংস খেয়েছেন। এরপর ইচ্ছে হলেও কাউকে বলার ও কিনে খাওয়ার কোনোটাই সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। মাঝে-মধ্যে মানুষের দেওয়া মুরগি পেলেও অন্য মাংস তাদের জন্য স্বপ্ন হয়েই আছে। সে কারণে সারাবছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার কটিয়াদী বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন জাহানারা। পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। বয়স্ক ভাতা যা পান, তা দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সপ্তাহের খাবার খরচ মেটাতে হয়।

বৃদ্ধ জাহানারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনটা ছিঁড়া কাপড় দিয়ে বছর পার করছি। এবার ঈদে একটি কাপড়ও পাইনি। ফেতরার দানের আড়াইশ টাকা শুধু পাইছি। মানুষ মাঝে-মধ্যে খাইতে দ্যায়। বাকি দিনগুলো কেমনে যে পার করি, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না কিছু'!

 

 

;

বিলের মাঝে উড়োজাহাজ! দেখতে আসেন সবাই!



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুর (কাপাসিয়া) থেকে ফিরে: দূর থেকে দেখে হবে, ধানের জমির মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, এক উড়োজাহাজ। কাছে গেলেই দেখা যাবে, কাগজ দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজের আদলে তৈরি একটি ডিজাইন।

ভুল ভাঙবে তখন, যখন ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, আসলে এটি একটি রেস্টুরেন্ট, উড়োজাহাজ নয়! গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব খামের গ্রামের রফিক নামে এক তরুণ তৈরি করেছিলেন এই ‘বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট’টি।

কয়েক বছর আগে এই রেস্টুরেন্ট-মালিক প্রবাসে চলে গেলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও এটিকে একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ছুটে আসেন। উড়োজাহাজ আকৃতির এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি করা এটিতে রয়েছে জানালা ও একটি দরজা। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে শিশুদের আনাগোনাই বেশি। বড়দের হাত ধরে এসে এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তারা।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধানক্ষেতের মাঝে উড়োজাহাজ আকৃতির রেস্তরাঁ । নাম- 'বিমান বিলাশ রেস্টুরেন্ট' , ছবি- বার্তা২৪.কম

এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এটি দেখার জন্য অনেক মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও আশপাশের জায়গাগুলোও বেশ মনোরম। প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। সে কারণে সবসময়ই লোকজন এখানে বেড়িয়ে যান।

প্রথম যখন উড়োজাহাজ আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়, তখন এটি দেখতে আরো বেশি সুন্দর ছিল। রাতেও মানুষজন আসতেন। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এটি দেখে আসল উড়োজাহাজে চড়ার স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

;

শিশু রায়হানের শ্রমেই মা-নানার মুখে দুমুঠো ভাত ওঠে!



শাহজাহান ইসলাম লেলিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার বাবা মারা গেছেন দুই বছর আগে! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে আর মাকে চাচারা বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার নানা বৃদ্ধ মানুষ। নানী মারা গেছে। আমরা তার বাড়িতে থাকি।

আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আর আমি স্কুল শেষে হাসপাতালে এসে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করি। আমার টাকা দিয়ে চাল কিনি। আমার মায়ের টাকা দিয়ে তরকারি কিনি, বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া রায়হান ইসলাম।

রায়হান ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের মৃত আবু বক্কর আলীর ছেলে ও স্থানীয় নিতাই ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রায়হানকে খেলনা ও বেলুন বিক্রি করতে দেখা যায়। এসময় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনেরা তাদের সন্তানদের আবদার পূরণ করতে রায়হানের কাছ থেকে এসব খেলনা কিনছেন।

দারিদ্র্যের কষাঘাতে বাস্তবতা যেন বুঝতে শিখেছে রায়হান। প্রচণ্ড দাবদাহে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও রোদে পুড়ে মায়ের আর বৃদ্ধ নানার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে যেন রায়হানের চেষ্টার শেষ নেই।

খেলার বয়সে খেলনা আর বেলুন হাতে ছোটে বিক্রি করতে। মাঝে-মধ্যে কোনো ক্রেতা না থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেলনা আর বেলুন বিক্রি করে রায়হান। খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও বাধ্য হয়ে এই বয়সে ছুটতে হয় পথেঘাটে। দারিদ্র্য রায়হানকে ঠেলে দেয় কাঠফাঁটা রোদের জগতে।

খেলার বয়সে খেলনা বিক্রি করতে ছোটে অসুস্থ মায়ের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে, ছবি: বার্তা২৪.কম

রায়হান বলে, আমি পড়ালেখা করে বড় কিছু করে আমার মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই! আমাদের খবর কেউ নেয় না। আমার মা অসুস্থ! মানুষের বাসায় বেশি কাজও করতে পারে না। আমি এগুলো বিক্রি করে রাতে বাজার নিয়ে যাই।

আমাদের কেউ সাহায্য করে না! আমি যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে আমার মা আর নানার জন্য চাল, ডাল কিনি। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন জিনিসও কিনতে হয় এই টাকা দিয়ে। সব কিছু এই বিক্রির টাকা থেকেই কিনি!

এবিষয়ে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিমুর রহমান আবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছিলাম। তবে বিষয়টা সেভাবে ভাবিনি! আগামীতে কোনো সুযোগ এলে আমি তাদের তা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজা বলেন, খোঁজখবর নিয়ে তাকে যেভাবে সাহায্য করা যায়, আমরা সেটি করবো।

বিদায় নিয়ে আসার আগে রায়হান বলে, আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো। পরে সারাক্ষণ শুধু কানে বাজতেই থাকে- আমাদের নিজের একটা বাড়ি করবো। আমার মাকে নিয়ে সেখানে সুখে থাকবো! আমাদের নিজের…!

;

তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ

২৯ এপ্রিল: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস



প্রমা কান্তা, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ’॥

কিংবা-
‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ
হে মহকাল প্রলয়–তাল ভোলো ভোলো।।
ছড়াক তব জটিল জটা
শিশু–শশীর কিরণ–ছটা
উমারে বুকে ধরিয়া সুখে দোলো দোলো’।।

রবিঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের কলমে ছন্দ তোলা এ পংক্তি যেন মনের ভাব প্রকাশের এক অনন্য শিল্প। এ গানগুলো শুনলেই আনমনে আমরা নেচে উঠি।

নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। প্রণয়ীর কাছে প্রণয়িনীর কিংবা প্রণয়িনীর কাছে প্রণয়ীর আত্মনিবেদনের চিরায়ত ধারা কিংবা সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদন নৃত্যের ভাষা। মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ নৃত্যের মুদ্রার ভাষায় ভেসে ওঠে।

নৃত্যের মাহাত্ম্য ও প্রয়োজনীয়তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে উদযাপন করা হয়- আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নৃত্য বিনোদন ও আনন্দ প্রকাশের সবচেয়ে পরিশীলিত শিল্প মাধ্যম।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে নিজের আবেগ আর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক জুয়েইরিয়াহ মৌলি (প্রোগ্রাম প্রোডাকশন- নৃত্য)।

মৌলি বলেন, নৃত্য শুধু বিনোদন বা পরিবেশনার বিষয় নয়। নৃত্যের তাত্ত্বিক দিকটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৃত্য নিয়ে গবেষণার প্রচুর সুযোগ আছে। পেশাগত জায়গা থেকে নৃত্য সমাজে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হোক!

তিনি বলেন, শুদ্ধ নৃত্য চর্চার মাধ্যমে শিল্পীরা নিজের এবং সমাজের কথা তুলে ধরুক। আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা!

ধ্রুপদী নৃত্য, ছবি- সংগৃহীত

সৃষ্টির শুরু থেকেই তাল ও ছন্দের অস্তিত্ব রয়েছে প্রকৃতিতেও। আকাশে মেঘের আন্দোলন, বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতা, দল বেঁধে পাখিদের উড়ে চলা, ফুলে মৌমাছির মধু বা প্রজাপতির গরল আহরণ, পানিতে মাছেদের ছলছল চলা, এমনকী বৃষ্টির আগমনে ময়ূরের পেখম তুলে দুলে ওঠা, সবাই যেন ছন্দে নেচে মেতে ওঠে আনন্দে।

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের উদযাপনের বিষয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে- ফরাসি নৃত্যশিল্পী তথা আধুনিক ব্যালের রূপকার জ্যাঁ-জর্জেস নভেরের জন্মদিন উপলক্ষে ইউনেস্কোর 'পারফর্মিং আর্টস'-এর প্রধান সহযোগী আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নৃত্য কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

আইটিআই ও ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কমিটি ১৯৮২ সালে প্রথমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’ উদযাপন শুরু করে।

;