দীর্ঘ লেজের দক্ষ শিকারি পাখি হাঁড়িচাচা
সকাল হয়েছে সবেমাত্র। সূর্যের আলো কিছুক্ষণ পরই তার প্রগাঢ় উপস্থিতির জানান দেবে। এরই মাঝে চা বাগানের সেকশনের কোণে শুরু হয়ে গেছে দারুণ হট্টগোল। বিষয় কী! আমি তখন সবেমাত্র ক্যামেরা নিয়ে সেকশনে প্রবেশ করেছি। সেই হট্টগোল শুনেই মনটা ভীষণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে!
অদূরবর্তী স্থান থেকে ভেসে আসছে একাধিক পাখির তীব্র প্রতিধ্বনি। কাছে গিয়েই জানা গেল হাঁড়িচাচা আক্রমণ চালিয়েছে ছোটপাখিদের গৃহে। ছোটপাখিরা সেই ভয়ে কাতর! সম্মিলিতভাবে প্রকাশ করে চলেছে বিচিত্র ভয়ার্তধ্বনি। সেই ধ্বনিতেই কিছুটা লক্ষ্যচ্যুত হাঁড়িচাচা।
বেচারা চূড়ান্ত আক্রমণ করতে গিয়েও ছোটপাখিদের ডেরায় অবশেষে আর আক্রমণ করতে পারেনি। সেদিনের সেই সময়ের ছোটপাখিদের সম্মিলিত চ্যাঁচামেচির কাছে হার মেনেছিল। তবে পরে কী হয়েছিল সেটা আর জানা যায়নি।
হাঁড়িচাচার ইংরেজি নাম Rufous Treepic এবং বৈজ্ঞানিক নাম Dendrocitta vagabunda। একে কেউ কেউ ‘খয়রা-হাঁড়িচাচা’ নামেও উল্লেখ করে থাকেন। এরা আকারে পাতিকাকের চেয়ে বড়। প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার। দক্ষ শিকারি এবং সাহসী পাখি হাঁড়িচাচা।
তাদের দেহের বৈশিষ্ট হলো- লালচে বাদামি দেহ। পুরো মাথা ও চোখ কালচে। চঞ্চু অর্থাৎ ঠোঁট কালচে। ডানা ধুসর এবং পিঠ লালচে বাদামি। পেট লালচে হলুদ। তবে আকর্ষণীয় হলো লেজ। সেই লেজে রয়েছে ধুসর, সাদা আর কালো রঙে বৈচিত্র। ধুসর লেজের সাদাটে প্রান্তে রয়েছে চওড়া কালো বর্ডার। যা থাকে থাকে সাজানো।
‘কিটা-কিটা-কিটা’ এমন স্বরে কর্কষ গলায় মাঝে মাঝে ডাকে। এই ডাক বহুদূর পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়। এরা বাংলাদেশের সর্বত্র আছে। ঢাকা শহরেও আছে এবং সেখানে ছানা তুলে।
মজার ব্যাপার হলো, কোকিল সুযোগ পেলেই হাঁড়িচাচার বাসায় ডিম দেয়। আর হাঁড়িচাচা নিজের ডিম মনে করে কোকিলের ডিমে তা দিয়ে এবং ফুটিয়ে তার ছানাকে বড় করে তোলে।