ছুটির দিনে পরীক্ষা
মেয়েটি পরীক্ষার হল থেকে একবার বের হয়ে সদ্যজাত শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করায়। তারপর আবার হলে ফিরে এসে পরীক্ষার খাতায় লিখতে থাকে। যুবক পিতা শিশুকে বুকে চেপে অপেক্ষা করে করিডোরে। কিছুক্ষণ বাগানে পায়চারি করে। অপেক্ষা করে, পরীক্ষা শেষে মা বের হয়ে আবার দুধ খাওয়াবে দুগ্ধপোষ্য নবজাতক শিশুকে।
‘কিছুটা কষ্ট হচ্ছে তবুও পরীক্ষা শেষ করতে চাই’, নাম প্রকাশ না করে মেয়েটি বলে। ‘পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে একবার, পরীক্ষার মাঝে একবার আর শেষে আবার দুধ খাওয়ালে বাচ্চা শান্ত থাকে। বাচ্চাটিও মনে হয় মায়ের সমস্যা বুঝে। পরীক্ষার সময় দিব্যি মানিয়ে নেয়, জানায় মেয়েটি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এমন চিত্র অন্য বিভাগেও দৃশ্যমান। হরতাল, অবরোধের কারণে অনার্স ও মাস্টার্সের হাজার হাজার শিক্ষার্থী আটকে থাকলেও থেমে নেই। বিঘ্ন এড়িয়ে দ্রুত পরীক্ষা দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চায় সবাই। দেরি হলে চাকরির বয়স চলে যাবে। থমকে যাবে বিয়ে-শাদি এবং জীবনের নানা প্রয়োজনীয় চাহিদা।
এমন পরিস্থিতিতে ছুটির দিন ছাড়া পরীক্ষা নেওয়ার উপায় নেই। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ রেকর্ড গড়েছে একদিনে চার বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে। সকালের শিফটে দুটি বর্ষ আর দুপুরের পর দুটি বর্ষের পরীক্ষায় অর্ধসহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ছুটির দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরীক্ষা পরিদর্শন ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষকগণ।
‘পরীক্ষা কমিটি, বিভাগের শিক্ষকগণ ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ইচ্ছায় পরীক্ষাগুলো ছুটির দিনেও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে’, বলেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাবেক ডিন প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী। ‘আমরা চাই শিক্ষার্থীদের জীবন যেন মসৃণ এবং সেশনজট মুক্ত থাকে’, বার্তা২৪.কম'কে বলেন তিনি।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের তরুণ অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দীন বার্তা২৪.কম'কে বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সকল শিক্ষকের অংশগ্রহণে ছুটির দিনে পরীক্ষা সম্পন্ন করা অত্যন্ত ইতিবাচক কাজ। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে গতিশীলতা এসেছে।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ও বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি-সদস্যগণ বার্তা২৪.কম'কে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিষয়ে আমরা সব সময়ই মনোযোগী। পরীক্ষার সঙ্গে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জড়িত। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সবাই দ্রুত পরীক্ষা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য উন্মুখ। আমরা ছুটির মধ্যে তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথকে বাধাহীন রাখতে আগ্রহী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ছুটির দিনে পরীক্ষা যদিও অভিনব, তথাপি বাস্তবতার কারণে আমরা আন্তরিকভাবে তা গ্রহণ করেছি। জীবনে অনেক ছুটির দিন কাটিয়েছি। কিন্তু এবারের ছুটির দিনগুলো আমাদের জীবনে স্মরণীয় ও আমাদের শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।