‘স্কার’ ভয়ঙ্কর এক পুরুষসিংহ
‘স্কার’ আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার মাসাইমারা জঙ্গলের ভয়ঙ্কর এক পুরুষসিংহ। প্রায় চারশ’ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাজত্ব করতো সে। এলাকা দখল রাখতে ঘায়েল করেছিল বহু শত্রুকে। আবার শত্রুর আক্রমণেই যেতে বসেছিল চোখ আর প্রাণ। তবে কোন জখমই কাবু করতে পারেনি তাকে। মৃত্যুও হয়েছিল রাজার মতো।
একটি সিংহের আয়ু সাধারণত ১০ থেকে ১৪ বছর হয়। স্কার মারা গিয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। অসুখ, আঘাত— সব কিছুকে জয় করেই দাপট দেখিয়ে বেঁচে ছিল সে।
এলাকা দখলে রাখতে গিয়েই গিয়েছিল ডান চোখ। সময়টা ২০১২ সাল। তখন স্কারের বয়স চার বছর। সিংহদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সেই নিয়ে তথ্যচিত্রও তৈরি করেছিল।
ডান চোখে আঘাতই তাকে করেছিল পৃথিবী বিখ্যাত। আঘাতের কারণে সিংহটির নাম রাখা হয়েছিল স্কার। নিজের ফেসবুক পেজও ছিল তার। সেই পেজে অনুগামীর সংখ্যা লক্ষাধিক। চার ভাই মিলে রাজ করেছিল কেনিয়ার মাসাইমারা জঙ্গলে।
‘প্রাইড বিফোর দ্য ফল’বইতে স্কারকে ‘রকস্টার অব মারা’ বলা হয়েছিল। পর্যটকেরা মাসাইমারা বেড়াতে গেলে তার খোঁজ করতেন। শুধু চোখের ক্ষত নয়, কেশরের জন্যও বিখ্যাত ছিল স্কার।
বিশাল লম্বা কেশর ছিল স্কারের। এমন কেশর সচরাচর দেখা যেত না। হাওয়ায় উড়ত সেই কেশর। তার মধ্যে আবার কিছু অংশ ছিল কালো।
সিংহের কেশরে আকৃষ্ট হত সিংহীরা। সিংহীদের মধ্যেও দারুণ জনপ্রিয় ছিল এই পুরুষসিংহ। স্কারকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যেত সিংহীদের মধ্যে।
একটা সিংহের জীবনে যত আঘাত আসতে পারে তার সবকিছুই ঘটেছে স্কারের জীবনে। এমনকি এক স্থানীয় পুরুষ নিজের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য তাকে লক্ষ্য করে বর্শা ছুড়েছিলেন। তাতেও প্রাণে বেঁচে যায় স্কার। সব বাধাকে হেলায় হারিয়ে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে ১৪ বছর বেঁচে থেকেছে সে।
স্কটল্যান্ডের বন্যপ্রাণি চিত্রগ্রাহক জর্জ লোগান মাসাইমারার সিংহের ওপর লাগাতার নজর রাখতেন। তিনি জানিয়েছেন, যেখানে জন্ম হয়েছিল, মৃত্যুর আগে সেখানেই গিয়েছিল স্কার। প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ নিজেকে টানতে টানতে কোনও মতে নিয়ে গিয়েছিল সে।
জর্জ জানিয়েছেন, স্কার যেখানে মৃত্যুর আগে চলে গিয়েছিল, সেই এলাকায় ছিল মাসাইমারার সব থেকে বিপজ্জনক সালাস পুরুষ সিংহেরা। ছিল হায়নার দল। সকলেই নাকি প্রবীণ রাজাকে সম্মান জানিয়ে ওই চত্বর থেকে সরে গিয়েছিল। শান্তিতে মরতে পেরেছিল স্কার।
চোট-আঘাত খুব একটা কাবু করতে পারেনি স্কারকে। বয়সের ভারে ক্রমে জর্জরিত হয়ে যায় সে। তবে বয়সেও কোনও প্রতিপক্ষ তাকে ঘাঁটানোর চেষ্টা করেনি। বরং ভয়ে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর সময়ও আক্রমণ করেনি কোনও বন্য পশু।