আগ্নেয়গিরিতে নীল লাভা, এর রহস্য কী?

  • ফিচার প্রতিবেদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বৈদ্যুতিক নীল শিখার অগ্নুৎপাত

বৈদ্যুতিক নীল শিখার অগ্নুৎপাত

তরল খনিজের টগবগে ফুটন্ত লাল লাভা, চোখে ধাঁধা ধরিয়ে দেওয়ার মতো উজ্জ্বল। গলিত আগুন যেন পাহাড় ফেটে বেরিয়ে আসছে সব ধ্বংস করতে। চারপাশে সবকিছু গলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্রোতস্বীনি নদীর কূল ভাঙ্গার মতো। আগ্নেয়গিরির নাম শুনলে এমন দৃশ্যই চোখে ভেসে ওঠে। তবে, পৃথিবী বড়ই বৈচিত্র‌্যময়। আগুন বর্ণের লাভা আমাদের কাছে পরিচিত হলেও, পৃথিবীর একটি অংশ তার বুকে লুকিয়ে রেখেছে দুঃখের রঙের বিস্ফোরণ। ইন্দোনেশিয়ার কাওয়াহ ইজেন নামক স্থানে অনন্য বৈদ্যুতিক শিখা উৎপন্ন হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে তাই পীত বা রক্তবর্ণ নয়, বরং নীল শিখার বিস্ফোরণ ঘটে-যার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

কাওয়াহ ইজেনের আগ্নেয়গিরি দেখতে অন্য সাধারণ আগ্নেয়গিরির মতোই। তবে এখানকার পাথরে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে। সেই কারণেই বৈদ্যুতিক নীল শিখার উৎপন্ন হয়। ঘটনাটি যেমন অত্যাশ্চর্যজনক,দেখতে তেমন অপরূপ সুন্দর। নীল অগ্নুৎপাতের ভিডিও সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অবাক করেছে। ভিডিওটি করেছিলেন ফটোগ্রাফার অলিভিয়ার গ্রুনওয়াল্ড।

বিজ্ঞাপন

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, চকচকে নীল আভা আসলে সালফিউরিক গ্যাসের দহন থেকে আসা আলো। ভিডিওটি কয়েক বছর আগে ধারণ করা।  এই ভিডিও আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। ফুটেজটি একটি তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে ‘জেনেভার সোসাইটি ফর ভলকানোলজি’তে প্রকাশ করা হয়েছিল।

উচ্চ তাপ ও চাপে গলিত সালফার

আইএফএল সায়েন্সের মতে, নীল লাভার ঘটনাটি পাথরে প্রচুর সালফার পকেটের কারণে ঘটে। উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রায় আগ্নেয় শিলার ফাটল থেকে সালফার নির্গত হয়। যখন গলিত সালফার শিলা বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন পুড়ে বিষাক্ত গ্যাস সালফার-ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকালে আকর্ষণীয় নীল শিখা তৈরি হয়। তখন ৩৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা থাকে।

বিজ্ঞাপন

আইএফএল সাইন্সের মতে, আইজেন কমপ্লেক্সে প্রায় ২২টি বিস্ফোরণের কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে। বেশিরভাগই ক্যালডেরার রিমের চারপাশে। এখানে উৎপন্ন শিখাগুলি ২৬ ফুট (৫ মিটার) পর্যন্ত হতে পারে। আগ্নেয়গিরির চারপাশে বসবাসকারী খনি শ্রমিকরা সালফিউরিক শিলা আহরণ করে। নীল শিখার খনিজ শীতল হয়ে এই আগ্নেয়শিলা গঠিত হয়। এগুলো পরবর্তীতে খাদ্য ও রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহার করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার এই আগ্নেয়গিরির পাশেই নীল গ্যাস এবং পাথরের একটি বাজারও আছে।

খনি শ্রমিকরা পাহাড়ের নিচ থেকে ঝুড়ি ভর্তি পাথর হাতে করে নিয়ে বিক্রি করে। এই শিলাগুলি প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ৬৮০ ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়ায় বিক্রি করে। রাতের খনি শ্রমিকরা ১২ ঘন্টা কাজ করে। এতে তারা ৮০ থেকে ১০০ কেজি খনন করতে পারে এবং কেজিপ্রতি প্রায় ৫ থেকে ৬ ডলার আয় করে৷

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি