ময়মনসিংহে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি

  • তোফায়েল আহমেদ , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

ময়মনসিংহের আকাশে শেষ বিকেলে এখন দেখা মেলে না পাখিদের দল বেঁধে নীড়ে ফেরার দৃশ্য। ডালে ডালে শোনা যায় না ময়না-টিয়ার ডাক। খুনসুটিও নেই চড়ুই, বুলবুলি কিংবা বক, মাছরাঙার। গাছেও নেই তেমন পাখির বাসা।

ময়মনসিংহে দিন দিন আশংকাজনক হারে কমছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা। বিভিন্ন দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, জলাশয় ভরাট ও শিকারের ফলে পাখি পরিবর্তন করছে তার আবাসস্থল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য। আতশবাজিসহ বিভিন্ন দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, শিকারের কারণে দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। এতে হুমকিতে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য।

বিজ্ঞাপন

নগরীর জয়নুল পার্কে ঘুরতে আসা শামীম আশরাফ জানান, আমাদের জীবনে এখন অনেক উৎসব এসেছে। আর উৎসব বলতে আমরা বুঝি আতশবাজি বা পটকা ফাটানো। এগুলোর বিকট শব্দে আমরা মানুষরা যেখানে কেঁপে উঠি সেখানে এই পাখি গুলো আতঙ্কে ছুটাছুটি করে। এতে তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পরিবর্তন করছে আবাসস্থল। এছাড়াও কমেছে গাছপালা। পাখিরা গাছে থাকতে পছন্দ করে। সেখানো বাসা তৈরি করে। কিন্তু যেখানে আগের মত গাছই নেই সেখানে পাখি থাকবে কোথা থেকে।

আরেক দর্শনার্থী জয় ঘোষ জানান, পাখির সাথে আমাদের জীব বৈচিত্র্য জড়িত। পাখি বনাঞ্চল গড়ে তুলতে সাহায্যে করে। সেখানে আমরা অবিচারে পাখি শিকার করছি। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ করে আমরা পাখিদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছি। কিন্তু এক সময় যখন পাখির অস্তিত্ব থাকবে না তখন এই পৃথিবীরও অস্তিত্ব থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

শহরের জুবিলী ঘাটে অবস্থিত বিপিন পার্কে বিকেলে ঘুরতে আসা সোমা ঘোষ মনিকা জানান, কাক হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক ঝাড়ুদার। মৃত পশু পাখির অংশ খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে। আগে সকাল হলে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক দেখা যেত বাড়ির আঙ্গিনায়। কিন্তু এখন দেখা যায় না। এছাড়াও গবাদি পশুদের শরীরে ব্যথা নাশক ইনজেকশন ব্যবহারের কারণে এসব পশুর মৃতদেহ খেয়ে তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে মারা যায় শকুন। এতেও প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শকুন। আর এসব পাখি ধ্বংসের জন্য আধুনিক মনুষ্য সমাজ দায়ী।


ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেই সাথে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে পশু পাখির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পাখি নিধন ও শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

দেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি। এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত। অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়। নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের আবাসিক এবং ১৭৬ প্রজাতি পরিযায়ী পাখি। বিলুপ্ত প্রায় পাখি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নিবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা ময়মনসিংহবাসীর।