ঐতিহ্য আর আধুনিকতার অপূর্ব মেলবন্ধনে অনুষ্ঠিত ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
রাত ১১টা। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচারদ্বীপ এলাকার পরিবেশবান্ধব মারমেইড বিচ রিসোর্টের সমুদ্র পাড়ে হঠাৎ ভিড় পর্যটকদের। সমুদ্রের পানিতে ভাসমান ২০টি সাম্পান নৌকার সমন্বয়ে চলছিল দৃষ্টিনন্দন মুনবোট লাইট শো। সাথে বালিয়াড়িতে মন কেড়ে নেওয়ার মতো ফায়ার শো চলছিল। এর একটু পেছনে বালুচরে স্থাপিত ডিম আকৃতির ‘এগ প্লানেট’ মঞ্চে ডিজে পরিবেশন করছিলেন শিল্পীরা। প্রায় আধাঘণ্টার মন মাতানো আকর্ষণীয় একটি পরিবেশনা।

এর আগে লাল কাঁকড়ার মঞ্চে রিসোর্টের পশ্চিম পাশের খোলা মাঠে নির্মিত ‘ক্রেব ড্রিমার’ নামের কাঁকড়া মঞ্চে সন্ধ্যায় চলে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের বোতলনৃত্য, মারমাদের জুমনৃত্য, রাখাইনদের ছাতানৃত্য ও ম্রোদের বাঁশনৃত্য চলে। অন্যদিকে পশ্চিম পাশে সমুদ্রের পানিতে নির্মিত ‘মিস্টিক বাউল’ মঞ্চে চলে বাউল ও লালন শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনা। রিসোর্টের দক্ষিণ পাশে ক্র্যাব ড্রিমার, কসমিক টার্টল ও বিগ ব্যাঙ নামে আরও তিনটি পৃথক মঞ্চে রাত তিনটা পর্যন্ত চলে ডিজের সঙ্গে নাচানাচি, আড্ডা ও রকমারি খাবারের আয়োজন। গভীর রাত পর্যন্ত জাপান, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভুটান, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১১টি দেশ থেকে ভ্রমণে আসা শতাধিক পর্যটক ফেস্টিভ্যাল উপভোগ করেন। বিদেশি শিল্পীরা ডিজে পরিবেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সংগীত উপভোগ করেন।

মূলত এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক রক সিটির বার্নিং ম্যান উৎসবের আদলে মারমেইড বিচ রিসোর্টে আয়োজিত তিন দিনের বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল। তিনদিন ধরে চারিদিকে একের পর এক সৃজনশীল পরিবেশনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল রিসোর্ট প্রাঙ্গণ। এছাড়া আরও আকর্ষণ ছিল এই ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে অস্কারে যাওয়া এবং বুসান চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র বলি দ্যা রেসলার। গেলো ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে এই উৎসব শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি।

এই উৎসবে অন্যান্য সব আয়োজনের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে ফেস্টিভ্যালের লাইটিং। উৎসবের কিউরেটর হিসেবে যুক্ত ছিলেন খ্যাতিমান জাপানি ফেস্টিভ্যাল আর্কিটেক্ট এবং লাইটিং ডিজাইনার জিরো এন্দো। তার লাইটিং মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কাঁকড়া মঞ্চে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের রাখাইন, ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন নৃত্য–গান উপভোগ করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিয়ে এই ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। বাংলাদেশে যত গোষ্ঠী আছে সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ। এই বহুত্ব জাতীয়তাবাদী চিন্তাটা আমরা বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে চাই। বিদেশিদের কাছে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই—বাংলাদেশ কেবল মুসলমানদের না, হিন্দুদের না, বৌদ্ধদের না, সবার।’

বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের আয়োজক মারমেইড ইকোট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের প্রসার এবং সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমী এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়। ১১টি দেশের শতাধিক পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দুই হাজার নারী-পুরুষ উৎসব উপভোগ করেছেন। সমুদ্রতীরে নিরিবিলি পরিবেশে উৎসবের ভেন্যু হওয়াতে সবাই আনন্দ-উল্লাস করার সুযোগ পেয়েছেন।
আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ তিন দিন দ্বিতীয় বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হবে, বলে জানান তিনি।