ঈদ বাজারে জনসমুদ্র নিউমার্কেট
শনিবার, দুপুর ২টা। নিউমার্কেট মোড়ের জ্যাম নীলক্ষেত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এসে পৌঁছেছে। জ্যাম ঠেলে ফুটপাথ দিয়ে এগোতে থাকি নিউমার্কেটের দিকে। নীলক্ষেত মোড় পার হতেই ফুটপাত দিয়ে হাঁটাও যেন দায়। মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই, রাস্তা কিংবা ফুটপাতে। আরও রয়েছে রাস্তায় যানবাহনের এলোমেলো পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকান ও ফুটপাতে লাগোয়া দোকানগুলোর বর্ধিতাংশের বিড়ম্বনা।
নীলক্ষেতের বিউটি হোটেলের মোড় ঘুরতেই আর সামনে যাওয়া যায় না। যতদূর চোখ যায়, শুধু মানুষের মাথা আর মাথা। মনে হয় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা ‘হিউম্যান জ্যাম’। জ্যামের ভেতরেই হকারদের হাঁকডাক, ক্রেতাদের দামাদামির চিত্র চারিদিকে। মেঘলা দিনে, হিমেল বাতাসেও সেই ‘হিউম্যান জ্যাম’ আর ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’ চরম অস্বস্তিকর এক অবস্থা।
এভাবেই ধীরে ধীরে চলতে চলতে একপর্যায়ে গাউছিয়া মার্কেটে পৌঁছে যাই। সেখান থেকে ওভারব্রিজে করে নিউ মার্কেটে যেতে হবে। ওভারব্রিজের নিচেই হকাররা তাদের জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে বসেছে। ক্রেতাদের আকর্ষণে ডাক দিচ্ছে, ‘খালি ষাট/খালি ষাট।’ কেউ কেউ দাঁড়িয়ে কিনছে সেখান থেকে, যাদের ওপারে যাওয়ার তাড়া বেশি তারা সেইসব ক্রেতা-বিক্রেতাদের ডিঙ্গিয়েই ওভারব্রিজের সিঁড়িতে উঠে যাচ্ছেন।
একমাত্র ওভারব্রিজও ছিল লোকে লোকারণ্য। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-যুবক যে যেমনে পারছে ধাক্কায়, ঠেলে সামনের দিকে যাচ্ছে। বিপরীত দিক থেকেও একই জনস্রোত। পঙ্গু ভিখারি, হকারদের কারণে ওভারব্রিজের প্রশস্ততা অর্ধেক নেই। এমনও অবস্থায় কিছু যুবক ওভারব্রিজের রেলিংয়ে বসে গায়ে বাতাস লাগাচ্ছে, তাদের কারো কারো নজর ছিল ভিড় দিকে, মুখে একধরনের মৃদু হাসি।
১০ মিনিট ধরে ওভারব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম নিউ মার্কেট। সেখান থেকে সামনে তাকাতেই দেখা যায়, এদিকে ঢাকা কলেজ অন্য পাশে বলাকা সিনেমা হল পর্যন্ত গোটা এলাকায় শুধু মানুষ আর মানুষ। জনসমুদ্রের ভেতর দুয়েকটা বাসকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ঈদের এখনো ১০ দিন বাকি থাকতেই ক্রেতাদের এই বিপুল উপস্থিতিতে খুশি মার্কেটের ব্যবসায়ী, বিক্রেতারা। বেচাকেনা জমে উঠায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটা করতে গিয়ে নিউমার্কেট গাউছিয়া, চাঁদনি চক এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। বিক্রেতাদের প্রত্যাশা সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা আরও বাড়তেই থাকবে।
নিউমার্কেটের তিনতলায় প্যান্টের দোকানের বিক্রয়কর্মী রাতুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবারের ঈদের বেচাকেনা আগের চেয়ে ভালো। বিশেষ করে কাল শুক্রবারের চেয়েও আজকে লোকসমাগম বেশি।’
একই কথা জানালেন হাটবাজার শোরুমের মালিক মাহবুবুর রহমান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নিউমার্কেট এলাকার বেশিরভাগ ক্রেতাই মধ্যবিত্ত। তাদের কথা চিন্তা করে এখানকার কাপড়ের দামটা থাকে সাধ্যের মধ্যেই। এবার ঈদ উপলক্ষে ৭০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা দামের উন্নতমানের ও আধুনিক রুচির শার্ট পাওয়া যাচ্ছে।’
মার্কেটের আর কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা বেশ সন্তুষ্ট। এবারের বেচাকেনায়। শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি সবই কিনতে দারুণ আগ্রহ ক্রেতাদের।
আরেকটি শোরুমের এনামুল নামের একজন প্যান্ট বিক্রেতা বলেন, ‘ঈদে পাঞ্জাবি ও শার্টের ব্যাপক চাহিদা বাড়লেও জিন্স প্যান্টের দিকে ক্রেতারা বাড়তি ঝোঁক দেখাচ্ছেন না। অন্য সময়ের মতোই চলছে তাদের বেচাকেনা।’
নিউ মার্কেটে শপিং করতে আসা হাফেজ আকরাম হোসেনের কাছে বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দাম একটু বেশি হলেও সেটা সাধ্যের মধ্যে আছে। পণ্যের মান ভালো।’
নিউমার্কেটের বিপরীত পাশেই গাউছিয়া ও চাঁদনি চক শপিং কমপ্লেক্স। সেখানে পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে ওড়না, হিজাব, থ্রি পিস, থান কাপড়সহ হরেক রকম পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
সেখানে জরি ঘরের সামনে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। আমিও ভেতরে ঢুকলাম। শোরুমের বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী হোসেন জানালেন, তাদের এখানে মেয়েদের ঘাগরার বেশ চাহিদা, এগুলো মূলত ভারতীয় পণ্য। আজকে বেচাকেনা বেশ ভালো যাচ্ছে তাদের।
এই মার্কেটের নিচে দেখা হলো তরুণ আইনজীবী নাসিম উল্লাহর সঙ্গে। তিনি স্ত্রীকে নিয়েই কেনাকাটা করছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবারের কেনাকাটা করার পরিবেশটা বেশ ভালো। তবে তার দৃষ্টিতে ছেলেদের পোশাকে বৈচিত্র্য কম।
এদিকে নিউমার্কেট এলাকায় নিরাপত্তা বজায় রাখতে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। র্যাব থেকেও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।