সেক্সরোবটদের কি নিজস্ব অধিকারের ব্যাপার আছে?



স্লাভয় জিজেক
স্লাভয় জিজেক

স্লাভয় জিজেক

  • Font increase
  • Font Decrease

সেক্সরোবট বলতে বোঝায়—যেসব রোবট তৈরি করা হয়েছে যৌনবস্তু হিসেবে। অর্থাৎ যেই রোবটের সঙ্গে যৌনকর্ম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এই সেক্সরোবট তৈরি করা হয়ে থাকে।

সেক্সরোবট বানানো বা প্রোগ্রাম করার ক্ষেত্রে যে দুইটি বৈশিষ্ট উপাদান হিসেবে থাকে, সেগুলো হলো, সেক্সরোবটরা কিছু সরল অভিব্যক্তিমূলক কথোপকথনের সামর্থ্য রাখে, এবং সেইসঙ্গে কিছু সাধারণ অনুভূতিকে অনুকরণ করবার ক্ষমতা তাদের থাকে।

বর্তমান সময়ের এই প্রবণতাটি আমাদের মানুষ্য সমাজের অনেক বাস্তবতাকে নস্যাৎ করেও দিতে পারে। তথাপি এটাই সত্য যে, পাশ্চাত্যে সেক্সরোবট তৈরির কারখানাগুলোর চাহিদা ক্রমশ বর্ধমান। সেক্সরোবট তৈরির নামকরা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালিয়াফোর্নিয়ায় অবস্থিত ‘রিয়েলবোটিক্স’, বা নিউ জার্সিতে অবস্থিত ‘ট্রু কমিনিয়ন’।

একথা ঠিক, এখনো পর‌্যন্ত এই টেকনোলজি বেশ প্রাথমিক অবস্থাতেই বিদ্যমান আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, আগামী একশো বছরের মধ্যেই আমাদের পৃথিবীতে একটি কৃত্রিম চৈতন্য খুব ভালোভাবে বিরাজ করবে। যেখানে থাকবে রোবটের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, সামাজিক মর্যাদা বা অধিকারের বিষয়গুলো।

মানুষের অনুরূপ এই সেক্সরোবটদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে মানুষদের নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কগুলো হুমকির মধ্যে পড়বে কিনা, সেই চিন্তা থেকেই যায়।

আবার একথাও ঠিক যে, প্রাথমিকভাবে এই সেক্সরোবট তৈরির কার্যক্রমটি চালানো হচ্ছে পুরুষ কাস্টমারদের কথা মাথায় রেখেই—যারা ফ্যান্টাসি বা বিকৃত যৌনইচ্ছা সেক্সরোবট ব্যবহারের মাধ্যমে মেটাতে সক্ষম হবেন। দেখা যাচ্ছে, এই সেক্সরোবটগুলো তৈরি হচ্ছে মূলত সাদা অথবা এশিয়ানদের অনুকরণে, আর অস্বাভাবিক যৌনআকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোর কাঠামো। যেমন, সেগুলো দেখতে হয়ে থাকে খুবই কৃষকায়, সেগুলোর নিতম্ব ও বক্ষদেশ থাকে বেহদ্দর ধরনের বৃহৎ, এবং সেগুলো থাকে খুব নিখুঁত ত্বকের অধিকারী।

এমতাবস্থায়, কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারমধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, আমরা এই সেক্সরোবটকে গ্রহণ করে নেব কিনা। বা সেক্সরোবটদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান কেমন হবে?

বর্তমান দুনিয়ার সবচাইতে আলোচিত ও শক্তিশালী বুদ্ধিজীবীদের একজন, স্ল্যাভয় জিজেক—তিনি এই বিষয়টিকে খুব সাধারণ একটি প্রশ্নের মাধ্যমে আলোচনা করেছেন। তার প্রশ্নটি হলো, ‘সেক্সরোবটদের কি নিজস্ব অধিকারের ব্যাপার আছে?’

সেক্সরোবট নিয়ে স্ল্যাভয় জিজেকের লেখাটি পড়া যাক। জিকেকের পরিচয়গুলোর মধ্যে যেটিকে তিনি সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেন, সেটি হলো তিনি একজন কালচারাল দার্শনিক। পাঠকবর্গের কাছে তিনি ‘রকস্টার দার্শনিক’ বলেও বিবেচিত বা অবিহিত হয়ে থাকেন। রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘আরটি’-তে প্রকাশিত এই লেখাটি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন যাকওয়ান সাঈদ

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564213959030.jpg

 

সেক্সরোবটদের কি নিজস্ব অধিকারের ব্যাপার আছে?

সাম্প্রতিককালে পলিটিকাল কারেকনেসের নামে নৈতিকতার যেই বিপুল ব্যাপ্তি দেখা দিয়েছে, সেটারই অন্তর্গত একটি তর্ক এই মুহূর্তে খুব চলমান। যার বিষয় হলো, মানুষ এবং সেক্সরোবটের মধ্যকার সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

শুরুতেই আলাপের স্বার্থে, আমাকে একটা নিউজ-রিপোর্টের কিছু অংশ উদ্ধৃত করতে দিন : ‘গতবছর সামান্তা নামক একজন সেক্সরোবট একটি টেকনোলজি বিষয়ক ফেস্টিভালে মলেস্টেড হয়েছে, এবং এতে বাজেভাবে তার বাহ্যিক ড্যামেজ ঘটেছে। মেশিনের সঙ্গে মানুষের আচরণগত নৈতিকতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে এই ঘটনাটি তখন প্রচুর তর্কের জন্ম দিয়েছিল। যদিও সেক্সরোবটের ডেভেলপাররা বলেছিলেন যে, তাদের কাস্টমারদের যে কোনো যৌন-লালসার প্রতিই তাদের এই প্রকল্পটি অনুকূল্য দেখাবে, কিন্তু এবার হয়তো তারা সেক্সরোবটদের কর্তৃক আক্রোশপূর্ণ পুরুষদেরকে প্রত্যাখ্যান করাবার প্রক্রিয়াটি আরম্ভ করবে, এই ঘটনা থেকে সেরকমই মনে হয়। সাধারণ মানুষেরা এইধরনের মেশিনকে আঘাত করা যায়-‍মূলক ব্যাপারগুলোকে স্বীকার করে না, শুধু এই কারণে যে তারা তাদের বাড়তি যৌনরিপুকে ‘না’ বলতে অক্ষম। ভবিষ্যতের মানুষ্যআকৃতির সেক্সরোবটেরা হয়তো আরো বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন হবে, যারা একটা নির্দিষ্ট সজ্ঞানে থেকে তবেই যৌনমিলন সম্পন্ন করবে। এমনিতে, মানুষ এবং রোবটের এই যৌনপ্রক্রিয়াটি অনুমোদিত হবার সময়ে এর মুখবন্ধতে বলা হয়েছিল, মানুষদের নিজেদের মধ্যে যে ধরনের যৌনসম্পর্ক থাকে এটা তারই সাদৃশ্য বহন করবে, এছাড়াও যৌনকর্মীদেরকে, আইনগতভাবেও ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে সমাজে যেই বৈষম্য তৈরি হয়েছে, এটি সেই বৈষম্যকেও প্রতিরোধ করবে।’

যদিও সেক্সরোবটের এই ধারণাটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তরফে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি একটা প্রস্তাবনা, যা মানুষের ‘বেসিক অধিকার’কে অগ্রগামী করবে। কিন্তু বিষয়টি খুব পরিষ্কারভাবে এমন কিছু পুরানা ধ্যানধারণাকে নিয়ে আসে, যেগুলো আদতে আমাদের চিন্তাকে নির্ধারণ করে দিতে চায়। আমরা আমাদের চিন্তায় কিছু নৈতিক প্রশ্ন ধারণ করার মধ্য দিয়ে, বেসিক্যালি একটা আলস্যের মধ্যে বিচরণ করি। আমরা খুব সহজেই আসল সমস্যাগুলোর জটিলতাগুলোকে এড়িয়ে যাই।

যাই হোক, সেক্সরোবটকে আঘাত করার প্রসঙ্গটি নিয়ে যারা চিন্তিত, তাদের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে এটা অনুমান করা যায় যে, তারা আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ওই মেশিনগুলোর ব্যাপারে ভাবিত নন, কেননা তারা জানে যে, সেক্সরোবটেরা কোনো ব্যথা বা অপমান অনুভব করতে পারে না। তারা বরং ভাবিত মানুষের আক্রমণাত্মক আচরণ নিয়ে। অর্থাৎ মেশিনের কী-বা যন্ত্রণাকে তারা উপশম করবে, আসল কাজটা হবে, আমাদের মানুষদের মধ্যে প্লেজার বা ফ্যান্টাসির নামে যেই আক্রমণাত্মক লালসাধর্ম রয়েছে, সেটাকে নির্মূল করা।

নৈতিক গোলকধাঁধা
যদি আমরা এই সেক্সরোবটের আলাপে, ভিডিও গেমস বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রসঙ্গটাকে যুক্ত করি তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত কিছু প্লাস্টিকের শরীর আমাদের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া দেখায়, আর আমরা একধরনের মিথ্যা কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করি। যার মাধ্যমে চাইলে আমরা যৌননিপীড়ন চালাতে পারি, বা মানুষের ওপরে হিংস্রতা প্রয়োগ করতে পারি। আদতে, এখানে ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভব করবার মতো কোনো সত্যিকার সত্তা নেই, সম্ভাবনার এই অপ্রতুলতা সত্ত্বেও, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সের অধিকারের পক্ষে ওকালতিকারকেরা আমাদের মানুষদের ওপরে কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে চায়, এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আমরা কী করব সে বিষয়ে।

যুক্তিটা হলো, বাস্তব জীবনে এই ধরনের ফ্যান্টাসিমূলক কর্মকাণ্ডগুলো ঘটানো খুব সমস্যাজনক। কল্পনা করে কিছু করার চাইতে বাস্তব জীবনে কিছু করাটা আরো জটিল বিষয়। চমৎকারভাবে, আমরা কল্পনার মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই করি যা ভয়ংকর। এটা উল্লেখ করে বলবার দরকার নেই যে, আমরা দিবাস্বপ্নের মতো করে গোপনে কী কী সব করে থাকি, যেগুলো আমাদের বাস্তব জীবনে কখনোই করা সম্ভব হয় না।

এর মধ্য দিয়েই আমরা সেই পুরোনো তর্কে পুনরায় প্রবেশ করি—যে, যদি কারো মধ্যে হিংস্র মনোবৃত্তি থাকে, তাহলে তার বেলায় কি এটাই উত্তম যে, সে তার হিংস্র মনোবৃত্তি প্রয়োগ করুক কোনো ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অথবা কোনো মেশিনের সঙ্গে—আর এই আশায় যে এরমধ্য দিয়ে তার পর্যাপ্ত আক্রোশ মিটে যাবে, ফলে সে বাস্তব জীবনে সেরকম কিছু করতে যাবে না।

উত্তর কী হবে
অন্য আরেকটা প্রশ্ন হলো, যদি কোনো সেক্সরোবট আমাদের অমার্জিত যৌনরিপুকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে কি এমনটাই প্রতীয়মান হয় না, যে সেক্সরোবটটিকে সেভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছিল? তাহলে অন্য আরেকভাবেও তাকে প্রোগ্রাম করা হবে না কেন?

অথবা, উপসংহার তৈরির উদ্দেশ্যে তাকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হবে না কেন, যে সে আমাদের হিংস্র আচরণসমূহকেও ওয়েলকাম করবে? এক্ষেত্রে, অবশ্যই, চিন্তার একটা বিষয় থাকে, আমরা ধর্ষকামী অপকর্মারা তবেও কি এটাকে এনজয় করে যেতে পারব? যেহেতু ধর্ষকামী ব্যক্তির দরকার পড়ে তার মৃগয়াটিকে আতঙ্কগ্রস্ত আর ত্রপিত হতে হবে।

আরো একটা প্রশ্ন হলো, যদি কোনো দৃষ্টু প্রকৃতির প্রোগ্রামার এমন কিছু সেক্সরোবট তৈরি করে যারা কিনা ধর্ষকামী, যারাও তাদের পার্টনারদের সঙ্গে হিংস্র কার্যকলাপ করতে পছন্দ করে, তাহলে কী হবে?

যদি আমরা সেক্সরোবটদের হাতে অধিকার অর্পণ করি, এবং তাদের হিংস্র কার্যকলাপকে নিষিদ্ধ করি, তাহলে কি এটাই দাঁড়ায় না যে, আমরা তাদেরকে একই সঙ্গে কিছুটা স্বয়ংক্রিয় আবার কিছুটা দায়বদ্ধ ক্যারেক্টার হিসেবে বিবেচনা করছি। সেক্ষেত্রে তারা যদি আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে, তাহলে তাদেরকে আমাদের ‘দোষী’ বিবেচনা করাই উচিত হবে। নাকি আমাদের উচিত হবে, তাদের প্রোগ্রামারদেরকে দোষ দেওয়া?

যাই হোক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের অধিকারের পক্ষে সমর্থনকারীদের আসল ভুলটা হলো, তারা আমাদের মানুষদের বৈশিষ্ট্যগুলোকেই চূড়ান্ত সত্য হিসেবে নির্ধারণ করে নিয়েছে। যদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিস্ফোরক ডেভেলপিংয়ের মধ্যদিয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটে যে, দেখা গেল আমাদের ওই সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞানকে ধারণ করেই সেক্সরোবটেরা হঠাৎ হাজির হলো, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সঙ্গে তাদের সাইকোলজির তুলনা করা যাবে না, অনেকক্ষেত্রেই আমাদের তুলনায় তারা আরো প্রখর হবে, আমাদের বৈশিষ্টের বিচারে তারা আরো বেশি অশুভ হতে পারবে, বা আরো বেশি শুভ হতে পারবে—কিন্তু সেক্ষেত্রে কী হবে?

সুতরাং এই ঘোলা বিষয়টাকে একটি সূক্ষ্ম চিন্তা দিয়েই শেষ করা যাক। মোরালিটির সত্যিকার অর্থ আর সেক্সরোবটের স্বাধিকার বলতে এরকম দাঁড়ায় না যে, সেক্সরোবট আমাদের অতিশয় যৌনরিপুগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে।

আর যদি তাকে সেভাবে প্রোগ্রাম করা হয় যে সে আমাদের ধর্ষকামী আচরণগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবে, সেক্ষেত্রে তো এমনও হতে পারে সে তলে তলে এটাকে উপভোগও করছে? এইভাবে ভাবলে, সবিশেষে সেক্সরোবট একটা লালসাসাপেক্ষ বিষয়ই হয়ে ওঠে, যারা আমাদের মানুষদের মতোই, সঙ্গতিহীন আর বিভক্তিপ্রাণ সত্তা।

   

অকালে আম পাকে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বৈশাখে তোর রূদ্র ভয়াল,

কেতন ওড়ায় কালবৈশাখী!

জষ্ঠি মাসে বনে বনে

আম কাঠালের হাট বসে কি...’

রবিঠাকুরের কলমে রচিত এ পংক্তি যেন, কেবল কাগজের উপর কালিতে সাজানো কিছু শব্দ নয়। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর সকল বৈশিষ্ট্য খুব অল্প ভাষায় সুসজ্জ্বিত করে গানের রূপে সামনে আনেন বিশ্বকবি।

দিন গুনতে গুনতে বছরের প্রথম মাসটি অনায়াসে কেটে গেল। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। ভয়ংকর কাল বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে; জৈষ্ঠ্যের পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুই যেন গ্রীষ্মের আসল আনন্দ।  

গ্রীষ্মের পরিপূরক হলো আম। আম পছন্দ নয়, এমন মানুষটি খুঁজে পাওয়া দায়! এজন্যই আমকে বলে ফলের রাজা। ত্যক্ত-বিরক্ত করা গরমেও পাকা টসটসে আমের সুঘ্রাণই যেন আনন্দের স্বস্তি। তবে সে আনন্দেও বালি ঢেলে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভোজন-রসিক মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে রসে টসটসে তাজা ফলের স্বাদ আস্বাদনের জন্য। অনেক ভোক্তদের সেই অপেক্ষা বৃথা হয়ে যায় অপরিপক্ক ফলের কারণে।

অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকানোর চেষ্টা করে। আম যখন কাঁচা অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে সাইট্রিক এসিড ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড থাকে। এ কারণে আমের হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রার লগারিদম মান খুব কম হয়, ফলে আম অম্লধর্মী হয়। এছাড়া কাঁচা অবস্থায় আমে উচ্চ ওজনের পেকটিনের মজুদ বেশি থাকে।

অপরিপক্ক পাকা আম

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাঁকার সময় এই পেকটিনের ওজন কমতে থাকে। আমের মধ্যকার ভিটামিন ‘সি‘ কালক্রমে বদলে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ক্লোরোফিল পরিবর্তিত হয়ে গ্লোবুলার ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের  উপসি্থতি বাড়তে থাকে।(‘বিজ্ঞানচিন্তা’র তথ্যমতে) এই কারণে কাঁচা আমের সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে লালচে-হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এভাবে পাকার ফলে আম হয় সুস্বাদু। আমের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যায়।

তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)  এর প্রয়োগের কারণে আমের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে থাকা (৮০থেকে৮৫ভাগ) ক্যালসিয়ামের কারণে আমের অম্লত্ব নষ্ট হতে শুরু করে। অম্ল-ক্ষারের প্রশমনের কারণে আমের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই আমের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আমের ভিটামিন বি১ পানিতে দ্রবনীয়। আমের আর্দ্র অংশের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিক্রিয়া করে অ্যাকটেলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে আম অসময়েই পাক শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমের রাসায়নিক পরিবর্তন না ঘটলেও বাহ্যিকভাবে রঙের পরিবর্তনের কারণে দেখলে মনে হয় আম পেকেছে। এই অপরিপক্ক আম খেলে কেবল রুচি ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাই নয়! শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

;

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;