যে উপন্যাসগুলো বাড়িয়ে দিয়েছিল অপরাধপ্রবণতা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
কিছু বই পাঠককে করে তুলেছে অপরাধপ্রবণ

কিছু বই পাঠককে করে তুলেছে অপরাধপ্রবণ

  • Font increase
  • Font Decrease

কিছু উপন্যাস পড়ে ভয় লাগে। কিছু গল্প হাসি আনে আর কিছু আনে কান্না। অনেকের আবার কিছু উপন্যাস পড়লে নাকি ঘুম পায়। সাহিত্য এক বিচিত্র জগত। লেখক তাঁর সম্ভাব্য সমস্তটা দিয়ে জন্ম দেন একটা প্লটের; তার সাথে জন্ম নেয় অনেকগুলো চরিত্র। পাঠক তাতে বুদ হয়ে থাকে; এমনকি পরিবর্তন করে ফেলে ভবিষ্যতের ধ্যান-ধারণা। তাই হত্যার মতো অপরাধও ঘটিয়েছে পাঠকেরা, এমন নজির কম নেই। বিশ্ব সাহিত্যের এমন পাঁচটি বই নিয়ে আজ আমাদের গল্প; দুর্দান্ত সাহিত্যকর্মের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও যা পাঠককে করে তুলেছে অপরাধপ্রবণ।

ফাউন্ডেশন সিরিজ

বোস্টন ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর আইজ্যাক আসিমভ। জন্ম ১৯২০ এবং মৃত্যু ১৯৯২ সালে। মূলত তার পরিচিতি আমেরিকান লেখক হিসাবে; যিনি সায়েন্স ফিকশনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয় করার অন্যতম অগ্রনায়ক। তার রচিত “ফাউন্ডেশন সিরিজ”কে গণ্য করা হয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর তালিকায়। জিনোম প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে ১৯৫১ সালে হার্ড কাভারে ২৫৫ পৃষ্ঠার প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তী দু বছরের মধ্যেই ফাউন্ডেশন ত্রয়ী প্রকাশিত হয়; নাম যথাক্রমে—ফাউন্ডেশন, ফাউন্ডেশন এন্ড এম্পায়ার এবং সেকেন্ড ফাউন্ডেশন। পরবর্তীতে জনপ্রিয়তার কারণে সিকুয়েল এবং প্রিকুয়েলও লিখতে হয় আসিমভকে।

সায়েন্স ফিকশনের ক্লাসিকে পরিণত হয় ফাউন্ডেশন সিরিজ


গল্প আবর্তিত হয়েছে বৃহৎ এক গ্যালাক্টিক সাম্রাজ্যের পতন এবং নবজীবনকে কেন্দ্র করে। আর তা থেকে প্রভাবিত হয় জাপানের নতুন এক ধর্মীয় গোষ্ঠী ওমো শিনরিকিয়োর নেতারা। ফলাফল ১৯৯৫ সালে টকিওতে আক্রমণ। ১৩ জন নিহত এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয় সেই ভয়াবহ ঘটনায়।

জ্যাক শেপার্ড

আজকাল কেউ আর উইলিয়াম হ্যারিসন আইনসওয়ার্থ-এর উপন্যাসগুলো পড়ে না। হয়তো না পড়াটাই ভালো; অতিমাত্রায় উত্তেজনা কিংবা ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে তার সৃষ্টিগুলো। কিন্তু ঊনিশ শতকের প্রথম ভাগে আইনসওয়ার্থ ছিলেন ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের একজন। ১৮০৫ সাল থেকে ১৮৮২ সাল অব্দি দীর্ঘ জীবনে তার অনেক রচনাই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বিশেষ স্থান নিয়ে আছে তার রচিত ‘জ্যাক শেপার্ড’।

লেখক আইনসওয়ার্থ ও তার সৃষ্টিকর্ম জ্যাক শেপার্ড


বার্নার্ড নামক জনৈক সুইস ব্যক্তি তার অধীনস্থ চাকুরিজীবীকে হত্যা করে ফেলেন ১৮৪০ সালে। নিহত ব্যক্তির নাম উইলিয়াম রাসেল। বিষয়টা জটিল হয়ে পড়ে যখন হত্যাকারী দাবি করে, আইনসওয়ার্থের উপন্যাস জ্যাক শেপার্ড পাঠান্তেই সে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়েছে। বার্নার্ড আদতেই উপন্যাসটি পড়েছে নাকি এমনি বলেছে; তা স্পষ্ট না। কিন্তু লেখক আইনসওয়ার্থ এই ঘটনায় দারুণভাবে ভীত হয়ে পড়েন। ভীতি এতটাই চরমমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, এরপর থেকে তিনি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেই দিন গুজরান করতে লাগলেন।

দ্য সিক্রেট এজেন্ট

পোলিশ-ব্রিটিশ লেখক জোসেফ কনরাডের জন্ম ১৮৫৭ সালে। ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে বিরাজ করা এই সাহিত্যিকের একটা উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯০৭ সালে, নাম “দ্য সিক্রেট এজেন্ট : এ সিম্পল টেইল”। জনৈক মি. এডলফ ভারলোক এবং তার স্পাইজীবনের নানা কীর্তি নিয়ে গল্পের অবয়ব গড়ে উঠেছে। প্লট আবর্তিত হয়েছে ডিনামাইট ব্যবহারের মতো ধ্বংসাত্মক নানা ক্রিয়াকলাপ নিয়েও।

দ্য সিক্রেট এজেন্ট বইয়ের ফ্ল্যাপ


দ্য সিক্রেট এজেন্ট-এর এক ডাই হার্ড ভক্ত টেড ক্যাজিনস্কি নিজের বিছানার পাশে বইটির এককপি প্রায়ই রাখতেন। নৈরাজ্যবাদী আর বোমাহামলাকারী হিসাবে তার কুখ্যাতি ছিল। ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’-এর প্রফেসর চরিত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পর এফবিআইয়ের কাছে স্বীকারও করেছিলেন, “কনরাডের বই না পড়লে তাকে বুঝতে পারা যাবে না।”

স্ট্রেঞ্জার ইন এ স্ট্রেঞ্জ ল্যান্ড

আমেরিকান সাহিত্যিক রবার্ট এনসন হাইনলেইনের জীবনকাল ১৯০৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন “স্ট্রেঞ্জার ইন এ স্ট্রেঞ্জ ল্যান্ড”। গল্পের নায়ক ভ্যালেন্টাইন মাইকেল স্মিথ পৃথিবীতে আগমন করে; যার জন্ম ও শৈশব কেটেছে মঙ্গল গ্রহের অধিবাসীদের কাছে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ক্ষমতার টানাপোড়েনকেই মূলত তুলে আনা হয়েছিল এখানে। কিন্তু ঘটনা সেদিকে থাকেনি।

সেই বিখ্যাত বই আর ‘ফ্যামিলি’র প্রতিষ্ঠাতা চার্লস ম্যানসন


চার্লস ম্যানসন এবং তার ম্যানসন ফ্যামিলির নাম মোটামুটি সবার জানা। এই গোষ্ঠী কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের বদল ঘটায়নি; সেই সাথে গঠন করেছে সশস্ত্র আক্রমণাত্মক সেল। তাদের হাতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা বিখ্যাত অভিনেত্রী শ্যারন টেটকে হত্যা। দাবি করা হয়, চার্লস ম্যানসন হাইনলেইনের এই বইটি থেকে প্রভাবিত ছিলেন। সান ফ্রান্সিসকোর পত্রিকা এবং ১৯৭০ সালের টাইম ম্যাগাজিন পর্যন্ত দাবি করে বসে ম্যানসন ফ্যামিলির ওপর স্ট্রেঞ্জার ইন এ স্ট্রেঞ্জ ল্যান্ড-এর প্রভাব আছে। যদিও সার্বিকভাবে এই মতকে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।

দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই

জে ডি সেলিঞ্জার প্রকৃতপক্ষে তার “দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই”-এর জন্যই বিখ্যাত। তার জন্ম ১৯১৯ সাল; মৃত্যু ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। উপন্যাস হিসাবে বইটা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের ১৬ জুলাই। মেরুন রঙের ফ্ল্যাপে সোনালি হাতের লেখা। দুর্ভাগ্যক্রমে বইটি দুর্ধর্ষ খুনে প্ররোচনা দেবার দায়ে অভিযুক্ত।

জন লেননের হত্যাকারী প্রভাবিত ছিল এই বই দ্বারা


বিষয়টা গোচরে আসে বিখ্যাত গায়ক জন লেনন মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হবার পর। ১৯৮০ সালের কথা। মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে জে ডি সেলিঞ্জারের বইটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে স্বীকার করেন, “আসলে যা ঘটেছে তা বুঝতে হলে ক্যাচার ইন দ্য রাই বইটা সাহয্য করতে পারে।” ২০০০ সালে এসে চ্যাপম্যান দাবি করেন, উপন্যাসটি তাকে জন লেননকে হত্যা করতে প্ররোচিত করেনি। বরং তিনি নিজেকে উপন্যাসের নায়ক হোল্ডেন কলফিল্ড-এর চরিত্রে ডুবিয়ে ফেলেছিলেন।

   

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে ‘সোনালু ফুল’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজের ফাঁকে উঁকি দিয়ে হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল সোনালু। নজরকাড়া সৌন্দর্যে মুখরিত এই ফুল পথিকের মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। এই ফুলের দেখা মিলছে নওগাঁর বিভিন্ন পথে প্রান্তরে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, নওগাঁ শহরের বরেন্দ্র অফিসের পাশে থোকায়-থোকায় হলুদ আভায় ঝুলে আছে সোনালু। ফুলের মাথা হতে লম্বা লতার মত বড় হয়েছে।

শীতকালে সব পাতা ঝরার পর বসন্তে একেবারেই মৃতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছটি। গ্রীষ্মের শুরুতে দু’একটি কচিপাতার সাথে ফুল ফুটতে শুরু করে। হলুদ সোনালি রঙের অসংখ্য ফুল সারা গাছজুড়ে ঝাড় লণ্ঠনের মতো ঝুলতে দেখা যায়।


জানা যায়, সোনালু গাছের পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির । এটি আট থেকে ৯ মিটার উঁচু হয়। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠিসহ আরো অনেক। ফুল থেকে ধীরে ধীরে লাঠির মত কালো রঙের ফল হয়ে সেটি কয়েক সেন্টিমিটার অব্ধি লম্বা হয়ে থাকে।

পথচারী আলমগীর বলেন, সোনালু দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর শহরের মধ্যে চোখে পড়েনা বললেই চলে। যতবার দেখি খুব সুন্দর লাগে। মনের মধ্যে এনে দেয় এক প্রশান্তি। 

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, আমি মোবাইল দিয়ে প্রচুর ছবি তুলেছি এই ফুলের। আমার খুব ভালো লাগে সোনালু ফুল। তবে এই ফুল যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের গাছ লাগানো উচিৎ। আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক সোনালু গাছ আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে।


নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন- এটি মূলত সৌন্দর্য বর্ধনে রোপণ করা হয়। গ্রাম বাংলায় এই ফুলকে বাদর লাঠি গাছ বলেও ডাকা হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম 'কেসিয়া ফিসটুলা (Cassia Fastula)। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে অনেক জাতের আছে। ফুলটার জন্য বেশি খ্যাতি রয়েছে বলে অনেক জায়গায় লাগানো হয়। গাছের কাঠগুলো জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়।

;

দৌলতদিয়ায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রখর তাপপ্রবাহের বিরূপ প্রভাবে বিপর্যস্ত প্রকৃতি। কোথাও নেই শান্তি। গ্রীষ্মের রুক্ষতা আর সব ক্লান্তি ছাপিয়ে আপন মহিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। জানান দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। পাশাপাশি প্রশান্তির বার্তা বয়ে দিচ্ছে জনমনে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায় কৃষ্ণচূড়ার এমন সৌন্দর্য। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া অংশের দুই পাশে শোভাবর্ধন করছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। শত কষ্টের মাঝে এই মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হাজারো পথচারীদের হৃদয়ে প্রশান্তির হাতছানি দেয় এই কৃষ্ণচূড়া ফুল। দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে।এ সড়কে যাতায়াতকারীদের নজর কাড়ছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল।


সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের দু’পাশের গাছগুলো ছেয়ে গেছে লাল কৃষ্ণচূড়ায়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বৈশাখের প্রখর রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। এই আগুনেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত পথচারীরা। নিজেদেরকে কৃষ্ণচূড়ার সাথে একাকার করে স্মৃতিময় করে রাখতে ব্যস্ত সবাই।

দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের বাইপাস সড়ক থেকে শুরু করে ক্যানাল ঘাট এলাকার মহাসড়কের দুইপাশে ছেয়ে গেছে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ আর পশু পাখি যখন বেসামাল,ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার ফুলে বিচিত্র রূপ নিয়েছে দৌলতদিয়ার মহাসড়ক। এ যেন কৃষ্ণচূড়ার রঙে মেতেছে সড়কটি। কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরা গাছগুলো নজর কাড়ছে দর্শনার্থীসহ এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পথচারীদের।


স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই দৌলতদিয়া ঘাটের এই অংশটুকুতে (ঢাকা-খুলনা মহাসড়ে) সৌন্দর্য বিলায় কৃঞ্চচূড়া। পুরো এলাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙে রঙিন হয়ে যায়। প্রখর রোদে মনে হয় যেন প্রকৃতিতে আগুন লেগেছে। পড়ন্ত বিকেলে পূর্ব আকাশের রক্তিম আভায় কৃঞ্চচূড়া মিশে যেন একাকার হয়ে যায়। প্রতি বছর এই সময়ে ঘাটের বাইপাস সড়ক নতুন রূপে সাজে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন ছবি তুলতে।

পথচারীরা জানান, ফুলগুলো দেখলে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। গাছের ছায়া ও বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। প্রখর রোদের মধ্যেও যেন এখানে একটু সবুজের শান্তি পাওয়া যায়।

;

নগরে ফুলের জলসা, গ্রীষ্মের উত্তাপে সৌরভ, স্বস্তি 



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

হাতিরঝিলে নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানায় উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ও সোনাইল/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

চারিদিকে খাঁ খাঁ রোদ্দুর। যেন বইছে গনগনে আগুনের ফুলকি। চারপাশের পরিবেশ ফুটন্ত কড়াইয়ে মতো টগবগে। দাবদাহের তেজে ব্রহ্মতালু ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তাপদগ্ধ চরাচর ক্লান্ত, স্তব্ধ, স্থবির। বৈশাখের রুদ্র রূপে বিপর্যস্ত নাগরিক পরিসর আর জনজীবন। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় উচ্চারিত গ্রীষ্মের প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর প্রকৃতিতে: 'প্রখর তপনতাপে, আকাশ তৃষায় কাঁপে,/বায়ু করে হাহাকার।’

পরিস্থিতি যখন এমনই খরতাপে পোড়া ও তামাটে, ঠিক তখন একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া ঢাকা নগরীর পথে পথে জাগিয়েছে খণ্ড খণ্ড ফুলের জলসা। গ্রীষ্মের এই রংবাহারের উজ্জ্বলতা এবং সৌরভ; নাগরিক বিড়ম্বনা মুছে বুলিয়ে দিয়েছে অনিন্দ্য স্বস্তির পরশ।

সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল—দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড/ছবি: নূর এ আলম


নগরের ইটপাথর, কংক্রিটের কংকালের মধ্যে তাপ ও দূষণের সাম্রাজ্যে নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম। কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা। নিয়ে এসেছে রঙের উল্লাস। গন্ধের মাদকতা। ভালোলাগার এক অনির্বচনীয় অনুভূতি।

উচ্ছল জারুল


গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের মধ্যেই শুক্রবার ও শনিবার ছুটির জোড়া দিনে হাতিরঝিলের নাগরিক পর্যটকদের স্বাগত জানাল উচ্ছল জারুল, রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া ও সাদা গোলাপীর মিশলে সোনাইল। খুব কাছ থেকে দেখলে মনে হাতিরঝিলে ‘সোনাইল ব্লসম উৎসব’ চলছে। আর দূর থেকে মনে হয় পুষ্পিত পোস্টকার্ড।

কৃষ্ণচূড়ার বুনো ঘ্রাণ, টগরের শুভ্রতা এবং সোনালুর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য দাবদাহে পীড়িত রাজধানীতে বসিয়েছে ফুলের জলসা/ছবি: নূর এ আলম


হালকা বাতাসে সোনাইল দুলুনির সমান্তরালে গুঞ্জরিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়' গানের শিহরণ জাগানিয়া আবেশ। হাতিরঝিলের পথে পথে হেঁটে ক্লান্ত হলে ছায়া দিতেও প্রকৃতি তৈরি হয়ে আছে। ফুলে ভরা মেঘশিরীষ গাছ প্রসারিত শাখা ও পল্লবে কাছে টানছে পথিকের মনোযোগ। এখানে জারুলের এমন অপূর্ব রূপ— চলতি পথে গাড়ি থামিয়ে, হাঁটতে হাঁটতে থমকে গিয়ে ক্যামেরাবন্দী করছেন নগরীর মানুষ।

নানা রঙের বর্ণিল ফুলের বৃন্ত ও পত্রালীতে খেলা করছে মুক্তি ও স্বাধীনতার আরাম/ছবি: নূর এ আলম


‘কি বলব- এত গরম, সহ্য করার মতো না। আমার বাসা মধুবাগে। প্রায় হাতিরঝিলে বাতাস খেতে আসি। এত ভালো লাগে বোঝাতে পারব না। তার সঙ্গে বাহারি ফুল তো রয়েছেই। অনেক ফুল চিনি না— কিন্তু ব্যাপারটা অসাম’, বলছিলেন হাতিরঝিলের বেঞ্চ বসা ইরাব নামের এক টগবগে যুবক। এখানকার প্রকৃতি যেন অগোচরে ইরাবের মতো অনেক তরুণ-যুবককে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভাবুক বানিয়ে দিয়েছে।

নতুন শহর পূর্বাচলের সড়কে করবী/ছবি: নূর এ আলম


গ্রীষ্মের এই রূপ শুধু ঢাকার পর্যটন-হটস্পট হাতিরঝিলে নয়, প্রাচীন ও রমনীয় রমনা পার্ক, কলোনিয়াল আরবান নস্টালজিয়া মিন্টো রোড, আধুনিক এয়ারপোর্ট রোড, কুড়িল, স্থাপত্যকলার নান্দনিক সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকসহ যেদিকে চোখ যায়- শুধু চোখে পড়ে ফুলের হাসি, রঙের খেলা। ইন্দ্রিয় স্পন্দিত হয় উদ্ভিদজাত গন্ধে ও সৌরভে।

কুড়িলে কৃষ্ণচূড়ার উচ্ছ্বাস/ছবি: নূর এ আলম


নগরীর সর্বাধুনিক সংযোজন মেট্রোরেলে বা এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে বিস্তৃত রাজধানীর দিকে তাকালে সুবিশাল দালান-কোঠা আর সবুজের ফাঁকে মাথা চাড়া দিচ্ছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া ও গ্রীষ্মকালীন গাছপালার উচ্ছ্বাস। কোথাও কোথাও ছাদবাগানের বিভা। ফুলে ফুলে রঙিন এসব দৃশ্য প্রাচ্যের রোমান্টিক নগরী ঢাকার প্রাচীন স্মৃতি মনে দোলা দেয়। ক্ষণিকের জন্য বর্ণিল ফুলে ছাওয়া এক অন্য ঢাকা হৃদয়ের অলিন্দে জায়গা করে নেয় সুভাষিত আবাহনে।

সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ/ছবি: নূর এ আলম


সংসদ ভবন এলাকা ও ক্রিসেন্ট লেকে গেলে তো মনে হবে সুনীল আকাশের পানে চেয়ে কৃষ্ণচূড়া বলছে- ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-/আমি ভুবন ভোলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। এখানে চোখে পড়ে লেকের দু’ধারে কৃষ্ণচূড়ার সুদৃশ্য বীথি-  ‘ডাক দিয়ে যায় পথের ধারের কৃষ্ণচূড়ায়।’ বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ঝরে রঙিন হয়ে ওঠা চলার পথ।

চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে


এমন মনোরম প্রকৃতিতে ক্রিসেন্ট লেকে গরম নিবারণে নেমে পড়েছে একদল ডানপিটে কিশোর। যারা কৈশারকাল উদযাপনে মেতেছে। 

পাশেই চন্দ্রিমা উদ্যান; গাছের পাতার সবুজ রঙ আজ যেন আরও গাঢ় হয়েছে। গত রাতে ঝরেছে বহু প্রতীক্ষার বৃষ্টি। দীর্ঘ তাপদাহে পোড়ার পর বৃষ্টির পরশ পেয়ে গাছগুলো যেন- প্রাণ পেয়েছে। চড়া রোদে স্নিগ্ধ হয়ে দেখাচ্ছে সবুজ পাতা। নেতিয়ে পড়া ফুল আড়মোড়া ভেঙে সুভাষ ছড়াচ্ছে। প্রাণবন্ত সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে হরেক রঙ ও রূপের ফুল।

কংক্রিটের নগরীতে কৃষ্ণচূড়ার স্পর্শ/ছবি: নূর এ আলম


‘শোনো বন্ধু শোনো,/ প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা/ ইটের পাঁজরে, লোহার কাটায়/দারুণ মর্মব্যথা।/এখানে আকাশ নেই,/এখানে বাতাস নেই,/ এখানে অন্ধ গলির নরকে/মুক্তির আকুলতা।/জীবনের ফুল মুকুলেই ঝরে...।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তার গানে নগরীকে তুলনা করেছেন ইটপাথরের প্রাণহীন গলি হিসেবে। যেখানে ব্যস্ততার ফাঁকে লুকিয়ে থাকে নানা কষ্ট। তবে এমন প্রাণহীন নগরীতে প্রশান্তির গান ধরেছে আগুন ঝরা কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুল। সঙ্গে অফুরান শোভা ছড়িয়েছে ডুলি চাপা, বরুণ, নাগলিঙ্গম, মাধবীলতা ও কাঠগোলাপ। গরমে ওষ্ঠাগত জীবনে ঢাকার প্রকৃতির রূপ-রস মনে শান্তির সু-বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর ফুলের নৈসর্গিকতা উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময় ছুটির দিন।

হাতিরঝিলের পথে দেখা মেলে কাঠগোলাপের


‘উষ্ণ তাপমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবুজ ও মনোরম পরিবেশ তৈরির দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন।

তিনি বলেন, ঢাকার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করতে দেশি ফুলের গাছ দিয়ে সাজালে আরো ভালো হত। পরিকল্পিতভাবে ১০টি প্রধান অ্যাভিনিউকে ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো যেতে পারে। তাহলে শোভা বর্ধনের পাশাপাশি মানুষকে প্রশান্তি দিত- এই নগর।

সোনালুর ছায়া মাখানো পথ/ছবি: নূর এ আলম


মাঝে মাঝে এই ঢাকা, একদিন স্বপ্নের দিন হয়ে, ফুলের জলসার মুগ্ধতা দগ্ধ নাগরিক জীবনের সকল গ্লানি মুছে দিয়ে যায়।  

;

হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেলেন ৫৪ বছর পর!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বিয়ের আংটি খুঁজে পেয়েছেন ম্যারিলিন বার্চ (৭৬)। তিনি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের পন্টারডাউইর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ম্যারিলিন বার্চ স্কাই নিউজকে বলেন, এতো বছর পর আংটিটি খুঁজে পাওয়া সত্যিই অবাক করা বিষয়। ১৯৭০ সালে পারিবারিক খামারে গরুকে খড় খাওয়ানোর সময় আংটিটি হারিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক খোঁজার পরও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম এটা আর কখনো পাবো না।

তবে শনাক্তবিদ কিথ ফিলিপসের মনে ছিল অন্য কিছু। তিনি খামারের লোকজনকে বিভিন্ন সময় সেখানকার ভূমি খননের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তাঁর হিসাবে, সেখানে মাটির নিচে অনেক মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে।

সেখান থেকে পাওয়া বিভিন্ন মুদ্রা এবং বিটের টুকরা আমাদের দেখাতেন। কিন্তু আংটিটির খোঁজ মেলেনি। 

ম্যারিলিন বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় ফিলিপস যখন খামার ত্যাগ করছিলেন, আমি তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে বলি, ফিলিপস শোনো, যেসব আবর্জনা তুমি উদ্ধার করেছ এসব ফেলো। যাও, আমার বিয়ের আংটিটি খুঁজে বের করতে পার কি না, দেখো।’

এ কথা শোনার পর তারা দুজনেই তখন হেসেছিল। তবে এক সপ্তাহ বা তারও কিছু সময় পরে ফিলিপস ম্যারিলিনের আংটিটি নিয়ে হাজির হন।

ম্যারিলিন বলেন, আংটিটিকে খামারের মাঠে মাটির প্রায় ৮ ইঞ্চি নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে তিনি ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন এবং তখন থেকেই তিনি এটিকে আঙ্গুল দিয়ে রেখেছেন।

মিসেস বার্চের স্বামী পিটার বার্চ গত জানুয়ারিতে ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। সে উপলক্ষে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার পর সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। এখন সবকিছু এই আংটিটি ঘিরেই হচ্ছে।

;